ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

রূপপুর পরমাণু বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণে খালেদার সম্মতি রয়েছে ॥ রুশ রাষ্ট্রদূত

প্রকাশিত: ০৫:৩৫, ২৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৬

রূপপুর পরমাণু বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণে খালেদার সম্মতি রয়েছে ॥ রুশ রাষ্ট্রদূত

কূটনৈতিক রিপোর্টার ॥ রূপপুর পরমাণু বিদ্যুতকেন্দ্র নির্মাণে বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ারও সম্মতি রয়েছে বলে জানিয়েছেন ঢাকায় নিযুক্ত রাশিয়ার রাষ্ট্রদূত আলেক্সান্ডার নিকোলায়েভ। এছাড়া তিনি জানিয়েছেন, সৌদি জোটের নেতৃত্বে সামরিক জোটে বাংলাদেশের অংশ নেয়ায় রাশিয়া প্রাথমিকভাবে বিস্মিত হয়েছিল। তবে ঢাকা মস্কোকে নিশ্চিত করেছে, সৌদি জোটে যোগ দিলেও বাংলাদেশ জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের বিধি অনুসরণ করবে। রাশিয়ার রাষ্ট্রদূত আরও বলেন, বর্তমান সরকারের ২০২১ ও ২০৩০ সালের ঘোষিত উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে বাংলাদেশের পাশে থাকবে রাশিয়া। রবিবার জাতীয় প্রেসক্লাবের ভিআইপি লাউঞ্জে ডিপ্লোম্যাটিক করেসপন্ডেন্টস এ্যাসোসিয়েশন (ডিক্যাব) আয়োজিত ‘ডিক্যাব টক’ অনুষ্ঠানে রাশিয়ার রাষ্ট্রদূত এসব কথা বলেন। এতে আরও বক্তব্য রাখেনÑ ডিক্যাব সভাপতি আঙ্গুর নাহার মন্টি ও সাধারণ সম্পাদক পান্থ রহমান। আগামী ১০ মার্চ ঢাকা থেকে বিদায় নিচ্ছেন রাশিয়ার রাষ্ট্রদূত। বিদায়ের আগে ডিক্যাব টক অনুষ্ঠানে রাশিয়ার রাষ্ট্রদূত আলেক্সান্ডার নিকোলায়েভ বলেন, রূপপুর পরমাণু বিদ্যুতকেন্দ্র নির্মাণে বাংলাদেশের সকল রাজনৈতিক দলেরই ঐকমত্য রয়েছে। এ বিষয়ে বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ারও সমর্থন রয়েছে। দলটির কোন আপত্তি নেই। তিন বছর আগে বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে এক সাক্ষাতে এ বিষয়ে আমার আলাপ হয়েছিল। তিনি রূপপুর বিষয়ে আমাদের সমর্থনের কথা জানিয়েছিলেন। তিনি আর বলেন, কোন নির্দিষ্ট সরকারের সঙ্গে নয়, রাশিয়ার সম্পর্ক বাংলাদেশের জনগণের সঙ্গে। সৌদি সামরিক জোটে বাংলাদেশের যোগ দেয়াটাকে রাশিয়া কিভাবে দেখছেÑ এমন প্রশ্নের উত্তরে রাশিয়ার রাষ্ট্রদূত বলেন, বর্তমানে তিনটি আইএসবিরোধী আন্তর্জাতিক জোট রয়েছে। তার মধ্যে সৌদি আরবের নেতৃত্বে রয়েছে একটি। সৌদি জোটের নেতৃত্বে সামরিক জোটে বাংলাদেশ অংশ নেয়ায় রাশিয়া প্রাথমিকভাবে বিস্মিত হয়েছিল। তবে ঢাকা থেকে মস্কোকে নিশ্চিত করা হয়েছে, সৌদি জোটে যোগ দিলেও বাংলাদেশ জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের বিধি অনুসরণ করবে। রাশিয়াকে বাংলাদেশ জানিয়েছে, সৌদি জোটের সঙ্গে শুধুমাত্র তথ্য ও অভিজ্ঞতা বিনিময় করা হবে। আলেক্সান্ডার নিকোলায়েভ বলেন, বাংলাদেশের সঙ্গে রাশিয়ার সম্পর্কের এখন প্রধান বিবেচ্য বিষয় বিদ্যুত ও জালানি খাত। দুই দেশ এ বিষয়ে একযোগে কাজ করছে। ভবিষ্যতেও এই কাজ অব্যাহত থাকবে। অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বাংলাদেশের সশস্ত্র বিভাগের কর্মকর্তারা রাশিয়া থেকে আরও অস্ত্র কেনার বিষয়ে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। তবে এটি দুই দেশের সরকারের মধ্যে আলোচনার বিষয়। বাংলাদেশ সরকারের কাছ থেকে আনুষ্ঠানিক চিঠি পেলে রাশিয়া বিষয়টি বিবেচনা করবে। ৫ জানুয়ারির নির্বাচন নিয়ে পশ্চিমা বিশ্ব প্রশ্ন তুললেও রাশিয়া বাংলাদেশ সরকারকে সমর্থন অব্যাহত রেখেছেÑ এমন প্রশ্নের প্রেক্ষিতে রাষ্ট্রদূত বলেন, রাশিয়া কোন দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ বা নাক গলায় না। রাশিয়া কোন দেশের ওপর তার দর্শনও চাপিয়ে দেয় না। তবে রাশিয়ার সঙ্গে বাংলাদেশের ঐতিহাসিক সম্পর্ক রয়েছে। এই সম্পর্ক অব্যাহত থাকবে। বাংলাদেশের যে কোন সরকারের সঙ্গে রাশিয়া কাজ করে যাবে। এক প্রশ্নের উত্তরে রাশিয়ার রাষ্ট্রদূত বলেন, সিরিয়ার বিষয়ে রাশিয়া যে পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে, সেটা হস্তক্ষেপ নয়। কারণ সিরিয়া সরকারের অনুরোধেই সেখানে আক্রমণ করা হয়েছে। রাশিয়ার রাষ্ট্রদূত বলেন, বাংলাদেশকে উন্নয়ন করতে হলে পারমাণবিক জ্বালানিই হতে পারে অন্যতম শক্তি। এক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞরা বার বার বলেছেন এটি নিরাপদ। আমি পরমাণু বিশেষজ্ঞ নই, তবে আপনারা পরমাণু বিশেষজ্ঞদের মাধ্যমে জানতে পারেন রূপপুর পরমাণু প্রকল্প কতটা নিরাপদ। এ প্রকল্প নিয়ে বিভিন্ন মহলে যে ভয় কাজ করছে তা মূলত অজ্ঞতার কারণেই। এ বিষয়ে বিস্তারিত জানলে আশা করি এ ভয় দূর হবে। বাংলাদেশে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুতিন আসছেন কি-না এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ২০১৩ সালের জানুয়ারিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রাশিয়া গিয়েছিলেন। সে সময় রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট জানিয়েছিলেন, তিনি বাংলাদেশ সফরে আসতে আগ্রহী। তবে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট কবে আসবেন সেটা এখনই বলা সম্ভব হচ্ছে না। রাশিয়ার রাষ্ট্রদূত বলেন, রাশিয়ান কোম্পানি গ্যাসপ্রম ও বাংলাদেশের পেট্রোবাংলা জ্বালানি খাত উন্নয়নে একযোগে কাজ করছে। তারা একত্রে ১০টি স্থানে গ্যাসকূপ অনুসন্ধানে কার্যক্রম চালিয়েছে। ওই অনুসন্ধানের ফলে প্রতিদিন ৫ দশমিক ১ মিলিয়ন কিউবিক মিটার গ্যাস এখন উত্তোলিত হচ্ছে, যা বাংলাদেশের মোট গ্যাস উৎপাদনের ৮ ভাগ। এছাড়া ২০১৫ সালে গ্যাসপ্রমের সঙ্গে বাপেক্সের আর একটি চুক্তি হয়েছে। চুক্তি অনুযায়ী পাঁচটি স্থানে গ্যাসের অনুসন্ধান চালানো হবে। আলেক্সান্ডার নিকোলায়েভ বলেন, বাংলাদেশ ও রাশিয়ার সহযোগিতার ক্ষেত্র অনেক বিস্তৃত। শিক্ষা, তথ্যপ্রযুক্তি, পোশাকশিল্প, মৎস্য, ওষুধ ইত্যাদি ক্ষেত্রে দুই দেশ একযোগে কাজ করছে। এসব খাতে দিন দিন সহযোগিতা বাড়ছে বলে তিনি উল্লেখ করেন। উল্লেখ্য, রূপপুরে দেশের প্রথম পরমাণু বিদ্যুতকেন্দ্র নির্মাণের জন্য রাশিয়ার সঙ্গে চুক্তি করেছে বাংলাদেশ। এতে ব্যয় ধরা হয়েছে ১২৬৫ কোটি ডলার বা এক লাখ এক হাজার কোটি টাকা। চুক্তি অনুসারে ১২০০ করে মোট ২৪০০ মেগাওয়াটের দুটি বিদ্যুতকেন্দ্র তৈরি করবে রাশিয়া। রাশিয়ার রাষ্ট্রদূত রূপপুর প্রকল্পের বিষয়ে জানান, ২০১৩ সালের অক্টোবরে রূপপুরে এই বিদ্যুতকেন্দ্রের ভিত্তি স্থাপন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপর পারমাণবিক বিদ্যুতকেন্দ্র পরিচালনায় কোম্পানি গঠন করতে সংসদে বিল পাস হয়। আইন অনুযায়ী, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুতকেন্দ্রের মালিকানা থাকবে বাংলাদেশ আণবিক শক্তি কমিশনের হাতে। আর কেন্দ্রটি পরিচালনার দায়িত্ব পাবে নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্ল্যান্ট কোম্পানি বাংলাদেশ।
×