ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

মোস্তফা জব্বার

ডিজিটাল বিশ্বে বাংলা ও তার সঙ্কট

প্রকাশিত: ০৩:৪০, ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৬

ডিজিটাল বিশ্বে বাংলা ও তার সঙ্কট

॥ দুই ॥ আমাদের বহমান আলোচনার মূল প্রতিপাদ্য বিষয় হলো বাংলা ভাষাটি ডিজিটাল যুগে কেমন আছে সেটি অবলোকন করা। যদি ইন্টারনেট বা কম্পিউটারে বাংলার ব্যবহারের কথা বিবেচনা করি, তবে এ কথা বলতেই হবে যে, আগের যে অবস্থা ছিল এখন তার অনেক পরিবর্তন হয়েছে। এক সময়ে কম্পিউটারে বাংলা মানে ছিল অফিস-আদালতে চিঠি লেখা এবং প্রকাশনার কাজ করা। এখন বিপুল সংখ্যক ওয়েবসাইট বাংলায় তৈরি হচ্ছে। বাংলায় ওয়েবসাইট তৈরির সীমাবদ্ধতাও দূর হয়েছে। এমনকি আমাদের আসকি এনকোডিং সংবলিত বিজয় সিস্টেমের সুতন্বী এমজে ফন্ট দিয়ে দৈনিক পত্রিকা প্রকাশিত হচ্ছে ইন্টারনেটে। ইউনিকোড মানকে সরকারীভাবে স্বীকৃতি দেয়া হয়েছে। অপারেটিং সিস্টেম এবং ওয়েব ব্রাউজারগুলো ইন্টারনেটে বাংলা ব্যবহার করার সুযোগ তৈরি করে দিয়েছে। এখন এমন কোন ব্রাউজার নেই যেটি ইউনিকোডভিত্তিক বাংলা বা আসকি কোড সমর্থন করে না। সরকার কিছুদিন আগেও তাদের ওয়েবসাইটে কেবলি ইংরেজী ভাষার কথা ভাবত। কিন্তু এখন সম্ভবত তাদের চৈতন্যোদয় হয়েছে এবং বাংলায় ইন্টারনেট প্রকাশনা ক্রমশ নতুন মাত্রা পাচ্ছে। এমনকি বিবিসির মতো বিশ্বখ্যাত প্রতিষ্ঠান এখন বাংলা ভাষায় ওয়েবসাইট প্রকাশ করেছে। ইন্টারনেটে বাংলার ব্যবহারও ব্যাপকভাবে বাড়ছে। দেশে ইন্টারনেটের ব্যবহার বাড়ার পাশাপাশি বাংলায় ডমেইন নেম লেখার সুযোগ তৈরি হওয়ার ফলে এর ব্যবহার আরও দ্রুতগতিতে বাড়বে। কিন্তু দুঃখজনক হচ্ছে যে, বাংলায় ডমেইন নাম লেখার উপায় হিসেবে এখনও ডট বাংলা প্রচলন হয়নি।’ সরকারের টেলিকম বিভাগের এই ব্যর্থতা চরম লজ্জাজনক। বছরের পর বছর ধরে বিষয়টির সামান্য অগ্রগতি হওয়া বেদনাদায়ক। জানা গেছে, কিছু কর্মকর্তার অবহেলার জন্যই ডট বাংলার অনুমোদন এখনও পাওয়া যায়নি। এই বিষয়ে আমরা নীতি নির্ধারকদের সুদৃষ্টি কামনা করি। আমি মনে করি ডট বাংলা আমাদের ডিজিটাল বাংলার চর্চাকে বহুদূর এগিয়ে নিতে পারবে। সার্বিকভাবে আমি বিশ্বজুড়ে বাংলা ভাষার সাফল্যই দেখতে পাচ্ছি। ই-মেইলে, ফেসবুকে, ইন্সট্যান্ট মেসেজিং বা চ্যাটে চমৎকারভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে বাংলা। যেহেতু কারিগরি সীমাবদ্ধতা প্রায় না থাকা সত্ত্বেও মোবাইল ফোনে বাংলার প্রচলন এখনও তেমনভাবে হয়নি, সেহেতু মোবাইলে ও ইন্টারনেটে বাংলার ব্যবহার সীমিত। ধারণা করা হয়েছিল যে, ১ ফেব্রুয়ারি ২০১২ থেকে মোবাইল ফোনে বাংলা ব্যবহার বাধ্যতামূলক করার ফলে সামনের দিনগুলোতে ইন্টারনেটে বাংলার ব্যবহার বাড়বে। এরই মাঝে সেটি বেড়েছেও। তবে কাক্সিক্ষত স্তরে সেটি এখনও পৌঁছেনি। বিশেষ করে স্মার্ট ফোনের ব্যবহার না বাড়ায় প্রযুক্তিগত কিছু সমস্যাও রয়ে গেছে। ফিচার ফোনের সকল সেট বাংলা সমর্থন করে না। বিটিআরসির নিয়ম অনুসারে সেসব সেট আমদানি হওয়ার কথা নয়। কিন্তু দেদার সেগুলো আসছে। এছাড়া ফিচার ফোনে বাংলা লেখার জটিলতার জন্যও ফিচার ফোনে সহজে কেউ বাংলা ব্যবহার করতে চায় না। বিটিআরসি যদি তাদের ২০১২ সালের আদেশটি প্রয়োগ করত তবে ফিচার ফোনেও বাংলা অবশ্যই পাওয়া যেত। তাতে মোবাইলে বা মোবাইল ইন্টারনেটে বাংলার ব্যবহার আরও অনেক বাড়তে পারত। বাংলা ভাষার ডিজিটাল যাত্রায় সঙ্কট যে নেই সেটিও বলা যাবে না। এখনও নানা সঙ্কটে আবদ্ধ হয়ে আছে বাংলা ভাষা। সেই বিষয়গুলো হয়ত অন্য সময় আলোচনা করা যাবে। তবে ডিজিটাল যুগে বাংলা ভাষার সঙ্কটও বাড়ছে। একেবারে মসৃণ পথ দিয়ে বাংলা ভাষা চলছে না। রোমান হরফে বাংলা ভাষা : সাম্প্রতিককালে রোমান হরফ দিয়ে বাংলা লেখার একটি প্রবণতা দিনে দিনে বেড়ে উঠছে। একদম নিষ্পাপ অনুভূতি নিয়ে আমি বলতে পারি, মনে হতে পারে যে, প্রযুক্তির সীমাবদ্ধতার জন্য রোমান হরফ দিয়ে আমরা এসএমএস পাঠাই বা ফেসবুকে ও মেইলে রোমান হরফ ব্যবহার করি। কিন্তু প্রযুক্তির সীমাবদ্ধতার অজুহাতটি সত্য নয়। সঙ্কটটি মূলত মানসিকতার। এজন্য এসবের বাইরেও অন্যান্য সামাজিক যোগাযোগ নেটওয়ার্ক বা ইনস্ট্যান্ট মেসেজে রোমান হরফ ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়। অথচ প্রকৃত অবস্থা হলো সকল স্মার্ট ফোন বাংলা সমর্থন করে। তবে কোন কোন ফিচার ফোন দেশের আইন ভেঙ্গে আমদানি হয় বলে তাতে বাংলার সমর্থন হয়ত থাকে না। ফলে কেবল সেসব যন্ত্রে রোমান হরফ ব্যবহারের কিছুটা প্রয়োজন থাকলেও ইন্টারনেটে রোমান হরফে বাংলা লেখার কোন প্রয়োজনীয়তা নেই। ওখানে বাংলা লেখার সকল সুবিধাই বিরাজ করে। এটিও উল্লেখ করা দরকার যে, ফিচার ফোনে বাংলা লেখার নিউমারিক কীবোর্ড নির্ধারিত হয়েছে। ফলে কারিগরি দিক থেকে মোবাইলে বাংলা প্রচলনে কোন অসুবিধা নেই। দুর্ভাগ্যজনকভাবে এটি সত্য যে, সরকারের সকল অংশ জানে না যে, সরকারীভাবে বাংলা এনকোডিং এবং মোবাইল কীবোর্ড প্রমিত করা হয়েছে। অন্যদিকে কেবল মোবাইল ফোনে নয়, অন্য ক্ষেত্রেও বাংলা ভাষার রোমানাইজেশন আরও প্রবলভাবে হচ্ছে। ইন্টারনেট থেকে ফ্রি ডাউনলোড করা যায় এমন একাধিক বাংলা সফটওয়্যারে ইংরেজীতে বাংলা লিখলে সেটি বাংলা হরফে পরিণত হয়। ফলে বাংলা লেখার জন্য বাংলা হরফ জানার দরকার হয় না। নতুন প্রজন্মের ছেলেমেয়েরা সহজে বাংলা লেখার পদ্ধতি হিসেবে এটি গ্রহণ করে থাকে। অথচ রোমান হরফ দিয়ে সঠিকভাবে বানান শুদ্ধ করে প্রকৃত বাংলা উচ্চারণে বাংলা পুরোপুরি লেখা যায় না। এই উপায়ে দু’চার লাইন লেখা গেলেও দ্রুতগতিতে বাংলা লেখা যায় না। দুঃখজনক হলেও সত্য যে, তথাপি এটি দিনে দিনে জনপ্রিয় হচ্ছে। কিছু লোক যে কোনভাবে, যে কোন বানানে বা যে কোন উচ্চারণে রোমান হরফে বাংলা লিখছে। বাংলা বিকৃত হলেও তাতে তাদের কিছু আসে যায় না। এই পদ্ধতিটিকে সহায়তা করছে জাতিসংঘ উন্নয়ন তহবিল, নির্বাচন কমিশন ও এক্সেস টু ইনফরমেশন সেল। খুব সহজেই তাদের কর্মকা- থেকে ধরে নেয়া যায় যে, বাংলা ভাষা রোমান হরফে লেখার যাবতীয় কাজ সম্পন্ন করা এসব মহলের একান্ত দায়িত্ব হয়ে আছে। সরকারের একটি মহল রোমান হরফে বাংলা লেখার নির্দেশনাও দিয়েছে। বিশেষ করে শিক্ষক প্রশিক্ষণ কলেজগুলোতে শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ দেয়ার সময় রোমান হরফে বাংলা লিখতে বাধ্য করা হচ্ছে। তারা এটি অনুভব করছে না যে, এর ফলে বাংলা ভাষার কি ভয়ঙ্কর ক্ষতি করা হচ্ছে। শিক্ষকরা যখন রোমান হরফে বাংলা লিখছে তখন তার প্রভাব ছাত্রছাত্রীদের ওপরও পড়ছে। আমি আশঙ্কা করছি যে, একটি পরগাছা প্রজন্ম তৈরি হবে যারা ভুল উচ্চারণে ভুল বাংলা লিখবে এবং বাংলা হরফ দেখে ওরা বলতে পারবে না কোন্টি কোন্ অক্ষর। আমি প্রসঙ্গত ডেনমার্কের দৃষ্টান্ত দিতে পারি। দেশটি ডেনিস লিপি বাদ দিয়ে এমন দশায় পড়েছে যে, সেই দেশের ১৭% ডাচ লোক ডেনিস উচ্চারণ করতে পারে না। অন্যদিকে কেবল রোমানাইজেশনই বাংলা ভাষার একমাত্র সঙ্কট নয়। এটি একটি অবশ্যই বড় সঙ্কট। বাংলা হরফের ভবিষ্যত নিয়ে চিন্তিত হওয়ার মতো সঙ্কট এটি। কিন্তু এটিও মনে রাখতে হবে যে, এই সঙ্কটের বাইরেও বাংলা ভাষার সঙ্কট রয়েছে। যদি আরও একটু গভীরে তাকাই তবে আমরা বাংলা ভাষা ও হরফকে নিয়ে আরও অনেক ষড়যন্ত্র দেখতে পাব। বাংলা ভাষার হরফ পরিবর্তন, যুক্তাক্ষর বাদ দেয়া, অক্ষরের আকৃতি বদলানো, মূল বর্ণের কয়েকটিকে বাদ দেয়া, বানান ও ব্যাকরণ সংস্কার বা লেখন পদ্ধতি পরিবর্তনের প্রস্তাবও দেখেছি আমরা। এমনকি যুক্তাক্ষর বর্জন করার প্রস্তাবও আমরা দেখেছি। যন্ত্রে প্রয়োগ করার নামে, ভাষাকে সহজ করার নামে, ব্যবহারের সুলভ পথ খুঁজে বের করার নামে এসব নানা প্রসঙ্গ বহুদিন ধরে বহুভাবেই আলোচিত হয়েছে। ইতিহাসের পাতায় এসব প্রস্তাবের পক্ষে ও বিপক্ষের মানুষের নাম-ধাম সবই পাওয়া যাবে। আমি সেই মহামানবদের নাম পুনরায় স্মরণ করাতে চাই না। তবে কষ্ট হয় যখন দেখি আমাদের কাছে সম্মানিত ও শ্রদ্ধেয় ব্যক্তিরাও এসব অপকর্মের সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন। তবে আমাদের জন্য সবচেয়ে সুখের বিষয়টি হলো এতসব প্রস্তাবনার পরেও বাংলা ভাষাকে কেউ এখন পর্যন্ত তার মূল স্রোত থেকে সরাতে পারেনি। এখনও বাংলা ভাষার হরফমালা অবিকৃত রয়েছে। কেউ কোন হরফকে বাদ দিতে পারেনি বা নতুন কোন পদ্ধতি আমাদের ওপর চাপিয়ে দিতে পারেনি। এখনও বাংলা ভাষার বানানে বৈচিত্র্য রয়েছে এবং নানাভাবে নানা শব্দে বাংলা ভাষা প্রতিদিনই সমৃদ্ধ হচ্ছে। বরং নানা আক্রমণে, নানা বিবর্তনে বাংলা ভাষা তার অকৃত্রিমতা হারায়নি। রাষ্ট্রের পৃষ্ঠপোষকতার অভাব : বাংলা ভাষার সবচেয়ে বড় সঙ্কটটি হচ্ছে রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতার অভাব। এটি বিস্ময়কর মনে হতে পারে যে, বাংলা ভাষার নামে জন্ম নেয়া দেশে সেই ভাষার জন্য সরকারের পৃষ্ঠপোষকতা যথাযথ নয়। সরকারের প্রথম বড় দুর্বলতা হলো, সর্বস্তরে বাংলা ভাষা প্রচলন করতে না পারা। সরকারী অফিসে বাংলা ব্যবহার হয়; কিন্তু সর্বত্র হয় না। উচ্চ আদালতে ইংরেজী ব্যবহার একরকম বাধ্যতামূলক। স্বাধীনতার ৪৪ বছরেও সেই শিকলটা আমরা ভাঙতে পারিনি। দৈনিক প্রথম আলো পত্রিকায় উচ্চ আদালতে বাংলা প্রচলন করতে না পারার জন্য একটিমাত্র বিধি (দেওয়ানি কার্যবিধির ১৩৭ ধারা) সংশোধন করার কথা বলা হয়েছে। এটি কি আমরা ভাবতে পারি যে, সরকার ৪৪ বছরে একটি বিধি সংশোধন করতে পারে না? অন্যদিকে সরকার যে বাংলা ভাষা প্রচলনের জন্য সিরিয়াস নয় তার অসংখ্য প্রমাণ পাওয়া যায়। সরকারের নীতিমালাগুলো ইংরেজীতে খসড়া হয়। সরকার যেখানে প্রয়োজন নেই সেখানেও ইংরেজীতেই তাদের উপস্থাপনা প্রস্তুত করে। এমনকি যেখানে ইংরেজী বলার প্রয়োজন নেই সেখানেও ইংরেজীতেই কার্যক্রম পরিচালনা করে। কিছুদিন আগে পর্যন্ত মোবাইল ফোন কেনার ফরমটা ইংরেজীতেই ছিল। এখনও কৃষকের ব্যবহার্য অনেক ফরম শুধু ইংরেজীতে। এখনও প্রতিদিন কম্পিউটার প্রচলনের নামে বাংলা ভাষাকে বিদায় করা হচ্ছে। এক সময় ব্যাংকগুলো বাংলায় তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করত। এখন অনলাইনের নামে সেখান থেকে বাংলা ভাষা বিদায় নিয়েছে। নতুন যে চেকবই এখন ব্যাংকগুলো চালু করেছে তাতে বাংলা হরফ নেই। ডিজিটাল পুর্জি হোক আর অনলাইনে ভর্তি হোক, বাংলা লেখা হলেও তা রোমান হরফে লেখা হয়। অতি সাধারণ কৃষককে যখন আমরা রোমান হরফ চেনানোর চেষ্টা করছি তখন পুরো বিষয়টাকেই দুঃখজনক বলতে হবে। সরকারের বাংলা ভাষা প্রচলন সংক্রান্ত একটি আইন আছে। সেই আইনে বাংলা ভাষা সরকারী কাজে ব্যবহার না করা হলে তার জন্য শাস্তির বিধান আছে। কিন্তু বাংলা ভাষা সরকারী কাজে ব্যবহার না করার জন্য এখন পর্যন্ত কেউ কোন শাস্তি তো দূরের কথা একটি সতর্কবাণীও শুনেনি। এতে প্রমাণিত হয় যে, সরকার সরকারী কাজে বাংলা ভাষা প্রচলনের ব্যাপারে আদৌ সিরিয়াস নয়। আমি লক্ষ্য করেছি যে, দিনে দিনে সরকারী কাজ যত অনলাইনে যাচ্ছে ততই সেটি বাংলার বদলে ইংরেজীতে হচ্ছে। সরকার ভাষা আন্দোলনের কথা বুক চাপড়ে বললেও তাকে অন্তর দিয়ে বাস্তবায়ন করছে না। সরকারের পক্ষ থেকে সবচেয়ে বড় অবহেলাটি হলো, বাংলা ভাষা শেখার বিষয়ে। ৫১টি বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের মাঝে মাত্র চারটিতে বাংলা ভাষা ও সাহিত্য বিষয় পড়ানো হয়। সরকার বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে রাষ্ট্রভাষা শেখাতে বাধ্য করেনি এটি আমাদের জন্য একটি লজ্জাজনক অধ্যায়। ভাষার জন্য রক্ত দেয়া একটি জাতির প্রতি এমন আচরণ সত্যি দুঃখজনক। যেসব বিশ্ববিদ্যালয় বেনিয়াবৃত্তির জন্য তাদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বাংলা ভাষা ও সাহিত্য পড়ায় না তাদেরও উচিত এই কলঙ্কের জন্য জাতির কাছে ক্ষমা চেয়ে অবিলম্বে বাংলা ভাষা ও সাহিত্য বিভাগ খোলা। আমাদের সরকারের উল্টো নীতির আরও একটি খারাপ দৃষ্টান্ত হলো এদেশে বাংলা ভাষা শিখতে হলে সরকারের অনুমতি লাগে। দুঃখজনক হলো, বাংলাদেশে যারা বাংলা শিখতে চায় তাদের এসবি থেকে অনুমতি নিতে হয়। সরকারের বাংলা একাডেমি বা অন্য কোন সংস্থা বিদেশীদের বাংলা শেখানোর কোন ব্যবস্থা করে না। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আধুনিক ভাষা ইনস্টিটিউটে বাংলা শেখার জন্য ভর্তি হতে হলে বিদেশীদের আগে পুলিশের অনুমতি নিতে হয়। অন্যদিকে বাংলাদেশের বিদেশী মিশনগুলো বাংলা ভাষা শেখানো তো দূরের কথা আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের ইতিহাসও দুনিয়াবাসীকে জানায় না। বাংলা ভাষার উচ্চতর গবেষণা ও বাংলা ভাষাকে ডিজিটাল ডিভাইসে প্রয়োগ করার জন্য সরকারের যেসব ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় ও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা থাকা উচিত ছিল সেটি সরকার পালন করছে না। অতীতের সরকারগুলো এ বিষয়ে সম্পূর্ণ নীরব ছিল। তবে এই সরকার একটু নড়েচড়ে বসলেও তেমন কোন কর্মপ্রচেষ্টা এখনও আমি দেখছি না। সরকারের উচিত হবে বাংলা ব্যাকরণ ও বানান শুদ্ধিকরণ সফটওয়্যার উদ্ভাবন করা, বাংলা টেক্সট টু স্পীচ, স্পীচ টু টেক্সট, অটো ট্রান্সমলেশন এবং অপটিক্যাল ক্যারেক্টারের মতো বিষয়গুলোতে যথাযথ বরাদ্দ প্রদান করা এবং সেই কাজগুলো সম্পন্ন করা। বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিলের পক্ষ থেকে এসব পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে বটে; কিন্তু বিগত সাত বছরে এসব প্রকল্পের কোনটিই আলোর মুখ দেখেনি। মাত্র কয়েক মাস পরে যে বাজেট সংসদে পেশ করা হবে তাতে এসব খাতে বাজেট বরাদ্দ থাকবে কিনা সেই বিষয়েও আমরা নিশ্চিত নই। ফলে বাংলা ভাষার নামে প্রতিষ্ঠিত দেশে বাংলার উন্নয়নে সরকারী প্রচেষ্টা আদৌ গ্রহণযোগ্য মাত্রায় নেই। আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট নামক যে প্রতিষ্ঠানটি এক্ষেত্রে অনেক বড় দায়িত্ব পালন করতে পারত সেটিরও তেমন কোন অগ্রগতি নেই। বছরের পর বছর ধরে এটি স্থবির হয়ে আছে। এমনটা চলতে থাকলে ডিজিটাল বাংলাদেশ মানে হবে বাংলা ভাষাবিহীন একটি দেশ। ঢাকা, ২৬ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ লেখক : তথ্যপ্রযুক্তিবিদ, দেশের প্রথম ডিজিটাল নিউজ সার্ভিস আবাস-এর চেয়ারম্যান, বিজয় কীবোর্ড ও সফটওয়্যারের জনক ॥ [email protected] www.bijoyekushe.net, www.bijoydigital.com
×