ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

মাটি যাচ্ছে সিরামিক কারখানায়

মধুপুরে কমছে কৃষিজমি

প্রকাশিত: ০৪:০৭, ১ মার্চ ২০১৬

মধুপুরে কমছে কৃষিজমি

ইফতেখারুল অনুপম, টাঙ্গাইল ॥ মধুপুরে কৃষিজমি নষ্ট করে মাছ চাষের কথা বলে পিরোজপুর এলাকার বলাইবাইদ থেকে মূল্যবান মাটি যাচ্ছে দেশের বিভিন্ন সিরামিক কারখানায়। তৈরি হচ্ছে বিখ্যাত সিরামিক, টাইলস্ ও ইটসহ নানা দ্রব্য। নির্বিঘেœ পাচার হওয়ায় কৃষিজমির সঙ্গে এলাকার জীববৈচিত্র্য ও পরিবেশও হুমকির মুখে পড়ছে। আর এ কাজ বিনা বাধায় করে যাচ্ছে এলাকার এক শ্রেণীর অসাধু ফড়িয়া। সরেজমিন দেখা যায়, উপজেলার অরণখোলা ইউনিয়নের পিরোজপুর গ্রামের বলাইবাইদ (খালের মতো নিচু ভূমি) নিচু ও উর্বর আবাদি জমি থেকে প্রতিদিন ১০-১৫ ট্রাক সাদা-কালচে এঁটেল মাটি উঠিয়ে নির্বিঘেœ পাচার করা হচ্ছে। সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, মূল্যবান এ মাটি সিরামিকসামগ্রীসহ বিভিন্ন তৈজসপত্র তৈরির জন্য রাজধানী ও দেশের বিভিন্ন এলাকার কারখানাগুলোতে যাচ্ছে। তাৎক্ষণিক লোভ দেখিয়ে স্থানীয় এক শ্রেণীর দালাল-ফড়িয়া জমির মালিকদের মাছ চাষের জন্য পুকুর কেটে দেয়ার কথা বলে মাটি কেটে নিচ্ছে। এজন্য জমির ভোগদখলদারদের হাতে কিছু টাকাও ধরিয়ে দেয়া হচ্ছে। ফলে না বুঝেই অনেকে সহজে স্থানীয় মধ্যস্বত্বভোগী ফড়িয়াদের ফাঁদে পা ফেলে আবাদি ও উচ্চফলনের জমি হারাচ্ছে। স্থানীয় ফড়িয়ারা শতাধিক শ্রমিক দিয়ে সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত মধুপুর গড়াঞ্চলের এই বাইদ থেকে দেদার মাটি কেটে নিচ্ছে। জানা গেছে, শেরপুর, সিলেট, নেত্রকোনার দুর্গাপুরে এ জাতীয় মাটি কাটা শুরু হলে স্থানীয়দের প্রতিবাদের মুখে প্রশাসনের নিষেধাজ্ঞায় ওই সব অঞ্চল থেকে মাটি সংগ্রাহকরা সরে আসতে বাধ্য হন। অনুরূপ গুণেমানে বলাইবাইদের মাটির সন্ধান পেয়ে স্থানীয় দালাল-ফড়িয়াদের হাত করে তারা বলাইবাইদের এ মাটি কাটা শুরু করে। প্রথম ধাপে আমজাদ আলীর ছেলে আনছার আলী তার দখলে থাকা বাইদের পুরো জমি থেকে মাটি কেটে বেঁচে দিয়েছেন। রুস্তম আলীর ছেলে একই নামের তার ভায়রা আনছার আলী এবার শুরু করেছেন মাটিপাচারের কাজ। অথচ ভোগদখলকারী অন্যদের মতো তারাও এ বাইদের জমির প্রকৃত মালিক নন। আদিবাসী গারোদের কাছ থেকে কিছু অর্থের বিনিময়ে নন-রেজিস্ট্রি দলিলে তারা মালিক বনে গেছেন। আনছার আলী বিষয়টি স্বীকারও করেছেন। এই কথিত জমির মালিকরা আবাদি জমির অবস্থা নষ্ট করে মাটি বিক্রি করে দিচ্ছে। প্রশাসনের অগোচরে স্থানীয়দের লোভ ও মাছ চাষের সুবিধা দেখিয়ে দেদার মাটি কিনে নিচ্ছে একটি সংঘবদ্ধ চক্র। মহোৎসব চলছে মাটি কাটা ও সংগ্রহের। ইতোমধ্যে এলাকার আজমত, মিজানুর, শাহজাহান, আনছার, হাকিমসহ ২০ জনের মতো ব্যক্তির জমির মাটি কেটে নেয়া হয়েছে। আর এ চক্রের নেতৃত্বে আছেন এলাকারই দানেজ নামের এক দালাল। তিনি প্রতি ট্রাকে সাত থেকে সাড়ে সাত হাজার টাকা দিলেও কোম্পানিতে বিক্রি করছেন টনপ্রতি ৩ হাজার টাকা। তিনি মাটি কেটে চাষের অযোগ্য এ জমিকে মাছ চাষের ক্ষেত্র তৈরিতে ক্ষতির কিছু দেখছেন না বলে মন্তব্য করেছেন। এলাকাবাসী অভিযোগ করেছেন, এভাবে মাটি কেটে নিলে উর্বর এ বাইদে আর কৃষিজমি অবশিষ্ট থাকবে না। ছোট ছোট জমির মালিকদের জমি বিলীন হচ্ছে ওই সব কাটা গর্তে। তাদের চাষের জমি আর থাকছে না। এমনকি পিরোজপুুর পূর্ব ও পশ্চিম বিভক্তকারী এই বাইদের ওপর নব স্থাপিত সংযোগ ব্রিজের কাছাকাছি মাটি কাটায় হুমকির মুখে পড়তে যাচ্ছে ব্রিজটি। এ বিষয়ে মধুপুর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) আব্দুল মালেক জানান, বিষয়টি সম্পর্কে কোন লিখিত অভিযোগ তার দফতরে নেই। তবে তিনি শুনেছেন জমির মালিকরা মাটি বিক্রি করছেন। প্রকৃত বিষয়টি জেনে দ্রুত পদক্ষেপ নেবেন বলে তিনি জানিয়েছেন।
×