ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

অবৈধ স্থাপনা ॥ চকরিয়ায় পাউবো’র জায়গা বেহাত

প্রকাশিত: ২৩:২৩, ২৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৬

অবৈধ স্থাপনা ॥ চকরিয়ায় পাউবো’র জায়গা বেহাত

স্টাফ রিপোর্টার, কক্সবাজার ॥ কক্সবাজারের চকরিয়ায় সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের দায়িত্বে অবহেলার সুযোগকে কাজে লাগিয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ডের অধিগ্রহনকৃত ও পরিত্যক্ত কোটি কোটি টাকা মূল্যের জায়গা বেহাত হতে চলছে। রাজনৈতিক নেতার প্রভাব কিংবা স্থানীয়ভাবে দাপট দেখিয়ে প্রভাবশালী লোকজন অবৈধ দখলে নিচ্ছে পাউবো’র এ জায়গা। ওই জায়গায় নির্মাণ করা হচ্ছে বিভিন্ন স্থাপনা। এতে করে উপজেলার চিরিঙ্গা, বদরখালী, কোনাখালী, ঢেমুশিয়া, পশ্চিমবড় ভেওলা, ডুলাহাজারা, খুটাখালী, বরইতলী, সাহাবিলের চোয়াঁরফাড়ি, ফাসিয়াখালীর দিগরপানখালী, বিএমচর ইউনিয়ন এবং চকরিয়া পৌরসভার ভাঙ্গারমুখ, এক নম্বর বাঁধ ও আশপাশ এলাকায় বেহাত হতে চলছে পাউবোর নিয়ন্ত্রনাধীণ বিপুল পরিমাণ ভু-সম্পদ। দখলে নেয়া বেশির ভাগ জায়গায় ইতোমধ্যে একাধিক বাণিজ্যিক মার্কেট, দোকানপাট ও বিপুল পরিমাণ জনবসতি গড়ে তোলা হয়েছে। এখনও জেলার বিভিন্ন স্থানে দখলে নেয়ার পর অবৈধ স্থাপনা নির্মাণের অপচেষ্টা চলছে। অনুসন্ধানে জানা গেছে, পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তাদের অগোচরে বেশ কিছুদিন ধরে চকরিয়ার চিরিঙ্গা পালাকাটা মৌজার মাছঘাট এলাকায় পাউবো’র অধিগৃহনকৃত কোটি টাকা দামের জায়গা দখলে নিয়ে সেখানে অবৈধ স্থাপনা নির্মাণ করছেন আবদুল হাকিম মাষ্টারের প্রভাবশালী লোকজন। অথচ ওই জায়গাটি ইতোপূর্বে কক্সবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ড এলএ মামলা মুলে অধিগ্রহন করে। পরে ওই জায়গার অংশে জনস্বার্থে একটি স্লুইচ গেট স্থাপন করে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। অবশিষ্ট জায়গা স্থানীয় ইকবাল ফারুক নামে একব্যক্তিকে রক্ষনা-বেক্ষনের জন্য পাঁচ বছরের ইজারা দেয়। অভিযোগ উঠেছে, পাউবো’র ইজারাপত্র থাকার পরও ইজারাদার ইকবাল ফারুককে ওই জায়গা দেখভাল করতে যেতে দিচ্ছেনা প্রভাবশালী লোকজন। উল্টো তাঁরা স্থানীয়ভাবে ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে ওই জায়গা দখলে নিয়ে সেখানে দিব্যি অবৈধ স্থাপনা নির্মাণ কাজ শুরু করে দিয়েছে। কক্সবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ডের ভূমি শাখা সূত্রে জানা গেছে, চকরিয়া চিরিঙ্গা মাছঘাট এলাকায় জনস্বার্থে পানি চলাচল নিশ্চিত করার জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ড একটি স্লুইচ গেট নির্মাণের উদ্যোগ নেয়। এরই জের ধরে ১৯৯৪-৯৫ সালে ২৪নম্বর এলএ মামলা মুলে পানি উন্নয়ন বোর্ড চিরিঙ্গা পালাকাটা মৌজার বিএস ৩৫২, ৩৫৩, ৩৫৪ ও ৩৯৯ আন্দর দাগের মালিক থেকে এক একর জায়গা অধিগ্রহন করে। ওইসময় জায়গার বিপরীতে ক্ষতিপুরণের সমুদয় টাকা মালিককে ফেরত দেয়া হয়। অধিগ্রহনের পর পাউবো ওই জায়গায় একটি স্লুইচ গেট স্থাপন করেন। এরপর ২০০৯-১০অর্থবছরের ২৩৯ নম্বর নথিমুলে অবশিষ্ট জিরো দশমিক ৮০ একর জায়গা রক্ষনা-বেক্ষনের জন্য বিধি মোতাবেক রাজস্ব পরিশোধ সাপেক্ষে পাঁচ (৫) বছর মেয়াদে ইজারা দেয় স্থানীয় হাজী মাস্টার মো: ইয়াকুবের পুত্র ইকবাল ফারুক নামে এক ব্যক্তিকে। ইজারাদার ইকবাল ফারুক অভিযোগে বলেন, পাউবো থেকে বিধি মোতাবেক ওই জায়গা তিনি ইজারা নেয়ার পর কিছুদিন শান্তিপুর্ণভাবে ভোগ দখলে থেকে চাষাবাদ করেন। কিন্তু কয়েকবছর ধরে স্থানীয় আবদুল হাকিম মাষ্টারের লোকজন অনেকটা জোরপুর্বক পাউবোর ওই জায়গা দখলে নিতে চেষ্টা করে আসছে। এ ঘটনায় ইতোপুর্বে কয়েকবার পানি উন্নয়ন বোর্ডের সংশ্লিষ্ট বিভাগকে অবহিত করা হয়েছে। বর্তমানে ওই লোকজন জায়গাটি দখলে নিয়ে সেখানে অবৈধ স্থাপনা নির্মাণ কাজ করছে। সংঘাত-সহিংসতার আশঙ্কা থাকায় অভিযুক্ত প্রভাবশালী মহলের ভয়ে তিনি প্রতিবাদ করতে সাহস পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ করেন। কক্সবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো: সবিবুর রহমান বলেন, বিধি মোতাবেক পাউবো’র লিজ নেয়া জায়গায় স্থায়ীভাবে কোন ধরণের স্থাপনা নির্মাণের নিয়ম নেই। তা ছাড়া চিরিঙ্গা মাছঘাট এলাকায় যাঁরা পাউবো’র অধিগ্রহনকৃত জায়গায় অবৈধ স্থাপনা করছেন, তাঁরা তো ইজারদার পক্ষের কেউ নয়। এব্যাপারে অভিযোগ পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ডের উচ্ছেদ কমিটিকে নির্দেশ দেয়া হবে।
×