ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

দশ অর্থনৈতিক অঞ্চলের কার্যক্রম উদ্বোধনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা;###;ফসলি জমি যাতে নষ্ট না হয়, পরিবেশ দূষণ না ঘটে, নদীতে দূষণ না ঘটে, যাতে বার বার ঘনবসতি উঠিয়ে দিতে না হয়

সারাদেশে পরিকল্পিতভাবেই শিল্প কারখানা গড়ে তোলা হবে

প্রকাশিত: ০৫:৩১, ২৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৬

সারাদেশে পরিকল্পিতভাবেই শিল্প কারখানা গড়ে  তোলা হবে

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, সারাদেশে পরিকল্পিতভাবে শিল্প কারখানা গড়ে তোলা হবে। কেননা আমরা যখন দায়িত্ব নিলাম তখন দেখলাম উদ্যোক্তারা বসে আছেন। যে যার মতো জমি কিনে শিল্প স্থাপন করছেন। এতে পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে। তখন আমরা সিদ্ধান্ত নিলাম সমগ্র বাংলাদেশে শিল্প কারখানা স্থাপন করা হবে। এজন্যই গড়ে তোলা হচ্ছে ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল। শিল্প উদ্যোক্তাদের পরিবেশবান্ধব বিনিয়োগের আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, শিল্প কারখানা স্থাপনে পরিবেশকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিতে হবে। অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলোতে ইটিপি বা সিইটিপি যেখানে যেটি প্রয়োজন তা থাকতে হবে। বর্জ্য যাতে নদীতে ও জমিতে না পড়ে সেদিকে নজর রাখতে হবে। রবিবার রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে ১০টি অর্থনৈতিক অঞ্চলের কার্যক্রমের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু ও পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। উপস্থিত ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব আবুল কালাম আজাদ, প্রধানমন্ত্রীর সচিব সুরাইয়া বেগম এবং বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্র্তৃপক্ষের নির্বাহী চেয়ারম্যান পবন চৌধুরী। বক্তব্য রাখেন মেঘনা ইকোনমিক জোন ও মেঘনা ইন্ডাষ্ট্রিয়াল ইকোনমিক জোনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোস্তফা কামাল, পাওয়ার প্যাক ইকোনমিক অঞ্চলের রন হক শিকদার, একে খান অর্থনৈতিক অঞ্চলের সালাউদ্দিন কাশেম খান, বে-ইকোনমিক জোনের জিয়াউর রহমান, আমান ইকোনমিক জোনের রফিকুল ইসলাম এবং আবদুল মোনেম ইকোনমিক জোনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এ এসএম মইনুদ্দিন মোনেম। এছাড়া, চট্টগ্রামের মিরসরাই অর্থনৈতিক অঞ্চল থেকে ভিডিও কনফারেন্সে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেন, গণর্পূতমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, অর্থনৈতিক অঞ্চলে শিল্প গড়ে তুলতে উদ্যোক্তাদের পরিবেশবান্ধব বিনিয়োগ করতে বলব। যাতে পরিবেশ নষ্ট না হয়, যাতে ফসলি জমি নষ্ট না হয়। নদী-পরিবেশ দূষণ না হয়। যাতে ঘনবসতি বার বার উঠিয়ে দিতে না হয়। যত্রতত্র শিল্প কারখানা গড়ে তোলা না হয়। শিল্পাঞ্চলগুলো পরিবেশবান্ধব হতে হবে, জলাধার থাকতে হবে, সবুজ বৃক্ষরাজি থাকতে হবে, সুন্দর বর্জ্য ব্যবস্থাপনা থাকতে হবে। সরকার বাংলাদেশকে উন্নত সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে গড়ে তুলতে কাজ করছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০২১ সালের মধ্যে আমরা মধ্য আয়ের দেশ গড়ার যে লক্ষ্য নিয়েছি, তা বাস্তবায়নে এসব শিল্পাঞ্চল গুরুত্বর্পূণ ভূমিকা রাখবে। তিনি বলেন, আজকে আমরা ১০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তুলছি। দেশে আমরা ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তুলব। জাতির জনকের পরিকল্পনা অনুযায়ী সরকারী, বেসরকারী, সরকারী-বেসরকারী যৌথ উদ্যোগ এবং বিদেশের সঙ্গে জি টু জি ভিত্তিতে এসব অর্র্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। দেশী-বিদেশী উদ্যোক্তাদরে বিনিয়োগে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বেসরকারী উদ্যোক্তারা এগিয়ে না এলে দেশের অর্থনীতি গতিশীল হবে না। আমরা বেসরকারী খাততে গুরুত্ব দিচ্ছি এবং বিনিয়োগের ক্ষেত্রে সব ধরনের সুযোগ করে দিচ্ছি। আজ যে দশটি অর্থনৈতিক অঞ্চল উদ্বোধন করা হলো এর মধ্যে ছয়টিই হচ্ছে বেসরকারী খাতের। এর মধ্য দিয়েই বেসরকারী উদ্যোক্তাদের সুযোগ দেয়ার বিষয়টি উঠে আসে। তিনি বলেন, বর্তমান সরকার ব্যবসা ও বিনিয়োগবান্ধব। ইতোমধ্যে আমরা বিনিয়োগবান্ধব নানা পদক্ষেপ নিয়েছি। নীতিমালা করেছি। আমরা ব্যবসা করতে নয়, ব্যবসার পরিবেশ তৈরি করতে চাই। বিনিয়োগকারীদের প্রতি সরকারের উদার মনোভাব ও বিভিন্ন সহযোগিতার কথা তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। এ সময় তিনি বলেন, দেশের অর্থনীতি ব্যবস্থাপনায় জাতির জনক বঙ্গবন্ধু যে নীতি অনুসরণ করতেন যেমন সরকারী, বেসরকারী ও কো-অপারেটিভ। আমরাও সেই অর্থ ব্যবস্থাকে গুরুত্ব দিচ্ছি। আমরা বিদ্যুত খাত বেসরকারী খাতে দিয়েছি, ফলে দেশে বিদ্যুত উৎপাদন ব্যাপকভাবে বেড়েছে। তাছাড়া মোবাইল কোম্পানি ও বিমানসহ বিভিন্ন খাত বেসরকারী উদ্যোক্তাদের জন্য উন্মুক্ত করেছি। শিল্পাঞ্চল গড়ে তোলার সুফল তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এতে আমাদের যুব সমাজের কর্মসংস্থান হবে। কর্মক্ষম যুব সমাজ নিয়ে আমরা কাজ করব। বিশ্ববাজারে পণ্য রফতানির জন্য আমাদের কাজ করতে হবে। পাশাপাশি দেশের অভ্যন্তরে প্রায় ১৬ কোটি মানুষের যে বিশাল বাজার রয়েছে সেটিকেও কাজে লাগাতে হবে। অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলো গড়ে তুলতে সবার সহযোগিতা কামনা করে প্রধানমন্ত্রী বলনে, অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলোতে এলাকাভত্তিকি খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ ব্যবস্থা রাখতে হবে। এগুলোতে বিনিয়োগে নারী উদ্যোক্তাদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, নারী উদ্যোক্তারা এগিয়ে এলে আমরা অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলোতে তাদের জন্য নির্দিষ্ট জায়গা রাখার ব্যবস্থা করব। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আধুনিক শিল্পের বিকাশ ঘটানোর জন্য দেশরে মানুষের ক্রয় ক্ষমতা বাড়াতে হবে। যত বেশি ক্রয় ক্ষমতা বাড়বে তত বেশি শিল্পের বিকাশ ঘটবে। এসময় তিনি বলেন, ২০০৬ সালে মানুষের মাথাপিছু আয় ছিল ৫৪৩ মার্কিন ডলার। বর্তমানে তা বেড়ে ১ হাজার ৩১৬ মার্কিন ডলারে উন্নীত হয়েছে। এটি দিন দিন যাতে বাড়ে সে ব্যবস্থাই আমরা করেছি। প্রস্তাবিত পায়রা সমুদ্র বন্দর হলে পুরো উত্তরাঞ্চল এমনকি আসামের সঙ্গেও নদীপথে সরাসরি যোগাযোগ স্থাপন করা সম্ভব হবে নদী ড্রেজিংয়ের মাধ্যমে। বক্তব্যের পর প্রধানমন্ত্রী ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলোর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। বিশেষ অতিথির বক্তব্যে আমির হোসেন আমু বলেন, শেখ হাসিনা দেশকে উন্নয়নে মহাসড়কে নিয়ে গেছেন। জাতীয় অর্থনীতিতে শিল্পের অবদান বাড়ছে। তাই ইতোমধ্যেই শিল্পনীতি করা হয়েছে। পরিবেশবান্ধব শিল্প বিকাশে শিল্প মন্ত্রণালয় সবসময়ই কাজ করছে। আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, বাংলাদেশ সঠিক পথেই রয়েছে। এখন বিনিয়োগকারীরা নিশ্চিতভাবেই বিনিয়োগ করতে পারেন। ইকোনমিক জোন সবসময়ই লাভজনক। আমরা চাই সবাই লাভবান হোক।
×