ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

শূন্যপদ

প্রকাশিত: ০৩:৪০, ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৬

শূন্যপদ

লাখ লাখ পদ শূন্য। অথচ নিয়োগ নেই। অনেক পদে নিয়োগের প্রক্রিয়া শুরু হলেও তা শেষ হয় না। অনেক ক্ষেত্রে নিয়োগের সব প্রক্রিয়া শেষ হলেও নিয়োগপত্র প্রদান রয়েছে আটকে। আবার কোন কোন ক্ষেত্রে লিখিত পরীক্ষা নেয়ার পর ফল ঘোষণা বন্ধ রাখা হয়েছে। সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও এর অধীন অনেক প্রতিষ্ঠানের হাল এই। ফলে কাজকর্মে স্থবিরতা স্বাভাবিকতায় পরিণত হয়েছে। এমনটাও দেখা যাচ্ছে, নিয়োগ নিয়ে বাণিজ্য চলে। এসব ক্ষেত্রে কোটি কোটি টাকা লেনদেন হয়। যেসব প্রতিষ্ঠানে নিয়োগ হওয়ার কথা, সেসব প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষের কোটারি স্বার্থ, ক্ষেত্রবিশেষে মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে বনিবনা না হওয়া, তদ্বিরের চাপ, নিয়োগ বাণিজ্য প্রভৃতি কারণে নিয়োগ প্রক্রিয়া আটকে রয়েছে। আবার দুর্নীতির উদ্দেশ্যে কৌশলে নিয়োগে ধীরগতির পথ অবলম্বন করা হচ্ছে। এসব কারণে অনেক প্রতিষ্ঠানে বারবার নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রচার, লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষা গ্রহণ করেও ফল প্রকাশ করা হচ্ছে না। ফলে বাড়ছে প্রত্যাশীদের হয়রানি। পোস্টাল অর্ডার, পে-অর্ডার ইত্যাদিতে চাকরি প্রার্থীদের পকেট কাটা গেলেও কর্তৃপক্ষের তাতে কিছু যায় আসে না। অনেকের আবেদনের বয়স পেরিয়ে যাওয়ায় তারা ঘরে বাইরে সমাজে বোঝা হয়ে দাঁড়াচ্ছে। হয়ে পড়ছে অন্ধকারের যাত্রী। নিয়োগ নিয়ে দুর্নীতির অভিযোগও রয়েছে। কয়েকটি মামলা এখন দুদকের আওতাধীন। কয়েকটি মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন প্রকল্প ও রাজস্ব খাতে কয়েক হাজার পদের লিখিত পরীক্ষা হলেও ফল আর ঘোষণা হয় না। আবার দেখা যায়, নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রচার এবং পরীক্ষার তারিখ ঘোষণার পরও প্রক্রিয়া থমকে আছে। এই নিয়োগ কবে হবে জানে না স্বয়ং কর্তৃপক্ষও। আবার কোন কোন নিয়োগ পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনাও রয়েছে। একটি অধিদফতরে দুটি পদে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির বিপরীতে আবেদনকারী ছিল দেড় লাখ। মৌখিক পরীক্ষা নেয়া হলেও ফল ঘোষণা না করে কার্যক্রম স্থগিত রাখা হয়। তদ্বিরের বিশাল চাপ সামলে নিয়োগ কার্যক্রম চালাতে পারেননি কর্তৃপক্ষ। আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় নিয়োগ কার্যক্রম স্থগিত হয়ে আছে বলে অভিযোগ রয়েছে। পদ শূন্য থাকায় কর্মকর্তা-কর্মচারী স্বল্পতায় সংশ্লিষ্ট দফতরগুলোর কার্যক্রম শ্লথ হয়ে পড়েছে। কোন কোন দফতরের কাজকর্ম অচল প্রায়। এমন করুণ অবস্থা থেকে উত্তরণের কোন প্রচেষ্টাই পরিলক্ষিত হয় না। নিয়োগ বন্ধ থাকায় সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে শিক্ষাব্যবস্থা। শিক্ষক-কর্মচারী স্বল্পতার কারণে কয়েক শ’ সরকারী মাধ্যমিক বিদ্যালয় বন্ধ হওয়ার উপক্রম। নামমাত্র শিক্ষক দিয়ে সচল রাখা যাচ্ছে না এসব বিদ্যালয়। জোড়াতালি দিয়ে চলছে সবই। সরকারী মাধ্যমিক স্কুলে শিক্ষকের পদ রয়েছে ১০ হাজার ৬টি। এর মধ্যে এক হাজার সাত শ’ পদ শূন্য। সরকারী কলেজ শিক্ষকদের পদ শূন্য রয়েছে তিন হাজারের বেশি। পাশাপাশি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে অর্ধ লাখ শিক্ষকের পদ শূন্য। এর মধ্যে জাতীয়করণকৃত বিদ্যালয়ে শূন্য পদের সংখ্যা ২৩ হাজার ৫শ’ ৪১ জন। পিএসসি ও কারিগরি শিক্ষাবোর্ডের সমন্বয়হীনতায় বহু পদ রয়েছে শূন্য। শূন্য পদের বিপরীতে নিয়োগ না হওয়ায় সঙ্কট বাড়ছে। দেশে শিক্ষিত বেকারের সংখ্যা বাড়ছে। অথচ চাকরি নেই। আর এই না থাকার কারণে প্রতিষ্ঠানগুলো মুখ থুবড়ে পড়ছে। এই করুণ দশা হতে উত্তরণের কোন পন্থা বের করা হচ্ছে না। কারও কোন দায়ভারও যেন নেই। দেশ ও জাতির স্বার্থে এবং প্রতিষ্ঠানগুলো সচল রাখার জন্য দ্রুত শূন্য পদ পূরণ করা হবেÑ এমন প্রত্যাশা দেশ ও জনগণের।
×