ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

মিরপুরে পাক-ভারত উত্তাপ

প্রকাশিত: ০৫:৩৭, ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৬

মিরপুরে পাক-ভারত উত্তাপ

মিথুন আশরাফ ॥ ভারত-পাকিস্তান ম্যাচ মানেই হচ্ছে ‘যুদ্ধ যুদ্ধ’ একটা ভাব তৈরি হয়ে যাওয়া। মাঠের ভেতর, মাঠের বাইরে সবস্থানে শুধু যুদ্ধই দেখা যায়। ক্রিকেটারদের মধ্যে মাঠে ব্যাট-বলের লড়াইয়ে যুদ্ধ। স্নায়ুচাপ জেতার যুদ্ধ। জিতে মর্যাদা টিকিয়ে রাখার যুদ্ধ। মাঠের বাইরে দুই দলের ক্রিকেটপ্রেমীদের মধ্যে কথার যুদ্ধ। এর সঙ্গে যুক্ত হয় দুই দলেরই সাবেক ক্রিকেটারদের কথার ঝাঝও! সেই যুদ্ধ আজ এশিয়া কাপ টি২০তে আবারও দেখা যাবে। মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে রাত সাড়ে সাতটায় ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যকার আরেকটি মর্যাদার লড়াই শুরু হবে। দুই দলের লড়াই দেখার জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করেন বিশ্বের ক্রিকেটপ্রেমীরা। সবার মধ্যে উত্তেজনা বিরাজ করে। ক্রিকেট মাঠে ক্রিকেটারদের মধ্যে যেমন স্নায়ুতে চাপ পড়ে। তেমনি মাঠে থাকা দর্শক কিংবা মাঠের বাইরে টেলিভিশনে খেলা দেখতে থাকা ক্রিকেটারদের মাঝেও আমেজ কাজ করে। সেই ম্যাচটি হচ্ছে ভারত-পাকিস্তান ম্যাচ। যে ম্যাচ এখন দীর্ঘদিন পর পর ক্রিকেটপ্রেমীদের সামনে একবার করে ঘুরে আসে। আজ যেমন একবছর পর চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী এ দুই দল আবার মুখোমুখি হবে। সর্বশেষ ওয়ানডে বিশ্বকাপে গত বছর ফেব্রুয়ারিতে দুই দল পরস্পরের বিপক্ষে খেলে। এবার এশিয়া কাপ হচ্ছে টি২০ ফরমেটে। আর পাকিস্তান এবার টুর্নামেন্টে প্রথম ম্যাচটিই খেলবে ভারতের বিপক্ষে। যে ভারত প্রথম ম্যাচে স্বাগতিক বাংলাদেশকে হারিয়ে এরই মধ্যে টুর্নামেন্টে শুভসূচনা করে ফেলেছে। আজ জিতলে ফাইনালে ওঠার পথে এগিয়ে যাবে দলটি। সেই সঙ্গে যুদ্ধ যুদ্ধ ভাব তৈরি হওয়া ম্যাচে, মর্যাদার ম্যাচে জয়ও মিলবে। কিন্তু পাকিস্তান কী তা হতে দেবে? পাকিস্তানের কিংবদন্তি ওয়াসিম আকরাম পাকিস্তান ক্রিকেটারদের জন্য জালাময়ী বক্তব্যই দিয়েছেন। বলেছেন, ‘এশিয়া কাপে পাকিস্তান-ভারত ম্যাচে পাকিস্তানই ফেবরিট!’ এটি পাকিস্তান ক্রিকেটারদের তাতিয়ে দেয়ার জন্যই ওয়াসিম আকরাম বলেছেন, না ভারত ক্রিকেটারদের মানসিকভাবে দুর্বল করে দেয়ার জন্য, তা বোঝা কঠিন। ভারত ও পাকিস্তান সর্বশেষ ২০১৫ সালের বিশ্বকাপে মুখোমুখি হয়। এ্যাডিলেডের সে ম্যাচে জয় তুলে নেয় টিম ইন্ডিয়া। বিশ্বকাপের পর সম্প্রতি মহেন্দ্র সিং ধোনির ভারত অস্ট্রেলিয়া, শ্রীলঙ্কার মতো দলের বিপক্ষে সিরিজ খেলেছে। অজিদের মাঠে টি২০ সিরিজে স্বাগতিকদের ৩-০ ব্যবধানে হারায় ভারত। নিজেদের মাটিতে শ্রীলঙ্কাকে হারায় ২-১ ব্যবধানে। আর সম্প্রতি পারফর্মেন্সের ভিত্তিতে ভারত টি২০তে শীর্ষ র‌্যাঙ্কিং ধরে রেখেছে। সেই তুলনায় পাকিস্তান অনেকটাই পিছিয়ে রয়েছে। শেষ দুটি টি২০ সিরিজেই হেরেছে পাকিস্তান। গত বছর নবেম্বরে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ও এ বছর জানুয়ারিতে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে তিন ম্যাচের সিরিজে ২-১ ব্যবধানে হেরেছে। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে দুই দলের মধ্যে সম্প্রতি ভারতই দুর্দান্ত খেলে চলেছে। এ বিষয়টিই ওয়াসিম আকরাম সামনে তুলে ধরেছেন। বলেছেন, ‘ভারত আর পাকিস্তানের মধ্যে ম্যাচগুলো দারুণ উত্তেজনায় ভরপুর থাকে। এবারও উত্তেজনা বিরাজ করছে। তবে, আমি বিশ্বাস করি এবারের ম্যাচে পরিষ্কারভাবেই এগিয়ে ভারত। পাকিস্তানকে হারানোর সম্ভাবনাই বেশি ধোনির দলটির। কারণ, তারা বর্তমানে যেভাবে খেলে চলেছে, তাতে তাদেরই ফেবারিট হিসেবে মনে হচ্ছে।’ টি২০ বিশ্বকাপের আগে এশিয়া কাপটি হচ্ছে টি২০ ফরমেটে। ভারত ও পাকিস্তান তাতে মুখোমুখি। টি২০ বিশ্বকাপের আগে প্রস্তুতি নেয়ার আদর্শ প্লাটফর্ম হয়ে দাঁড়িয়েছে এশিয়া কাপ। সেই প্লাটফর্মে আবার ভারত ও পাকিস্তান লড়াই করবে। নিজেদের ভালভাবে ঝালিয়ে নেয়ার সুযোগও পেয়ে যাচ্ছে। বুঝে যাবে, কোথায় শক্তি, কোথায় দুর্বলতা। টি২০ বিশ্বকাপেও যে এ দুই দল ১৯ মার্চ পরস্পরের বিপক্ষে লড়াই করবে। এশিয়া কাপে খেলে ভালভাবে প্রস্তুতি সেরে নিতে পারলে তা টি২০ বিশ্বকাপেই কাজে লাগবে। অবশ্য আপাতত এশিয়া কাপের দিকেই মনোযোগ দিচ্ছেন দুই দলের ক্রিকেটাররাই। ভারত অনেক আগেই বাংলাদেশে পৌঁছালেও পাকিস্তান ক্রিকেটাররা বুধবার এসেছেন। বৃহস্পতিবার ভারত-পাকিস্তান ম্যাচ নিয়ে কথা বলেছেন অলরাউন্ডার শোয়েব মালিক। জানিয়েছেন ভারতের বিপক্ষে ম্যাচটিতে ফেবারিট পাকিস্তানই, ‘সবাই জানে যে ভারত-পাকিস্তান ম্যাচ মানেই বড় ম্যাচ। দুই দেশের মানুষ খুব আনন্দ নিয়ে ম্যাচটি উপভোগ করে। সবাই চায় যে তাদের দলটি যেন জিতে। ক্রিকেটাররাও এ ম্যাচটি জিততে মুখিয়ে থাকে, আপ্রাণ চেষ্টা করে। এই ম্যাচটিতে যে রকম তৃপ্তি পাওয়া যায় সেটা দুই দলের ক্রিকেটাররাই উপভোগ করে। পাকিস্তানী হিসেবে আমিও বলব পাকিস্তান এ ম্যাচে ফেবারিট। তবুও সম্প্রতি যদি ভারতের পারফর্মেন্স দেখেন, তারা খুবই ভাল করছে। আমরাও প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ ক্রিকেট খেলছি। আমরা মাত্রই পিএসএল খেলে এসেছি। আমরা ওখানে নিজেরা অংশগ্রহণ করেছি। আমি মনে করি দুই দলের আরেকটি উত্তেজনাপূর্ণ ম্যাচ হবে।’ বিরাট কোহলি অবশ্য দুই দলের ম্যাচটিকে এখন অন্য ম্যাচের মতোই মনে করেন। বলেছেন, ‘এই ম্যাচটি আমার কাছে আসলে অন্য ম্যাচগুলোর মতোই।’ বোঝা যাচ্ছে, ম্যাচটির আগে ভারত কোন চাপ নিতে চাইছে না। কিন্তু ম্যাচটি নিয়ে ক্রিকেটপ্রেমীদের মধ্যে উত্তেজনা ঠিকই কাজ করা শুরু হয়ে গেছে। এখন দেখা যাক, কোন দল শেষ পর্যন্ত প্রথম টি২০ এশিয়া কাপে জয় তুলে নিতে পারে।
×