ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

স্পোর্টস ইনজুরি : ক্রিকেট

প্রকাশিত: ০৪:১৫, ১ মার্চ ২০১৬

স্পোর্টস ইনজুরি : ক্রিকেট

ক্রিকেট বর্তমান বিশ্বে জনপ্রিয় একটি খেলা। এর ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশে ক্রিকেট শহর থেকে প্রত্যন্ত গ্রাম অঞ্চলে বিস্তার লাভ করেছে এবং বর্তমান সময়ে খুবই জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। এর মাত্রা বিশ্বকাপ আয়োজনের মাধ্যমে বহুগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। বাংলাদেশের ক্রিকেটপ্রেমীরা বিশ্বকাপের উন্মাদনায় মত্ত। টেলিভিশন, রেডিও ও মোবাইলে নিয়মিত খেলা দেখছেন, শুনছেন এবং ক্রিকেট আপডেট জেনে নিচ্ছেন। অন্যান্য খেলার মতো ক্রিকেট খেলায়ও খেলোয়াড়রা খেলা প্রদর্শন করতে গিয়ে দুর্ভাগ্যক্রমে ইনজুরিতে আক্রান্ত হন। কেউ হয়ত সুস্থ হয়ে খেলায় ফিরে আসতে পারেন। কেউ কেউ বার বার আক্রান্ত হয়ে বা প্রথমেই গুরুতর আঘাত পেয়ে খেলা থেকে বিদায় নেন। অনেকে সুস্থ হয়ে খেলায় ফিরে আসলেও পূর্বের দক্ষতা ও কৌশল প্রদর্শন করতে পারেন না। শৌখিন ও পেশাগত উভয় গ্রুপের খেলোয়াড় ক্রিকেট খেলায় বিভিন্ন ধরনের ইনজুরিতে আক্রান্ত হতে পারে। সাধারণত স্ট্রেন (পেশী ইনজুরি), স্প্রেন (লিগামেন্ট ইনজুরি), ফ্র্যাকচার (হাড় ভাঙ্গা) ও ব্রুইসিং (রক্ত জমা) ধরনের ইনজুরি হয়ে থাকে। বয়স্ক ক্রিকেটারদের মাঝে উর্ধাঙ্গ, নিম্নাঙ্গ ও মাথায় আঘাত বেশি পরিলক্ষিত হয়। কিশোর খেলোয়াড়রা মাথা, মুখ, আঙ্গুল ও হাড়ের ইনজুরিতে ভোগে। মাউথ গাড ব্যবহার না করলে বলের সরাসরি আঘাতে দাঁত ও মাড়ি ভেঙ্গে যেতে পারে। ফিল্ডিং ও বোলিং করার সময় ক্রিকেটে সবচেয়ে বেশি ইনজুরি হয় পায়ে (লেগ) এবং এ ধরনের ইনজুরি হয় স্ট্রেন (পেশী ইনজুরি) প্রকৃতির। ফাস্ট বোলাররা সাধারণত উরুর সামনের (কোয়াড্রিসেফ) ও পেছনের (হ্যামস্ট্রিং) পেশীর স্ট্রেনে আক্রান্ত হয় সবচেয়ে বেশি। এছাড়া তাঁরা দৌড়ানোর সময় গোড়ালি ও হাঁটু ইনজুরিতে ভোগে। ব্যাটসম্যানরা বেশিরভাগ ক্ষেত্রে শরীরে বল আঘাত করার কারণে ইনজুরিতে আক্রান্ত হয়। এর ফলে ব্যাটসম্যানদের সাধারণত আঙ্গুলের হাড় ও পাঁজরের হাড় (রিব) ভাঙতে পারে এবং বল হেলমেটে স্ট্রাইক করলে মাথায় আঘাতেও (কনকাসন) ভুগতে পারে। বলের আঘাতে ব্যাটসম্যানরা কাঁধের ইনজুরিতেও আক্রান্ত হয়। যে খেলোয়াড়রা ফিল্ডিং করে তারা সাধারণত বাহু ইনজুরিতে ভোগে। বার বার বল জোরে নিক্ষেপের কারণে আঙ্গুলের ইনজুরিও হতে পারে। বোলার, ফিল্ডসম্যান বা ব্যাটসম্যান যে কেউ ব্যাক স্প্রেনে (কোমর ব্যথা) ভুগতে পারে। আঘাতে জোড়ার আবরন, লিগামেন্ট ও মেনিসকাস আংশিক বা সম্পূর্ণ ছিঁড়ে যেতে পারে। এতে জোড়া অস্থিতিশীল হয়। কখনও কখনও জোড়া স্থানচ্যুত হওয়ার উপক্রম হয় বা স্থানচ্যুতি হয়। এতে জোড়ায় ব্যথা অনুভূত হয়, জোড়া ফুলে যায় এবং খেলা চালিয়ে যাওয়া অসম্ভব হয়ে দাঁড়ায়। ইনজুরির তীব্রতা, প্রয়োজনীয় চিকিৎসা ও পরিচর্যার দাঁড়ায়। ইনজুরির তীব্রতা, প্রয়োজনীয় চিকিৎসা ও পরিচর্যার (রিহেবিলিটেশন) ওপর নির্ভর করে খেলোয়াড়দের খেলায় ফিরে আসা। খেলায় ইনজুরি কমিয়ে আনতে বা প্রতিরোধে উপযুক্ত কলা-কৌশল লব্ধ করতে হবে। উপযুক্ত প্রশিক্ষণ, দক্ষতা ও কৌশল এবং সাপোর্ট বা গার্ড পরিধানে ইনজুরি অনেকাংশে কমিয়ে আনা যায়। জোড়া ও পেশী নমনীয় এবং শক্তিশালী হওয়ার ব্যায়ামে ইনজুরির প্রবণতা কমে যায়। খেলা শুরুর আগে পেশী ও জোড়ার স্ট্রেসিং বা ওয়ার্মআপ একটি অত্যাবশ্যকীয় কাজ। মাঝে মাঝে শারীরিক ও মানসিক ফিটনেস মূল্যায়ন করতে হবে। হাড়, জোড়া ও পেশীর সঙ্গে সঙ্গে শরীরের অন্যান্য সিস্টেমের (যেমন হৃদয় ও রক্তনালী, ফুসফুস ও বিপাকীয়) শক্তিশালী সমন্বয় থাকতে হবে। ইনজুরি হলে, এর তীব্রতা যথাযথভাবে নির্ণয় করে, উপযুক্ত চিকিৎসা ও রিহেবিলিটেশন করলে খেলোয়াড় দ্রুত খেলায় ফিরে আসবে। ডা. জিএম জাহাঙ্গীর হোসেন হাড়, জোড়া ও ট্রমা বিশেষজ্ঞ এবং আর্থ্রোস্কোপিক সার্জন ডিজিল্যাব মেডিক্যাল সার্ভিসেস, মিরপুর (ইনডোর স্টেডিয়ামের সামনে), ঢাকা। ফোন : ০১৭৪৬৬০০৫৮২
×