ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

পাকিস্তানের জয়ে আমিরাতের বিদায়

প্রকাশিত: ০৫:৪৬, ১ মার্চ ২০১৬

পাকিস্তানের জয়ে আমিরাতের বিদায়

মিথুন আশরাফ ॥ সংযুক্ত আরব আমিরাতের সব আশা-ভরসা শেষ করে দিলেন উমর আকমল ও শোয়েব মালিক। দুইজন মিলে টি২০তে চতুর্থ উইকেটে রেকর্ড ১১৪ রানের অবিচ্ছিন্ন জুটি গড়ে জেতার স্বপ্ন দেখা আমিরাতকে হারিয়ে দিলেন। দুইজনের জোড়া অর্ধশতকে ৭ উইকেটের জয় তুলে নিল পাকিস্তান। সোমবার মোহাম্মদ আমির হয়ে গেলেন যেন আমজাদ জাভেদ! ভারতের বিপক্ষে শুরুতেই টপাটপ তিন উইকেট নিয়ে ফেলেছিলেন আমির। পাকিস্তানের বিপক্ষে একই কাজ করলেন আমজাদ। ফলেও কোন ভিন্নতা মিলল না। আমিরের বিধ্বংসী বোলিংয়ের পরও ভারত জিতে। আমজাদের তোপের পরও পাকিস্তান জিতে। এবার এশিয়া কাপে প্রথম জয় তুলে নেয়। ১৭ রানে ৩ উইকেট হারানো পাকিস্তান শেষে সহজ জয়ই পায়। এশিয়া কাপে নিজেদের প্রথম দুই ম্যাচে বোলিংয়ে প্রতিপক্ষকে ভোগাতে পারলেও ব্যাটিংয়ে গিয়েই নাজেহাল হয়ে যায় সংযুক্ত আরব আমিরাত। হার হয়। এবার পাকিস্তানের বিপক্ষে ব্যাটিং দ্যুতি ছড়াল আরব আমিরাত। সাইমান আনোয়ারের ৪৬, আমজাদ জাভেদের অপরাজিত ২৭, মুহাম্মাদ উসমানের ২১ ও মোহাম্মদ নাভিদের অপরাজিত ১০ রানে ২০ ওভারে ৬ উইকেট হারিয়ে ১২৯ রান করে আরব আমিরাত। যেখানে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ১১৫ ও বাংলাদেশের বিপক্ষে ৮২ রানের বেশি করতে পারেনি আরব আমিরাত, সেখানে দলটি পাকিস্তানের বিপক্ষে ১৩০ রানের কাছাকাছি চলে যায়! কিন্তু এবার ব্যাটিংয়ে দুর্দান্ত করে বোলিংয়ে শুরুতে পাকিস্তানকে ভোগালেও শেষ পর্যন্ত সেই ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে পারেনি। ৩ উইকেটের পর যে আর কোন উইকেটই তুলে নিতে পারল না আরব আমিরাতের বোলাররা। ১৮.৪ ওভারে ১৩১ রান করে জিতে যায় পাকিস্তান। এ জয়ে ফাইনালে খেলার আশা এখনও জিইয়ে রয়েছে পাকিস্তানের। আর টানা তিন হারে বিদায় নিয়েছে আরব আমিরাত। অভিজ্ঞতায় একদল আকাশচুম্বী অবস্থায়। আরেকদল মাত্র হাঁটিহাঁটি পা পা অবস্থায়। একদল টি২০তে সবচেয়ে বেশি ম্যাচ খেলা দল। সেই দলটি পাকিস্তান। টি২০তে প্রথম দল হিসেবে ১০০ টি২০ খেলেছে। আরেকদল, মাত্র ১৭টি টি২০ ম্যাচ খেলছে। সেই দলটি হচ্ছে সংযুক্ত আরব আমিরাত। টি২০ ম্যাচ খেলার দিক দিয়ে সেরা ১৫তেও নেই আরব আমিরাত। অভিজ্ঞতার এ হিসেবই বলছে, আকাশ আর পাতালে থাকা দলের মধ্যে লড়াই হয়েছে। সেখানে ফলও অনুমিতই! পাকিস্তান ১০০তম টি২০ ম্যাচে জয় তুলে নিল। আমিরাত দুর্বল দলই। অভিজ্ঞতাতেও পিছিয়ে। সেই অভিজ্ঞতার কাছেই বার বার মাত খাচ্ছে দলটি। তা না হলে ২৫ বলে জিততে যখন পাকিস্তানের ৩৮ রান লাগে, এমন সময়ে ৪১ রানে থাকা শোয়েব মালিকের ক্যাচটি তালুবন্দী করতে ব্যর্থ হন উসমান! এমন সুযোগ যখন মালিকের মতো ব্যাটসম্যান পান, তখন কী আর উইকেটে শুধু দাঁড়িয়ে থাকেন। হাত খুলে মারা শুরু করেন। তাই দেখা গেল। মুহূর্তেই অর্ধশতক করে ফেলেন। চার-ছক্কা হাঁকিয়ে ৮ বল বাকি থাকতেই ম্যাচ জিতিয়ে দেন। শোয়েব অপরাজিত ৬৩ রান করেন। শোয়েবের সঙ্গে উমরও শেষে ধুন্ধুমার ব্যাটিং করে অপরাজিত ৫০ রান করেন। ১২ রানে তিন উইকেট হারিয়ে ফেলে আরব আমিরাতও। যখন দলটি ধুঁকছে তখনই ব্যাটিং শক্তি দেখিয়ে দেয় আরব আমিরাত। টি২০তে সর্বনি¤œ রানে অলআউট হওয়া হল্যান্ডের (৩৯ রান করেছে) অবস্থা হওয়ার ইঙ্গিত যখন মিলতে শুরু করে তখন ব্যাট হাতে ঝলক দেখিয়ে দেন সাইমান আনোয়ার। আমির, সামি, ইরফান, আফ্রিদির মতো বোলারের বলগুলো অনায়াসে খেলে গেলেন। ৪২ বলে ৪৬ রান করলেন। এর মধ্যে আবার ৫টি চার ও ২ ছক্কাও হাঁকালেন! সাইমানের ব্যাটিং যেন ম্যাড়মেড়ে একটি ম্যাচে ‘প্রাণ’ এনে দেয়। সাহস দেখিয়ে মোহাম্মদ নাওয়াজের বলেই দুটি ছক্কা হাঁকালেন। লং অফ ও মিড উইকেট দিয়ে যে বিশাল ছক্কা হাঁকালেন, চোখ জুড়িয়ে গেল সবার। দলকে ৭২ রানে রেখে সাইমান আউট হলেন। এর আগে ৪১ রানে আরেকটি উইকেট হারানোয় ৫ উইকেটের পতন ঘটে আরব আমিরাতের। তখনও ছয় ওভারের বেশি বাকি থাকে। সেই ৬ ওভারে আরও ঝলক দেখায় আরব আমিরাত। উসমান ও আমজাদ মিলে তো দলকে বহুদূরই নিয়ে যান। দুইজন মিলে ৪৬ রানের জুটিও গড়েন। ২১ রান করা উসমান ১১৮ রানের সময় আউট হন। তার আগেই টেস্ট খেলুড়ে দলের বিপক্ষে টি২০তে সর্বোচ্চ স্কোর করার রেকর্ডটি গড়ে ফেলে আরব আমিরাত। এবার এশিয়া কাপেই শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে যে ১১৫ রান করেছিল দলটি, সেটিই টেস্ট খেলুড়ে দলের বিপক্ষে তাদের করা সর্বোচ্চ স্কোর ছিল। পাকিস্তানের বিপক্ষে তা ছাড়িয়ে আমজাদ জাভেদের অপরাজিত ২৭ ও মোহাম্মদ নাভিদের অপরাজিত ১০ রানে ১২৯ রানে চলে যায় আরব আমিরাত। প্রথম দুই ম্যাচে ব্যাটিংয়ে যেখানে ভোগে দলটি, সেখানে এবার ব্যাটিংয়ে ভাল করে। বোলিংয়েও শুরুতে ঝলক দেখিয়ে ঝিমিয়ে পড়ে! তাতে হারই হয় নিয়তি। পাকিস্তান-আমিরাত ম্যাচটি নিয়ে কারোর ভেতরই খুব বেশি আকর্ষণ দেখা গেল না। দর্শক নেই মাঠে। নেই কোন উত্তাপ। সবারই যে ধারণা হয়ে যায়, আমিরাত হারতেই চলেছে। এমন সময় ইতিহাস ঘাটাঘাটিতেই সবার মনোযোগ থাকে। সেই ইতিহাস থেকেই জানা গেল, প্রতি চার বছর পরপর যে একবার ২৯ ফেব্রুয়ারি ঘুরে আসে, যাকে লিপইয়ার বলা হয়; বছরে একটি দিন বাড়তি পাওয়া যায়, সেই দিনটিতে অঘটন ঘটার ইতিহাসও আছে। আর সেটি হচ্ছে, ১৯৯৬ সালের ওয়ানডে বিশ্বকাপে ২০ বছর আগে, ২৯ ফেব্রুয়ারি ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হারিয়েছিল কেনিয়া। ওয়েস্ট ইন্ডিজের সঙ্গে সেটিই ছিল কেনিয়ার প্রথম ম্যাচ। সোমবার পাকিস্তানের বিপক্ষেও প্রথমবারের মতো টি২০ খেলেছে আরব আমিরাত। তাহলে কী কোন অঘটন ঘটতে পারে? সেই প্রশ্নও উঠল। এবার যে ব্যাটিংয়ে ভাল করে ফেলল আরব আমিরাত। কিন্তু শেষ পর্যন্ত বোলিংয়ে শুরুর ত্রাস বজায় রাখতে না পারায় হেরে বিদায় নিল দলটি।
×