ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

বাণিজ্যিক বিবেচনায় আম বাগান পর্যবেক্ষণ করবে সরকার

বাংলাদেশের আমের কদর বেড়েছে ওয়ালমার্টের কাছে ॥ কেমিক্যাল মুক্ত ফল উৎপাদনে বিশেষ উদ্যোগ

প্রকাশিত: ০৫:০৭, ২ মার্চ ২০১৬

বাংলাদেশের আমের কদর বেড়েছে ওয়ালমার্টের কাছে ॥ কেমিক্যাল মুক্ত ফল উৎপাদনে বিশেষ উদ্যোগ

এম শাহজাহান ॥ কেমিক্যাল মুক্ত আম উৎপাদনে এবার সরকারীভাবে বাগান পর্যবেক্ষণের উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। গাছে মুকুল আসা থেকে শুরু করে আম বড় হওয়া পর্যন্ত বাগান তদারকি করা হবে। এছাড়া ওই সময় চাষীদের পরামর্শ প্রদান করে আম উৎপাদন বৃদ্ধি, বাজারজাতকরণ, রফতানি এবং সংরক্ষণসহ নানা বিষয়ে সহযোগিতা প্রদান করবে সরকার। এ লক্ষ্যে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসকদের চিঠি দেয়া হয়েছে। শীঘ্রই জেলা প্রশাসন এ বিষয়ে করণীয় নির্ধারণ করে কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করবে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে এ তথ্য। জানা গেছে, গত বছর পরীক্ষামূলকভাবে রফতানি করার পর ইউরোপ-আমেরিকার বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশের আম নিয়ে ব্যাপক আগ্রহ তৈরি হয়েছে। এত সুস্বাদু, টাটকা এবং পুষ্টিগুণসমৃদ্ধ আম বিশ্বের আর কোথাও নেই বলেও সংশ্লিষ্টরা দাবি করেছেন। তাই বিশ্বের সবচেয়ে বড় খুচরা বিক্রেতা প্রতিষ্ঠান হিসেবে স্বীকৃত চেন সপ ওয়ালমার্ট এ বছরও বাংলাদেশ থেকে বিপুল পরিমাণ আম আমদানির আগ্রহ দেখিয়েছে। এতদিন শুধু প্রতিষ্ঠানটি বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি করত। কিন্তু এখন থেকে প্রতিষ্ঠানটি মৌসুমী ফল আমও আমদানি করবে। ইতোমধ্যে সরকারের উচ্চ পর্যায়ে বিষয়টি তারা জানিয়ে দিয়েছে। প্রতিষ্ঠানটির এই আগ্রহ এবং জনস্বাস্থ্যের বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে দেশের আম বাগানগুলো পর্যবেক্ষণের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বাণিজ্য সচিব হেদায়েতুল্লাহ আল মামুন জনকণ্ঠকে বলেন, আম এখন রফতানি পণ্য। পাশাপাশি দেশেও মৌসুমী এ ফলের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। তাই কেমিক্যাল মুক্ত আম উৎপাদন ও বাজারজাতকরণে চাষীদের সহযোগিতা করবে সরকার। এ ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট জেলাগুলোর আমবাগান নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করা হবে। তিনি বলেন, এখন আমের মুকুল আসা শুরু হয়েছে। এ সময় থেকেই চাষীরা বাগানে বিভিন্ন ধরনের কেমিক্যাল ব্যবহার করে থাকেন। এ বছর যাতে এমন কোন কেমিক্যাল ব্যবহার না হয় যা জনস্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। একই সঙ্গে বিদেশেও যাতে দেশের সুনাম অক্ষুণœ থাকে। বাণিজ্য সচিব বলেন, ওয়ালমার্টের চেন সপগুলোতে বিক্রি হয় বাংলাদেশের আম। এ বছর প্রতিষ্ঠানটি আরও বেশি আম নিতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে। এছাড়া আমসহ বিভিন্ন ফলমূল উৎপাদনে বাংলাদেশ উদ্বৃত্ত অবস্থানে রয়েছে। তাই নিজেদের চাহিদা মিটিয়ে কৃষিজাত এ পণ্যটি রফতানি বাড়াতে সব ধরনের সহযোগিতা প্রদান করবে সরকার। এসব কারণে ভালজাত ও মানের কেমিক্যাল মুক্ত আম উৎপাদন জরুরী হয়ে পড়ছে। এ কারণে এ বছর থেকে সর্বক্ষণিক বাগান পর্যবেক্ষণ করা হবে। জেলা প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী অফিসারদের সম্পৃক্ত করে বিষয়টি দেখভাল করা হবে। এছাড়া সংশ্লিষ্ট কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরও এ বিষয়ে সতর্ক দৃষ্টি রাখবে। জানা গেছে, উত্তরাঞ্চলের বিভাগীয় শহর রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, নওগাঁ, নাটোর, দিনাজপুর, রংপুর, পঞ্চগড়, সাতক্ষীরা, ঠাকুরগাঁও ও নীলফামারী জেলার প্রায় সব এলাকাতেই রয়েছে বড় বড় আমবাগান। প্রতিবছর আমবাগানের সংখ্যা বাড়ছে। শুধু চাঁপাইনবাবগঞ্জে আড়াই শ’ জাতের আমচাষ হয়ে থাকে। এছাড়া এ জেলাতেই রয়েছে দুই হাজারের বেশি আমবাগান। তবে গড়ে ওঠা নতুন আমবাগানগুলো প্রায় বনেদি জাতের। বিশেষ করে নিয়মিত জাত ল্যাংড়া, গোপালভোগ, ক্ষিরসাপাত ও আশ্বিনা জাতের গাছ বেশি হচ্ছে। এছাড়া আমের রাজধানী বলা হয় রাজশাহীকে। সংশ্লিষ্ট জেলার বাগানগুলোর ৮০ ভাগ গাছে মুকুল এসেছে। প্রায় আড়ই শ’ জাতের আম উৎপন্ন হয় এখানে। তবে এবার ল্যাংড়া, গোপালভোগ, ক্ষিরসাপাত, বোম্বাই, হিমসাগর, ফজলি, আম্রপালি, আশ্বিনা, ক্ষুদি, বৃন্দাবনী, লক্ষণভোগ, কালীভোগ, তোতাপরী, দুধসর, লকনা ও মোহনভোগ জাতের আম বেশি চাষ হয়েছে বলে জানা গেছে। গাছে গাছে বাহারী জাতের আম এখন দেশের কোটি কোটি মানুষের রসনা মেটাতে প্রস্তুত হচ্ছে। গাছের মুকুল কীটপতঙ্গের হাত থেকে বাঁচাতে ব্যস্ত সময় পার করছেন আম চাষীরা। উৎপাদন বাড়াতে আমগাছে কীটনাশক ও ছত্রাক নাশক প্রয়োগ, সার ও সেচ প্রদানসহ গাছের পরিচর্যা করা হচ্ছে। মুকুল পুরো ফোটার আগে গাছে ডায়াথেন এম ও কনফিডর পরিমাণমতো পানিতে মিশিয়ে স্প্রে করা হচ্ছে, যেন মুকুলে কোনো ধরনের পোকার আক্রমণ না হয়। আবার গুটি ধরার পর আরেক দফা স্প্রে করা হবে। তবে ফল গবেষণা কেন্দ্রের বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তাদের মতে, আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এবার গাছে খুব একটা কীটনাশক প্রয়োগের প্রয়োজন নেই। কিন্তু পাউডারি মিলডিউ নামে এক প্রকার ছত্রাকজনিত রোগেও আমের মুকুল-ফুল-গুটি আক্রান্ত হতে পারে। ছত্রাকজনিত এসব রোগ নিয়ন্ত্রণে বিভিন্ন ধরনের কেমিক্যাল ব্যবহার করে থাকেন আমচাষীরা। তবে কোনভাবে যাতে এসব কেমিক্যাল মানবদেহের ক্ষতির কারণ না হতে পারে সে বিষয়ে সতর্ক রয়েছেন পর্যবেক্ষকরা। বাণিজ্য সচিব আরও বলেন, এমন কোন কেমিক্যাল ব্যবহার হতে দেয়া হবে না, যা মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর। ইতোপূর্বে আম সংরক্ষণে চাষীরা ফরমালিন ব্যবহার করতেন। সচেতনতা বাড়ানোর ফলে ফরমালিনের ব্যবহার বন্ধ হয়েছে। এখন বিষাক্ত কেমিক্যাল ব্যবহার বন্ধ হওয়া প্রয়োজন।
×