ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

‘বিউটিফুল বাংলাদেশ’ ‘ভিজিট বাংলাদেশ’

নিসর্গের ছায়াতলে প্রকৃতির অপার সৌন্দর্য

প্রকাশিত: ০৪:৫৬, ২ মার্চ ২০১৬

নিসর্গের ছায়াতলে প্রকৃতির অপার সৌন্দর্য

সমুদ্র হক আরও নতুন সাজে সাজছে বাংলাদেশ। দেশে দেশে পরিচিতি দেয়া হচ্ছে ‘বিউটিফুল বাংলাদেশ’। খ্রিস্টীয় নতুন বছরের শুরু থেকেই পর্যটকরা আসতে শুরু করেছেন দূর দেশ থেকে। দেশের পর্যটকরা ঘুরছেন এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্ত। সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয় এই প্রথম তার সকল অঙ্গকে একসঙ্গে নিয়ে বিশাল কর্মযজ্ঞে মাঠে নেমেছে। বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের পর্যটন কর্পোরেশনও এই প্রথম সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের প্রতœতত্ত্ব অধিদফতরকে সঙ্গে নিয়ে পর্যটক আকর্ষণে প্রতœসম্পদসমৃদ্ধ এলাকায় দৃষ্টিনন্দন অবকাঠামোসহ নানা কিছু করছে। স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধে বিজয় অর্জনের পর এই প্রথমবারের মতো ‘ভিজিট বাংলাদেশ-ইয়ার ২০১৬’ কেন্দ্র করে পর্যটন এখন শক্ত ভিতের ওপর দাঁড়াবার জন্য মরিয়া। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ইতোমধ্যে ২০১৬ সালকে পর্যটন বছর হিসেবে ঘোষণা করেছেন। দেশে দেশে পর্যটকদের আকর্ষণে একটি প্রতীকী ছোট্ট বাক্য তৈরি হয়। যা সেই দেশেরই পরিচিতি বহন করে। যেমন মালয়েশিয়ার নাম উঠলেই ছোট্ট একটি কথা- ‘ট্রুলি এশিয়া’। বাংলাদেশও নিজের প্রতীকী পরিচয় নির্ধারণ করেছে ‘বিউটিফুল বাংলাদেশ’ কথায়। ‘বিউটিফুল বাংলাদেশ’ বাক্যটি এখন বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ধ্বনি থেকে প্রতিধ্বনিত হয়ে মুখে মুখে ফিরছে। এ দেশে বিদেশী পর্যটক যারা আসেন তারা বাংলাদেশকে নিসর্গের ছায়াতলে প্রকৃতির অপার সৌন্দর্যই মনে করে। বিশেষ করে এশিয়ার সর্ববৃহৎ বৌদ্ধবিহার বা মঠ পাহাড়পুর (যার আরেক নাম সোমপুর বিহার) ইতোমধ্যে জাতিসংঘের ইউনেস্কোর ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট হিসেবে ঘোষিত হয়ে বিশ্ব সম্পদের তালিকাভুক্ত হয়েছে। পাহাড়পুর এখন বিশ্বেরও সম্পদ। এর সঙ্গে আছে বাগেরহাটের ষাটগম্বুজ মসজিদ ও সুন্দরবন। বিশ্ব সম্পদের তালিকা আরও বাড়াতে দেশের ১০টি পয়েন্টকে চিহ্নিত করে ইতোমধ্যে সংরক্ষণের কাজ শুরু হয়েছে। সাউথ এশিয়া ট্যুরিজম ইনফ্রাস্ট্রাকচার ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট (এসএটিআইডিপি) নওগাঁর পাহাড়পুর, বগুড়ার মহাস্থানগড় ও দিনাজপুরের কান্তজীর মন্দিরে অবকাঠামো স্থাপনা, পর্যটকদের অবকাশ কেন্দ্র, বাংলো, রেস্ট হাউস, উন্নতমানের কাফেটারিয়া, শপিংমল, জাদুঘর, প্রয়োজনীয় রাস্তাঘাট, ফুটপাথ প্রভৃতি কাজের সঙ্গে দৃষ্টিনন্দন এবং সৃষ্টিশীল শিল্পকর্ম নির্মাণ ও স্থাপন করছে। কাজ শেষ হওয়ার পর তা প্রতœতত্ত্ব অধিদফতরের কাছে হস্তান্তর করা হবে। উত্তরাঞ্চলীয় প্রতœতত্ত্ব অধিদতরের আঞ্চলিক পরিচালক নাহিদ সুলতানা জানান, ইতোমধ্যে ঢাকার লালবাগ, নওগাঁর হলুদ বিহার, দিনাজপুরের সিতাকোট বিহার সংরক্ষণ করা হয়েছে। আংশিক সংরক্ষিত হয়েছে কুমিল্লার ময়নামতি। সেখানে একসঙ্গে রয়েছে ৫০টি ঢিবি (প্রতœ ভাষায় মাউন্ট), বগুড়ার ভাসুবিহার (বৌদ্ধকীর্তির উচ্চতর বিদ্যায়তন), যশোরের ভরত ভায়না, নওগাঁর জগদল বিহার। এর সঙ্গে দ্রুতগতিতে সংরক্ষণের কাজ চলছে বগুড়ার মহাস্থানগড়, খুলনার এগারো শিবমন্দির ও দিনাজপুরের কান্তজীর মন্দির। এমন কাজের মধ্যেই নতুন করে নীলফামারীতে ধর্মপালের পুরাকীর্তি আবিষ্কৃত হয়েছে। প্রতœ সূত্র জানায়, ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট বা বিশ্ব সম্পদের তালিকায় এই জায়গাগুলো যাতে স্থান পায় সেই প্রক্রিয়ায় কাজ অনেকদূর এগিয়েও গিয়েছে। আশা করা হচ্ছে, পর্যায়ক্রমে এই প্রতœ স্পটগুলোও স্থান পাবে। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার মধ্যে বৌদ্ধদের পুরাকীর্তির অন্যতম বাংলাদেশ। বগুড়া, নওগাঁ ও কুমিল্লাসহ কয়েকটি স্থানে বৌদ্ধদের যত কীর্তি আছে তা দেখার জন্য বিশ্বের বিভিন্ন দেশের বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী এই দেশে আসে। সার্কভুক্ত বাংলাদেশ, ভারত, নেপাল ও ভুটানের প্রায় দেড় কোটি বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীকে আকৃষ্ট করতে দেশের প্রায় ৫শ’টি প্রতœতাত্ত্বিক স্থাপনা সংরক্ষণ করা হচ্ছে। রাজধানী ঢাকার প্রাচ্যের অক্সফোর্ড খ্যাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাচীন অবকাঠামোগুলো যদিও প্রতœ সাইট নয় তারপরও তা পর্যটন আকর্ষণে হাতছানি দেয়। এমন স্থাপত্যকলা এই দেশে পরম যতনে লালিত। রাজধানী ঢাকার কাছেই সোনারগাঁকে নিয়ে আছে কতই না কথা। সাধারণে প্রচলিত, মধ্যযুগে স্বাধীন সুলতানী শাসনে বাংলার রাজধানী ছিল সোনারগাঁ। সেখানে সুলতানী যুগের স্থাপনা হাতছানি দেয়। পৃথিবীর সবচেয়ে বড় ম্যানগ্রোভ সুন্দরবন, দীর্ঘতম সমুদ্রসৈকত কক্সবাজার, সূর্যোদয় ও সূর্যাস্ত দেখার কুয়াকাটা, সেন্টমার্টিন, বান্দরবানের নীলগিরি, নিঝুমদ্বীপ, রাজশাহীর পুঠিয়াসহ দেশের সর্বত্রই ছড়িয়েছিটিয়ে আছে কোথাও প্রতœসম্পদ, কোথাও প্রকৃতির নিসর্গের উদ্যান। বৌদ্ধদের কীর্তি আছে প্রায় সব জায়গাতেই। বৌদ্ধ কীর্তিকে প্রাধান্য দিয়েই এ বছরকে পর্যটন বর্ষ হিসেবে ঘোষণা করে ভিজিট বাংলাদেশ নামে বড় কর্মসূচী বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। দূরদেশ ও আশপাশের দেশ থেকে পর্যটকরা যাতে বাংলাদেশে সহজে আসতে পারে এ জন্য ভিসা সহজীকরণসহ অনেক ব্যবস্থা নেয়া হযেছে। যে সীমান্ত এলাকাগুলোতে সড়ক ও রেল যোগাযোগ বন্ধ হয়ে গিয়েছিল তা পুনরায় চালু করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। আকাশপথে ভ্রমণের এ্যারাইভাল ভিসা সুবিধার মতো সড়ক ও রেলপথেও তা (এ্যারাইভাল ভিসা) চালু করা যায় কিনা বিষয়টি ভেবে দেখা হচ্ছে। এই বিষয়ে সার্কভুক্ত দেশের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা চলছে। সূত্র জানায়, ১৯৬৫ সালের ৬ সেপ্টেম্বরের পর থেকে আজ পর্যন্ত নীলফামারীর চিলাহাটি রেল চেকপোস্টটি বন্ধ রয়েছে। এর আগে উভয় দেশের ট্রেন চলাচল ছিল। এই রেলপথ চালুসহ বাংলাবান্ধা ট্রানজিট পয়েন্ট বুড়িমারী চেক পয়েন্টকে পর্যটকদের জন্য এ্যারাইভাল ভিসার আওতায় আনা যায় কিনা বিষয়টি ভাবা হচ্ছে। বাংলাদেশ-ভারত সড়ক সীমান্তের উল্লেখযোগ্য বেনাপোল ও হিলি ইমিগ্রেশন চেক পয়েন্টেও পর্যটকদের জন্য এ্যারাইভাল ভিসা চালু করার বিষয়টি উত্থাপিত হয়েছে। সূত্র জানায়, এই বিষয়ে বাংলাদেশ একমত হয়েছে এবং জরিপ করে দেখা গেছেÑ এ্যারাইভাল ভিসা দেয়া হলে সহজেই বছরে অন্তত ৫০ লাখ পর্যটক বাড়বে। অন্যান্য দেশ থেকেও একই হারে পর্যটক সংখ্যা বেড়ে গিয়ে পর্যটন বছরের টার্গেট ছাড়িয়ে তা দ্বিগুণের কাছাকাছি পৌঁছে যাবে। সূত্র জানায়, এ্যরাইভাল ভিসার বিষয়টি নিয়ে ভারতের পক্ষে এখনও সাড়া মেলেনি। এদিকে পর্যটন শিল্পের সঙ্গে সম্পৃক্ত মোটেল, হোটেল, সড়কপথ, নৌপথ, আকাশপথ, রেলপথের বাহন, ডিউটি ফ্রি শপ, শপিংমল, শোরুম, সিটি সেন্টারগুলোতে পর্যটকদের জন্য ডিসকাউন্ট দেয়া শুরু হয়েছে। বিনোদন কেন্দ্র, ট্যুর অপারেটর কর্তৃপক্ষ পর্যটন বছরকে সামনে রেখে নানাবিধ সুবিধা প্রদান করছে। পর্যটক নিরাপত্তা প্রদানে ট্যুরিস্ট পুলিশ গেল প্রায় দু’বছর ধরে কার্যক্রম শুরু করে তার বিস্তৃতি ঘটিয়েছে। যদিও ট্যুরিস্ট পুলিশের সংখ্যা এখনও কম, তারপরও পর্যটক নিরাপত্তা বিধানে তারা আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করছে। সূত্র জানায়, পর্যটকদের নির্বিঘেœ ও স্বাচ্ছন্দে ভ্রমণের জন্য ট্যুরিস্ট পুলিশকে খুব সহজেই কাছে পাওয়ার সুযোগ করা হয়েছে। মোবাইলফোন ও স্মার্টফোন, ল্যাপটপ, নেটবুক, ফেসবুকের মাধ্যমে কোন পর্যটক অভিযোগ জানাবার সঙ্গেই সঙ্গেই সহায়তার জন্য দ্রুত এগিয়ে যাবে।
×