ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

প্রাচীন বৌদ্ধনগরী পরিদর্শনে দুই মন্ত্রী

মুন্সীগঞ্জের নাটেশ্বর হবে আরেকটি পর্যটন কেন্দ্র

প্রকাশিত: ০৪:২৪, ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৬

মুন্সীগঞ্জের নাটেশ্বর হবে আরেকটি পর্যটন কেন্দ্র

মীর নাসিরউদ্দিন উজ্জ্বল, নাটেশ্বর, মুন্সীগঞ্জ থেকে ॥ মুন্সীগঞ্জ তথা বিক্রমপুরে পর্যটন শিল্পের নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মেচিত হচ্ছে। টঙ্গীবাড়ি উপজেলার নাটেশ্বরে মাটির নিচে আবিষ্কার হওয়া হাজার বছরের প্রাচীন বৌদ্ধমন্দির পরিদর্শন করে সরকারের দুই মন্ত্রী শনিবার এমন আভাস দিয়েছেন। অতীশ দীপঙ্করের জন্মভিটার কাছাকাছি এই প্রাচীন সভ্যতা ঘিরে পর্যটন খাতে এ সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। বাংলাদেশ ও চীনের যৌথ উদ্যোগে এ খননে ইতোমধ্যেই আবিষ্কার হয়েছে প্রাচীন নানা দুর্লভ স্থাপনা। সবশেষে পাওয়া মন্দির কমপ্লেক্সটির চারদিকে চারটি বড় হলঘর রয়েছে। এসব হলঘরে রয়েছে প্রায় স্তূপাকারে ১৬টি পিলার। আর মাঝে রয়েছে মূল মন্দিরের অংশ বিশেষ। মন্দির কমপ্লেক্স থেকে প্রাপ্ত উপকরণ যুক্তরাষ্ট্রের বেটা ল্যাবরেটরিতে পরীক্ষা সম্পন্ন হয়েছে। এতে নিশ্চিত হওয়া গেছেÑ এসব স্থাপনা হাজার বছরের প্রাচীন। অর্থাৎ প্রাপ্ত কাঠকয়লা পরীক্ষা করে দেখা গেছে এখানকার এই প্রতœস্থানে দুটি পর্যায়ের মানব বসতি ছিল। প্রথম পর্যায় ৭৮০-৯৫০ খ্রীস্টাব্দ এবং দ্বিতীয় পর্যায় ৯৫০-১২২৩ খ্রীস্টাব্দ। আবিষ্কৃত মৃৎপাত্রগুলো লাল এবং কালো শ্রেণীতে বিভক্ত করা হয়েছে। মৃৎপাত্রের মধ্যে অধিকাংশ সঞ্চয় আধার, রান্নার হাঁড়ি, গামলা, পানিরপাত্র, প্রদীপ প্রভৃতি। মৃৎপাত্রগুলো বিভিন্ন নক্সায় পরিলক্ষিত হয়। ভাঙ্গা মৃৎপাত্র অংশ থেকে গত জুন মাসে চীন থেকে আগত ৩ জন মৃৎপাত্র বিশেষজ্ঞ প্রায় ১ মাস কাজ করে ১০০ মৃৎপাত্র জোড়া লাগিয়েছেন। এগুলো শনিবার খনন স্থাপনের পাশেই প্রদর্শন করা হয়। এর আগে প্রাপ্ত দুলর্ভ নৌকা এবং নানা মূর্তিও স্থান পায় এখানে। পরিদর্শন শেষে পুরাকীর্তির পাশের মঞ্চে আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেনÑ বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটনমন্ত্রী রাশেদ খান মেনন, সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর, সংস্কৃতি সচিব আক্তারী মমতাজ ও চীনা দূতাবাসের ডেপুটি মিশনপ্রধান ইয়াং সিচাও। প্রকল্প পরিচালক নূহ উল আলম লেনিনের সভাপতিত্বে স্বাগত বক্তব্য দেন খননকাজে নেতৃত্বদানকারী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতœতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক ড. সুফি মুস্তাফিজুর রহমান। পরে প্রেস ব্রিফিংয়ের আয়োজন করা হয়। এতে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাব দেন দুই মন্ত্রী। পর্যটনমন্ত্রী বলেন, খননকাজ সম্পন্ন হলেই নাটেশ্বরকে পর্যটক উপযোগী করে গড়ে তোলার পরিকল্পনা রয়েছে। বাংলাদেশে পর্যটকের সংখ্যা আগামী ২০১৮ সালের মধ্যে ১০ লাখে উন্নীত করা হবে। পর্যটন থেকে জিডিপি দুই থেকে চার শতাংশে উন্নীত করা হবে। তিনি বলেন, একজন পর্যটকের আগমনে ১১টি ক্ষেত্রে কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়। পর্যটক যেখানে গমন করেন, সেই স্থানটির অর্থনৈতিক কর্মকা- বিস্তৃত হয়। পর্যটনের বিভিন্ন দিক রয়েছে। এর মধ্যে ধর্মীয় তীর্থস্থান অন্যতম। তাই নাটেশ্বরের বৌদ্ধদের প্রাচীন তীর্থস্থানের স্থাপত্যটি ঘিরে পর্যটকদের আকৃষ্ট করার অপার সম্ভাবনা রয়েছে। সংস্কৃতিমন্ত্রী বলেন, সরকার নিয়ন্ত্রকের কাজ করছে, সুযোগ ও ক্ষেত্র তৈরি করছে, বিদেশ থেকে প্রয়োজনীয় বিশেষজ্ঞ, সহায়তা ও নিরাপত্তার ব্যবস্থা করে দেয়; আর ভাল কাজের সঙ্গে স্বাধীনভাবে জনগণকে সম্পৃক্ত করেÑ তাহলেই সংস্কৃতির বিকাশ ঘটে। বিভিন্ন সংগঠন ভাল কাজ করছে। সকলের একটিই লক্ষ্য অসাম্প্রদায়িক, সংস্কৃতিমনস্ক ও উদার মুক্তচিন্তার বাংলাদেশ গড়ে তোলা। এ উদ্দেশ্যে যারা কাজ করছেন, তারা সবাই আমাদের সহযাত্রী। তাদের নিয়েই আমরা অগ্রসর হতে চাই। আর সেরকম প্রতিষ্ঠান হচ্ছে অগ্রসর বিক্রমপুর ও ঐতিহ্য অনে¦ষণ। খননে নাটেশ্বরে যে প্রাচীন স্থাপত্য আবিষ্কার হয়েছে, তা বাংলাদেশের ইতিহাসকে সমৃদ্ধ করেছে। এ সম্পদ সুরক্ষা এবং গবেষণাসহ যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করছে তার মন্ত্রণালয়।
×