ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

নতুন প্রকল্প তৈরির সুপারিশ

৭ কিলোমিটার রাস্তার মাত্র ৪০ ভাগ কাজ হয়েছে ১১ বছরে

প্রকাশিত: ০৫:৩৫, ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৬

৭ কিলোমিটার রাস্তার মাত্র ৪০ ভাগ কাজ হয়েছে ১১ বছরে

বিডিনিউজ ॥ প্রায় এক যুগের চেষ্টায় ৪০ শতাংশ কাজের পর বন্ধ হয়ে যাওয়া একটি সড়ক নির্মাণ প্রকল্পের বাকি কাজ শেষ করতে নতুন প্রকল্প তৈরির সুপারিশ করেছে পরিকল্পনা কমিশন। রাজধানীর যাত্রাবাড়ী ও সায়েদাবাদ এলাকার যানজট নিরসনে ২০০৪-০৫ সালে ‘মাঝিনা-কায়েতপাড়া-ত্রিমোহনী সংযোগ সড়ক নির্মাণ’ নামের এ প্রকল্প নেয়া হয়। প্রায় ২৪ কোটি টাকা ব্যয়ে এ প্রকল্প শেষ করার কথা ছিল ২০০৭ সালের জুনে। এরপর ২২ বার প্রকল্প পরিচালক পরিবর্তন হয়; খরচ হয় ১৮ কোটি ৩৩ লাখ টাকা। এগারো বছরে মাত্র ৪০ ভাগ কাজ হওয়ায় গত জুন মাসে প্রকল্পটির সমাপ্তি ঘোষণা করে সরকার। এখন ওই সড়কের বাকি কাজ সারতেই নতুন প্রকল্প নিতে বলছে পরিকল্পনা কমিশন। গত ২২ জানুয়ারি পরিকল্পনা কমিশনের বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) কর্মকর্তারা ওই প্রকল্প এলাকা পরিদর্শন করেন। তাদের প্রতিবেদন ও সুপারিশ সম্প্রতি সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়সহ সরকারের উর্ধতন কর্মকর্তাদের কাছে পাঠানো হয়। প্রকল্পটির এ অব্যবস্থাপনার বিষয়ে জানতে চাইলে সদ্য বদলি হওয়া আইএমইডি সচিব শহীদউল্লা খন্দকার (বর্তমানে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের সচিব) বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “পরিদর্শনে আমরা যা পেয়েছি তা তুলে ধরেছি। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের কাছে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের তাগাদা দিয়েছি। এখন কী করবে, তা সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ই জানে।” এ বিষয়ে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব এম এ এন ছিদ্দিক বলেন, “প্রকল্পটি প্রথমে আমাদের অধীনে বাস্তবায়ন শুরু হলেও সম্প্রতি এটা স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতরের কাছে ন্যস্ত করা হয়েছে। এখন এ প্রকল্প সম্পর্কে আমি কিছু বলতে চাই না।” প্রকল্প দলিলে বাস্তবায়নকারী সংস্থা হিসেবে সড়ক ও জনপথ অধিদফতরের নাম রয়েছে। তবে স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব আবদুল মালেকের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি। আইএমইডির এক কর্মকর্তা জানান, সিলেট ও ভৈরবসহ দেশের পূর্ব-দক্ষিণাঞ্চলের যানবাহন যাতে কাঁচপুর, যাত্রাবাড়ী ও সায়েদাবাদের যানজট এড়িয়ে রূপগঞ্জ হয়ে রাজধানীর মাঝামাঝি অংশে রামপুরা দিয়ে প্রবেশ করতে পারে, সেজন্য এ প্রকল্প নেয়া হয়েছিল। রূপগঞ্জের মাঝিনা পয়েন্ট হয়ে কায়েত পাড়ায় বালু নদী এবং ত্রিমোহনীতে রামপুরা খাল অতিক্রম করে ডেমরা-আমুলিয়া-হয়ে রামপুরা জাতীয় মহাসড়কের ত্রিমোহনী পর্যন্ত সাড়ে সাত কিলোমিটার সড়ক নির্মাণের কথা ছিল এ প্রকল্পে। পরিদর্শন প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রকল্পের সময় ২৬৭ শতাংশ বৃদ্ধির পরও অনিয়ম, দুর্নীতি, চাহিদা অনুযায়ী অর্থ বরাদ্দ না দেয়া, ভূমি অধিগ্রহণ জটিলতা এবং ভূমির অত্যধিক মূল্যবৃদ্ধির কারণে অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়। এসব অনিয়ম ও দুর্নীতির ঘটনা নিরীক্ষা করে আগামী এক মাসের মধ্যে আইএমইডিকে জানাতে বলা হয়েছে। সুপারিশে বলা হয়েছে, প্রকল্পটির জন্য ২২ জন পরিচালক নিয়োগ দেয়া হয়েছিল। এত ঘন ঘন পরিচালক বদলি করলে যথাযথ তদারকি সম্ভব নয়। তাই পরবর্তী প্রকল্পগুলোতে এ প্রবণতা পরিহার করতে হবে। প্রকল্পটির অধীনে সাড়ে সাত কিলোমিটার সড়ক নির্মাণের কথা থাকলেও করা হয়েছে ৪ কিলোমিটারেরও কম। তাও যথাযথভাবে করা হয়নি, অনেক জায়গায় খাড়া ও ঢাল দেখা গেছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। সবমিলিয়ে যে ৪০ ভাগ সড়ক নির্মাণ করা হয়েছে তাও অতিরিক্ত সময় ক্ষেপণের কারণে নানাভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে প্রতিবেদনে। এর আগে ২০১০ সালের ৬ অক্টোবর আইএমইডি এ প্রকল্পের অনিয়ম ও দুর্নীতির ফিরিস্তি জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় প্রধামন্ত্রীর কাছে উপস্থাপন করেছিল।”
×