ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

বাংলাদেশ-শ্রীলঙ্কা এগিয়ে যাওয়ার লড়াই

মাশরাফিদের লঙ্কা বধের মিশন আজ

প্রকাশিত: ০৫:৫৪, ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৬

মাশরাফিদের লঙ্কা বধের মিশন আজ

মিথুন আশরাফ ॥ মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে প্রতিদিন খেলা। তাই এশিয়া কাপ টি২০তে অংশ নেয়া দলগুলোর অনুশীলন করতে হচ্ছে ফতুল্লার খান সাহেব ওসমান আলী স্টেডিয়ামে। সেই ধারাবাহিকতায় আজ বাংলাদেশ-শ্রীলঙ্কা ম্যাচের আগে দুই দলকেই ফতুল্লায় অনুশীলন করতে হয়েছে। শ্রীলঙ্কা দল দুপুর ১টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত, আর বাংলাদেশ দল দুপুর ৩টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত অনুশীলন করেছে। দুই দলই কঠোর অনুশীলন করেছে। আজ যে টুর্নামেন্টে এগিয়ে থাকতে হলে দুই দলকেই জিততে হবে। কিন্তু জিতবে একটি দল। সেই দলটি কে, বাংলাদেশ না শ্রীলঙ্কা? সেই প্রশ্ন এখন সবার মনের ভেতরই ঘুরপাক খাচ্ছে। সেই সঙ্গে আজ ভুগবে কে, জিতবে কে? সেই প্রশ্নও সামনে চলে আসছে। এমন প্রশ্ন সামনে চলে আসার একটিই কারণ, দুই দলই যে সংযুক্ত আরব আমিরাতের বিপক্ষে ভুগেছে। আগে ব্যাটিং করে আরব আমিরাত বোলাররা দুই দলের ব্যাটসম্যানদের জন্যই ভোগান্তি উপহার দিয়েছে। তবে দিনশেষে আরব আমিরাতের বিপক্ষে শ্রীলঙ্কা ও বাংলাদেশই জিতেছে। আজ কোন এক দল ভোগান্তিতে পড়বে, শেষে জয় তুলে নেবে সেই দলই; এমনটি হবে? এসব নিয়ে অবশ্য ভাবনা কোন দলেরই। বাংলাদেশ অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজা বলেছেন, ‘আরব আমিরাতের বিপক্ষে যেরকম খেলা হয়েছে, আশা করছি সামনের ম্যাচগুলোতে আরও ভাল হবে।’ সেই ভাল হওয়া মানে জয়ও তুলে নেয়া। তা মিললে এশিয়া কাপে এবার বর্তমান চ্যাম্পিয়ন শ্রীলঙ্কার বারোটা বাজবে। টুর্নামেন্টে টিকে থাকবে ঠিক। তবে ফাইনালে খেলতে হলে ভারত ও পাকিস্তানের মতো দলকে তখন হারাতে হবে। আর বাংলাদেশ জিতলে তিন ম্যাচে ২ জয় পাবে। যা বাংলাদেশকে অনেক ভাল একটি প্লাটফর্মে দাঁড় করিয়ে দেবে। এরপর পাকিস্তানের বিপক্ষে যে খেলা আছে, সেটিতে জিতলে ফাইনালেই খেলার সম্ভাবনা জেগে যাবে। শ্রীলঙ্কা দলটি কি এত সহজেই হাল ছেড়ে দেবে? আরব আমিরাতের বিপক্ষেই প্রথম ম্যাচ খেলতে নামে শ্রীলঙ্কা। জয় তুলে নেয়। যদিও ব্যাটিংয়ে ভোগে। কিন্তু বোলারদের দাপটে ঠিকই জয় পায় শ্রীলঙ্কা। এবার বাংলাদেশের বিপক্ষেও জয় তুলে নেয়ার আশাই আছে লঙ্কানদের। অধিনায়ক লাসিথ মালিঙ্গা যেমন বলেছেন, ‘স্বাগতিক দল বাংলাদেশ। সম্প্রতি দলটি অনেক ভালও খেলছে। তবে আমরা নিজেদের নিয়েই ভাবছি। ভাল খেলে কিভাবে জেতা যায়, তাই নিয়ে ভাবছি।’ দুই দলেরই আরব আমিরাতে বিপক্ষে ম্যাচ হিসেবে আনলে বাংলাদেশই এগিয়ে থাকছে। আমিরাতের বিপক্ষে ১২৯ রান করতে পেরেছে শ্রীলঙ্কা। শেষ পর্যন্ত জিতেছেও ছোট্ট ব্যবধানে, ১৪ রানে। কিন্তু বাংলাদেশ করেছে ১৩৩ রান। জিতেছেও ৫১ রানের বড় ব্যবধানেই। আরব আমিরাতের বিপক্ষে ম্যাচটি হিসেব করলে দুই দলের মধ্যে বাংলাদেশই এগিয়ে থাকছে। তবে শ্রীলঙ্কা হচ্ছে এশিয়া কাপের ‘ফাইনালে’র দল। যেভাবেই শুরু হোক, শেষে ফাইনালেই খেলে ফেলে শ্রীলঙ্কা। এবার ১৩তম আসর হচ্ছে। সেটি হচ্ছে আবার টি২০ ফরমেটে। এর আগে যে ১২বার এশিয়া কাপ হয়েছে, সেটি ওয়ানডে ফরমেটে; ১১ বারই ফাইনালে খেলেছে শ্রীলঙ্কা। এর মধ্যে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে ৫ বার! সেই তুলনায় বাংলাদেশ ২০১২ সালে শুধু ফাইনালে খেলতে পেরেছে। তাহলেতো বোঝাই যাচ্ছে, এশিয়া কাপে শ্রীলঙ্কা যে কোন দলের চেয়ে ফেবারিট। এবার দলটি কি করে সেটিই দেখার বিষয়। দুই দলের মধ্যে ক্রিকেটারদের ব্যক্তিগত ক্ষমতা অবশ্য সমানই বলা চলে। কোথায় অভিজ্ঞতা বেশি, কিন্তু বর্তমান দাপট সমান। আবার কোথায় অভিজ্ঞতা বেশি, কিন্তু কার্যকারিতা কম। বাংলাদেশ দলের ওপেনিংয়ে যেমন সন্তান সম্ভবা স্ত্রীর পাশে থাকতে তামিম ইকবাল নেই। এটি পুরো টুর্নামেন্টেই বাংলাদেশকে ভোগাবে। এ পজিশনে খেলছেন সৌম্য সরকার ও মোহাম্মদ মিঠুন। দুইজনের ওপরই ভরসা করা যায়। তবে গত দুই ম্যাচের স্মৃতি বলছে বড় স্কোর গড়ে ফেলবে, সেই আশা করা যায় না। শ্রীলঙ্কার ওপেনিংয়ে আছেন দিনেশ চান্দিমাল ও তিলকারতেœ দিলশান। অভিজ্ঞতাতেও দুইজন এগিয়ে। আবার পারফর্মেন্সেও। এ দুই ওপেনারের ওপরই শ্রীলঙ্কা ভরসা করতে পারে। ওয়ানডাউনে যেখানে শ্রীলঙ্কার মিলিন্ডা সিরিবারদানা আছেন, সেখানে বাংলাদেশের সাব্বির রহমান রুম্মন এ পজিশনটিতে আছেন। দুইজনের মধ্যে সাব্বিরই এ পজিশনটি অলঙ্কিত করে রেখেছেন বেশি। বাংলাদেশ দলে পরের তিনটি পজিশনে মুশফিকুর রহীম, সাকিব আল হাসান ও মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ আছেন। শ্রীলঙ্কার আছেন দাসুন সানাকা, এ্যাঞ্জলো ম্যাথুস ও শেহান জয়াসুরিয়া। মুশফিক, সাকিব, মাহমুদুল্লাহ যেখানে যে কোন দলের বিপক্ষেই ত্রাস তৈরি করতে পারেন। সেখানে ম্যাথুসই শুধু আতঙ্ক! সাত নম্বর পজিশনটি টি২০ ক্রিকেটের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এ পজিশনে শ্রীলঙ্কার আছেন চামারা কাপুগেদারা। বাংলাদেশের আছেন নুরুল হাসান সোহান। তরুণ ক্রিকেটার হিসেবে এ স্থানে বাংলাদেশই এগিয়ে থাকছে। ব্যাটিংয়ে বাকি জায়গাগুলো বোলারদের দিয়েই সাজাতে হয়। সেই বোলিং ডিপার্টমেন্টটিতেই আসলে লড়াই হবে আজ। বিশেষ করে বাংলাদেশের মুস্তাফিজুর রহমান ও শ্রীলঙ্কার লাসিথ মালিঙ্গার দিকেই সবার নজর থাকবে। অভিজ্ঞতায় মালিঙ্গা এগিয়ে থাকলেও বর্তমানে মুস্তাফিজও কম নন। এ দুই পেসারের মধ্যে তাই জমজমাট লড়াইও দেখা যাবে। পেস আক্রমণে মাশরাফি, আল আমিন ও তাসকিন আহমেদের সঙ্গে শ্রীলঙ্কার নুয়ান কুলাসেকারা, ম্যাথুস ও দুসমান্থা চামিরার লড়াইও হবে। তবে মুস্তাফিজ-মালিঙ্গার মধ্যে পেস আক্রমণের লড়াই হলে স্পিনে সাকিব আল হাসান-রঙ্গনা হেরাথ লড়াইও বেশ জমবে মনে হচ্ছে। এখন দেখা যাক, ব্যক্তিগত লড়াই দিয়ে কোন দল কোন দলকে ভোগাতে পারে এবং জয় তুলে নিতে পারে।
×