ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

অধিকাংশ মিটার বিকল

চট্টগ্রামে অটোরিক্সায় বাড়তি ভাড়া

প্রকাশিত: ০৩:৩৮, ২ মার্চ ২০১৬

চট্টগ্রামে অটোরিক্সায় বাড়তি ভাড়া

স্টাফ রিপোর্টার, চট্টগ্রাম ॥ মঙ্গলবার সকালের ঘটনা। অফিসে যেতে নগরীর লালখান বাজার মোড়ে এসেছেন তরুণ আর্কিটেক্ট সাবরি ফয়সাল। নির্ধারিত সময়ে অফিসে পৌঁছতে দ্রুত একটি সিএনজি অটোরিক্সায় উঠে পড়লেন তিনি। উঠতেই চালকের শর্তে হোঁচট খেলেন তরুণ এ স্থপতি। চালক জানালেন মিটারে নয়, চুক্তিতে যাবেন অথবা মিটারে গেলেও তাকে ২০ টাকা বাড়তি দিতে হবে। চালকের কথায় ক্ষিপ্ত হয়ে সিএনজি অটোরিক্সা থেকে নেমে যান তিনি। সিদ্ধান্ত নেন, আজ সিএনজিতে মিটারেই চড়বেন। এরপর দীর্ঘ ঘণ্টা ধরে ২০-২৫টি সিএনজি অটোরিক্সা ঠিক করার চেষ্টা করলেন। কিন্তু কোন অটোরিক্সা চালকই মিটারে যেতে রাজি হয়নি। পরে বাধ্য হয়ে নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে বেশি দিয়েই তিনি অফিসে যান। একই দিন দুপুরের ঘটনা। সদ্য মাস্টার্স পাস করা ইমরান হোসেন ব্যক্তিগত কাজে হালিশহর যাবেন। দীর্ঘক্ষণ জিইসির মোড়ে দাঁড়িয়ে রয়েছেন। কোন সিএনজি হালিশহরে যেতে রাজি হচ্ছিল না। পরে একটি সিএনজি অটোরিক্সা চালক যেতে রাজি হন। কিন্তু নির্ধারিত ভাড়ার দ্বিগুণ দাবি করেন তিনি। যেখানে জিইসি মোড় থেকে ১০০ টাকা হালিশহর যাওয়া যেত, সেখানে ওই চালক দাবি করেন ১৮০ টাকা। মিটারে যাওয়ার কথা বললে চালক উল্টো ক্ষেপে যান। সময় স্বল্পতায় পরে ১৫০ টাকা ভাড়া দিয়ে হালিশহর যান ইমরান। শুধু সাবরি ফয়সাল আর ইমরান নন, সিএনজি অটোরিক্সায় চড়তে গিয়ে এভাবে প্রতিনিয়ত ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন নগরীর হাজার হাজার মানুষ। সিএনজি চালকদের স্বেচ্ছাচারিতায় প্রতিদিন বাড়তি ভাড়া গুনতে হচ্ছে যাত্রীদের। ফেব্রুয়ারি মাসের শুরুতে মিটার সংযোজনের পর থেকে অটোরিক্সা চালকরা যাত্রীদের জিম্মি করে এভাবে বাড়তি ভাড়া আদায় করছেন চালকরা। মিটার সংযোজন করলে কোন মিটারে ভাড়া নিচ্ছেন না। মিটারে যাওয়ার কথা বললে উল্টো তারা যাত্রীদের যাবেন না চাপ জানিয়ে দেন। গত এক মাস ধরে সিএনজি অটোরিক্সা চালকরা এভাবে স্বেচ্ছাচারিতায় মেতে উঠলেও ট্রাফিক পুলিশ নীরব ভূমিকা পালন করছে। গত মাসের শুরুতে মিটার সংযোজনের জন্য নগর ট্রাফিক পুলিশ অভিযান পরিচালনা করলেও মিটারে ভাড়া আদায় কার্যকর করার জন্য তারা কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি। মিটারে ভাড়া আদায় না করার ব্যাপারে পুলিশ সহানুভূতি দেখাচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। অভিযোগ রয়েছে, মিটারে চলাচল বাধ্যতামূলক করার পর অনেক অটোরিকশায় মিটার লাগানো হলেও এগুলোর বড় একটি অংশ নষ্ট, বিকল। আর নষ্ট মিটার দেখিয়ে পার পেয়ে যাচ্ছেন চালকরা। মিটার নষ্ট হওয়ায় সেই আগের মতোই দরদাম করে যাত্রীদের অটোরিক্সায় উঠতে হচ্ছে। দিতে হচ্ছে বাড়তি ভাড়া। ফলে চালকদের জন্য মিটারগুলো হয়ে উঠেছে মামলা থেকে রেহাই পাওয়ার রক্ষাকবজ। অপরদিকে কিছু কিছু সিএনজি অটোরিক্সা মিটারে চলাচল করলেও ওইগুলো বাড়তি বিল উঠছে। কিলোমিটার প্রতি বাড়তি ভাড়া ধরে টেম্পারিং করে রাখায় মিটারগুলো প্রতি কিলোমিটার ১২টার পরিবর্তে ১৫ থেকে ২০ টাকা উঠছে। গত ১ ফেব্রুয়ারি থেকে মিটারে ভাড়া আদায়ের বিষয়টি নিশ্চিত করতে সিএমপি, বিআরটিএ এবং চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন একযোগে অভিযান চালায়। অভিযানের প্রথম দিনে নগরীতে ১৪২৩টি সিএনজির বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়। পরদিন ২ ফেব্রুয়ারি ২৬০টি মিটারবিহীন সিএনজির বিরুদ্ধে মামলা করে পুলিশ। এর পরই হঠাৎ করে সেই অভিযানে ভাটা পড়ে। ফলে আবারো স্বমূর্তিতে ফিরে আসেন সিএনজি চালকরা। মিটারের বদলে মর্জি মাফিক ভাড়া আদায়ে মেতে ওঠেন তারা। গত এক মাস যাবত এভাবে চলতে থাকলেও চালকদের এ স্বেচ্ছাচারিতা বন্ধে কোন উদ্যোগ নেয়নি কর্তৃপক্ষ। ট্রাফিক পুলিশ ও বিআরটিএ এর নীরবতায় উল্টো মিটার সংযোজন ছাড়াই বেশ কিছু সিএনজি নগরীতে চলাচল করছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, চট্টগ্রামে নিবন্ধনযুক্ত সিএনজি রয়েছে ১৩ হাজার। এসব সিএনজির গত সপ্তাহ পর্যন্ত মাত্র ৮ হাজার সিএনজি মিটার লাগানোর পর বিআরটিএ থেকে ছাড়পত্র গ্রহণ করেছে। এই হিসেবে বলা যায়, নগরীতে এখনও মিটারবিহীন সিএনজি রয়েছে ৫ হাজার। এর সঙ্গে অনুমোদনহীন এএফআর লেখা আছে আরও ৫ হাজার সিএনজি অটোরিক্সা। সিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (প্রশাসন, অর্থ ও ট্রাফিক) একেএম শহিদুর রহমান বলেন, মিটারে যাওয়া-না যাওয়া নিয়ে যাত্রীরা সমস্যায় পড়ছেন বলে আমরা জানতে পেরেছি। আমরা আগে শতভাগ মিটার সংযোজন নিশ্চিত করছি। পরে মিটারে ভাড়া কার্যকর নিয়ে কাজ করব। চালকদের মিটারে না যাওয়ার কারণ নেই। কারণ মিটারে গেলে তাদের লাভ বেশি। মিটারে বাড়তি বিল ওঠার বিষয়ে তিনি বলেন, মিটার নষ্ট ও মিটারে বাড়তি বিল ওঠার সুযোগ নেই। মিটারগুলো বিআরটিএ থেকে টেম্পারিং করা হয়। বাইরে থেকে কারও ভাড়া বাড়িয়ে টেম্পারিং করার সুযোগ নেই।
×