ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

গ্যাস ব্যবহারে সচেতনতা

প্রকাশিত: ০৩:১০, ২৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৬

গ্যাস ব্যবহারে সচেতনতা

শুক্রবার রাজধানীর উত্তরার একটি বাসায় ঘটে গেছে এক মর্মন্তুদ ঘটনা। গ্যাসের আগুনে পুড়েছে একই পরিবারের পাঁচজন। এদের মধ্যে যন্ত্রণায় কাতরাতে কাতরাতে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েছে দুই সন্তান, শনিবার বাবাও মারা গেছেন। মায়ের অবস্থা সঙ্কটাপন্ন। শুক্রবার ভোরে গৃহকর্ত্রী সুমাইয়া নেওয়াজ গ্যাসের চুলা জ্বালাতে গেলে মুহূর্তেই আগুন ছড়িয়ে পড়ে চতুর্দিকে। এ সময় তার চিৎকার শুনে তার স্বামী ও তিন সন্তান ছুটে এলে সবাই দগ্ধ হয়। এরপর তাদের ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে নেয়া হলে শুরু হয় মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই। এটি অনস্বীকার্য যে গ্যাসের চুলায় রান্না নাগরিক জীবনে অনেক স্বাচ্ছন্দ্য এনে দিয়েছে। কিন্তু এই অতি দাহ্য বায়বীয় পদার্থটি ব্যবহারে যে ধরনের সতর্কতা প্রয়োজন তার অভাব রয়েছে। দুর্বল সংযোগ, ছোটখাটো ত্রুটিকে অবহেলা করা কিংবা দীর্ঘক্ষণ ধরে অযথা চুলা জ্বালিয়ে রাখা তো আছেই, সেই সঙ্গে আছে অননুমোদিত সংযোগ নেয়া। ফলে দুর্ঘটনার সংখ্যাও ক্রমে বেড়ে চলেছে। গ্যাস ব্যবহারে এর চেয়ে বড় বিপদ নিয়েও বিজ্ঞানীরা হরহামেশা আমাদের সাবধান করছেন। তাঁদের মতে, ঢাকায় যদি মোটামুটি শক্তিশালী কোন ভূমিকম্প হয়, তাহলে এখানকার বেশিরভাগ বাড়িঘরই ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। সে ক্ষেত্রে ভবনধসে যদি কিছু মানুষ বেঁচেও যায়, আগুনের হাত থেকে তারা বাঁচতে পারবে না। জালের মতো ছড়িয়ে থাকা গ্যাস পাইপলাইন থেকে অনবরত গ্যাস বেরোতে থাকবে আর তা ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাজুড়ে সৃষ্টি করবে এক ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড। এটা অস্বীকারের উপায় নেই যে, রাজধানী ও এর আশপাশের জেলাগুলোয় স্থাপিত গ্যাসের অবৈধ এবং পুরনো পাইপলাইন মানুষের জীবন ও জননিরাপত্তার জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। শিল্প-বাণিজ্য ও গৃহস্থালিতে অবৈধ গ্যাস সংযোগ ব্যবহার এবং এই সংযোগের জন্য নিম্নমানের পাইপ ও অন্যান্য পণ্য ব্যবহারের কারণে এই ঝুঁকি আরও বেড়েছে। শুধু অবৈধ নয়, বৈধভাবে স্থাপিত পাইপগুলোও নিয়মিতভাবে পরিষ্কার করা হয় না। সব মিলিয়ে বৈধ-অবৈধ প্রায় ১৭ হাজার কিলোমিটার পাইপলাইনের বিভিন্ন স্থানে তৈরি হয়েছে মৃত্যুফাঁদ। তিতাস গ্যাস সূত্রে জানা যায়, অবৈধ গ্যাস সংযোগের পাশাপাশি পুরনো পাইপলাইন এবং সঞ্চালন ও বিতরণ লাইনে ময়লা জমার কারণে বিভিন্ন সময় গ্যাস লিকেজ ও অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটছে। এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, গত ২০১৩-১৪ অর্থবছরে তিতাসের জরুরী দল ২১৬টি অগ্নিদুর্ঘটনা ও ৩ হাজার ৮১৯টি গ্যাস লিকেজের ঘটনার মুখোমুখি হয়েছে। পরের অর্থবছরে ২৮২টি অগ্নিদুর্ঘটনা এবং ৫ হাজার ১২৩টি গ্যাস লিকেজ মেরামত করা হয়েছে। গৃহস্থালির গ্যাস ব্যবহারে সতর্কতা ও সচেতনতা বাঞ্ছনীয়। কোন ফ্ল্যাট বা বাড়িভাড়া নেয়ার সময় ভাড়াটেকে যেমন বাড়ির সবকিছু ঠিক আছে কি না তা দেখে নেয়ার ব্যাপারে সচেতন হতে হবে। তেমনি বাড়িওয়ালাকেও তার বাড়ির নিরাপত্তা সম্পর্কে নিশ্চিত হয়েই বাড়িভাড়া দিতে হবে। কিন্তু দুঃখজনকভাবে দুই ক্ষেত্রেই গাফিলতি রয়েছে। এ ধরনের গ্যাস দুর্ঘটনার ব্যাপারে জনসচেতনতা সৃষ্টির বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়ে ভাবতে হবে। কিভাবে এ ধরনের দুর্ঘটনা থেকে বাসা বা ফ্ল্যাটকে নিরাপদ রাখা যাবে, সে ব্যাপারে জনগণকে সচেতন করতে হবে।
×