ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

বাংলাদেশের অলরাউন্ড নৈপুণ্যে ২৩ রানে ধরাশায়ী শ্রীলঙ্কা

ফাইনালের স্বপ্ন দেখতেই পারেন মাশরাফিরা

প্রকাশিত: ০৭:২৩, ২৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৬

ফাইনালের স্বপ্ন দেখতেই পারেন মাশরাফিরা

মোঃ মামুন রশীদ ॥ লঙ্কানদের বিরুদ্ধে অধরা জয়টাকে ছুঁতে গিয়েও যেন পারছিল না বাংলাদেশ। বার বারই ফসকে যাচ্ছিল ম্যাচ খুব কাছে যাওয়ার পরও। সর্বশেষ দুই টি২০ ম্যাচে এমনটাই হয়েছে ২০১৪ সালের জানুয়ারিতে। এবার সেই আফসোসের সমাপ্তি ঘটিয়েছে বাংলাদেশ। এশিয়া কাপে রবিবার মিরপুর শেরেবাংলা জাতীয় স্টেডিয়ামে সাব্বির রহমানের ঝড়ো ইনিংসের পর বোলারদের দুর্দান্ত নৈপুণ্যে ২৩ রানে লঙ্কানদের হারিয়েছে টাইগাররা। আগের ৪ টি২০ ম্যাচেই হেরে গিয়েছিল বাংলাদেশ। এবার লঙ্কা বধের মাধ্যমে চলতি আসরে টানা দ্বিতীয় জয় পেল মাশরাফি বিন মর্তুজার দল। এখন বরাবরই বাংলাদেশের ক্রিকেটপ্রেমীরা উৎসবের সুযোগ পেয়ে যান। দুয়েকবার ছেদ পড়লেও প্রায় ধারাবাহিকভাবেই জিতে যাচ্ছে বাংলাদেশ। এবারও ক্রিকেটপ্রেমীরা উৎসবের রঙে মন রঙিন করে মাঠ ছাড়লেন। টস জিতে চলতি আসরে প্রথমবারের মতো ঘাসহীন উইকেটে ম্যাচসেরা সাব্বির রহমানের ৫৪ বলে ৮০ রানের বিস্ফোরক ইনিংসে ৮ উইকেটে ১৪৭ রান তুলেছিল বাংলাদেশ। পরে বাংলাদেশী বোলারদের সাঁড়াশি আক্রমণে ৮ উইকেটে ১২৪ রান পর্যন্ত যেতে পেরেছে শ্রীলঙ্কা। শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে ২০১৪ সালের জানুয়ারিতে দুই টি২০ খেলে আফসোস সঙ্গী হয়েছিল বাংলাদেশের। উভয় ম্যাচের ফয়সালা হয়েছে শেষ বলে। সেসব অতীত হলেও এবার এশিয়া কাপে বাংলাদেশের জন্য লঙ্কানদের হারিয়ে দেয়ার মিশন। এবার লঙ্কা বিজয় করতেই হবে। তবে আগে চারবার খেলেও সেটা পারেনি টাইগাররা। কিন্তু গত বছরটা সুবর্ণ সময় কাটিয়ে এখন দুর্দান্ত দল মাশরাফিরা। গতিধর পেসার মালিঙ্গা আতঙ্ক ছিলই। ইনজুরির কারণে তিনি না থাকায় আগেভাগেই আত্মবিশ্বাসে টগবগ বাংলাদেশ শিবির। কিন্তু শুরুটা হলো একেবারেই বাজে। প্রথম ওভারের দ্বিতীয় বলেই বাজে ফুটওয়ার্কের দোষে এলবিডব্লিউর ফাঁদে পড়ে বিদায় নিলেন মোহাম্মদ মিঠুন (০)। পরের ওভারেই আরেক ওপেনার সৌম্য সরকার (০) সাজঘরে। দুর্ভাগ্য সঙ্গী করে মুশফিকুর রহীম (৪) রানআউটের খপ্পরে পড়লেন। ২৬ রানেই ৩ উইকেট হারিয়ে বিপর্যয়ে বাংলাদেশ। তবে দর্শকদের মাঝে নিস্তব্ধতাটাকে বেশিক্ষণ স্থায়ী হতে দেননি সাব্বির। চড়াও হয়েছেন লঙ্কান বোলারদের ওপর। প্রথম ঝড়টা গেছে নুয়ান কুলাসেকারার ওপর দিয়ে। ইনিংসের চতুর্থ ওভারে তাকে টানা চার বলে ৪, ৬, ৪, ৪ হাঁকিয়ে সেই ওভারে ১৮ রান তুলে নেন সাব্বির। ৩ উইকেট হারিয়ে বসলেও পাওয়ার প্লের ৬ ওভারে ৪১ রান তুলে রানরেটটা ঠিক ছিল। সাকিব আল হাসানও সুস্থির থেকে দারুণ সঙ্গ দিয়ে যান সাব্বিরকে। সাব্বির ক্যারিয়ারের তৃতীয় ফিফটি করেন ৩৮ বলে। অবশ্য যে ছক্কা হাঁকিয়ে অর্ধশতক পেয়েছেন সেটা চামারা কাপুগেদেরার কাছে ক্যাচ গেলেও লুফতে পারেননি তিনি। এরপর আর থামানো যায়নি সাব্বিরকে। যখন থেমেছেন ততোক্ষণে ৫৪ বলে ১০ চার ও ৩ ছক্কায় ৮০ রানের ইনিংস খেলেছেন। তার তা-বে চতুর্থ উইকেটে মাত্র ১১ ওভারেই ৮২ রানের জুটি! টি২০-তে শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে বাংলাদেশের যে কোন উইকেটে সেরা জুটির রেকর্ড। সাকিব অবশ্য মারমুখী হতে পারেননি। তিনি ৩৪ বলে ৩ চারে ৩২ রান করে ফিরে যান। শেষদিকে মাহমুদুল্লাহ রিয়াদের ১২ বলে ২ চার ও ১ ছক্কায় ২৩ রানের অপরাজিত ইনিংসটি ৭ উইকেটে ১৪৭ রানের চ্যালেঞ্জিং সংগ্রহ এনে দিয়েছে। টি২০ ক্রিকেটে শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে প্রথম ব্যাট করে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ সংগ্রহ। তরুণ মিডিয়াম পেসার দুশমন্ত চামিরা (৩/৩০) ক্যারিয়ারসেরা বোলিং করেন। জবাব দিতে নামার পর তাসকিন আহমেদের করা ইনিংসের প্রথম ওভারের দ্বিতীয় বলেই ক্যাচ দিয়েছিলেন দিনেশ চান্দিমাল, স্লিপে সেটা ধরতে পারেননি সৌম্য সরকার। পরের ওভারের শেষ বলে তিলকারতেœ দিলশানও বেঁচে যান স্লিপে মাহমুদুল্লাহ ক্যাচ ছাড়ায়। সে সুযোগে ৩ ওভারে ২০ রান তুললেও চতুর্থ ওভারের প্রথম বলেই দিলশানকে (১২) শিকার করে প্রথম সাফল্য আনেন সাকিব। তবে এই সাফল্যকে ম্লান করে দেন চান্দিমাল ও শিহান জয়াসুরিয়া। দ্বিতীয় উইকেটে ৫৬ রানের জুটি গড়ে ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ লঙ্কানদের পক্ষে নিয়ে যান এ দু’জন। বাংলাদেশ শিবিরে তখন অস্বস্তি। তবে মুহূর্তেই চিত্র পাল্টে যায় মাহমুদুল্লাহ-সাকিবের জোড়া আঘাতে। ফিরে যান চান্দিমাল (৩৭ বলে ৩৭) এবং শিহান (২১ বলে ২৬)। উজ্জীবিত বাংলাদেশী বোলারদের বিরুদ্ধে আর কেউ সেভাবে দাঁড়াতে পারেননি। ফিরতি স্পেলে পেসাররাও দুরন্ত হয়ে ওঠেন। ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠার আগেই থিসারা পেরেরাকে (৪) ফিরিয়ে দেন মুস্তাফিজুর রহমান। শেষদিকে আলআমিনের তোপে আর দাঁড়াতেই পারেননি কোন লঙ্কান ব্যাটসম্যান। শেষ ওভারে কোণঠাসা শ্রীলঙ্কার দুটি উইকেট তুলে নিয়ে আরও বিপর্যস্ত করেন তিনি। নির্ধারিত ২০ ওভারে ৮ উইকেটে মাত্র ১২৪ রান তুলতে সক্ষম হয় লঙ্কানরা। আলআমিন ৩৪ রানে নেন ৩ উইকেট। প্রথমবারের মতো লঙ্কানদের বিরুদ্ধে জয় তুলে নেয় বাংলাদেশ। বাংলাদেশ-শ্রীলঙ্কা ॥ স্কোর কার্ড বাংলাদেশ-শ্রীলঙ্কা ম্যাচ টস ॥ বাংলাদেশ (ব্যাটিং)। ভেন্যু ॥ মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়াম। বাংলাদেশ ইনিংস রান বল ৪ ৬ মিঠুন এলবি ব ম্যাথুস ০ ২ ০ ০ সৌম্য ক ম্যাথুস ব কুলাসেকারা ০ ৩ ০ ০ সাব্বির ক জয়াসুরিয়া ব চামারা ৮০ ৫৪ ১০ ৩ মুশফিক রান আউট ৪ ৯ ০ ০ সাকিব ক চান্দিমাল ব চামিরা ৩২ ৩৪ ৩ ০ মাহমুদুল্লাহ নট আউট ২৩ ১২ ২ ১ নুরুল ক ম্যাথুস ব চামিরা ২ ৫ ০ ০ মাশরাফি রান আউট ২ ২ ০ ০ অতিরিক্ত (বা ১, ও ২, নো ১) ৪ মোট (৭ উইকেট; ২০ ওভার) ১৪৭ উইকেট পতন ॥ ১/০ (মিঠুন), ২/২ (সৌম্য), ৩/২৬ (মুশফিক), ৪/১০৮ (সাব্বির), ৫/১২৩ (সাকিব), ৬/১৪০ (নুরুল), ৭/১৪৭ (মাশরাফি)। বোলিং ॥ ম্যাথুস ৩-০-৮-১, কুলাসেকারা ৪-০-৪৪-১, থিসারা ১-০-১৪-০, জয়াসুরিয়া ৩-০-২১-০, হেরাথ ৪-০-২৪-০, দিলশান ১-০-৫-০, চামিরা ৪-০-৩০-৩। শ্রীলঙ্কা ইনিংস রান বল ৪ ৬ চান্দিমাল ক তাসকিন ব মাহমুদুল্লাহ ৩৭ ৩৭ ৪ ০ দিলশান ক সৌম্য ব সাকিব ১২ ৯ ২ ০ জয়াসুরিয়া স্টা. নুরুল ব সাকিব ২৬ ২১ ১ ২ ম্যাথুস ক সাকিব ব আল আমিন ১২ ২০ ০ ০ থিসারা এলবি. ব মুস্তাফিজ ৪ ৬ ০ ০ শ্রীবর্ধনে ক সাব্বির ব মাশরাফি ৩ ৪ ০ ০ শানাকা ক মুশফিক ব আল আমিন ১৪ ১৪ ০ ১ কাপুগেদারা নট আউট ১২ ৭ ০ ১ কুলাসেকারা ক সৌম্য ব আল আমিন ০ ১ ০ ০ চামিরা নট আউট ১ ১ ০ ০ অতিরিক্ত (ও ৩) ৩ মোট (৮ উইকেট; ২০ ওভার) ১২৪ উইকেট পতন ॥ ১/২০ (দিলশান), ২/৭৬ (চান্দিমাল), ৩/৭৮ (জয়াসুরিয়া), ৪/৮৫ (থিসারা), ৫/৯২ (শ্রীবর্র্ধনে), ৬/১০২ (ম্যাথুস), ৭/১১৬ (শানাকা), ৮/১১৭ (কুলাসেকারা)। বোলিং ॥ তাসকিন ৩-০-১৯-০, আল আমিন ৪-০-৩৪-৩, সাকিব ৪-০-২১-২, মুস্তাফিজ ৪-০-১৯-১, মাশরাফি ৪-০-১৭-১, মাহমুদুল্লাহ ২-০-১৪-১। ফল ॥ বাংলাদেশ ২৩ রানে জয়ী। ম্যাচসেরা ॥ সাব্বির রহমান।
×