ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

অবহেলিত জনপদ ভালুকা এখন সমৃদ্ধ শিল্পাঞ্চল

প্রকাশিত: ০৩:৪৭, ২৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৬

অবহেলিত জনপদ ভালুকা এখন সমৃদ্ধ শিল্পাঞ্চল

নিজস্ব সংবাদদাতা, ভালুকা, ময়মনসিংহ, ২৮ ফেব্রুয়ারি ॥ ময়মনসিংহের ভালুকা উপজেলা এক সময়ের অবহেলিত জনপদ ও বন-জঙ্গলে ঘেরা ছিল। টিলা অধ্যুষিত বন্যামুক্ত উঁচু ভূমি হওয়ায় আশির দশকে এ এলাকায় শিল্প উদ্যোক্তরা শিল্পপ্রতিষ্ঠান স্থাপনে আগ্রহী হয়ে ওঠে। এক দশকে ভালুকা উপজেলায় দুই শতাধিক গার্মেন্টস, টেক্সটাইল, ওষুধ শিল্পপ্রতিষ্ঠান, একাধিক মোটরসাইকেল তৈরির কারখানা, সিরামিক শিল্প, খাদ্য উৎপাদনকারী, মাছ ও মুরগির খাবার তৈরির কারখানাসহ বহু শিল্পপ্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে। এসব এলাকার মানুষের জীবনমান উন্নত করতে বড় ভূমিকা রাখছে শিল্পকারখানা। এছাড়া শতাধিক মাঝারি ও ৫০০ ক্ষুদ্র শিল্পপ্রতিষ্ঠান হওয়ায় যোগাযোগ ব্যবস্থা আমূল পরিবর্তন করতে হয়েছে। জানা যায়, ১৯৯৬ সালে অধ্যাপক ডাঃ এম আমান উল্লাহ এমপি নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে অদ্যাবধি ভালুকা উপজেলায় বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজ করে ব্যাপক সুনাম অর্জন করেছেন। স্থানীয় সরকার অধিদফতরের মাধ্যমে ১শ’ ৩৭টি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও ১৩টি মাধ্যমিক ও মাদ্রাসার অবকাঠামো উন্নয়ন, সাতটি হাট-বাজার উন্নয়ন, প্রায় ১শ’ ৮৮ কিলোমিটার রাস্তার কাজ বাস্তবায়ন হয়েছে। প্রায় ৫০টির অধিক ছেটি বড় সেতু নির্মাণ, উপজেলা পরিষদের সম্প্রসারিত কমপ্লেক্স ভবন, বাসস্ট্যান্ড চত্বরে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ, মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স ভবন নির্মাণ, ভূমিহীন অসচ্ছল ১৮ মুক্তিযোদ্ধার বাসস্থান নির্মাণ, পাঁচটি আধুনিক ইউনিয়ন পরিষদ ভবন নির্মাণ এবং এডিপির আওতায় ৭শ’ দুটি উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয়েছে। কাবিখা ও টিআরের আওতায় ৩শ’ ৫৮টি মসজিদ, ৩৫টি মন্দির ১শ’ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও একটি দুস্থ পরিবারে সৌরবিদ্যুত প্যানেল স্থাপন করা হয়েছে। অতিদরিদ্রদের জন্য পাঁচ হাজার ৭শ’ কার্ডধারীর মাধ্যমে ৪শ’ ৯১টি প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয়েছে। ১১টি ইউনিয়নে ৪১টি কমিউনিটি ক্লিনিক, ২০ শয্যাবিশিষ্ট তিনতলা ট্রমা সেন্টার, দুই তলাবিশিষ্ট ইউসি ভবন, ভালুকা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ৩১ শয্যা থেকে ৫০ শয্যায় উন্নীত, ৪১ বিদ্যালয়ের ওয়াস বণ্টক নির্মাণ, পাঁচটি বিদ্যালয় স্থাপন, ৬৬টি প্রাথমিক বিদ্যালয়কে জাতীয়করণ, ১১টি বিদ্যালয়ে কম্পিউটার প্রজেক্টর স্থাপন, ২৫টি বিদ্যালয়ে মিড ডে চালু, সাতটি বিদ্যালয়ে পাঠাগার স্থাপন, বিশুদ্ধ পানির জন্য ৯শ’ ৩৯টি বাড়িতে নলকূপ স্থাপন, দুই হাজার ৩শ’ ৩৮টি সøাব, তিন হাজার ৮শ’ ৩৭টি রিং স্থাপন করা হয়েছে। জিএমটির আওতায় প্রায় সাত কিলোমিটার নদী খনন করা হয়। বর্তমানে উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে ১৭ কিলোমিটার রাস্তা নির্মাণাধীন। জাইকার অর্থায়নে ৯ কোটি ৬০ লাখ টাকা ব্যয়ে এবং বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে তিন কোটি টাকা ব্যয়ে দুটি রাস্তার কাজ চলছে। এছাড়াও বিভিন্ন প্রকল্পের আওতায় ৮৩ কিলোমিটার রাস্তার নির্মাণকাজ প্রক্রিয়াধীন। মেদুয়ারী ঘুর্নিঘাট ব্রিজ, মল্লিকবাড়ি রাস্তায় রুপা নদীর ব্রিজ ও স্বজনগাঁও রাস্তার কানহরি ব্রিজের নির্মাণকাজ শুরু হয়েছে। ভবিষ্যতে ভালুকায় সরকারী মেডিক্যাল কলেজ স্থাপন, ভালুকাকে অর্থনৈতিক অঞ্চল ঘোষণা, বহুতল আধুনিক অডিটরিয়াম নির্মাণ, আধুনিক মধ্যম আকারের স্টেডিয়াম নির্মাণ, হবিরবাড়ী ইউনিয়নকে পৌরসভায় রূপান্তর, ভালুকা-গফরগাঁও সড়কটি প্রশস্ত, ক্রমবর্ধমান শিল্প এলাকা হিসেবে রাস্তা-ঘাট-ব্রিজ ও অবকাঠামো খাতের উন্নয়নে বিশেষ বরাদ্দ প্রদান, সায়েরা-সাফায়েত স্কুল এ্যান্ড কলেজে ডিগ্রী ও অনার্স কোর্স চালু, সুতিয়া নদীর পশ্চিম তীরবর্তী, মাহমুদপুর গ্রাম, বিরুনীয়া বাজার এবং রাজৈ বাজারসহ নদীতীরবর্তী এলাকাকে নদী ভাঙ্গনের হাত থেকে রক্ষা করতে নদীর তীরে বেড়িবাঁধ নির্মাণসহ ঝুঁকিপূর্ণ স্থানে জরুরী ভিত্তিতে স্থায়ী প্রতিরক্ষামূলক প্রকল্প গ্রহণ, রাজৈ ইউনিয়নের শাহপাড়ায় অবস্থিত বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধটি মেরামত, গফরগাঁও বাইপাস সড়ক নির্মাণসহ ভালুকাবাসীর জন্য বিভিন্ন পরিকল্পনা হাতে নেয়া হয়েছে।
×