ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

সংবিধান সমুন্নত রাখতে হবে ॥ রওশন

প্রকাশিত: ০৫:৪৫, ১ মার্চ ২০১৬

সংবিধান সমুন্নত রাখতে হবে ॥ রওশন

সংসদ রিপোর্টার ॥ বিরোধী দলের নেতা বেগম রওশন এরশাদ বলেন, জাতীয় পার্টি কখনও নির্বাচন বর্জনের রাজনীতিতে বিশ্বাস করে না। আমাদের দল কখনও কোন নির্বাচন বর্জন করেনি, প্রতিটি নির্বাচনে অংশ নিয়েছে। গণতন্ত্রকে অব্যাহত ও সংবিধানকে সমুন্নত রাখতেই চরম প্রতিকূলতার মধ্যে জাতীয় পার্টি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে। প্রত্যেক দেশে নির্বাচন হয় রাজনৈতিক সরকারের অধীনে। আমাদের দেশে রাজনীতিবিদরা একে অপরকে বিশ্বাস করি না বলেই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কথা আসে। আমরা রাজনীতিবিদরা যদি নিজেদের বিশ্বাস না করি, তবে জনগণ আমাদের কীভাবে বিশ্বাস করবে। এটা সবাইকে ভেবে দেখা উচিত। স্পীকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে রাষ্ট্রপতির ভাষণের ওপর আনীত ধন্যবাদ প্রস্তাবের সমাপনী আলোচনায় অংশ নিয়ে তিনি এসব কথা বলেন। বিরোধী দলের নেতা ছাড়াও বক্তব্য রাখেন সরকারি দলের জ্যেষ্ঠ নেতা শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু। সমাপনী আলোচনায় অংশ নিয়ে বিরোধী দলের নেতা বেগম রওশন এরশাদ নির্বাচন বানচালের নামে দেশজুড়ে সন্ত্রাস-সহিংসতার কথা উল্লেখ করে বলেন, ৫ জানুয়ারি নির্বাচন অনুষ্ঠান ছাড়া আর কোন উপায় ছিল না। অনেকে নির্বাচন বর্জন করেছে। জাতীয় পার্টি কখনও কোন নির্বাচন বর্জন করেনি, অংশগ্রহণ করেছে। আমাদের চিন্তাধারা হলো গণতন্ত্রকে অব্যাহত ও সংবিধানকে সমুন্নত করা। সে কারণেই চরম প্রতিকূলতার মধ্যেও আমরা নির্বাচনে অংশ নিয়েছি, এখন গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিতে কাজ করে যাচ্ছি। রওশন এরশাদ বলেন, বিশ্বায়নের যুগে তথ্যপ্রযুক্তি কাজে লাগিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে। সেদিক লক্ষ্য রেখে ডিজিটাল বাংলাদেশে বিনির্মাণ সত্যিই প্রশংসনীয়। সীমান্ত চুক্তি বাস্তবায়ন এবং সমুদ্রসীমা বিজয়ের জন্য সরকারকে ধন্যবাদ জানিয়ে তিনি বলেন, দেশে এখন খাদ্যের কোন অভাব নেই। কিন্তু সবাই কী নিরাপদ খাদ্যে খেতে পাচ্ছে? নতুন প্রজন্মকে কতটুকু নিরাপদ খাদ্য দিতে পারছি? কারণ দেশের আজ সবকিছুতে ভেজাল। এমনকি ওষুধে ভেজাল, ডাক্তারেও ভেজাল! শাক-সবজিতে এত কীটনাশক পাওয়া যাচ্ছে যে তা গ্রহণ করে ভয়াল রোগে আক্রান্ত হচ্ছে দেশের মানুষ। তিনি বলেন, প্রত্যেক দিন কঠোরভাবে এসব মনিটরিং করা যায়, তবে তা বন্ধ হবে। জাতি হিসেবে আমরা অসুস্থ হয়ে পড়লে সরকার কাকে নিয়ে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাবে- এমন প্রশ্নও করেন তিনি। যানজট সমস্যার কথা উল্লেখ করে বিরোধী দলের নেতা বলেন, যানজটের সমস্যা সমাধান না হলে দেশ ও জাতি আর্থিক এবং শারীরিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। যানজটে আটকে থাকা ৭০ ভাগ মানুষ কিছু না কিছু রোগে ভুগছেন। হাজার হাজার কোটি টাকা দেশের ক্ষতি হচ্ছে। দেশের মূল্যবান সময় নষ্ট হচ্ছে। বেশিরভাগ যানবাহনের লাইসেন্স নেই, অনভিজ্ঞরা গাড়ি চালাচ্ছে। ম্যানহোল ঢাকা না থাকায় শিশুরা মারা যাচ্ছে। ঢাকায় দিন দিন বস্তি গড়ে উঠছেই। তবে কীভাবে ২০২১ সালে দেশ মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হবে? প্রধানমন্ত্রীকে রাতে বের হয়ে মানুষের জীবন-যাপন প্রত্যক্ষ করার আহ্বান জানিয়ে বলেন, বের হয়ে দেখুন মানুষ কেমন আছে। আমাদের প্রথমেই উচিত ব্যাপক কর্মসংস্থানের সৃষ্টি করা। পরিকল্পিত কর্মসংস্থানের সৃষ্টি না হলে বেকাররা বিপথে চলে যাবে। মাদকের ছোবলে গোটা দেশ আজ জর্জরিত। ইয়াবা খেয়ে তরুণ-তরুণীরা নিজেদের ধ্বংস টেনে আনছে। শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু বলেন, নির্বাচন বানচালের নামে বিএনপি-জামায়াত শত শত মানুষকে পুড়িয়ে হত্যা করেছে, ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়ে দেশে একটি বিশেষ অবস্থা সৃষ্টি করতে চেয়েছিল। রাষ্ট্রীয় কাঠামোর ওপর চরম আঘাত হানতে চেয়েছিল। কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর প্রজ্ঞা, দৃঢ়তা ও সাহসিকতার কারণে বাংলাদেশ সাংবাদিক শূন্যতা সৃষ্টির ষড়যন্ত্র থেকে আমরা মুক্তি পেয়েছিলাম। সমস্ত ষড়যন্ত্র মোকাবেলা করে আমরা যখন সবদিক থেকে এগিয়ে যাচ্ছি, সারাবিশ্বে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যখন প্রশংসিত হচ্ছেন তখন এসব অর্জনকে ব্যাহত, পাকিস্তানের মতো অকার্যকর রাষ্ট্র পরিণত করতে বিভিন্ন চক্রান্ত চলছে। মানুষ পুড়িয়ে হত্যার রাজনীতি যারা সমর্থন করছেন, তারা জ্ঞানপাপী। তিনি বলেন, বিএনপি-জমায়াতের হত্যা-সন্ত্রাসের রাজনীতি যেদিন বিজয়ী হলে দেশে আর রাজনীতিবিদের প্রয়োজন হতো না, গুটিকয়েক সন্ত্রাসী-বোমাবাজ ও জঙ্গীদের নিয়েই ক্ষমতার পালাবদল ঘটত। রাজনীতি চিরতরে বিদায় হতো। তিনি বলেন, বিএনপি এখন জনগণ থেকে প্রত্যাখ্যাত হয়েছে, তাদের সন্ত্রাস-জঙ্গীবাদী রাজনীতি থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। তারা ইতিহাসের আঁস্তাকুড়ে নিক্ষিপ্ত হচ্ছে। আগামী ২০১৯ সালের নির্বাচনে তাদের আর অস্তিত্ব থাকবে না।
×