ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

৫১ রানের জয়, দুটি করে উইকেট মাশরাফি, মুস্তাফিজ, সাকিব ও মাহমুদুল্লাহর

বাংলাদেশের বোলিং তোপে উড়ে গেল আমিরাত

প্রকাশিত: ০৫:৩৯, ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৬

বাংলাদেশের বোলিং তোপে উড়ে গেল আমিরাত

মোঃ মামুন রশিদ ॥ পচা শামুকে পা কেটে ফেলার দুর্ভাগ্যটা বেশ কয়েকবার সঙ্গী হয়েছে। শুক্রবার এশিয়া কাপের দ্বিতীয় ম্যাচে ঠিক একই শঙ্কা দানা বাঁধতে শুরু করেছিল। মিরপুর শেরেবাংলা জাতীয় স্টেডিয়ামে টস হেরে ব্যাট করতে নামা টাইগারদের ব্যাটিং দেখে তেমন খুশি হতে পারেননি ক্রিকেটপ্রেমী দর্শকরা। তবে বাংলাদেশী পেসারদের দাপটে কোণঠাসা হয়ে গেল আমিরাত। সব শঙ্কাকে উড়িয়ে বাংলাদেশ সহজেই ৫১ রানে হারিয়ে দিল আমিরাতকে। আগে ব্যাট করে দুটি রানআউট ও অন্য ব্যাটসম্যানদের দায়িত্বহীন ব্যাটিং করে উইকেট বিলানোর মাঝে ব্যতিক্রম মোহাম্মদ মিঠুন ও মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ। এ দুজনের দৃঢ়তায় আমিরাত পেস আক্রমণের সঙ্গে লড়ে ৮ উইকেটে ১৩৩ রান তুলেছিল বাংলাদেশ। পরে টাইগারদের ভয়াল পেস আক্রমণের সামনে ১৭.৪ ওভারে ৮২ রানেই গুটিয়ে যায় আমিরাত। এমন অনেকগুলো দিন গেছে বাংলাদেশ দলের ওপর পরাজয়ের গ্লানি নিশ্চিতভাবে নেমে এসেছে আগেভাগে। খেলা শেষ হওয়ার আগেই গ্যালারি শূন্য করে চোখের জলে কিংবা বিষণœ মনে মাঠ ছেড়েছেন ক্রিকেটপাগল দর্শকরা। এবার উল্টো চিত্রটা দেখা গেল। আমিরাতের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের জয় পাওয়াটাকে অনেক আগেই সময়ের ব্যাপার অপেক্ষা করে দিলেন বোলাররা। নিশ্চিত জয় জেনে সন্তুষ্ট চিত্তে আগেই কানায় কানায় পূর্ণ গ্যালারি পাতলা করে মাঠ ছাড়লেন ক্রিকেটপ্রেমীরা। প্রথম ম্যাচে ভারতের কাছে ৪৫ রানে হারের পর দ্বিতীয় ম্যাচেই জিতল মাশরাফির দল। একটা সময় শক্ত প্রতিপক্ষ ছিল আমিরাত- হতো জোর লড়াই। তবে দিন বদলেছে- এখন অনেক শক্তিধর বাংলাদেশ দল। আমিরাতের বিরুদ্ধে দীর্ঘ ৮ বছর পর আবারও খেলতে নামে বাংলাদেশ। ভারতের কাছে হেরে টুর্নামেন্ট শুরু করায় বাংলাদেশের জন্য জেতার চ্যালেঞ্জ ছিল এ ম্যাচটায়। এবারও আমিরাত নিজেদের দারুণ পেস আক্রমণের ওপর আস্থা রেখে টস জিতে ফিল্ডিং নেয়। এদিন বাংলাদেশ দলে একটি পরিবর্তন আনা হয়েছিল। ইমরুল কায়েসের বদলে তরুণ উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যান নুরুল হাসান সোহান। তবে এবার শুরুটা ভাল হয়নি আমিরাতের বোলিংয়ের। প্রথম থেকে তা-ব শুরু করেন মিঠুন ও সৌম্য সরকার। তবে ইনিংসের পঞ্চম ওভারের প্রথম বলেই বিপদটা ঘনিয়ে এসেছিল। ব্যক্তিগত ১০ রানে মিঠুন ক্যাচ দিয়েছিলেন মিডঅফে। আর থামানো যায়নি তাকে। পঞ্চম ওভারে ১৭ রান তুলে নিয়ে রানের গতিটাকে দ্রুত করে দেন দুই ওপেনার। ৫ ওভারে বিনা উইকেটে ৩৯ রান, উড়ন্ত সূচনাই পেয়েছিল বাংলাদেশ। কিন্তু পরের ওভারেই বিপত্তি। ছক্কা হাঁকিয়ে শুরু করা সৌম্য পরের বলেই মিডঅনে সহজ ক্যাচ দিলেন। তিনি ১৪ বলে ২ চার ও ১ ছক্কায় ২১ রান করে ফিরে যাওয়ার পর উল্লসিত দর্শকদের মধ্যে নীরবতা নেমে আসে। সেই নীরবতায় মাঝে মাঝেই চাঞ্চল্য এনে দিতে পেরেছেন শুধু তরুণ মিঠুন ও মাহমুদুল্লাহ। কিন্তু দারুণ শুরুটাকে কাজে লাগানো যায়নি। ফর্মে থাকা সাব্বির রহমানও মাত্র ৬ রান করে সাজঘরে ফিরে গেছেন। ৪১ বলে ৪ চার ও ২ ছক্কায় ৪৭ রান করে মিঠুন ফিরে যাওয়ার পর ধস নামে। নিজেদের ভুলে উইকেট বিলিয়ে দিয়েছেন মুশফিকুর রহীম (৪), সাকিব আল হাসান (১৩) এবং সোহান (০)। সম্মিলিত বোলিং প্রচেষ্টায় এ ধস নামিয়েছে আমিরাত। মাঝের ৭ ওভারে মাত্র ৩৩ রানে ৫ উইকেটের পতনে সংগ্রহ বড় হয়নি। বরং শঙ্কা জমে মামুলি এক সংগ্রহে গুটিয়ে যাওয়ার। তবে সেটা হতে দেননি মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ। ৬ নম্বরে নেমে একাই লড়েছেন তিনি। ২৭ বলে ১ চার ও ২ ছক্কায় ৩৬ রানে অপরাজিত থাকেন তিনি। শেষ পর্যন্ত ৮ উইকেটে ১৩৩ রানের একটি সম্মানজনক সংগ্রহ পেয়েছে বাংলাদেশ দল। জবাব দিতে নেমে আমিরাত সাবধানী শুরু করলেও প্রথম আঘাত হানেন আলআমিন। দ্বিতীয় ওভারেই সাফল্য আসে। তাসকিন আহমেদের করা প্রথম ওভারের তৃতীয় বলেই জীবন পাওয়া রোহান মুস্তাফা চতুর্থ ওভারের চতুর্থ বলে দুর্দান্ত ক্যাচের শিকার হয়েছিলেন মুস্তাফিজের। পরে সেটি নাকচ হয়ে গেলেও তিনি বেশিদূর যেতে পারেননি। মাশরাফি বিন মর্তুজা ফিরিয়েছেন তাকে। ধসটার শুরু এখান থেকেই। শায়মান আনোয়ারকেও (১) শিকার করেন মাশরাফি। এর পর মুস্তাফিজ ইনিংসের অষ্টম ওভারে পর পর দুই বলে দুটি উইকেট নিয়ে হ্যাটট্রিকের সুযোগও তৈরি করেন। ব্যাকফুটে পড়ে যাওয়া আমিরাত পরবর্তী সময় রান করতে শুধু ধুঁকেই গেছে মুস্তাফিজের ভয়ানক কাটার এবং সাকিব-মাহমুদুল্লাহর স্পিন এবং আলআমিন ও মাশরাফির পেস তোপের সামনে। লড়েছেন শুধু মুহাম্মদ উসমান। তিনি ৩০ বলে ২ চার ও ২ ছক্কায় সর্বোচ্চ ৩০ রান করে তাসকিনের বলে বোল্ড হওয়ার অনেক আগেই আমিরাতের অঘটন ঘটিয়ে ফেলার সব স্বপ্ন ধূলিসাত হয়ে গেছে। ২ ওভার ২ বল বাকি থাকতেই মাত্র ৮২ রানে গুটিয়ে গেছে আমিরাত। আর ব্যাট হাতে দারুণ নৈপুণ্য দেখানো মাহমুদুল্লাহ বল হাতেও চমক দেখিয়ে ২ উইকেট নিয়ে হয়েছেন ম্যাচসেরা। দুটি করে উইকেট নিয়েছেন সাকিব, মাশরাফি ও মুস্তাফিজও।
×