ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

আজ শেষ দিন

মৌ মেলায় বিপুল সাড়া, দর্শনার্থীদের উপচেপড়া ভিড়

প্রকাশিত: ০৫:৪৬, ১ মার্চ ২০১৬

মৌ মেলায় বিপুল সাড়া, দর্শনার্থীদের উপচেপড়া ভিড়

স্টাফ রিপোর্টার ॥ মধু চাষিদের উদ্বুদ্ধকরণ, উৎপাদন ও মধু রফতানির উদ্দেশ্য নিয়ে শুরু হওয়া তিন দিনব্যাপী চলমান মৌ মেলায় সাড়া পাওয়া গেছে। দ্বিতীয় দিনের মধ্য দুপুরেও মেলা প্রাঙ্গণে ছিল দর্শনার্থীদের বেশ আনাগোনা, বিকেলের দিকে তা রূপ নেয় উপচেপড়া ভিড়ে। আগত দর্শনার্থীরা জেনে নিচ্ছেন মধুর গুণাগুণ, বেছে নিচ্ছেন পছন্দের মধু। কৃষি মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে ‘মিলবে পুষ্টি বাড়বে ফলন, আয় বাড়াবে মৌ-পালন’ সেøাগানকে সামনে রেখে রাজধানীর খামারবাড়ী কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন, বাংলাদেশ (কেআইবি) মিলনায়তন চত্বরে চলমান ‘মৌ মেলা-২০১৬’র শেষ দিন আজ মঙ্গলবার। সোমবার মেলায় প্রবেশের মুখেই দেখা গেল বড় আকারের একটি মৌচাক। দেখে মনে হয় মাছিগুলো উড়ে এসে এখনই বসিয়ে দেবে কামড়, কিংবা উড়ে গিয়ে সরিষা ক্ষেত থেকে সংগ্রহ করে আনবে মধু। তবে মৌচাকটি বাস্তবের নয়, দর্শনার্থীদের সামনে মৌচাক ও মধু চাষের তথ্য তুলে ধরতেই অভিনব এই পদ্ধতির আশ্রয়। মেলার আয়োজক সূত্রে জানা যায়, জাতীয় পর্যায়ে মৌ মেলার আয়োজন এবারই প্রথম, সরকারী-বেসরকারী প্রতিষ্ঠানের মোট ৩৪টি স্টল মেলায় অংশ নিয়েছে। সোমবার মেলা ঘুরে দেখা যায়, প্রতিটি স্টলেই নানা ধরনের মধু। বর্ণনা করা হচ্ছে নিজেদের সংগৃহীত মধুর গুণাগুণ। এমনকি জানানো হচ্ছে মৌচাষের ইতিবৃত্ত। জাতীয় পুরস্কার প্রাপ্ত মতি মধুর স্টলে কথা হয় মোহাম্মদ পাভেল হোসেনের সঙ্গে। তিনি জনকণ্ঠকে বলেন, পারিবারিক ভাবেই আমরা এ ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। দাদা মধুর ব্যবসার সঙ্গে জড়িত ছিলেন, সেই সূত্রে বাবা। সে কারণেই আমাকে এ প্রতিষ্ঠানের হাল ধরতে হয়েছে। দাদা বাবাকে শিখিয়েছেন কোন পদ্ধতিতে মৌচাক থেকে ভাল মানের মধু সংগ্রহ করতে হয়। দাদার শেখানো পদ্ধতিতেই এগিয়ে চলছে আমাদের এই প্রতিষ্ঠান। প্রতিষ্ঠানটির দীর্ঘ ৫০ বছরের সাফল্য রয়েছে, বিক্রয়ের দিক দিয়ে সবার উপরে অবস্থান করায় জাতীয় প্রেসক্লাব থেকে ২০১১ সালে পেয়েছি জাতীয় পুরস্কার। মধুর গুণগতমান নিয়ে কথা বলতে গেলে তিনি বলেন, মেলায় অংশ নেয়া প্রতিটি স্টলেই খাটি মধু। এখানে কোন ভেজালের সুযোগ নেই। পাভেল বলেন, বহির্বিশ্বেও মধুর চাহিদা বেশ। তবে আমাদের দেশে ভারতীয় মধুর নাম করে যা বিক্রি হয় তা আসলে দেশের। মধু রফতানিতে রফতানিকারকদের এগিয়ে আসতে হবে। বিশেষত আমাদের মতি মধুর চাহিদাও বাইরের দেশে বেশ, তবে সঙ্কট রয়েছে রফতানিকারকের। সুন্দরবন বি এন্ড হানি ফার্ম লিমিটেডের বিক্রয়কর্মী মোঃ তানভীর বলেন, সুন্দরবনের পার্শ¦বর্তী এলাকায় আমাদের ভ্রাম্যমান খামার রয়েছে। সাতক্ষীরার আশপাশে বক্স বসিয়ে আমাদের দক্ষ কর্মী দ্বারা সংগৃহীত হয় এই মধু। পরবর্তীতে তা সারাদেশে সরবরাহ করা হয়। এছাড়া সরাসরি মৌয়ালের কাছ থেকেও মধু সংগ্রহ করা হয়ে থাকে, তবে এ ক্ষেত্রে অবশ্যই গুণগতমান বজায় রাখাই আমাদের লক্ষ্য। তিনি আরও জানান, মেলায় বিক্রি বেশ ভাল। জানা গেল, তাদের স্টলে ৬৪০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে সুন্দরবন হানি, ৫০০ টাকা কেজি ধরে লিচু মধু, এছাড়া মিক্সড মধু বিক্রি হচ্ছে ৬০০ টাকা কেজি ধরে। ‘মা পিউর মধু’র স্টলে কথা হয় জহুরা বেগমের সঙ্গে। মেলায় আগত দর্শনার্থী ও বেচাকেনা নিয়ে তিনিও বেশ সন্তুষ্ট। জহুরা জনকণ্ঠকে বলেন, মেলার প্রথম দিনে প্রায় ১৪ হাজার টাকার মধু বিক্রি হয়েছে। আজও বিক্রি বেশ ভাল। মধুর প্রতি কোন বয়সের মানুষের আগ্রহ বেশি এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, প্রায় সব বয়সী মানুষই মধু ক্রয় করছেন, যুবক-বৃদ্ধ সবাই। তবে যাদের বয়স একটু বেশি- মধুর প্রতি তাদের আগ্রহই বেশি। আয়োজক ও মধু চাষী সূত্রে আরও জানা যায়, দেশে যে পরিমাণ সরিষা চাষ হয় তার তুলনায় আমরা মাত্র ২০ শতাংশ মধু আহরণ করতে পারি। ৮০ শতাংশ মধু আহরণ করা হয় না। এ কারণে ক্ষুদ্র চাষি ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের মধু আহরণ ও চাষের প্রশিক্ষণ দিতে হবে। তাহলে আমরা মধু রফতানি করতে পারব। একই সঙ্গে মধু উৎপাদন বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে চিনি আমদানিও কমে যাবে। বাংলাদেশে প্রতিবছর ৫৫০ টন মধু প্রসেস করতে পারে, গত বছর ৫০০ কোটি টাকার মধু রফতানি হয়েছে। মেলার সার্বিক সফলতা প্রসঙ্গে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের হার্টিকালচার উইং-এর অতিরিক্ত পরিচালক ও মেলা বাস্তবায়ন কমিটির আহ্বায়ক কুদরত-ই-গনী জনকণ্ঠকে বলেন, জাতীয় পর্যায়ে প্রথমবারের মতো আয়োজিত এই মৌ মেলার প্রথম দিনেই বেশ সাড়া পেয়েছি। বিকেলের দিকে দেখা গেছে দর্শনার্থীদের উপচেপড়া ভিড়। বেচাকেনাও কোন অংশ কম ছিল না, ফলে সার্বিকভাবে মৌচাষেও পড়বে ইতিবাচক প্রভাব।
×