ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

যুদ্ধশিশু নিয়ে বইটি কাল্পনিক গল্পপ্রসূত নয় ॥ মুস্তফা চৌধুরী

প্রকাশিত: ০৩:১৩, ২৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৬

যুদ্ধশিশু নিয়ে বইটি কাল্পনিক গল্পপ্রসূত নয় ॥ মুস্তফা চৌধুরী

লেখক, গবেষক মুস্তফা চৌধুরী। ইংরেজী সাহিত্য, গ্রন্থাগার ও তথ্যবিজ্ঞান এবং কানাডীয় ইতিহাস বিষয়ে যথাক্রমে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, ওয়েস্টার্ন ওন্টারিও বিশ্বদ্যিালয় এবং চার্লটন বিশ্ববিদ্যালয়ে বিদ্যার্জন করেছেন। তাঁর লিখিত ’৭১-এর যুদ্ধশিশু : অবিদিত ইতিহাস’ গ্রন্থটি উচ্চতর মানবিক চেতনা ও শিশু অধিকার প্রতিষ্ঠায় গবেষণাধর্মী এক প্রামাণ্য দলিল। গ্রন্থটির ইংরেজী সংস্করণ ‘আনকন্ডিশনাল লাভ : স্টোরি অব এডবশন অব ১৯৭১ ওয়ার বেবিজ’। অমর একুশে গ্রন্থমেলায় মঙ্গলবার বিকেলে বইটির মোড়ক উন্মোচন করা হয়। গুণী এই লেখকের সঙ্গে বইটি সম্পর্কে আলাপচারিতার অংশ বিশেষ তুলে ধরা হলো। আপনার নতুন বইটি পাঠক কেন পড়বে? মুস্তফা চৌধুরী : প্রথম বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস সবার জানা উচিত। আমরা অনেকেই যুদ্ধশিশুর কথা শুনেছি কিন্তু তাদের জন্ম কিভাবে, তারা কোথায় এ সম্পর্কে অনেকেই জানিনা। বইটি তাদের জন্য সহায়ক। এই গ্রন্থে পাকবাহিনী কর্তৃক বাঙালী নারীদের প্রতি নির্দয় ও বর্বরতার চিত্র উপস্থাপনসহ যুদ্ধশিশুদের জন্মকথা এবং তাদের জন্মপরবর্র্তী সময়ে করণীয় সম্পর্কে তৎকালীন বাংলাদেশ ও কানাডার প্রশাসনিক ও আইনী জটিলতা এবং উভয় দেশের শ্রেণীবৈষম্যবোধ, বর্ণবৈষম্যবোধ এবং সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের খুঁটিনাটি বিভিন্ন দিক তুলে ধরা হয়েছে। যুদ্ধশিশুর সংজ্ঞা কি? মুস্তফা চৌধুরী : খুব সহজ কথায় যুদ্ধের নির্মমতার শিকারে ধর্ষিত নারীদের গর্ভে জন্ম নেয়া, মা-বাবা হারানো ও অবহেলিত শিশুই যুদ্ধশিশু। আপনার ’৭১-এর যুদ্ধশিশু : অবিদিত ইতিহাস’ গ্রন্থের উপজীব্য কি? মুস্তফা চৌধুরী : ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ ইতিহাসের পাতায় এক বিশেষ স্থান দখল করে আছে। বিশ্বব্যাপী আলোচিত এ ঘটনার মধ্যে অন্যতম ছিল অধিকৃত বাংলাদেশে ১৯৭১ সালের মার্চ থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত জবর-দখল করে থাকা পাকিস্তানী সেনাবাহিনীরা অগণিত নারীদের ধর্ষণ করে, যার ফলে যুদ্ধশিশুর জন্ম হয়। সে সময় ১৩ বছর বয়সী পর্যন্ত নারীরাও মা হয়েছিল। বর্বর পাকিস্তানীদের ধর্ষণের ফলে নাম পরিচয়হীন যুদ্ধশিশু ভূমিষ্ঠ হয়। এর মধ্যে কিছু যুদ্ধশিশু কানাডার নানা প্রান্তে লালিত-পালিত হয়েছে। তাদের ১৫ জনকে নিয়ে অনুসন্ধানের ফলাফলভিত্তিক এ গ্রন্থ। এটি বাংলাদেশ, যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, সুইজারল্যান্ড ও কানাডাতে প্রাপ্ত প্রামাণিক দলিলাদির ভিত্তিতে রচিত। বইটি প্রকাশ করেছে একাডেমিক প্রেস এ্যান্ড পাবলিশার্স লাইব্রেরি। আপনি কোথা থেকে তথ্য সংগ্রহ শুরু করেছেন? মুস্তফা চৌধুরী : এটি একটি স্পর্শকাতর ও সংবেদনশীল বিষয়। যুদ্ধ যখন হয়, কতজন ধর্ষিত হয়েছিল এটা গোপন থেকে যায়। বইটি লেখার প্রধান তথ্যগুলো ঢাকার ‘মাদার ত্রেসার্স মিশনারিজ অব চ্যারিটিজ হোম’ যাকে বলা হয় ‘শিশু ভবন’ থেকে সংগ্রহ করি। সেখানে কিছু যুদ্ধশিশুর জন্ম হয়। এ তথ্যগুলো সংগ্রহ করতে নানা সমস্যার মোকাবেলা করতে হয়েছে আমাকে। যুদ্ধশিশুরা আত্মপরিচয়ের ক্ষেত্রে কতটুকু সচেতন? মুস্তফা চৌধুরী : কানাডায় যারা এই শিশুদের দত্তক নিয়েছিলেন, তারা কেউই নিঃসন্তান ছিলেন না। তাদের প্রত্যেকের ঔরসজাত সন্তান আছে। এই শিশুরা কানাডার বৃহত্তর পরিবেশে বড় হয়ে গড়ে তুলেছে তাদের জীবন। সুদূর কানাডার মাটিতে বড় হয়ে তারা নিজেদের সম্পর্কে যথেষ্ট সচেতন। তারা কানাডাকে নিজের দেশ হিসেবে মনে করে। বইটি নিয়ে আপনার মূল্যায়ন কি? মুস্তফা চৌধুরী : এটা আমার প্রথম বই, যেটা লেখা হয়েছে যুদ্ধশিশুদের নিয়ে। এর আগে অনেকে যুদ্ধশিশুদের নিয়ে কাল্পনিক গল্পও লিখেছেন। কিন্তু আমার বইটি কোন কাল্পনিক গল্পপ্রসূত নয়। এটা তথ্যনির্ভর একটি গুরুত্বপূর্ণ বই। যুদ্ধকালীন ও যুদ্ধোত্তর বাংলাদেশের ইতিহাসের যে অজানা দিক রয়েছে, সে দুর্জ্ঞেয় বিষয়ে গবেষণা করে যে নতুন তথ্যের সন্ধান পাওয়া যায়, সে বিদিত অংশটুকু এ গ্রন্থে লিপিবদ্ধ করার চেষ্টা করেছি। বইটি সবার কাছে কিভাবে পৌঁছে দেয়া সম্ভব? মুস্তফা চৌধুরী : সরকারী পৃষ্ঠপোষকতার মাধ্যমে বইটি সবার কাছে পৌঁছে দেয়া সম্ভব। সরকার স্কুল বোর্ডে নেয়ার জন্য সুপারিশ করতে পারে। এছাড়া দেশের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, বিভিন্ন লাইব্রেরিসহ একে অন্যকে গিফট দেয়ার মাধ্যমেও বইটি অনেকের কাছে পৌঁছে দেয়া যায়। -গৌতম পাণ্ডে
×