ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

সিরিয়ায় অস্ত্রবিরতি কার্যকরে আসাদের ক্ষমতা সুসংহত

প্রকাশিত: ০৩:৪৩, ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৬

সিরিয়ায় অস্ত্রবিরতি কার্যকরে আসাদের ক্ষমতা সুসংহত

সিরিয়ায় সরকার ও বিদ্রোহী পক্ষগুলোর মধ্যে দীর্ঘ আলোচনার পর শনিবার থেকে (শুক্রবার মধ্যরাতের পর থেকে) অস্ত্রবিরতি কার্যকর হয়েছে। উভয় পক্ষের মধ্যে কথাবার্তায় মধ্যস্থতা করেছে রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্র। অস্ত্রবিরতির স্থায়িত্ব নিয়ে অবশ্য উভয় দেশই সন্দিহান। তারপরও দেশটিতে প্রায় পাঁচ বছর ধরে চলা গৃহযুদ্ধ অবসানে এই অস্ত্রবিরতি একটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা। তবে অস্ত্রবিরতি হলেও জঙ্গীগ্রুপ আইএস ও আলকায়েদা ঘনিষ্ঠ আল-নুসরা ফ্রন্টকে এর আওতা থেকে বাইরে রাখা হয়েছে। এমতাবস্থায় সিরিয়ার পরিস্থিতি কতটা স্থিতিশীল হবে তা এখনই বলা যাচ্ছে না। এই গ্রুপগুলোর সদস্যরা বিদ্রোহীদের দখলে থাকা বিভিন্ন এলাকায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে। এ কারণে শুধুমাত্র জঙ্গীদের টার্গেট করে হামলা করা সম্ভব নয়। জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ রুশ-মার্কিন অস্ত্রবিরতি উদ্যোগকে পুরোপুরি সমর্থন দিয়েছে। নিরাপত্তা পরিষদ সব পক্ষকে অস্ত্রবিরতির শর্তাবলী মেনে চলার আহ্বান জানিয়েছে। অস্ত্রবিরতি কার্যকর হওয়ার আগ পর্যন্ত রুশ বিমানগুলো সিরিয়ায় বিদ্রোহীদের অবস্থান টার্গেট করে আক্রমণ অব্যহত রাখে। সিরিয়া বিষয়ক জাতিসংঘের বিশেষ দূত স্তাফান দ্য মিসতুরা বলেছেন, অস্ত্রবিরতি অব্যাহত থাকলে ৭ মার্চ থেকে শান্তি আলোচনা আবার শুরু হবে। অস্ত্রবিরতির ভবিষ্যত নিয়ে সন্দেহ থাকলে ও পাঁচ বছরের রক্তক্ষয়ী সংঘাত অবসানে একে একটি বড় ঘটনা হিসেবেই দেখা হচ্ছে। এর জন্য সিরিয়ার জনগণকে সবচেয়ে বেশি মূল্য দিতে হয়েছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার প্রশাসনকে কম করে হলেও কিছু মূল্য দিতে হয়েছে, কিন্তু সিরিয়ার শাসক বাশার আল আসাদকে কোন মূল্যই দিতে হয়নি। ইউরোপীয় ও ইসরাইলী গোয়েন্দাদের মূল্যায়ন হলো, অস্ত্রবিরতি বাশার আল আসাদের জন্য আগামী অন্তত পাঁচ বছরের জন্য ক্ষমতা সুসংহত করার সুযোগ এনে দিয়েছে। বিদ্রোহীদের নিয়ন্ত্রণে থাকা দেশের বিভিন্ন অংশ সরকারী বাহিনী অবরোধ করে রাখার ফলে মানবিক সহায়তা ঢুকতে পারছে না। অস্ত্র বিরতি ফলপ্রসূ হলে আসাদ বাহিনীর নিয়ন্ত্রণ আরও শক্তিশালী হবে। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরি গত সপ্তাহে কংগ্রেসে শুনানিতে বলেছিলেন, সিরিয়ায় অস্ত্রবিরতি কার্যকরের সম্ভাবনা নিয়ে সংশয় রয়েছে। রুশ জঙ্গী বিমান সিরিয়ার আকাশে, ভূমিতে ইরানী সৈন্যরা আসাদ বাহিনীর সঙ্গে মিলেমিশে লড়ছে। অন্যদিকে বিভিন্ন অংশে বিভক্ত বিদ্রোহী গ্রুপগুলো। এ অবস্থায় ঠিকমতো অস্ত্রবিরতি কার্যকর হবে এ রকম আশা করা কঠিন। তারপরও সিরিয়াকে রক্ষা করতে অস্ত্রবিরতি প্রয়োজন বলে তিনি মন্তব্য করেন। অস্ত্রবিরতি কার্যকরের আগে শেষ মুহূর্তের সুবিধা আদায় করে নিতে বিবদমান পক্ষগুলো লড়াই চালিয়ে যায়। রাজধানী দামেস্কের দারায়া শহরতলী এলাকায় ব্যাপক হারে ব্যারেল বোমাসহ অন্যান্য গোলাবারুদ নিক্ষিপ্ত হয়েছে। দারায়ার বিদ্রোহীরা বলেছে, তারা আল-নুসরা ঘনিষ্ঠ নয় কিন্তু আসাদ সরকার বলেছে, দারায়া যুদ্ধ বিরতি আওতার বাইরে। উল্লেখ্য, বিদ্রোহী গ্রুপগুলোর মধ্যে আইএস এবং আল-নুসরাই কেবল জাতিসংঘ তালিকাভুক্ত সন্ত্রাসী সংগঠনের মধ্যে পড়ে। এদিকে অস্ত্রবিরতি চুক্তিতে স্বাক্ষরকারী বিদ্রোহী যারা গ্রুপগুলো বলেছে, অস্ত্রবিরতি চলাকালে তাদের ওপর কোন আক্রমণ হলে তারা তার প্রতিশোধ নেবে। সে হামলা সরকারী বাহিনী , বিদেশী বাহিনী অথবা জঙ্গী গ্রুপ যেই করুক না কেন। ওবামা প্রশাসন ও সিরিয়ার বিদ্রোহীদের যে দাবি ছিল যে কোন রাজনৈতিক সমাধান হোক না কেন আসাদের ক্ষমতা ছাড়া তার অন্যতম পূর্বশর্ত হতে হবে। -নিউইয়র্ক টাইমস
×