ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

হবিগঞ্জের বাহুবলে চার শিশু হত্যার পর-

এবার জাপা নেতাকে হত্যার পর মাথা বিচ্ছিন্ন করে দেহ ৫ টুকরা

প্রকাশিত: ০৫:৪১, ২৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৬

এবার জাপা নেতাকে হত্যার পর মাথা বিচ্ছিন্ন করে দেহ ৫ টুকরা

রফিকুল হাসান চৌধুরী তুহিন, হবিগঞ্জ থেকে ॥ সুন্দ্রাটিকিতে নৃশংসভাবে চার শিশু হত্যার রেশ কাটতে না কাটতেই হবিগঞ্জের সেই বাহুবলের মাটিতে আবারও ঘটানো হলো রোমহর্ষক হত্যাকান্ড। অপহৃত হবার একদিন পর রফিক মিয়া (৩৩) নামে জাতীয় পার্টির নেতাকে উপর্যুপরি কুপিয়ে ক্ষতবিক্ষত শুধু নয়, তার মাথাসহ দেহ ৫ টুকরো করে রেললাইনে ফেলে দেয় দুর্বৃত্তরা। পুলিশ ও স্থানীয় গ্রামবাসীর ধারণা, রবিবার ভোর রাতের কোন এক সময়ে এই নৃশংস রোমহর্ষক হত্যাকা-টি সংঘটিত হয়। নিহত রফিক জেলার সংশ্লিষ্ট উপজেলাধীন পশ্চিম জয়পুর গ্রামের আব্দুর রহমানের পুত্র ও মিরপুর ইউনিয়ন যুব সংহতির সভাপতি। এদিকে এই হত্যাকা-ে জড়িত থাকার অভিযোগে জেলার বাহুবল উপজেলার পশ্চিম জয়পুর গ্রামের জাহের মোল্লা ও তার বড় ভাই আবুল কালামকে আটক করেছে পুলিশ। এই ঘটনার পর সংশ্লিষ্ট এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। পুলিশ ও পারিবারিক সূত্র জানায়, আগের দিন শনিবার রাত পৌনে ১২টা থেকে রফিকের খোঁজ পাচ্ছিল না তার পরিবার। বিষয়টি সংশ্লিষ্ট মডেল থানাকে অবহিত করা হয়। ফলে রফিকের সন্ধানে অভিযান শুরু করে পুলিশ। এরই প্রেক্ষিতে রবিবার সকাল ৮টার দিকে প্রথমে রফিকের বাড়ির পাশের জমি থেকে একটি রক্তমাখা গেঞ্জি, রক্তমাখা কুড়াল এবং তৎসংলগ্ন একটি পুকুর থেকে লুঙ্গি উদ্ধার করে পুলিশ। এতে অভিযানের নেতৃত্বদানকারী এডিশিনাল এসপি মোঃ শহীদুল ইসলাম, এএসপি হেডকোয়ার্টার মাসুদর রহমান মনির ও ওসি মোশারফ হোসেনসহ সংশ্লিষ্ট পুলিশ কর্মকর্তাদের মনে ধারণা জন্মায় যে, উদ্ধার হওয়া এইসব সামগ্রী শুধু রফিকেরই নয়, সে নৃশংসভাবে খুনও হয়েছে। এমন ধারণা ও মাটিতে পড়ে থাকা রক্তের স্তূপ-দাগ দেখে দেখে রফিকের সন্ধান পেতে এগুতে থাকে মরিয়া পুলিশ। একপর্যায়ে বেলা সোয়া ১১টার দিকে ঢাকা-সিলেট রেলপথ সংলগ্ন বার আউলিয়া নামক স্থানে মাথা বিচ্ছিন্ন রফিকের ৫ টুকরো মৃতদেহসহ হাত-পা ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে থাকতে দেখেন তারা। তবে হবিগঞ্জের এসপি জয়দেব কুমার ভদ্র জনকণ্ঠকে জানান, রফিককে নৃশংসভাবে হত্যার পর নাকি ঢাকা-সিলেট রেললাইনে ফেলে দেয় দুর্বৃত্তরা। আর এ জন্যই এই পথে চলাচলরত যে কোন ট্রেনে কাটা পড়ে রফিকের মৃতদেহ। তিনি বলেন, প্রাথমিকভাবে এটি একটি পরিকল্পিত হত্যাকা- মনে হলেও ধারণা করা হচ্ছে, পূর্বশত্রুতার জের ধরে এমন ঘটনার সৃষ্টি। এসএসপি হেডকোর্টার মাসুদুর রহমান মনির জানান, জমি সংক্রান্ত বিরোধ থেকে তা ঘটে থাকতে পারে। অন্যকোন বিষয়ও এড়িয়ে যাচ্ছি না আমরা। তিনি বলেন, ইতোমধ্যে এই ঘটনার সাথে জড়িত থাকার সন্দেহে দুজনকে আটক করা হয়েছে। তাদের ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদের আওতায় আনা হবে। দ্রুত এই হত্যার প্রকৃত মোটিভ বের করতে পুলিশ সফল হবে। এদিকে সংশ্লিষ্ট গ্রামবাসী, রফিকের পরিবারসহ ঘটনাস্থলে উপস্থিত সাধারণ মানুষের মনে প্রশ্ন উঠেছে, জাপার এই মেধাবী নেতাকে স্বাভাবিক হত্যার লক্ষ্যে এমন ঘটনা ঘটানো হয় নাই। তাকে তিলে তিলে কষ্ট দিয়ে হত্যার জন্যই প্রথমে উপর্যুপরী কুপিয়ে এবং পরবর্তীতে কুড়ালের মতো দেশীয় অস্ত্র ব্যবহার করে দুর্বৃত্তরা। তাদের মতে, এই কুড়াল দিয়েই হয়তো রফিকের হাড় কেটে দেহ টুকরো টুকরো করা হয়।
×