ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

বহির্বিশ্বে বিরোধে ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ৬০ কোটি মার্কিন ডলার

আর্থিক বিরোধে বছরে ৪০ কোটি ডলারের ক্ষতি

প্রকাশিত: ০৪:০৮, ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৬

আর্থিক বিরোধে বছরে ৪০ কোটি ডলারের ক্ষতি

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ বাংলাদেশের অর্থনীতির আকার সম্প্রসারিত হলেও প্রতিবছর আর্থিক বিরোধ বেড়েই চলছে। এই বিরোধে প্রতিবছর প্রায় ৪০ কোটি ডলার ক্ষতি হয়। শনিবার রাজধানীর ঢাকা চেম্বার অব কমার্স এ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের (ডিসিসিআই) মিলনায়তনে আয়োজিত এক সেমিনারে আইনমন্ত্রী এ্যাডভোকেট আনিসুল হক এসব কথা বলেন। ডিসিসিআই, বাংলাদেশ ইন্টারন্যাশনাল আরবিট্রেশন সেন্টার (বিআইএসি), সার্ক আরবিট্রেশন কাউন্সিলের (সার্কো) উদ্যোগে এ সেমিনারের আয়োজন করা হয়। ‘দ্য রোল অব সার্কো এ্যাজ অন আরবিট্রেশন সেন্টার ইন দ্য রিজন’ শীর্ষক সেমিনারের প্রধান অতিথি আইনমন্ত্রী বলেন, বিশ্বে বাণিজ্যের ক্ষেত্রে আর্থিক বিরোধ (ব্যবসাসংক্রান্ত বিরোধ বা দ্বন্দ্বে মামলা) বেড়েই চলেছে। দেশে ছাড়াও বহির্বিশ্বের সঙ্গেও বাংলাদেশের আর্থিক বিরোধ দিন দিন বেড়েই চলেছে। সেমিনারে ডিসিসিআইর সভাপতি হোসাইন খালিদ স্বাগত বক্তব্য দেন। আর ম?ূল প্রবন্ধ উত্থাপন করেন, সাবেক এ্যাটর্নি জেনারেল ফিদা এম কামাল। এতে সার্কোর চেয়ারম্যান মাহবুবুর রহমান, সাবেক এ্যাটর্নি জেনারেল হাসান আরিফ, সার্কোর ব্যবস্থাপনা পরিচালক সুশান্ত ওয়াজিমান্না বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। এ্যাডভোকেট আনিসুল হক বলেন, আর্থিক বিরোধ দেশ ও দেশের অভ্যন্তরে বাণিজ্যের জন্য ব্যাপক ক্ষতিকর। বহির্বিশ্বের সঙ্গে এ ধরনের বিরোধে ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ৬০ কোটি মার্কিন ডলার। আর দেশের অভ্যন্তরে আর্থিক বিরোধে প্রায় ৪০ কোটি মার্কিন ডলারের ক্ষতিগ্রস্ত হয় বাংলাদেশ। এ ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে অর্থ সংক্রান্ত বিরোধে দায়ের হওয়া মামলার দীর্ঘসূত্রতাও বাধে। তবে আমরা চেষ্টা করছি দীর্ঘসূত্রতা যেন না হয়, সেজন্য অর্থ সংক্রান্ত মামলা বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তির মাধ্যমে দ্রুত শেষ করার পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে। বাংলাদেশ ইন্টারন্যাশনাল আরবিট্রেশন সেন্টারের (বিয়াক) চেয়ারম্যান মাহবুবুর রহমান বলেন, বাংলাদেশের আদালতগুলোতে বর্তমানে যে পরিমাণ মামলা বিচারাধীন রয়েছে তা নিষ্পত্তি করতে দীর্ঘ সময়ের প্রয়োজন। তাই এ ধরনের মামলা-মোকদ্দমাসহ বাণিজ্য বিষয়ক বিরোধ নিষ্পত্তিতে আরবিট্রেশন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে, একই সঙ্গে আদালতে মামলার চাপও কমাতে সাহায্য করবে। তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশে বাণিজ্য বিষয়ক প্রক্রিয়াগুলো বিচারিক আদালতে সম্পন্ন করতে দীর্ঘ সময়ের প্রয়োজন হয়, যা দেশের বেসরকারী খাতকে নতুন নতুন বিনিয়োগে নিরুৎসাহিত করে থাকে, এক্ষেত্রে আরবিট্রেশন এবং মেডিয়েশন কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে। বিয়াক চেয়ারম্যান বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তিতে বিয়াক ও সার্কোর মতো প্রতিষ্ঠানগুলোর সহযোগিতা গ্রহণের জন্য ব্যবসায়ীদের প্রতি আহ্বান জানান। সাবেক এ্যাটর্নি জেনারেল ব্যারিস্টার এম ফিদা কামাল মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন। তিনি বলেন, দেশের আদালতগুলোর মামলা জট কামানোর ক্ষেত্রে বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তি প্রক্রিয়া কার্যকরভাবে কাজ করতে পারে। তিনি বলেন, বাণিজ্যিক বিরোধের ক্ষেত্রে বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তি ব্যবহার করলে স্বল্প সময়ের ব্যবধানে উভয় পক্ষের স্বার্থ সংরক্ষণ করা হয়। তিনি আরও বলেন, গত ১২ বছর যাবত এডিআর সিভিল প্রসিডিউর ব্যবস্থায় সক্রিয়ভাবে কাজ করছে। তিনি বলেন, বাংলাদেশে ভবিষ্যতে এডিআরের কার্যকারিতার উজ্জ্বল সম্ভাবনা রয়েছে। সার্ক আরবিট্রেশন কাউন্সিলের (সার্কো) মহাপরিচালক থুসানথা উইজেমানা বলেন, এ অঞ্চলে বাণিজ্য, বিনিয়োগ ও অন্যান্য বিরোধ নিষ্পত্তিতে সার্কো একটি লিগ্যাল ফ্রেমওয়ার্ক হিসেবে কাজ করতে পারে। তিনি বলেন, ২০১৪ সালে দক্ষিণ এশিয়ায় এফডিআই ছিল ৪১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার, যা বৈশ্বিক এফডিআইর ১.৭ শতাংশ। তিনি আরও বলেন, সার্কোর মূল লক্ষ্য হলো ঃ সার্কভুক্ত দেশগুলোর মধ্যকার বাণিজ্যিক বিরোধ নিষ্পত্তির মাধ্যমে এ অঞ্চলে ব্যবসা-বাণিজ্যের ধারা কে সুপ্রসারিত করা। হোসেন খালেদ বলেন, সার্ক আরবিট্রেশন সেন্টারের (সার্কো) মতো প্রতিষ্ঠান সার্ক অঞ্চলের দেশগুলোর মধ্যে ট্যারিফ ও নন-ট্যারিফ প্রতিবন্ধকতাসহ অন্যান্য ব্যবসা-বাণিজ্য বিষয়ক বিরোধ নিষ্পত্তি এবং এ অঞ্চলের ব্যবসায়ীদের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধিতে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে। তিনি বলেন, বাণিজ্য বিষয়ক বিরোধ নিষ্পত্তির দীর্ঘসূত্রতার জন্য সার্ক অঞ্চল ব্যবসা-বাণিজ্যের কেন্দ্রস্থল হিসেবে নিজের অবস্থান তৈরিতে পিছিয়ে পড়ছে। তিনি বলেন, সার্কোর মতো প্রতিষ্ঠান এ অঞ্চলের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক পরিম-লে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে।
×