ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

ধানের শত্রু মোকাবেলায়-

প্রকাশিত: ০৩:১০, ২৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৬

ধানের শত্রু মোকাবেলায়-

দেশের প্রধান খাদ্য ধানবীজ বা চাল বলেই ধানগাছের সুষ্ঠু বেড়ে ওঠা এবং তার পূর্ণ সক্ষমতা এত গুরুত্ববহ। ধানগাছের শত্রুরও অভাব নেই। সেই শত্রুদের দমন তথা রোগবালাই থেকে ধানের সুরক্ষা নিশ্চিত না করা গেলে খাদ্য নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়ে। কৃষি উৎপাদনে বাংলাদেশ চমক সৃষ্টি করেছে। এক সময় মান্ধাতার আমলের পদ্ধতিতে এ দেশে চাষাবাদ হতো। সে পশ্চাৎপদতা কাটিয়ে কৃষিতে আধুনিকায়নের ছোঁয়া লেগেছে প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রে। বাংলাদেশের কৃষকরা এখন ব্যবহার করছে কলের লাঙ্গল এবং ট্রাক্টর। ধান মাড়াইয়েও ব্যবহৃত হচ্ছে আধুনিক প্রযুক্তি। উন্নতমানের বীজ, সার এবং সেচ বাংলাদেশের কৃষির অনুষঙ্গে পরিণত হয়েছে। স্বাধীনতার পর বাংলাদেশের জনসংখ্যা বেড়েছে দ্বিগুণেরও বেশি। বাড়তি জনসংখ্যার প্রয়োজনে এ সময়ে বাসস্থান, স্কুল-কলেজ, হাটবাজার, কলকারখানা এবং অন্যান্য স্থাপনা নির্মাণে কৃষি জমি ব্যাপকভাবে হ্রাস পেয়েছে। স্বাধীনতার আগে মোট ধান উৎপাদন ছিল এক কোটি ১০ লাখ টন। কৃষি জমি প্রায় ৩০ শতাংশ কমে এলেও কৃষিতে যান্ত্রিক প্রযুক্তির ব্যবহার এবং আধুনিকায়নে মোট ধান উৎপাদন তিন গুণেরও বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে। একদিকে জনসংখ্যা দ্বিগুণেরও বেশি হয়ে যাওয়া, অন্যদিকে জনপ্রতি খাদ্যগ্রহণের পরিমাণ বৃদ্ধি পেলেও হেক্টরপ্রতি ধানের উৎপাদন কয়েক গুণ বৃদ্ধি পাওয়ায় বাংলাদেশ ধান রফতানিকারক দেশে পরিণত হয়েছে। আশা করা হচ্ছে, চাষের জমি তেমন না বাড়িয়েও আগামীতে বাংলাদেশে ধান উৎপাদন চার কোটি টনে উন্নীত করা সম্ভব হবে। ধান উৎপাদনে দেশের পরিশ্রমী কৃষকদের কৃতিত্ব যেমন অনস্বীকার্য, তেমনি ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের অধিক ফলনশীল ২৪টি নতুন জাতের ধানও অবদান রাখছে। বর্তমানে দেশের মোট ৭৫ ভাগ জমিতে ব্রি-ধানের চাষ হয় এবং এ থেকে দেশের মোট ধান উৎপাদনের শতকরা ৮৫ ভাগ আসে। ১৯৭০-৭১ সালে দেশে মোট উৎপাদিত ধানের পরিমাণ ছিল এক কোটি ১০ লাখ টন, ২০১২-১৩ সালে তা তিন কোটি ৪৮ লাখ টনে উন্নীত হয়েছে। ধান উৎপাদন বৃদ্ধি পাওয়ায় খাদ্য আমদানি ক্রমান্বয়ে কমছে ও দেশের বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় হচ্ছে। ধানের শত্রু মোকাবেলায়ও নতুন নতুন সফলতা আসছে। সম্প্রতি ধানগাছের রোগবালাই দমনে নয়া নভেল প্রজাতির ব্যাকটেরিয়া শনাক্তে বাংলাদেশী বিজ্ঞানী সাফল্য অর্জন করেছেন। বিষয়টি তাৎপর্যপূর্ণ এই কারণে যে, উক্ত ব্যাকটেরিয়া দিয়ে দেশীয় আবহাওয়ায় উদ্ভিদ রোগজীবাণুর বিরুদ্ধে কাজ করা যাবে। নয়া গ্রাম পজিটিভ ব্যাকটেরিয়ার নাম বেসিলাস অরাইজিকোলা যা আন্তর্জাতিক জার্নাল প্লান্ট প্যাথলজিতে প্রকাশিত হয়েছে। গ্রাম পজিটিভ বেসিলাস প্রজাতির ২৯৯টি ব্যাকটেরিয়ার মধ্যে মাত্র ৩০টি নভেল প্রজাতি। ৩১তম নয়া নভেল প্রজাতি হিসেবে জ্ঞান-বিজ্ঞানের শাখায় এটি যাত্রা শুরু করল যা রোগ প্রতিরোধী উপকারী ব্যাকটেরিয়া হিসেবে কাজ করে আসছে। বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের বিজ্ঞানী ড. মোঃ তোফাজ্জল হোসেন গিয়াংসেং জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় কোরিয়াতে গবেষণাকালে উক্ত ব্যাকটেরিয়া শনাক্ত করেন। আমাদের বিজ্ঞানীদের সাফল্য নিঃসন্দেহে আনন্দ সংবাদ। বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের বিজ্ঞানীরা এর আগেও চমক লাগানো সাফল্য দেখিয়েছেন। এ কথা মনে রাখা দরকারÑ গবেষণা কাজে সাফল্য পেতে হলে এ কাজের সুযোগসুবিধা ও পরিসর বৃদ্ধির কোন বিকল্প নেই।
×