ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

ধোনিদের ৫ উইকেটে জয়

ভারতের পাকিস্তান বধ

প্রকাশিত: ০৮:৫৯, ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৬

ভারতের পাকিস্তান বধ

মিথুন আশরাফ ॥ ভারত-পাকিস্তান ম্যাচ। স্বাভাবিকভাবেই উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ার কথা। তা সমর্থকদের মধ্যে সেই উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়লও। কিন্তু মাঠের খেলায় পাকিস্তানের হতশ্রী অবস্থায় সেই উত্তেজনা হারিয়ে গেল। কোথায় চরম প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ ম্যাচ হবে, টান টান উত্তেজনায় শেষ হবে ম্যাচ, এমন ভাবনা করে রেখেছে সবাই। সেখানে ভারতের বিপক্ষে পাকিস্তান দঁাঁড়াতেই পারল না। ম্যাড়মেড়ে ম্যাচ হলো। ভারত যে ৫ উইকেটে জিতল, সেই জয়ে গর্ব মিশে থাকল। আর পাকিস্তানের? মিলল লজ্জা। মর্যাদার ম্যাচে প্রথম ইনিংসে সর্বনি¤œ রানে, ৮৩ রানে গুটিয়ে যাওয়ার লজ্জা মিশে রইল। বিরাট কোহলির ৪৯ রানের জবাবে ৮৫ রান করে পাকিস্তানকে লজ্জা দিয়েই এশিয়া কাপ টি২০ তে টানা দুই ম্যাচও জিতে নিল ভারত। ভারত ইনিংসে শুরুতেই যে মোহাম্মদ আমির বোলিং ভেল্কি দেখালেন, সেটিই শেষ পর্যন্ত পাকিস্তানের প্রাপ্তি হয়ে থাকল। পাকিস্তান সমর্থকরা আমিরের বোলিং থেকেই যা ‘একটু আধটু’ আনন্দ খুঁজে পেলেন। এত কম রান স্কোরবোর্ডে যোগ হওয়ার পরও জয়ের আশা দেখলেন। বাকিটা সময় তো ভারতেরই হয়ে থাকল। তা পাকিস্তান ইনিংসেও ভারতের দাপট দেখা গেল। ভারত ইনিংসেও। মনে করা হচ্ছিল, পিএসএলে টি২০ ক্রিকেটের মধ্যে থাকায় পাকিস্তান ক্রিকেটাররা বুঝি এবার ভারতের বিপক্ষে টি২০তে কিছু করে দেখাতে পারবেন। তা তো হলই না। উল্টো ১৭.৩ ওভারেই ৮৩ রানে অলআউট হয়ে গেল পাকিস্তান। যা আন্তর্জাতিক টি২০ তে প্রথম ইনিংসে পাকিস্তানের সর্বনি¤œ রান। এর আগে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ২০১০ সালে ৮৯ রানে গুটিয়ে গিয়েছিল পাকিস্তান। ব্যাটিংয়ে তাই লজ্জাই পেল শহীদ আফ্রিদির দল। বল হাতে আমির ৮ রানের মধ্যেই ৩ উইকেট নিলেও এর পর আর কোন বোলারই জৌলুস ছড়াতে পারেননি। সেখানে জয়ের সম্ভাবনাও জাগিয়েছিল পাকিস্তান। কিন্তু দ্রুত রান তোলায় অভ্যস্থ বিরাট কোহলি এদিন দলকে জেতানোর জন্য পরিস্থিতি সামাল দিয়ে এতটাই দুর্দান্ত ব্যাটিং করেছেন যে শেষ পর্যন্ত পাকিস্তানের হারই হলো নিয়তি। আমিরের বোলিং তোপে যখন ভারত ধুঁকতে থাকে তখন ব্যাটিংয়ে নামেন কোহলি। ৫১ বলে ৭ চারে ৪৯ রান করে সামির বলে এলবিডব্লিউ হন। কিন্তু এ এলবিডব্লিউ যে হয়নি, ব্যাটের আলতো ছোঁয়া লেগে প্যাডে লেগেছে, তা সবারই বোধগম্য হয়েছে। কোহলি আউট হলেও অবশ্য কোন সমস্যা হয়নি। ততক্ষণে যে ভারত ৭৬ রানে পৌঁছে গেছে। জিততে তখন বাকি মাত্র ৮ রানের। পা-ে ব্যাট হাতে নেমেই আউট হয়ে যান। কিন্তু আরেক ব্যাটসম্যান শেষ পর্যন্ত টিকে থাকেন। ম্যাচ জিতিয়েই মাঠ ছাড়েন। তিনি যুবরাজ সিং। যার সঙ্গে কোহলি চতুর্থ উইকেটে ৬৮ রানের জুটি গড়েন। যুবরাজ অপরাজিত ১৪ রান করেন। রানের হিসাবে অনেক বেশি না তা। তবে ৩২ বল খেলে শেষ পর্যন্ত যে উইকেট আঁকড়ে থাকেন, দলের হাল ধরেন, বিপদের সময় কোহলিকে যোগ্য সঙ্গ দেন; সেটিই যুবরাজকে প্রশংসায় ভাসাচ্ছে। তাই তো ১৬ ওভারের তৃতীয় বলে যখন কাভার দিয়ে বাউন্ডারি মেরে জয় নিশ্চিত করেন ধোনি, সবার আগে যুবরাজকে গলায় জড়িয়ে ধরেন। ১৫.৩ ওভারে ৫ উইকেট হারিয়ে ৮৫ রান করে জিতে ধোনির দল। ফাইনালের পথে এক পা দিয়েও রাখে। এশিয়া কাপ টি২০ তে প্রথম ম্যাচ খেলতে নেমে লজ্জার হার হয় পাকিস্তানের। পাকিস্তান ব্যাটসম্যানদের যে শনিবার কী হলো। মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে মুড়িমুড়কির মতো উইকেট পড়তে থাকল পাকিস্তানের। শনির দশা মিলল। এতদিন শুধু ভারত ব্যাটসম্যানদের দাপটের ইতিহাসই জেনেছে পাকিস্তান। এবার তারা বুঝল, ভারতের বোলিংটাও কতটা শক্তিশালী। সেই বোলিংয়ের সামনে অসহায় হয়ে পড়ল পাকিস্তান ব্যাটসম্যানরা। যেখানে আশিষ নেহরা (১/২০), যুবরাজ সিং (১/১১), রবীচন্দ্রন অশ্বিনের (০/২১) বোলিংয়ে কাত হয়ে যাওয়ার কথা পাকিস্তানের সেখানে হার্দিক পা-ে (৩/৮) ও রবীন্দ্র জাদেজাতেই কাবু হয়ে যায় আফ্রিদি বাহিনী। ভারত টস জিতে। আগে ফিল্ডিং করার সিদ্ধান্ত নেয়। প্রথম ম্যাচে শুরুতে বোলাররা ভাল করেছে। তাই ধোনি টস জিতে ফিল্ডিং নেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বলেই জানিয়েছেন। পাকিস্তান অধিনায়ক শহীদ আফ্রিদিও জানিয়েছেন, যে করেই হোক তারা ব্যাটিংই চেয়েছিলেন। কারণ, একাদশে চার পেসার নিয়ে খেলছে। কিন্তু চার পেসার দিয়ে কী খুব বেশি কাজ হবে? স্কোরবোর্ডে ব্যাটসম্যানরা যদি রানই তুলতে না পারেন। বোলাররা কী করতে পারবে তখন। পাকিস্তান ব্যাটসম্যানদের বিপাকে ফেলতে আগে ফিল্ডিং নেন ভারত অধিনায়ক মহেন্দ্র সিং ধোনি। তাই বলে তিনিও নিশ্চয়ই বোঝেননি পাকিস্তান এতটা হাল ছেড়ে দেবে। প্রথম ওভারের চতুর্থ বলেই যখন আশিষ নেহরার পিচ থেকে উঠে আসা বলটিতে উইকেটরক্ষক ধোনির হাতে ক্যাচ তুলে দিয়ে আসলেন মোহাম্মদ হাফিজ (৪) তখনই পাকিস্তানের খারাপ দিনের পূর্বাভাস যেন মিলে যায়। এরপর তো একটি করে ওভার এসেছে সামনে, ভারত বোলারদের দাপটে কখনও, কখনওবা নিজেদের ভুলে পাকিস্তান ব্যাটসম্যানরা আউট হয়েছেন। ঝড়ের গতিতে পাকিস্তানের সব যেন শেষ হয়ে যায়। পাকিস্তান ব্যাটসম্যানরা যে এত তাড়াহুড়া করে কেন খেলতে গেল, তা কারোরই বোধগম্য হলো না। যে রান নেয়ার নয় সেই রানও নিতে গেল। তাতে রান আউট হতেও হলো। ২২ বলে ৭ রান করা শারজিল খান খোঁচা মারতে গিয়ে জাসপ্রিত বুমরাহর বলে প্রথম স্লিপে রাহানের হাতে তালুবন্দী হলেন। যাকে নিয়ে এত ভরসা করেছেন আফ্রিদি। স্কোরবোর্ডে আরও ১০ রান যোগ হতেই সেই খুররম মনজুর (১০) অহেতুক রান নিতে গিয়ে রানআউট হলেন। এরপর তো মুহূর্তেই পাকিস্তানের সেরা তিন ব্যাটসম্যান সাজঘরে ফিরলেন। মাত্র ১০ রানের মধ্যেই আরও তিনটি উইকেটের পতন ঘটে গেল। শোয়েব মালিক (৪), উমর আকমল (৩) ও আফ্রিদি (২) আউট হয়ে গেলেন। সবচেয়ে বাজে আউটটি বোধহয় হলেন আফ্রিদিই। ১ রান নিলেই হয়। সেখানে ২ রান নিতে গিয়ে রানআউটের শিকার হলেন। পাকিস্তানী ব্যাটসম্যানদের এমন বোকামিতে হতবাক সবাই! ৪২ রানে ৬ উইকেট হারানোর পর কী আর ম্যাচে ভাল কিছু অর্জন করা সম্ভব? সবারই জানা, ‘না’। তাই ব্যাটিংয়ে আরেকটি খারাপ দিনই কাটাল পাকিস্তান। টি২০ তে ভারতের বিপক্ষে খেলতে গেলেই কেন জানি পাকিস্তান ক্রিকেটারদের হাঁটু কাঁপতে থাকে। এ ম্যাচের আগে ৬টি টি২০ ম্যাচ খেলে পাকিস্তান জিততে পেরেছে মাত্র ১টি ম্যাচে! এদিনও বোঝা গেল, টি২০ তে ভারতের সামনে নিরীহ পাকিস্তান। এ ফর্মেটে পাকিস্তানের ‘যম’ ভারত বললেও ভুল হবে না। ভারত বোলারদের বলগুলো খেলতে গিয়ে পাকিস্তান ব্যাটসম্যানদের যেন জ্বরই এসে পড়ল। শেষে বোলাররা মূলত ব্যাটিং করে থাকেন। ব্যাটসম্যানরাই কিছু করতে পারেননি। সেখানে বোলাররা আর কতদূর নিয়ে যাবেন দলকে। তবুও সরফরাজ আহমেদ যে বিপদের সময়ও ২৫ রানের ইনিংস খেলেছেন, তা প্রশংসা পাওয়ার মতোই। এটিই যে পাকিস্তান ইনিংসে ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ রান হয়ে থাকল। তা না হলে ৮৩ রানও করতে পারত না পাকিস্তান। ৫২ রানে ওয়াহাব রিয়াজ (৪) আউটের পর সরফরাজ ও মোহাম্মদ সামি মিলে অষ্টম উইকেটে ১৮ রানের জুটি গড়েন। যেটি পাকিস্তানের ইনিংসের বড় জুটি হয়ে থাকে। ৭০ রানে সরফরাজ আউটের পর বাকি ১৩ রান যোগ হতেই অলআউট হয় পাকিস্তান। শেষে ৮৩ রানের সময় টানা দুই বলে দুই উইকেট নেন পা-ে। এতটাই করুণ অবস্থা হয় পাকিস্তানের, টি২০ আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে প্রথম ইনিংসে ব্যাট করে সবচেয়ে কম রানে গুটিয়ে যাওয়ার লজ্জায় পড়ে। তাও আবার চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ভারতই সেই লজ্জা দিল পাকিস্তানকে! শহীদ আফ্রিদি প্রথমবার ভারতের বিপক্ষে টি২০ ম্যাচে নেতৃত্ব দেন। আর সেই ম্যাচেই এমন লজ্জা মিলল পাকিস্তানের। পাকিস্তানকে লজ্জা দিয়েই ম্যাচ জিতল ভারত।
×