ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

উত্তরায় গ্যাস বিস্ফোরণে মারা গেলেন বাবাও

প্রকাশিত: ০৫:০৯, ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৬

উত্তরায় গ্যাস বিস্ফোরণে মারা গেলেন বাবাও

স্টাফ রিপোর্টার ॥ রাজধানীর উত্তরায় চুলার গ্যাস লাইন বিস্ফোরণে দগ্ধ দুই সন্তানের পর চলে গেলেন বাবা শাহনেওয়াজও। একদিন মৃত্যুর সঙ্গে লড়ে শনিবার সন্ধ্যা পাঁচটা ৫৫ মিনিটে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেলেন ইঞ্জিনিয়ার শাহনেওয়াজ। মারাত্মক দগ্ধ তার স্ত্রী সুমাইয়া (৩৫) এখনও লড়ছেন। সর্বনাশা আগুন গ্রাস করেছে একটি পরিবারের সাজানো সংসার। আগুনে সামান্য দগ্ধ আরেক সন্তান জারিফ (১১) ভাল আছে। তবে সে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত। শনিবার বিকেলে এই পরিবারটির দগ্ধ সদস্যদের দেখতে বার্ন ইউনিটে যান মার্কিন রাষ্ট্রদূত মার্শিয়া ব্লুম বার্নিকাট। ঢাকা মেডিক্যালের বার্ন ইউনিটের আবাসিক সার্জন পার্থ শঙ্কর পাল শনিবার বলেন, বিকেল পাঁচটা ৫৫ মিনিটে শাহনেওয়াজের মৃত্যু হয়েছে। তার শরীরের ৯৫ শতাংশ পুড়ে গিয়েছিল। তিনি জানান, তার স্ত্রী সুমাইয়ার অবস্থাও ‘ক্রিটিকাল’। তার শরীরের ৯০ শতাংশই পুড়ে গেছে। পার্থ শঙ্কর জানান, এই দম্পতির মেজ ছেলে জারিফ মূলত আশঙ্কামুক্ত। প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে তাকে ছেড়ে দেয়া হয়েছে। শুক্রবার সন্ধ্যার দিকে এই দম্পতির দগ্ধ দুই সন্তান দেড় বছরের জায়ান বিন শাহনেওয়াজ ও ১৫ বছরের শাহালিন বিন শাহনেওয়াজ বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায়। সেদিন সকালে উত্তরার ১৩ নম্বর সেক্টরের ৩ নম্বর রোডের ৮ নম্বর সাততলা ভবনের সপ্তম তলার ফ্ল্যাটের মার্কিন দূতাবাসের মেনটেন্যান্স ইঞ্জিনিয়ার মোঃ শাহনেওয়াজের রান্নাঘরের বিস্ফোরণে পরিবারটির পাঁচজনই দগ্ধ হয়। দগ্ধ জারিফকে দুই ভাই ও বাবা মারা যাওয়ার খবর জানানো হয়নি জানিয়েছেন বলে তার চাচা কামরুল হাসান। তিনি বিষণœ কণ্ঠে বলেন, সে বার বার বলছে, বাবার কাছে যাব। মায়ের কাছে যাব। নিহত শাহনেওয়াজের ফুফাত বোনের ছেলে সাকিব জানান, মারা যাবার কয়েক ঘণ্টা আগে মামা (শাহনেওয়াজ) বুঝতে পেরেছেন, তার ছেলেরা মারা গেছেন। মামা যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের প্রকৌশল বিভাগে মেনটেন্যান্স ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে চাকরি করতেন। গ্রামের বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়ায়। গত ২০ ফেব্রুয়ারি উত্তরার ফ্ল্যাটে পরিবার নিয়ে উঠেছিলেন শাহনেওয়াজ। মাত্র ৬ দিনের মাথায় এমন দুর্ঘটনা ঘটবেÑ তা কেউ কল্পনা করতে পারেনি। কে জানত ওই আগুনে তাদের প্রাণ কেড়ে নেবে। কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে সাকিব বলছিলেন, এখন মামাত ভাই জারিফকে কি বলব। ওর দুই ভাই ও বাবা মারা গেছে। ও (জারিফ) বার বার আবোল তাবোল কথা বলছে। বার্ন ইউনিটে শাহনেওয়াজের ফুপাত বোন আরমিন নিশাত জানান, ভাই (শাহনেওয়াজ) বাড়িওয়ালাকে গ্যাস লিক হওয়ার কথা বার বার বলছিল। বাড়িতে ওঠার ৬ দিনের মাথায় গ্যাসের লিকেজের বিস্ফোরণে তাদের মৃত্যু হয়। এখন ভাবি সুমাইয়া বেঁচে আছেন জীবন মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে। তিনি জানান, ঘটনার পর বাড়িওয়ালা একটিবারের জন্য হলেও হাসপাতালে যাননি। পারিবারিক সূত্র জানায়, ছয়তলা ভবনের ছাদে আটশত বর্গফুটের তিন রুমের এ ফ্ল্যাটে প্রকৌশলী শাহনেওয়াজ ভাড়ায় আসেন গত ২০ ফেব্রুয়ারি। সেখানে নতুন সংসার গোছানো চলছিল। শুক্রবার খুব ভোরে তিনি ফজরের নামাজ পড়েন। এরপর ১৪ মাসের শিশু জায়ানকে কোলে নিয়ে ঘরের মধ্যে পায়চারি করছিলেন। স্ত্রী সুমাইয়া রান্না ঘরে যান। বড় দুই ছেলে শালিল ও জারিফ নিজেদের কক্ষে ঘুমিয়ে ছিল। হঠাৎ বিকট আওয়াজে বিস্ফোরণ। তারপর চারদিকে আগুন ছড়িয়ে পড়ে। আগুনে গ্রাস করতে থাকে একে একে সবাইকে। তারপর সব শেষ। শাহনেওয়াজের ছোট ভাই কামরুল হাসান হাসপাতালে সাংবাদিকদের জানান, গ্যাসের চুলার লাইনে লিক থাকায় এই অগ্নিকাণ্ড ঘটেছে। বাড়িওয়ালাসহ কারও বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ আছে কি নাÑ এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, ভাই তো গেল। ভাবী সুস্থ হোক। তখন সব কথা জানাব। উত্তরা পশ্চিম থানার ওসি আলী হোসেন জানান, শুক্রবার রাতে থানায় শাহনেওয়াজের ছোট ভাই কামরুল অভিযোগ করলে একটি অপমৃত্য মামলা নেয়া হয়। তিনি জানান, চুলার গ্যাসের লাইন লিক করে সারা বাড়িতে আগুন ছড়িয়ে পড়েছিল। কারণ বাড়ির দরজা-জানালা ছিল বন্ধ। সকালে সুমাইয়া নাস্তা তৈরি করতে গিয়ে চুলায় আগুন দিতে গেলেই বিস্ফোরণ ঘটেছিল। বিকট বিস্ফোরণে বাড়ির দরজাও ভেঙ্গে পড়ে। নগরবাসীর প্রতি এই পুলিশ কর্মকর্তার পরামর্শ। নতুন বাসায় ওঠার সময় বিদ্যুত ও গ্যাসের লাইন পরীক্ষা করে দেখে নিন। বাড়ির মালিকরা যেন তাদের বাড়িতে প্রয়োজনীয় হাসপাতালের নাম ও ঠিকানা লিখে রাখে। ফায়ার সার্ভিস কর্মীদের ধারণা, ওই বাসার গ্যাসের চুলা বা লাইনে সমস্যা ছিল। এর ফলে গ্যাস বের হয়ে রান্নাঘর থেকে পুরো ফ্ল্যাটে ছড়িয়ে যায়। সকালে চুলা জ্বালাতেই বিস্ফোরণ ঘটে। দগ্ধদের দেখতে বার্ন ইউনিটে মার্কিন রাষ্ট্রদূত ॥ শনিবার বিকেল পৌনে পাঁচটার দিকে গ্যাস লাইনের বিস্ফোরণে দগ্ধ শাহনেওয়াজের পরিবারকে দেখতে ঢামেক হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে যান মার্কিন রাষ্ট্রদূত মার্শিয়া ব্লুম বার্নিকাট। তিনি শাহনেওয়াজের স্ত্রী ও তার আত্মীয়স্বজনের খোঁজখবর নেন। তিনি বের হওয়ার কিছুক্ষণ পরই শাহনেওয়াজ চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।
×