ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

আশা-ভরসা নারী এ্যাথলেটরাই

প্রকাশিত: ০৫:৪০, ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৬

আশা-ভরসা নারী এ্যাথলেটরাই

রুমেল খান ॥ ক’দিন আগে সাউথ এশিয়ান গেমসে (ভারতের গুয়াহাটি ও শিলংয়ে অনুষ্ঠিত) বাংলাদেশ পেয়েছিল মোট ৭৫ পদক। এর অধিকাংশই এনে দিয়েছেন বাংলাদেশের নারী ক্রীড়াবিদরা। প্রমাণ চান? বাংলাদেশ জিতেছে মোট ৪ স্বর্ণ। এর ৩টিই পেয়েছেন নারীরা। ১৫ রৌপ্যপদকের মধ্যে ১১টিই পেয়েছেন নারীরা। এছাড়া ৫৬ তাম্রপদকের মধ্যে নারী এ্যাথলেটরা জিতেছেন ২৫ সবমিলিয়ে ৭৫ পদকের ৩৯টিই জিতেছেন নারী ক্রীড়াবিদরা। সর্বশেষ সাউথ এশিয়ান গেমসে (এসএ গেমস) ২০১০ আসরে স্বাগতিক বাংলাদেশ পদক জিতেছিল ৯৭। এর মধ্যে স্বর্ণপদক ছিল ১৮। এগুলোর ১০টিই জিতেছিলেন মেয়েরা। এ থেকেই এটা সুস্পষ্টভাবে প্রতীয়মান হয়, আন্তর্জাতিক ক্রীড়াঙ্গনে বাংলাদেশের সাফল্যের সিংহভাগ কৃতিত্বই হচ্ছে নারীদের। এখন এটা আর অস্বীকার করার কোন উপায় নেই। এবারের এসএ গেমসে সামগ্রিকভাবে বাংলাদেশের পারফর্মেন্স ছিল হতাশাজনক। ব্যর্থতা দিয়েই তারা শেষ করে ‘দক্ষিণ এশিয়ার অলিম্পিক’ খ্যাত সাউথ এশিয়ান গেমসের মিশন। এবারের গেমসের পদক তালিকায় ১৮৮ স্বর্ণসহ ৩০৮ পদক নিয়ে যথারীতি শীর্ষস্থানে ভারত। আর ২৫ স্বর্ণসহ ১৮৬ পদক নিয়ে তার পরের অবস্থানে শ্রীলঙ্কা। ১২ স্বর্ণসহ ১০৬ পদক নিয়ে তালিকায় তৃতীয় অবস্থানে পাকিস্তান। আসরের শেষদিকে এসে চমক দেখায় আফগানিস্তান। ৭ স্বর্ণসহ ৩৫ পদক নিয়ে বাংলাদেশকে পেছনে ফেলে চতুর্থ অবস্থানে তারা। নেপাল যদি বাংলাদেশের সমান স্বর্ণপদক পেত (নেপালের স্বর্ণ ৩টি), তাহলে তারা পেছনে ফেলতে পারত বাংলাদেশকে। কেননা তাদের রৌপ্যপদক বাংলাদেশের চেয়ে বেশি (নেপালের রুপা ২৩, বাংলাদেশের ১৫)। গত ২০১০ আসরে পদক তালিকায় বাংলাদেশ ছিল তিন নম্বরে, এবার তারা দুই ধাপ পেছনে গিয়ে পঞ্চম স্থানে। ৪ স্বর্ণসহ মোট ৭৫ পদক নিয়ে আফগানিস্তানের পরেই বাংলাদেশ। বাংলাদেশের অর্জন ৪ সোনা। আর এই সোনার ৩টিই জিতেছেন নারী ক্রীড়াবিদরা। ভারোত্তোলনে মাবিয়া আক্তার সিমান্ত জেতেন প্রথম স্বর্ণটি। তারপর জলকন্যা মাহফুজা আক্তার শিলা সাঁতারে একাই জেতেন ২ স্বর্ণ। আর পুরুষদের মধ্যে একমাত্র স্বর্ণজয় করেন পিস্তল শূটিংয়ে শাকিল আহমেদ। নারীদের কল্যাণে স্বর্ণপদকের সিংহভাগ এলেও সিমান্ত শিলা বারবারই হয়েছেন উপেক্ষিত। যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও তার মূল্যায়ন করেনি ফেডারেশন। বর্তমানে সেই সিমান্ত ও শিলা বাংলাদেশের সেরা বিজ্ঞাপন। দেশে ফিরলে তাদের নিজ নিজ ফেডারেশন কোন সংবর্ধনা দেয়নি, এমনকি শুভেচ্ছাও জানায়নি। শিলাকে তো এবারের এসএ গেমসগামী সাঁতার দলে নিতেই চাননি ফেডারেশনের কিছু অসৎ কর্মকর্তা। শেষে কোরিয়ান সাঁতারু কোচ পার্কের আগ্রহে ও অনুরোধেই দলভুক্ত হতে রাজি হন শিলা। শুরুতে না হলেও এখন অবশ্য নিয়মিতই সংবর্ধনা পাচ্ছেন সিমান্ত-শিলা। দেশের ক্রীড়াঙ্গন এখন আচ্ছন্ন সংবর্ধনা হুজুগে। বাংলাদেশের এই দুই সোনার মেয়েকে সম্মান জানাচ্ছে পুরোদেশ। সাধারণ পরিবারের অসাধারণ দুই লড়াকু কন্যার ‘স্বর্ণ-অভিযান’ ছাপ্পান্ন হাজার বর্গমাইলের বাংলাদেশের হাজারো কন্যার প্রেরণা। ক্রীড়া সমঝদার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যখন দুই সোনার মেয়ের দেখভালের দায়িত্ব নিয়েছেন তখন আশা করাই যায় সিমান্ত-শিলা এশিয়ান গেমস কিংবা অলিম্পিকে পদক জয়ের সংগ্রামে মাথার ওপর পাচ্ছেন এক মহীরুহের ছায়া। সিমান্ত-শিলার সংবর্ধনা কিংবা বন্দনার মিছিল বাংলাদেশ অলিম্পিক এ্যাসোসিয়েশন ও ফেডারেশন কর্তাদের জন্য বিশাল স্বস্তি। আপাতত মুখ লুকানোর জায়গা পাচ্ছেন তারা! সাফ ফুটবল চ্যাম্পিয়নশিপ, বঙ্গবন্ধু কাপ এরপর এসএ গেমস, তিন উপমহাদেশীয় ক্রীড়া আসরে বাংলাদেশের যা পারফর্মেন্স তাতে ব্যর্থতার কাঠগড়ায় দাঁড়াতেই হতো তাদের। এসএ গেমসের পদক তালিকা বলে দিচ্ছে খেলাধুলায় আসলে কোন অবস্থানে বাংলাদেশ! লোকসংখ্যা, অবকাঠামোগত সুযোগ সুবিধা কিংবা স্পন্সরশিপ সবকিছুতে নেপাল, শ্রীলঙ্কা, মালদ্বীপের চেয়ে এগিয়ে বাংলাদেশ। অথচ পদক তালিকায় তার প্রতিফলন কোথায়? মাল্টি স্পোর্টস ইভেন্ট, আঞ্চলিক কিংবা মহাদেশীয় গেমসে ক্রমাগত পিছিয়ে পড়া প্রমাণ করছে ক্রীড়াক্ষেত্রে দেউলিয়াত্বের পথে হাঁটছে বাংলাদেশ। এ রকম লাগাতার ব্যর্থতার পর বাংলাদেশ অলিম্পিক এ্যাসোসিয়েশন, বিভিন্ন ফেডারেশন এমনকি বিকেএসপির মতো প্রতিষ্ঠানের টিকিয়ে রাখার যৌক্তিকতা পড়েছে প্রশ্নের মুখে। ফি’বছর কোটি কোটি টাকা খরচ করা বিকেএসপি বিশ্বমানের না হোক, এশীয়মানের এক বা দু’জন এ্যাথলেট কি বাংলাদেশকে উপহার দিতে পেরেছে? বছরজুড়ে কর্মকর্তাদের বিদেশ সফরের জন্যই কি বাংলাদেশ অলিম্পিক এ্যাসোসিয়েশন!
×