ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

নাশকতা মামলায় ফখরুলকে নিম্ন আদালতে আত্মসমর্পণের নির্দেশ আপীল বিভাগের

সরকারের অংশ নয় বিচার বিভাগ, রাষ্ট্রের একটি অঙ্গ ॥ সিনহা

প্রকাশিত: ০৫:৩৭, ১ মার্চ ২০১৬

সরকারের অংশ নয় বিচার বিভাগ, রাষ্ট্রের একটি অঙ্গ ॥ সিনহা

স্টাফ রিপোর্টার ॥ পল্টন থানার নাশকতার তিন মামলায় বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে ১৫ দিনের মধ্যে বিচারিক (নিম্ন) আদালতে আত্মসমর্পণের নির্দেশ দিয়েছেন সুপ্রীমকোর্টের আপীল বিভাগ। আত্মসমর্পণের আগে আরও ১৫ দিন সময় পেয়েছেন ফখরুল ইসলাম আলমগীর। অন্যদিকে সুপ্রীমকোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার শাকিলা ফারজানাকে হাইকোর্টের দেয়া জামিন ২০ মার্চ পর্যন্ত স্থগিত করেছেন আপীল বিভাগ। প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহা নেতৃত্বাধীন পাঁচ সদস্যের বেঞ্চ সোমবার এ আদেশগুলো প্রদান করেছেন। এদিকে ফখরুলের মামলায় প্রধান বিচারপতি বলেছেন, জনগণের মধ্যে বিচার বিভাগ নিয়ে আস্থার সঙ্কট তৈরি করে এমন কোন বক্তব্য দেয়া বা কাজ করা থেকে রাজনীতিবিদ, সরকারের মন্ত্রীসহ সবাই বিরত থাকুন। প্রধান বিচারপতি আরও বলেন, আপনারা রাজনীতিবিদরা বিচার বিভাগকে সরকারের অংশ বলে থাকেন, এটি ঠিক না। বিচার বিভাগ রাষ্ট্রের একটি অঙ্গ। ‘সংবিধান মানতে হলে বিচার বিভাগকে মানতে হবে। বিচার বিভাগের ওপর আস্থা হারায় এমন কিছু করবেন না। আইনজীবীরা বলেন, সরকারের মন্ত্রীও বলেন, আপনারা বলেন- তাহলে বিচার বিভাগ যাবে কোথায়?’ বিচার বিভাগ নিয়ে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সাম্প্রতিক এক বক্তব্যের বিষয়ে তার লিখিত ব্যাখ্যা পাওয়ার পর সোমবার প্রধান বিচারপতি আদালতে এ কথা বলেন। এদিকে আদেশের পর অতিরিক্ত এ্যাটর্নি জেনারেল মুরাদ রেজা সাংবাদিকদের বলেন, প্রধান বিচারপতি দ্ব্যর্থহীন ভাষায় বলেছেন, বিচার বিভাগ রাষ্ট্রের একটি অঙ্গ, সরকারের অঙ্গ নয়। বাংলাদেশের বিচার বিভাগ সম্পূর্ণ স্বাধীন ও নিরপেক্ষ। এও বলেছেন, কোন ধরনের চাপের মুখে বিচার বিভাগ বিচার কাজ পরিচালনা করছে না।’ ভবিষ্যতে মির্জা ফখরুল যেন ‘বিভ্রান্তিকর, অবমাননাকর ও মনগড়া বক্তব্য’ দেয়া থেকে বিরত থকেন, সে বিষয়ে তাকে আদালত সতর্ক করে দিয়েছেন। এর আগে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে ১৫ দিনের মধ্যে বিচারিক (নিম্ন) আদালতে আত্মসমর্পণের নির্দেশ দিয়েছেন সুপ্রীমকোর্টের আপীল বিভাগ। গত ২৪ ফেব্রুয়ারি তার জামিনের মেয়াদ শেষ হয়। আদালতে মির্জা ফখরুলের পক্ষে ছিলেন সিনিয়র আইনজীবী ব্যারিস্টার রফিক-উল হক, এ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন, জয়নুল আবেদীন ও নিতায় রায় চৌধুরী। অপরদিকে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন এ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম, অতিরিক্ত এ্যাটর্নি জেনারেল মুরাদ রেজা প্রমুখ। ২০১৫ সালের ৫ জানুয়ারিকে ঘিরে ২০ দলীয় জোটের আন্দোলনের সময় পল্টন থানার নাশকতার তিন মামলায় মির্জা ফখরুলকে হাইকোর্ট অন্তর্বর্তীকালীন জামিন দিয়ে রুল জারি করেন। এর বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষ আপীল করলে আপীল বিভাগ রুল নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত জামিন দেন এবং জামিনের মেয়াদ শেষে আত্মসমর্পণ করতে নির্দেশ দেন। এছাড়াও হাইকোর্টের রুল নিষ্পত্তি করতে বলেন। হাইকোর্ট গত বছরের ২৪ নবেম্বর রুল নিষ্পত্তি করে ওই তিন মামলায় মির্জা ফখরুলকে তিন মাসের জামিন দেন। ফখরুলের আইনজীবীদের দাবি, রুল নিষ্পত্তির মাধ্যমে সাধারণত মামলার বিচার শেষ না হওয়া পর্যন্ত জামিন হয়। কিন্তু এখানে মাত্র তিন মাসের জামিন দেয়া হয়েছে। এ কারণে হাইকোর্টের আদেশ চ্যালেঞ্জ করে মির্জা ফখরুল গত ৭ জানুয়ারি লিভ টু আপীল (আপীলের অনুমতি চেয়ে আবেদন) করেন। গত ১৫ ফেব্রুয়ারি এ আবেদনের শুনানি শেষে চেম্বার বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী আবেদনটি ১৮ ফেব্রুয়ারি আপীল বিভাগের নিয়মিত বেঞ্চে শুনানির জন্য পাঠিয়ে দেন। জামিনের বিষয়ে আদেশ দেয়ার আগে বিচার বিভাগ নিয়ে বিভিন্ন পত্রিকায় বিভিন্ন ধরনের বক্তব্য প্রকাশের বিষয়ে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এর দেয়া ব্যাখ্যা গ্রহণ করেছেন আপীল বিভাগ। পরে তা নিষ্পত্তি করে দিয়েছেন বলে জানান মির্জা ফখরুল ইসলামের আইনজীবী ব্যারিস্টার রাগিফ রউফ চৌধুরী। এর আগে দুই বার ব্যাখ্যা দেয়ার পরও আদালত সন্তুষ্ট হয়নি। তাই তাকে আবারও (তৃতীয়বার) হলফনামা আকারে ব্যাখ্যা দিতে বলেন আপীল বিভাগ। সিলেটে বিচার বিভাগ নিয়ে মন্তব্য করায় মির্জা ফখরুলের কাছে গত ১৮ ফেব্রুয়ারি ব্যাখ্যা চান প্রধান বিচারপতি এসকে সিনহার নেতৃত্বে ৫ সদস্যের আপীল বিভাগ। ফখরুলের জামিন বিষয়ক শুনানি চলাকালে তাকে বক্তব্যের বিষয়ে ২২ ফেব্রুয়ারির মধ্যে লিখিতভাবে ব্যাখ্যা দিতে বলেন আদালত। কিন্তু ২২ ফেব্রুয়ারি আইনজীবীরা ব্যাখ্যা দাখিল করতে গেলে আদালত মির্জা ফখরুলের স্বাক্ষরিত হলফনামা চান। ওই দিন বিকেল ৩টার দিকে মির্জা ফখরুল সুপ্রীমকোর্টে উপস্থিত হয়ে হলফনামা জমা দেন। ২৫ ফেব্রুয়ারি হলফনামা দাখিলের সময় আদালত মির্জা ফখরুলের বিভিন্ন পত্রিকায় বিভিন্ন ধরনের বক্তব্য দেখতে পান। এরপর এ বিষয়ে ফখরুলের কাছে আবারও ব্যাখ্যা চান আপীল বিভাগ। উল্লেখ্য, গত ৭ ফেব্রুয়ারি সরকার বিচার বিভাগকে নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছে বলে অভিযোগ করেন মির্জা ফখরুল। সিলেট জেলা ও মহানগর বিএনপির দ্বিবার্ষিক সম্মেলনে এ অভিযোগ করেন তিনি। মির্জা ফখরুল বলেন, গণতন্ত্রের সব প্রতিষ্ঠানকে সুপরিকল্পিতভাবে ধ্বংস করে দেয়া হয়েছে। দেশে গণতন্ত্র নেই, বিচার বিভাগেরও স্বাধীনতা নেই। বিচার বিভাগ যাবে কোথায় ॥ জনগণের মধ্যে বিচার বিভাগ নিয়ে আস্থার সঙ্কট তৈরি করে এমন কোন বক্তব্য দেয়া বা কাজ করা থেকে রাজনীতিবিদ, সরকারের মন্ত্রীসহ সবাইকে বিরত থাকার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহা। বিচার বিভাগ নিয়ে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সাম্প্রতিক এক বক্তব্যের বিষয়ে তার লিখিত ব্যাখ্যা পাওয়ার পর সোমবার প্রধান বিচারপতি আদালতে এ কথা বলেন। ফখরুলের আইনজীবী জয়নুল আবেদীন এদিন প্রধান বিচারপতি নেতৃত্বাধীন পাঁচ বিচারকের আপীল বেঞ্চে ওই ব্যাখ্যা জমা দেন। ফখরুলের আইনজীবীকে উদ্দেশ্য করে প্রধান বিচারপতি বলেন, আপনারা রাজনীতিবিদরা বিচার বিভাগকে সরকারের অংশ বলে থাকেন, এটি ঠিক না। বিচার বিভাগ রাষ্ট্রের একটি অঙ্গ। সংবিধান মানতে হলে বিচার বিভাগকে মানতে হবে। বিচার বিভাগের ওপর আস্থা হারায় এমন কিছু করবেন না। আইনজীবীরা বলেন, সরকারের মন্ত্রীও বলেন, আপনারা বলেনÑ তাহলে বিচার বিভাগ যাবে কোথায়? সোমবার জয়নুল আবেদীন নতুন করে ব্যাখ্যা দাখিল করার পর প্রধান বিচারপতি বলেন, দশম প্যারায় আছে, বিচার বিভাগ স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারছে না। জবাবে জয়নুল আবেদীন বলেন, উনি এ কথা বলেননি। সিডি রয়েছে, এর বাইরে কিছু বলেনি। পরে আদালত আইনজীবীকে সপ্তম প্যারা দেখতে বলেন। তখন জয়নুল আবেদীন বলেন, পত্রিকায় আসা ওই বক্তব্য মির্জা ফখরুলের নয়। এ বিষয়ে প্রতিবাদ লিপি দেয়া হয়েছে, ইতোমধ্যে তা ছাপাও হয়েছে। আদালত বলেন, এটি দিয়েছেন ২৭ ফেব্রুয়ারি, আদালতে আসার পরে। জয়নুল আবেদীন বলেন, আমাদের নলেজে আসার পরপরই দিয়েছি। জামিন স্থগিত ॥ সুপ্রীমকোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার শাকিলা ফারজানাকে হাইকোর্টের দেয়া জামিন ২০ মার্চ পর্যন্ত স্থগিত করেছেন আপীল বিভাগ। সোমবার সকালে প্রধান বিচারপতির এসকে সিনহার নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের আপীল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চ এই আদেশ দেন। আদালতে শাকিলার পক্ষে শুনানি করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন।
×