ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

মার্ক জাকারবার্গ ॥ বিশ্বের শীর্ষ ধনী

প্রকাশিত: ০৪:১৫, ১ মার্চ ২০১৬

মার্ক জাকারবার্গ ॥ বিশ্বের শীর্ষ ধনী

ফেসবুকের জনপ্রিয়তা যেমন- হু-হু করে বেড়েছে, তেমনি বেড়েছে এর প্রধান নির্বাহীর সম্পদ। মার্কিন গণমাধ্যম সিএনএনের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ফেসবুকের সহপ্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী মার্ক জাকারবার্গ এখন বিশ্বের চতুর্থ ধনী ব্যক্তি। মাত্র ৩১ বছর বয়সেই এ অবস্থানে পৌঁছে গেছেন জাকারবার্গ। ব্লুমবার্গ বিলিয়নেয়ার্স ইনডেক্সের বরাত দিয়ে সিএনএন এ তথ্য প্রকাশ করেছে। সম্পদের দিক থেকে জাকারবার্গ পেছনে ফেলেছেন এ্যামাজনের প্রধান নির্বাহী জেফ বেজোসকে। জাকারবার্গের সম্পদের পরিমাণ এখন প্রায় ৫০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। বাংলাদেশী টাকায় যা প্রায় চার লাখ কোটি টাকা! গত মাসের ২৮ তারিখে আচমকা ফেসবুকের শেয়ারের দাম হু-হু করে বাড়তে থাকলে সেসঙ্গে তাল দিয়ে জাকারবার্গও দ্রুত ধনী হতে থাকেন। সে কারণেই বিশ্বের ধনীর তালিকায় চতুর্থ স্থানে এসে পৌঁছালেন যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম সেরা প্রধান নির্বাহী। ধনী ব্যক্তিদের তালিকায় শীর্ষে এখনও রয়েছেন মাইক্রোসফটের সহপ্রতিষ্ঠাতা বিল গেটস। তাঁর সম্পদের মূল্য ৭৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। স্পেনের আমান্সিও ওর্তেগা ৬৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলার নিয়ে দ্বিতীয় অবস্থানে ও ওয়ারেন বাফেট প্রায় ৬০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার সমমূল্যের সম্পদ নিয়ে আছেন তালিকার তৃতীয় অবস্থানে। কিছুদিন আগে শেয়ার মার্কেটে আচমকা বড় ধরনের পরিবর্তনের ফলে বিশ্বের অনেক ধনীই যেমন পিছিয়ে পড়েছেন, আবার অনেকেরই সম্পদ বেড়েছে রাতারাতি। প্রযুক্তিপ্রিয় মানুষ কিন্তু ফেসবুকে এ্যাকাউন্ট নেই, এমন আর কাউকে এখন খুঁজে পাওয়া মুশকিল। শুরুতে কিন্তু এতকিছু ভাবেননি এর প্রতিষ্ঠাতা জাকারবার্গ। হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটির কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের ছাত্র ছিলেন জাকারবার্গ। ছোটবেলা থেকেই কম্পিউটার নিয়ে জাকারবার্গের ছিল সীমাহীন আগ্রহ। হার্ভার্ডে সুযোগ পাওয়ার পর জাকারবার্গের সারাক্ষণই কাটত কম্পিউটার নিয়ে। এই সময় তিনি বন্ধুদের চমকে দেয়ার জন্য বেশকিছু সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইট তৈরি করেন। প্রথম তিনি তৈরি করেন ‘কোর্সম্যাচ’ নামের একটি সাইট। এই সাইটে ব্যবহারকারীরা সবাই কে কোথা থেকে ডিগ্রী নিয়েছেন সেটা দেখতে পেতেন। এরপর জাকারবার্গ ‘ফেসম্যাশ’ নামে আরেকটি নেটওয়ার্কিং সাইট করেন। সেখানে ব্যবহারকারীরা ছবি দেখে কে কতটা আকর্ষণীয় সে অনুযায়ী রেটিং দিতেন। অনেকটা খেলাচ্ছলেই এসব সাইট তৈরি করেছিলেন জাকারবার্গ। তবে এই দুই সাইটের জনপ্রিয়তার পর ফেসবুক তৈরির কাজে হাত দেন তিনি। মাত্র ২৩ বছর বয়সে ২০০৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে ফেসবুক তৈরি করেন জাকারবার্গ। তখন সাইটের নাম রাখা হয়েছিল দ্য ফেসবুক ডটকম। ভর্তি হওয়ার পর হার্ভার্ডের নতুন শিক্ষার্থীদের একটা কাগজ পূরণ করতে হতো, যেখানে তাঁদের বিস্তারিত পরিচয় লেখা থাকত। সেই কাগজ পরিচিত ছিল ‘ফেসবুক’ নামে। আর সেখান থেকেই নিজের ওয়েবসাইটের নাম রাখেন জাকারবার্গ। হার্ভার্ডের ডরমিটরিতে বসেই ফেসবুক চালু করেন জাকারবার্গ। তবে তিনি একা নন। ফেসবুক চালুর সময় জাকারবার্গের সঙ্গে কাজ করেন তাঁর সহপাঠী এবং রুমমেট এডওয়ার্ড সাভেরিন, এ্যান্ড্রু ম্যাককলাম, ডাস্টিন মস্কোভিৎজ ও ক্রিস হগস। শুধু হার্ভার্ডের শিক্ষার্থীদের জন্যই সাইটটি তৈরি করেছিলেন তাঁরা। সাইট চালুর ২৪ ঘণ্টার মধ্যে হার্ভার্ডের এক হাজার ২০০ জন শিক্ষার্থী সাইন আপ করেছিলেন ফেসবুকে। আর এক মাস পর হার্ভার্ডের অর্ধেক শিক্ষার্থীই ফেসবুকে এ্যাকাউন্ট খোলেন। এভাবে দ্রুত হার্ভার্ড ক্যাম্পাসে জনপ্রিয়তা লাভ করে ফেসবুক। হার্ভার্ডের পর ফেসবুক চালু হয় বোস্টনের অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ে। এভাবেই যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ফেসবুকে সাইন আপ করা শুরু“করেন। ২০০৫ সালের আগস্টে ফেসবুক ডটকম নামের ডোমেইন সার্ভারটি দুই লাখ ডলারে কিনে নেন জাকারবার্গ। এরপর ব্যবহারকারীর সংখ্যা বাড়ানোর জন্য যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন স্কুলে ক্যাম্পেইন শুরু করেন তাঁরা। যুক্তরাষ্ট্রের পরপরই যুক্তরাজ্যে যাত্রা শুরু করে ফেসবুক। প্রথমদিকে শুধু শিক্ষার্থীরা ফেসবুকে এ্যাকাউন্ট খুললেও এর পর থেকে সব বয়সীরাই ফেসবুকে এ্যাকাউন্ট খুলতে শুরু“করেন। তখন থেকেই ফেসবুকের তুমুল জনপ্রিয়তা টের পাওয়া যায়। কারণ সাইটটি বিনামূল্যে ব্যবহার করতে পারেন ব্যবহারকারীরা এবং খুব সহজেই একটি ইমেইল এ্যাকাউন্টের মাধ্যমেই ফেসবুকে এ্যাকাউন্ট খোলা যায়। ২০০৪ সালে জাকারবার্গের বিরুদ্ধে আইডিয়া এবং কোডিং চুরির আনুষ্ঠানিক অভিযোগ আনেন দিব্য নরেন্দ্র, ব্রাদার্স ক্যামেরন এবং টেইলর উইংকলভস। তাঁরা ‘কানেক্টইউ’ নামের একটি সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইট তৈরি করেছিলেন। তাঁরা অভিযোগ করেন, তাঁদের সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইট তৈরির সময় কম্পিউটার প্রোগ্রামার হিসেবে কাজ করেছিলেন জাকারবার্গ এবং সেই সাইটের কোডিং ও আইডিয়া চুরি করে ফেসবুক তৈরি করেছেন জাকারবার্গ। তবে কোন রায় না দিয়েই সেই মামলার ২০০৭ সালে খারিজ করে দেয়া হয়। যদিও সেই সময়ে বিজ্ঞাপন দিয়ে আয় করছিল ফেসবুক। গুজব রয়েছে ২০০৭ সালের দিকে ইয়াহু এবং গুগল কিনে নিতে চেয়েছিল ফেসবুক। সে সময় তারা দুই হাজার কোটি ডলার পর্যন্ত সেধেছিল কিন্তু জাকারবার্গ ফেসবুক বিক্রি করতে রাজি হননি। ২০০৭ সালে ফেসবুক ঘোষণা করে বিশ্বজুড়ে তিন কোটি মানুষ ফেসবুক ব্যবহার করছেন। এর পর থেকে ফেসবুকের ব্যবহারকারীর সংখ্যা বেড়েই চলেছে। সংগৃহীত সূত্র : ইন্টারনেট
×