ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ১৭ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

ইউপি নির্বাচন

মনোনয়নপত্র জমায় বাধা ঠেকাতে কমিশন বিকল্প পথ নিচ্ছে

প্রকাশিত: ০৫:৪০, ১ মার্চ ২০১৬

মনোনয়নপত্র জমায় বাধা ঠেকাতে কমিশন  বিকল্প পথ নিচ্ছে

স্টাফ রিপোর্টার ॥ নির্বাচনে মনোনয়নপত্র জমাদানে বাধা ঠেকাতে এবার বিকল্প চিন্তাভাবনা করছে নির্বাচন কমিশন। বিশেষ করে মনোনয়নপত্র একজায়গায় জমার পরিবর্তে একাধিক স্থানে জমা নেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। তবে এক্ষেত্রে নিরাপদ জায়গা থেকে জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা বা জেলা প্রশানের কার্যালয়ের মাধ্যমে মনোনয়ন জমা নেয়া হবে। ইসি জানিয়েছে, এ দুটি স্থানের যে স্থানে প্রার্থীরা নিরাপদ বোধ করবে সেখানেই জমা নেয়া হবে। ইউপি নির্বাচনের পরবর্তী ধাপ থেকে শুরু করে আগামী সব নির্বাচনে এ কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে বলে জানিয়েছে ইসি। তবে প্রথম দফায় বাধার কারণে ইউপিতে যেসব প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দিতে পারেনি তাদের ক্ষেত্রে এ নিয়ম প্রযোজ্য হবে না। নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে প্রথম দফায় যেহেতু মনোনয়নপত্র জমার সময়সীমা শেষ হয়ে গেছে তাদের ক্ষেত্রে এ নিয়ম আর প্রযোজ্য হবে না। এছাড়া দ্বিতীয় ধাপেরও মনোনয়নপত্র জমা দেয়ার সময় সীমা শেষ হওয়ার পথে। পরবর্তী ধাপের নির্বাচনে প্রার্থীরা যাতে তাদের মনোনয়নপত্র জমাদানের বাধার অভিযোগ না দিতে পারে, নির্বিঘেœ মনোনয়নপত্র জমা দিতে পারে সেকারণে এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। দুএকদিনের মধ্যে এ বিষয়ে কমিশন তার সিদ্ধান্তের কথা জানাবে বলে উল্লেখ করেন কমিশনার মোঃ শাহনেওয়াজ। পরবর্তী নির্বাচনগুলোতে এ ধারা অব্যাহত রাখা হবে। ইউপি নির্বাচনের প্রথম দফায় বিএনপির একাধিক প্রার্থী তাদের মনোনয়নপত্র জমাদানে সরকার দলীয় লোকদের বিরুদ্ধে বাধার অভিযোগ করেন। এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশনে লিখিত অভিযোগ দেয়া হয়েছে। প্রথম দফায় ৭৩৮ ইউপি নির্বাচনের জন্য প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র জমাদানের শেষ দিন ছিল ২২ ফেব্রুয়ারি। নির্বাচন কমিশনের হিসেব অনুযায়ী প্রথম দফায় বিএনপি প্রার্থীর মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছে ৬৬৮ ইউপিতে। বাকি ৭০ ইউনিয়ন পরিষদে তাদের কোন প্রার্থী নেই। এছাড়া বাছাইতে বিএনপির একাধিক প্রার্থীর মনোনয়নপত্র অবৈধ ঘোষণা করা হয়েছে। সব মিলিয়ে বিএনপির ১১৪ ইউপিতে কোন প্রার্থী নেই। প্রতিদ্বন্দ্বী না থাকায় আওয়ামী লীগের ৫০ প্রার্থী বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হতে চলেছে। এ অবস্থায় বিএনপির একটি প্রতিনিধি দল রবিবার নির্বাচন কমিশনে গিয়ে লিখিত অভিযোগ করে। এছাড়া আগের এ বিষয় নিয়ে দলের পক্ষ থেকে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র জমাদানে বাধা দেয়ার অভিযোগ করা হয়েছে। ইসিতে দেয়া চিঠিতে অনিয়ম বিধি লঙ্ঘন, নির্বাচনী কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে বেআইনী কার্যকলাপ ও মনোনয়নপত্র জমা দেয়ায় বিএনপি প্রার্থীদের বিরুদ্ধে সরকার দলীয় লোকদের সংঘাত সংঘর্ষ ও মনোনয়নপত্র জমা দিতে না দেয়ার অভিযোগ করেন। ইসির সচিব মোঃ সিরাজুল ইসলামে কাছে লিখিত অভিযোগ দায়েরের পর বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী সাংবাদিকদের বলেন, বিভিন্ন জায়গায় বিএনপির প্রার্থিতা বাতিল ও সরকার দলীয় লোকদের বাধার কারণে দলের ১১৪ ইউপিতে বিএনপির কোন প্রার্থী নেই। তিনি ইসির বিরুদ্ধে সরকার দলীয় লোকদের জিতিয়ে দেয়া ও কমিশনের পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ আনেন। যদিও কমিশনের পক্ষ থেকে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ ছাড়া কোন অভিযোগের তদন্ত করা হবে না বলে জানিয়েছে দেয়া হয়েছে। এর আগে প্রথম দফায় প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র জমাদানে বাধা দেয়ার বিষয়টি নিয়ে ইসিতে এক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে সিদ্ধান্ত নেয়া হয় বাধার কারণে যারা মনোনয়নপত্র জমা দিতে পারেনি তাদের মনোনয়নপত্র গ্রহণের আর কোন সুযোগ নেই। এছাড়া বৈঠকে বাধাপ্রাপ্তদের নির্বাচন কমিশনে মনোনয়নপত্র জমাদানের বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করা হলেও অন্যরা সুযোগ নিতে পারে এ অজুহাতে তা নাকচ করে দেয়া হয়। সোমবার কমিশন (ইসি) সচিবালয়ের নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি বলেন, কিছু কিছু জায়গায় মনোনয়নপত্র জমা দিতে বাধা দিয়েছে এমন অভিযোগ রয়েছে। সে কারণে এখন থেকে মনোনয়নপত্র জমাদানে বিকল্প চিন্তা করা হচ্ছে। একাধিক জায়গায় মনোনয়নপত্র দাখিল করা যায় কি-না এ লক্ষ্যে কাজ করছে কমিশন। আজ-কালের মধ্যেই একটা সিদ্ধান্তে পৌঁছানো যাবে। প্রার্থীরা যেখানে স্বস্তিবোধ করবেন সেখানেই মনোনয়নপত্র জমা দিতে পারবেন। তিনি বলেন, প্রথম ধাপের মনোনয়নপত্র জমা দেয়ার সময় যেহেতু শেষ। তাই এ ধাপের ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে যারা মনোনয়নপত্র জমা দেয়ার বাধা অভিযোগ করেছেন তাদের মনোনয়নপত্র জমা নেয়া সম্ভব নয়। পরবর্তী পাঁচটি ধাপের ক্ষেত্রে এটি প্রযোজ্য হবে। নতুন করে যাতে এ বিষয়ে আর কোন অভিযোগ না আনে তা বন্ধ করতেই একাধিক জায়গায় মনোনয়নপত্র জমার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। শুধু ইউপি নয়, পরবর্তী সব নির্বাচনের জন্য একাধিক জায়গার বিষয়টি চিন্তা করছি। এক্ষেত্রে জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসকের কর্যালয়কে চিন্তা করা হবে। শাহ নেওয়াজ বলেন, ইউপি নির্বাচন স্থানীয় নির্বাচন। পরিচিত, আত্মীয়-স্বজনের মধ্যেই নির্বাচন হবে। তাই এ নির্বাচন হবে শান্তিপূর্ণ। এরপরও নির্বাচন সুষ্ঠু করতে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে তৎপর থাকতে বলা হয়েছে। কয়েকটি ইউপিতে একজন করে ম্যাজিস্ট্রেট দেয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। নির্বাচনী বিধি লঙ্ঘনের বিষয়ে বলেন, এ বিষয়ে কিছু অভিযোগ ঢালাওভাবে এসেছে। সেগুলোর পরিপ্রেক্ষিতে কিছু কিছু তদন্ত করা হয়েছে। যেখানে ব্যবস্থা নেয়ার প্রয়োজন নেয়া হবে। নির্বাচনে সবাই যাতে সমান সুযোগ পায় কমিশনের পক্ষ থেকে সে ব্যবস্থায় নেয়া হবে। নির্বাচনে অসম প্রচারণার সুযোগ নেই। উল্লেখ আগামীকাল ২ মার্চ প্রথম দফায় নির্বাচনে প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের সময় শেষ হচ্ছে। এছাড়া একই দিনে দ্বিতীয় দফায় নির্বাচনের জন্য আগ্রহী প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র জমার শেষ দিন কাল শেষ হচ্ছে। ৩ মার্চ থেকে প্রথম দফায় প্রার্থীদের মধ্যে প্রতীক বন্টনের মাধ্যমে শুরু হবে নির্বাচনী প্রচারণা।
×