ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

শিল্পায়নের পথে-

প্রকাশিত: ০৩:৪৯, ২ মার্চ ২০১৬

শিল্পায়নের পথে-

কৃষিনির্ভর বাংলাদেশে প্রয়োজনীয় শিল্প-কারখানা সেভাবে গড়ে ওঠেনি। কলকারখানার ভেঁপুর শব্দ সেভাবে বেজে ওঠে না। শ্রমজীবী মানুষের হাত নতুন নতুন পণ্যে উৎপাদনে আগ্রহী হলেও সে অর্থে শিল্প-কারখানা নেই। তাই শ্রমসঙ্গীতও শোনা যায় না। অথচ দ্রুত অর্থনৈতিক উন্নয়নে প্রয়োজন শিল্পায়ন। আমদানি নির্ভরতা হ্রাস ও রফতানি পণ্য বাড়াতে দেশজুড়ে শিল্পায়নের প্রয়োজনের কথা প্রায় সময় বলা হলেও কার্যকর পদক্ষেপ তেমন নেয়া হয়নি। যেসব কারখানা গড়ে উঠেছে তা যেমন পরিবেশবান্ধব নয়, তেমনি নয় শ্রমবান্ধব। অপরিকল্পিতভাবে গড়ে ওঠা কারখানাগুলো নানা সমস্যারও তৈরি করে। এই সবকিছু বিবেচনায় নিয়ে দেশব্যাপী এক শ’ অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপনের লক্ষ্যে এগিয়ে যাচ্ছে সরকার। ছোট এই এক দেশ, ১৬ কোটি মানুষের ভার বহন করছে তবু। দেশের সমৃদ্ধির পাশাপাশি এই বিপুলসংখ্যক মানুষের কর্মসংস্থানের জন্যও শিল্পায়নের কোন বিকল্প নেই এটা সবার জানা থাকলেও শিল্পায়ন তো আর সহজসাধ্য কাজ নয়। এর জন্য প্রয়োজন হয় শিল্পায়নের উপযোগী পরিবেশ। সঙ্গে জমি, রাস্তাঘাট বা ভৌত অবকাঠামো, বিদ্যুত ও জ্বালানি নিরাপত্তা, পুঁজির সহজলভ্যতা, আইনশৃঙ্খলা রক্ষা ও অন্য সুযোগ-সুবিধা। শিল্পাঞ্চলগুলো হতে হবে পরিবেশবান্ধব। থাকতে হবে জলাধার, সবুজ বৃক্ষরাজি, সুন্দর বর্জ্য ব্যবস্থাপনা। দেশে পরিকল্পিতভাবে শিল্প-কারখানা গড়ে না তোলায় সমস্যার পাহাড় জমেছে। কৃষি জমিতে শিল্প স্থাপনের মাধ্যমে বিনষ্ট করা হয়েছে পরিবেশ। বর্জ্য নদীতে ও জমিতে পড়ে উর্বরতা নষ্ট করে আসছে। দুর্বিষহ হচ্ছে জনজীবন। জাতীয় অর্থনীতিতে শিল্পের অবদান বাড়ানো জরুরী। যদিও সে লক্ষ্যে শিল্পনীতি করা হয়েছে। কিন্তু নীতি কাগজেই রয়ে গেছে। পরিবেশবান্ধব শিল্প বিকাশের ক্ষেত্রটি তথাপি তৈরি হয়নি। বিনিয়োগকারীরাও নিশ্চিতভাবে বিনিয়োগ করতে পারছে না। তাছাড়া ২০২১ সালের মধ্যে মধ্য আয়ের দেশে উন্নীত হতে হলে শিল্পাঞ্চল গড়ে তোলাও জরুরী হয়ে পড়েছে। পঁচাত্তর পরবর্তী সময়ে দেশকে বিদেশী সাহায্যনির্ভর হিসেবে বহাল রাখার জন্য শিল্পায়নের প্রতি নজর দেয়া হয়নি। ফলে নতুন নতুন কারখানা গড়ে ওঠেনি, পোশাক শিল্প ছাড়া। বর্তমান ব্যবসা ও বিনিয়োগবান্ধব সরকার নানা পদক্ষেপ নিয়েছে। তৈরি করেছে নীতিমালা। তবে সরকার নিজে ব্যবসা করতে নয়, ব্যবসার পরিবেশ তৈরি করতে চায়। দেশের অর্থনীতি ব্যবস্থাপনায় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর অনুসৃত নীতির আলোকে সরকারী, বেসরকারী ও সমবায়ভিত্তিক অর্থ ব্যবস্থাকে গুরুত্ব দিচ্ছে বর্তমান সরকার। এ দেশের আর কোন মানুষ একটু ভাল কর্মসংস্থানের আশায় সাগরে ঝাঁপ দিয়ে কিংবা মরুভূমির তপ্ত বালুতে বেঘোরে প্রাণ হারাক তা চায় না শেখ হাসিনার সরকার। তাই উন্নয়ন ও কর্মসংস্থানের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে পরিকল্পিত উন্নয়নের পথ ধরেই সরকার অগ্রসর হতে চাইছে। ছোট হোক, বড় হোক শিল্পাঞ্চল গড়ে তোলাটাই জরুরী। তারই একটি হচ্ছে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ বা বেজার তত্ত্বাবধানে প্রাথমিকভাবে ১শ’ অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলা। এই পরিকল্পনার অংশ হিসেবে আনুষ্ঠানিকভাবে ১০টি শিল্পাঞ্চলের উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী। একটি কেন্দ্রীভূত অঞ্চলে বিদ্যুত ও গ্যাসের নিরবচ্ছিন্ন সরবরাহ কিংবা আইনশৃঙ্খলা নিশ্চিত করা যত সহজ, বিচ্ছিন্নভাবে স্থাপিত শিল্পে তা করা মোটেও সহজ নয়। শিল্পাঞ্চলে কেন্দ্রীয়ভাবে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা করা যায় বলে এ খাতে ব্যয়ও অনেক কম হয়। আমরাও চাই দেশ অগ্রগতির সোপানে হোক ধাবমান, সমৃদ্ধ হোক শিল্পে, পাশাপাশি অক্ষত থাকুক জনস্বাস্থ্য ও পরিবেশ। শিল্পায়ন হোক দ্রুতগতিতে।
×