ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

সংস্কৃতি সংবাদ

শিল্পের সখা মামুনুর রশীদের জন্মজয়ন্তী উদযাপন

প্রকাশিত: ০৫:৪৪, ১ মার্চ ২০১৬

শিল্পের সখা মামুনুর রশীদের জন্মজয়ন্তী উদযাপন

স্টাফ রিপোর্টার ॥ লম্বা একটা সময় ধরে হাঁটছেন শিল্পের সঙ্গে। যখন অভিনয় করেন তখন যেন চরিত্রটাকে ধারণ করে নেন নিজের ভেতরে। একইভাবে নাটক নির্দেশনার ক্ষেত্রেও পাওয়া যায় নিপুণ দক্ষতার ছাপ। আর নাটক রচনায় বিষয় হিসেবে বেছে নেন শ্রেণী সংগ্রাম থেকে শুরু করে ক্ষুদ্র জাতিসত্তার অধিকারের কথা কিংবা নানাবিধ সামাজিক-রাজনৈতিক বিষয়কে। এভাবেই শিল্পের সখা হয়ে ওঠা এক মানুষের নাম মামুনুর রশীদ। নিজেকে সঁপে দিয়ে একইসঙ্গে হয়ে উঠেছেন সাম্য ও শিল্পের কারিগর। যেন জীবনের শেকড়টাকেই মেলে দিয়েছেন নাট্য জমিনের গহীনে। তাই তো নাটক নিয়েই প্রতিবাদী চেতনায় ছুটে বেড়িয়েছেন সমাজের নানা প্রান্তে কিংবা দেশ থেকে দেশান্তরে। কখনও বা নাটকের বাইরে থেকেও শামিল হয়েছেন সংগ্রাম ও অধিকার আদায়ের লড়াইয়ে। সেই প্রখরতার নির্যাসে সৃষ্টি করেছেন গণমানুষের শিল্প। সোমবার ছিল এই নাট্যজনের ৬৮তম জন্মদিন। জন্মজয়ন্তীর সন্ধ্যায় তাঁকে বরণ করে নেয়া হলো ভালবাসায়। জানানো হলো জন্মদিনের ফুলেল শুভেচ্ছা। সেই সঙ্গে কামনা করা হলো তাঁর সংগ্রামী শিল্প জীবনের দীর্ঘায়ু। জন্মদিনে সিক্ত হলেন নাট্যাঙ্গনের প্রিয় মানুষদের হৃদয়¯œাত উচ্ছ্বসিত প্রকাশে। বসন্ত সন্ধ্যায় জাতীয় জাদুঘরের প্রধান মিলনায়তনে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন মামুনুর রশীদ জয়ন্তী উদ্্যাপন পরিষদ। প্রিয় নাট্যজনকে শুভেচ্ছা জানাতে আসা নাট্যশিল্পী ও সংস্কৃতির নানা ভুবনের মানুষের আগমনে মিলনায়তন হয়ে পরিপূর্ণ। জন্মদিনের উদ্্যাপনের আয়োজনটি হয়ে ওঠে আনন্দ ও উচ্ছ্বাসময়। শিল্পীকে জানানো হয় বিভিন্ন সংগঠন ও বিশিষ্টজনদের পক্ষ থেকে ফুলেল শুভেচ্ছা। তাঁকে নিবেদন করে পরিবেশিত হয় আদিবাসী নাচ এবং তার রচিত নাটকের গান। তুলে দেয়া প্রতিকৃতিসহ নানা উপহারসামগ্রী। আদিবাসী গাড়ো সম্প্রদায়ের তরুণীদের নৃত্য পরিবেশনার মাধ্যমে অনুষ্ঠানের সূচনা হয়। আর ওই নাচের তালে তালে সহধর্মিণীকে সঙ্গী করে মঞ্চে আসেন মামুনুর রশীদ। ততক্ষণে অনুষ্ঠান সঞ্চালনার দায়িত্বে ডায়াসে দাঁড়িয়ে যান পরিষদের সদস্য সচিব গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশানের সেক্রেটারি জেনারেল আকতারুজ্জামান। শুরুতেই সঞ্চালক মজাচ্ছলে বলেন, আম মামুনুর রশীদের ৬৮তম কিংবা ১৭তম জন্মদিন। লিপ ইয়ারের হিসাবে তিনি ১৭ বছর পার করে পা রেখেছেন ১৮ বছরের তারুণ্যে। কথা শেষে মঞ্চে ডেকে নেন অনুষ্ঠানের সভাপতি ও পরিষদের আহ্বায়ক পরিষদের আহ্বায়ক সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব কামাল লোহানীকে। এ সময় মঞ্চে উঠে আসেন জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানাতে আসা অন্য অতিথিরা। তারা হলেন নাট্য ও চলচ্চিত্র নির্মাতা নাসির উদ্দীন ইউসুফ, অভিনয়শিল্পী আলী যাকের, নাট্যজন রামেন্দু মজুমদার, শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকী, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুছ ও সাধারণ সম্পাদক হাসান আরিফ, গণসঙ্গীত শিল্পী ফকির আলমগীর, মান্নান হীরা প্রমুখ। মামুনুর রশীদের জন্মদিনে নাসির উদ্দীন ইউসুফ রচিত শংসা বচন থেকে পাঠ করেন অভিনয়শিল্পী আফরোজা বানু। পাঠ শেষে সেটি তুলে দেয়া হয় তার হাতে। এরপর পরিষদের পক্ষ থেকে জন্মদিনের ফুলেল শুভেচ্ছা নিবেদন শেষে অতিথিরা হাতে তুলে দেন শামসুদ্দোহার আঁকা একটি প্রতিকৃতি। ভাষার মাসের শেষ দিনে শিল্পী ও তার সহধর্মিণীকে পরিয়ে দেয়া হয় একুশের আবহযুক্ত চাদর। উপহার প্রদানের এই প্রাথমিক আনুষ্ঠানিকতা শেষে জন্মদিনের আয়োজনটি যেন রাঙিয়ে দেন এই নাট্যজনের গড়া আরণ্যক নাট্যদলের শিল্পীরা। মামুনুর রশীদের দর্শকনন্দিত নাটক রাঢ়াঙ থেকে সুর নিয়ে পরিবেশন করেন গান ও সাঁওতালি। তারই আরেক নাটক সংক্রান্তি থেকেও পরিবেশিত হয় গান। পরিবেশনার মাধ্যমে এই শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদন পর্বে তুমুল করতালিতে মুখরিত হয়ে ওঠে মিলনায়তন। আর পরিবশেনা শেষে দলের সদস্যরা প্রাণপ্রিয় দলনেতাকে নানা উপহারে ভূষিত করেন। এর মধ্যে ছিল বরেণ্য শিল্পী রফিকুন নবীর আঁকা একটি চিত্রকর্মসহ নানা উপহারসামগ্রী। নাট্যজনকে সাংগঠনিকভাবে ফুলেল শুভেচ্ছা জানায় সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট, গণসঙ্গীত সমন্বয় পরিষদ, ঋষিজ শিল্পীগোষ্ঠী, শূন্যন রেপার্টরি থিয়েটার, বেঙ্গল থিয়েটারসহ নানা সংগঠন। মামুনুর রশীদের জন্মদিনের আলোচনায় বক্তারা বলেন, তার নাটকের সবচেয়ে বড় বৈশিষ্ট্য হচ্ছে চলমানতা ও বৈচিত্র্য। তার প্রতিটি নাটকই যেমন স্বতন্ত্র তেমনি প্রাণবন্ত। নাটকের প্রাণ থাকে দ্বন্দ্বে সেই দ্বন্দ্বই নাটককে গতি দেয় ও করে তোলে সজীব। মামুনের নাটকে বিনোদনের কোন অভাবই নেই। সেখানে উদ্বেগ, উৎকণ্ঠা সর্বোপরি কৌতূহল সব সময়েই তৈরি হয়। কৌতুক আছে, রয়েছে গান বাজনা, হট্টগোল, নিশ্চুপতা ও বৈপরীত্য, দেখানে যাবে ঘটনার অপ্রত্যাশিত সব টানাপোড়েন। সংলাপ তীক্ষè, সক সময়েই স্বাভাবিক, কিন্তু কখনই প্রাণহীন নয়। বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রে অধিবর্ষ সন্ধ্যা ॥ প্রতি চারবছরে ফেব্রুয়ারি মাসটি শেষ হয় ২৯ তারিখে। সোমবার এসেছিল লিপ ইয়ার নামে পরিচিত সেই দিন ২৯ ফেব্রুয়ারি। তাই দিবসটি ধরা দেয় ব্যতিক্রম হিসেবে। এ উপলক্ষে অধিবর্ষ সন্ধ্যা নামের বিশেষ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয় বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র মিলনায়তনে। কবিতা, গান এবং লেখক ও গুণীজনদের আড্ডায় সাজানো অনুষ্ঠানটির আয়োজন করে আইকনিক নামের সংগঠন। সেই সঙ্গে ছিল তরুণ লেখকদের বই নিয়ে আলোচনা। পথনাটক উৎসবের উদ্বোধন আজ ॥ বাংলাদেশ পথনাটক পরিষদের আয়োজনে আজ মঙ্গলবার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে শুরু হচ্ছে সাত দিনের বাংলাদেশ পথনাটক উৎসব। এবারের উৎসব সেøাগান ‘মুক্তিযুদ্ধের তথ্য বিকৃতকারীদের ক্ষমা নাই/ষড়যন্ত্রকারীদের বিচার চাই’। বিকেল ৫টায় উৎসব উদ্বোধন করবেন ইণ্টারন্যাশনাল থিয়েটার ইনস্টিটিউট (আইটিআই) বাংলাদেশ কেন্দ্রের সভাপতি সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব বীর মুক্তিযোদ্ধা নাসির উদ্দীন ইউসুফ।
×