ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

কন্যাদের বিক্রি করে ভারতে নতুন সংসার পাতবে ওদের স্বামী ;###;দুই জা স্বামী ও কন্যা ফিরে পেতে অসহায়ের মতো ঘুরছে;###;ওদের আশা, ভারতীয় কর্তৃপক্ষের নজরে পড়লে হয়তো একটা সুরাহা হবে

দীপালি-তপতির অপরাধ কন্যা সন্তান প্রসব! ॥ ভারতে পালিয়ে গেছে ওদের স্বামী

প্রকাশিত: ০৫:৪০, ২৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৬

দীপালি-তপতির অপরাধ কন্যা সন্তান প্রসব! ॥ ভারতে পালিয়ে গেছে ওদের স্বামী

সমুদ্র হক ॥ দুই জা। দীপালি রানী কর্মকার ও তপতি রানী কর্মকার। দুইজনের তিন কন্যা সন্তান। দু’জনারই স্বামী গোপনে বসতভিটা ও জমি-জিরাত বিক্রি করে রাতের অন্ধকারে তিন কন্যাকে নিয়ে স্ত্রীদের দেশে ফেলে রেখে পালিয়ে গেছে ভারতে। ফোনে জানিয়েছে, তারা আর দেশে ফিরবে না। কন্যাদের বিক্রি করে দিয়ে ভারতে বিয়ে করে সেখানেই থাকবে। দীপালি ও তপতির অপরাধ; তারা কন্যা সন্তান প্রসব করেছে এবং ভারতে যেতে চায়নি। তাই এই কঠিন শাস্তি। দীপালি ও তপতি এখন কন্যা ও স্বামী ফিরে পেতে অসহায়ের মতো ঘুরছে। কোথায় না যাচ্ছে তারা। শেষ পর্যন্ত সাংবাদিকদের কাছে এসে একটু সহযোগিতার আশায় তাদের জীবন কাহিনী তুলে ধরে। দীপালি রানীর বাড়ি টাঙ্গাইলের সখিপুরে। তপতি রানীর বাড়ি বগুড়ার চান্দাইকোনায়। দীপালির বিয়ে হয় বগুড়া সদরের ধাওয়াকোলা গ্রামের রাজ্য চন্দ্র কর্মকারের সঙ্গে। তপতির বিয়ে হয় বাবলু কর্মকারের সঙ্গে। রাজ্য চন্দ্র ও বাবলু দুই ভাই। তাদের বাবা কালিপদ কর্মকার ও মা কাঞ্ছি রানী কর্মকার। দীপালি ও তপতির শ্বশুর শাশুড়ি পুত্রবধূদের কন্যা সন্তান হওয়ার পর থেকেই শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন শুরু করে। তাদের স্বামীও কোন প্রতিবাদ করে না। উল্টো তারাও নির্যাতন সমর্থন করে এবং নিজেরাও নির্যাতন করে। দীপালির দুই মেয়ে রিংকি কর্মকার (৮) টুসু কর্মকার (৪)। তপতির এক মেয়ের নাম পিংকি কর্মকার (৫)। দীপালি ও তপতি জানায় বছর দশেক আগে তাদের বিয়ের সময় যৌতুকের টাকা আসবাবপত্র তো দেয়ই। বিভিন্ন সময়ে অনেক টাকা এনে দিয়েছে। তারপরও স্বামী দেবর শ্বশুর শাশুড়ি দুই জাকেই নির্যাতন করত। কিছুদিন আগে চিকিৎসার কথা বলে তাদের স্বামীদের আরও দুই ভাই ভারতে যায়। এ সময় শ্বশুর শাশুড়ি ভারতে যাওয়ার চেষ্টা করে। পুত্র ও পুত্রবধূদেরও ভারতে যাওয়ার কথা বললে দীপালি ও তপতি নিজে দেশেই থাকতে চায়। এরপর নির্যাতনের মাত্রা আরও বাড়ে। গত ২৫ ফেব্রুয়ারি শ্বশুর শাশুড়ি পাশের গ্রামে অষ্টপ্রহরের অনুষ্ঠানের কথা বলে দুই জায়ের তিন কন্যাকে নিয়ে যায়। দীপালি ও তপতির স্বামী জরুরী কাজে বাইরে যাওয়ার কথা বলে ঘর থেকে বের হয়। তারপর ফিরে না এলে খোঁজাখুঁজি শুরু হয়। এর মধ্যেই ভারত থেকে দীপালি ও তপতির স্বামী মোবাইল ফোনে জানায়; তারা সেখানে জমি জমা কিনেছে। দেশে ফিরবে না। তিন কন্যাকে বিক্রির ব্যবস্থা হয়েছে। ভারতেই বিয়ে করে নতুন সংসার গড়বে। ফোনে এই কথা শোনার পর তারা মানসিকভাবে ভেঙ্গে পড়ে। এদিকে অনেক আগেই ধাওয়াকোলা গ্রামে বসতভিটা বেচে ভাড়া বাসায় বসবাস শুরু করে। দীপালি ও তপতির স্বামী ভাংড়ি লোহা লক্করের ব্যবসা করত। দীপালি ও তপতি রানী জানায় তাদের স্বামী তো ভারতের নাগরিক নয়। কিভাবে সেখানে থাকবে। সন্তানদের জন্য তাদের আর্তনাদ কেউ শুনছে না। কী করবে তারা! সাংবাদিকদের কাছে তারা জানতে চায় কি করে তিন কন্যাকে বিক্রির হাত থেকে বাঁচাবে। তারা আশা করে মিডিয়া এগিয়ে এলে ভারতীয় কর্তৃপক্ষের নজরে পড়লে হয়ত শিশুদের রক্ষা করতে পারবে। এক দেশের নাগরিক হয়ে আরেক দেশে কিভাবে বসবাসের অনুমতি পাবে! এমন হাজারো প্রশ্ন এখন তাদের কাছে। দীপালি ও তপতির কথাÑ এই দেশ ছেড়ে তারা কোথাও যাবে না। এই দেশেই জন্মেছে মরলে এই দেশেই মরবে। তাদের আকুলতা- কেউ কি নেই তাদের সাহায্য করার। ফুটফুটে শিশুদের বিক্রির কথার জানার পর কারও বিবেক কি নাড়া দেবে না এই শিশুদের বিক্রির হাতে থেকে বাঁচাতে। আইন প্রয়োগকারী সংস্থা কি পারে না শিশুদের রক্ষা করতে...।
×