ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

সবচেয়ে বেশি ব্র্যাক ও স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংকের

স্প্রেড সীমা লঙ্ঘন ২৬ ব্যাংকের

প্রকাশিত: ০৩:৩০, ২ মার্চ ২০১৬

স্প্রেড সীমা লঙ্ঘন ২৬ ব্যাংকের

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ ব্যাংকিং খাতে ঋণ ও আমানতের সুদ ব্যবধান (স্প্রেড) আবারও বেড়েছে। জানুয়ারি মাসে গড় স্প্রেড দাঁড়িয়েছে ৪ দশমিক ৮৪ শতাংশীয় পয়েন্ট। যা ডিসেম্বর মাসেও সমান ছিল। আমানতের চেয়ে ঋণের সুদহার কম হারে কমায় স্প্রেড বেড়েছে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা। এদিকে, সার্বিক ব্যাংকিং খাতে গড় স্প্রেড ৫ শতাংশীয় পয়েন্টের নিচে থাকলেও বেসরকারী ও বিদেশী খাতের ব্যাংকগুলোর স্প্রেড এখনও ৫ শতাংশীয় পয়েন্টের ওপরে রয়েছে। এছাড়া জানুয়ারি মাসে স্প্রেড বেশি রয়েছে এমন ব্যাংকের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২৬টি। এর মধ্যে ৬টি বিদেশী ও ১৯টি বেসরকারী এবং ১টি সরকারী ব্যাংক। এ মাসে সবচেয়ে বেশি স্প্রেড রয়েছে বেসরকারী খাতের ব্র্যাক ব্যাংকের। এরপর রয়েছে বিদেশী খাতের স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংকের। বিনিয়োগের মন্থরগতির কারণে দীর্ঘদিন ধরেই আমানতের পাশাপাশি ঋণের সুদও কমছে। তবে আমানতের সুদহার যে হারে কমছে, সে হারে ঋণের সুদ কমাচ্ছে না ব্যাংকগুলো। বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা অনুযায়ী, কোন ব্যাংকের ঋণ ও আমানতের সুদ ব্যবধান ৫ শতাংশীয় পয়েন্টের বেশি হতে পারবে না। কিন্তু অনেক ব্যাংকই অতি মুনাফা প্রবণতার কারণে প্রত্যাশিতহারে ঋণের সুদ কমাচ্ছে না। অন্যদিকে, তহবিল ব্যয় কমানোর অজুহাতে তারা আমানতের সুদ কমিয়ে দিচ্ছে। এদিকে, সুলভ বিনিয়োগ পরিবেশ নিশ্চিতে দীর্ঘদিন ধরেই ব্যবসায়ীরা ঋণের সুদহার এক অঙ্কে নামিয়ে আনার দাবি জানিয়ে আসছেন। সম্প্রতি ব্যবসায়ীদের দীর্ঘ দিনের দাবির প্রেক্ষিতে ঋণের সুদ হার সর্বোচ্চ ১৪ শতাংশ নির্ধারণ করেছে দেশে কার্যরত রাষ্ট্রায়ত্ত বাণিজ্যিক ও বিশেষায়িত ব্যাংকগুলো। পাশাপাশি মেয়াদী আমানতের সুদ হারও এক শতাংশ পর্যন্ত কমিয়ে এনেছে ব্যাংকগুলো। এসব ব্যাংক থেকে আমানতকারীরা এখন সর্বোচ্চ ৭ শতাংশ সুদ পাবেন। এর আগে সর্বোচ্চ ৮ শতাংশ সুদ দিত রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলো। সূত্র জানায়, ব্যবসায়ী ও শিল্পপতিদের দীর্ঘদিনের দাবি ব্যাংক ঋণের সুদহার ১০ শতাংশের নিচে নামিয়ে আনা। সুদহারের বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক সরাসরি নিয়ন্ত্রণ না থাকলেও ব্যাংকগুলোকে সুদহার কমিয়ে আনার নির্দেশনা দিয়ে আসছে। গত কয়েক মাস ধরে আমানত ও ঋণ উভয় ক্ষেত্রে সুদ হার কমছে। ফলে গত মার্চে আমানত ও ঋণের সুদ হারের ব্যবধান (স্প্রেড) রেকর্ড পরিমাণ কমে ৫ শতাংশীয় পয়েন্টের নিচে নেমে এসে দাঁড়ায় ৪ দশমিক ৮৭ পয়েন্টে। এপ্রিলে স্প্রেড আরও কমে ৪ দশমিক ৮৮ শতাংশীয় পয়েন্টে নেমে এসেছে। মে মাসে স্প্রেড আরও কমে ৪ দশমিক ৮৩ শতাংশীয় পয়েন্টে নেমে আসে। তবে জুন মাস শেষে স্প্রেড একটু বেড়ে দাঁড়ায় ৪ দশমিক ৮৭ শতাংশ। জুলাই মাস শেষে স্প্রেড কমে আসে ৪ দশমিক ৭৯ শতাংশে। আগস্ট মাসে স্প্রেড কমে আসে ৪ দশমিক ৭৭ শতাংশ। সেপ্টেম্বরে একটু বাড়লেও অক্টোবরে এসে স্প্রেড নেমে আসে ৪ দশমিক ৭৭ শতাংশে। নবেম্বরে স্প্রেড ছিল ৪ দশমিক ৮৩। সর্বশেষ ডিসেম্বর ও জানুয়ারি মাসে স্প্রেড দাঁড়ায় ৪ দশমিক ৮৪ শতাংশ। বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনে দেখা যায়, জানুয়ারি মাসে ব্যাংকিং খাতে গড় ঋণের সুদ দাঁড়িয়েছে ১১ দশমিক ০৫ শতাংশ। যা ডিসেম্বরে ছিল ১১ দশমিক ১৮ শতাংশ। অন্যদিকে ডিসেম্বরে এ খাতে আমানতের গড় সুদহার কমে হয়েছে ৬ দশমিক ২১ শতাংশ। যা নবেম্বরে ছিল ৬ দশমিক ৩৪ শতাংশ। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এক প্রতিবেদনে দেখা গেছে, সবচেয়ে বেশি স্প্রেড রয়েছে বেসরকারী খাতের ব্র্যাক ব্যাংকের। ব্যাংকটির স্প্রেড ৯ দশমিক ৮৬ শতাংশ। এরপরে রয়েছে বিদেশী খাতের স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংকের। ব্যাংকটির স্প্রেড ৯ দশমিক ৫৭ শতাংশ। ঋণ ও আমানতের সুদের হারের ব্যবধানের মধ্যে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ অবস্থানে রয়েছে বেসরকারী খাতের ডাচ্ বাংলা ব্যাংক। তাদের এই ব্যবধান ৭ দশমিক ৬৩ শতাংশ। এই ব্যাংকটিও খুব কম সুদে আমানত সংগ্রহ করে। আবার ঋণের সুদের হার বেশি। যে কারণে তাদের স্প্রেডও বেশি। তৃতীয় অবস্থানে থাকা ওয়ান ব্যাংকের স্প্রেড ৬ দশমিক ৯৬ শতাংশ। চতুর্থ অবস্থানে থাকা উত্তরা ব্যাংকের স্প্রেড ৫ দশমিক ১৩ শতাংশ। পঞ্চম অবস্থানে থাকা আইএফআইসি ব্যাংকের স্প্রেড ৫ দশমিক ৭৮ শতাংশ। অন্য ব্যাংকগুলোর মধ্যে এবি ব্যাংকের ৫ দশমিক ৬৭ শতাংশ, ট্রাস্ট ব্যাংকের স্প্রেড ৫ দশমিক ৫১ শতাংশ, ঢাকা ব্যাংকের ৫ দশমিক ৩৫ শতাংশ, দি সিটি ব্যাংকের ৫ দশমিক ৩২ শতাংশ, এক্সিম ব্যাংকের ৫ দশমিক ৩১ শতাংশ, যমুনা ব্যাংকের ৫ দশমিক ২২ শতাংশ, পূবালী ব্যাংকের ৫ দশমিক ২১ শতাংশ, ব্যাংক এশিয়ার ৫ দশমিক ১৮ শতাংশ, ইস্টার্ন ব্যাংকের ৫ দশমিক ১৫ শতাংশ, প্রিমিয়ার ব্যাংকের ৫ শতাংশ। নতুন ব্যাংকগুলোর মধ্যে ইউনিয়ন ব্যাংকের স্প্রেড ৬ দশমিক ৪৭ শতাংশ, মধুমতি ব্যাংকের স্প্রেড ৫ দশমিক ৭৭ শতাংশ, এনআরবি ব্যাংকের ৫ দশমিক ৫২ শতাংশ, এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংকের ৫ দশমিক ৩৪ শতাংশ, মেঘনা ব্যাংকের ৫ দশমিক ৩ শতাংশ। বিদেশী ব্যাংকগুলোর মধ্যে বর্তমানে স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংকের স্প্রেড ৯ দশমিক ৫৭ শতাংশ, সিটি ব্যাংক এনএর ৭ দশমিক ২৭ শতাংশ, স্টেট ব্যাংক ইন্ডিয়ার ৭ দশমিক ৫ শতাংশ, এইচএসবিসি ব্যাংকের ৬ দশমিক ২৩ শতাংশ ও কমার্শিয়াল ব্যাংক অব সিলনের ও উড়ি ব্যাংকের ৫ দশমিক ৫৫ শতাংশ। উল্লেখ্য, শতাংশ থেকে শতাংশের মধ্যে কমবেশির তুলনা করতে শতাংশীয় পয়েন্ট ব্যবহার করা হয়। যেমন ৫ শতাংশ থেকে কমে ৩ শতাংশ হলে এটি ২ শতাংশীয় পয়েন্ট কমলো বলে বিবেচিত হবে।
×