ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

মুনাফা নেই সাধারণ বিনিয়োগকারীদের

প্রকাশিত: ০৪:০৬, ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৬

মুনাফা নেই সাধারণ  বিনিয়োগকারীদের

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ সম্প্রতিকালে পুঁজিবাজারে কিছুটা স্থিতিশীল পরিস্থিতি বজায় থাকলেও এতে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের ভাগ্যের ছিকে ছিড়ছে না। কিছুতেই মুনাফা করতে পারছেন না তারা। তবে এর মাঝেও স্বল্প মূলধনী কিছু কোম্পানিকে ঘিরে একশ্রেণীর বিনিয়োগকারীরা মুনাফা তুলছেন সিরিয়াল ট্রেডিংয়ের মাধ্যমে। তারা পতনের বাজারে সুযোগসন্ধানীরা শেয়ার ক্রয় করে আর উত্থানে বিক্রি করে দিয়ে হাওয়া হয়ে যাচ্ছেন। ফলে উত্থান-পতনে তারাই লাভবান হন। বাজার সংশ্লিষ্ট এবং সাধারণ বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে আলাপ করলে তারা বলেন, ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের যে লোকসান রয়েছে তা কাটিয়ে উঠতে অনেক সময় লাগবে। আর এর জন্য দরকার দীর্ঘমেয়াদী স্থিতিশীলতা। কিন্তু দীর্ঘমেয়াদে স্থিতিশীলতা দেখা যাচ্ছে না। অনেক দিন ধরেই পুঁজিবাজারে ভগ্নদশা চলছে। এই সময়ের মধ্যে গত কয়েক বছর বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ এ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি), ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই), বাংলাদেশ ব্যাংকসহ সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলো বাজারকে স্থিতিশীল রাখতে নানা উদ্যোগ নিলেও তাতে কাজের কাজ কিছুই হয়নি। ফলে পুঁজিবাজারের অবস্থা দিন দিন আরও রুগ্ন হয়ে পড়ছে। আর এ কারণে পুঁজিবাজার বাঁচানোর কোন রক্ষাকবচ নেই বলে মন্তব্য করেছেন বাজার সংশ্লিষ্টসহ অভিজ্ঞ বিনিয়োগকারীরা। তাদের মতে, আলো আঁধারের বৃত্ত থেকে বের হতে পারছে না দেশের পুঁজিবাজার। আর এর সঙ্গে সঙ্গে ভাগ্যের কোন পরিবর্তন হতে হচ্ছে না লাখ লাখ বিনিয়োগকারীর। দীর্ঘদিন ধরে তাদের এমন দৈন্যদশা চলছে। বাজার ভাল এমন প্রত্যাশায় নতুন বিনিয়োগ করেও তারা পার পায়নি। বিষয়টি নিয়ে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে আলাপ করলে তারা জানান, এই দরপতনের মূলে রয়েছে একশ্রেণীর বড় বিনিয়োগকারীরা। মূলত তাদের কারসাজিতেই বাজারের বর্তমান গতিবিধি পরিবর্তন হয়ে বিনিয়োগকারীরা। তারা বলেন, বাজারের সার্বিক চিত্রই বলে দেয় এ বাজার নিয়ে একটি চক্র খেলছে। ভুক্তভোগীদের মন্তব্য হচ্ছে টানা কয়েকদিন বাজার নিম্নমুখী হওয়া এবং উর্ধমুখী হওয়া কোনটাই স্বাভাবিক বাজারের লক্ষণ নয়। এই ব্যাপারে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের অভিযোগ, যারা বাজারের কলকাঠি নাড়ছে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রণকারী কর্মকর্তারা এসব বাজার খেলোয়াড়দের সম্পর্কে ঠিকই জানেন। কিন্তু উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবেই তাদের শনাক্ত করার চেষ্টা করেন না। তাদের অভিযোগ সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলো যে সকল পদক্ষেপ নিয়েছে বিষয়টি নিছক লোক দেখানো। প্রকৃতপক্ষে বাজার রক্ষার নামে সবাই মিলে লুটপাটে মগ্ন রয়েছে। মূলত কিছু অশুভ লোকের শেয়ার বিক্রির সুযোগ করে দেয়ার জন্য মাঝে মধ্যে লোক দেখানো কিছু ঘোষণা দেয়া হয়। আর এ সুযোগে সুবিধাবাদীরা তাদের শেয়ার বিক্রি করে বাজার থেকে বের হয়ে যায়। পরবর্তীতে বাজার ফিরে পায় তার পুরানো রূপ। ভুক্তভোগীদের মতে, তাদের আস্থাহীনতা ক্রমেই বাড়ছে। লাখ লাখ ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারী শঙ্কার মধ্যে রয়েছেন। আর এ কারণে নতুন বিনিয়োগকারীরা বিনিয়োগের প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন। যারা বর্তমানে পুঁজিবাজারে নিয়মিত শেয়ার লেনদেন করছেন তারা কোন কোম্পানির শেয়ারের প্রতি এখন আর আগের মতো আস্থা ধরে রাখতে পারছেন না। আবার হুজুগে-গুজুবে কান না দিয়েও পারছেন না। খেলোয়াড়রা বাজার পরিস্থিতিকে এমনভাবে নিয়ন্ত্রণ করছেন যাতে ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীরা তাদের হাতে থাকা শেয়ার সম্পর্কে সুস্থ চিন্তাভাবনা ও সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। ফলে তাদের ভাগ্য চলে গেছে বাজার খেলোয়াড়দের হাতে।
×