ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

বাংলাদেশ ভ্রমণে সতর্ক বার্তাকে সরকার স্বাভাবিকভাবে দেখছে

প্রকাশিত: ০৫:৩৩, ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৬

বাংলাদেশ ভ্রমণে সতর্ক বার্তাকে সরকার স্বাভাবিকভাবে দেখছে

কূটনৈতিক রিপোর্টার ॥ বাংলাদেশ ভ্রমণে কয়েকটি দেশের সতর্কবার্তাকে স্বাভাবিকভাবে দেখছে সরকার। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়া প্রতিনিয়ত সতর্কবার্তা হালনাগাদ করলেও তাদের ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞার তালিকায় নেই বাংলাদেশ। এছাড়া বাংলাদেশ ভ্রমণে বিশ্বের কোন দেশেরই রেড এ্যালার্ট নেই। সর্বশেষ বৃহস্পতিবার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশে ভ্রমণ সতর্কবার্তা হালনাগাদ করেছে। কূটনৈতিক সূত্র এসব তথ্য নিশ্চিত করেছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দফতর থেকে জারি করা এই সতর্কবার্তায় উল্লেখ করা হয়েছে, দেশটির কাছে খবর রয়েছে, বিদেশীদের ওপর আবার হামলা হতে পারে। গত সেপ্টেম্বর থেকে বাংলাদেশে দু’জন বিদেশী নাগরিককে গুলি করে হত্যাসহ ধর্মীয় সম্প্রদায় ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের ওপর উগ্রপন্থীদের আক্রমণের বিভিন্ন ঘটনা ঘটেছে। আইএস প্রকাশ্য ঘোষণা দিয়ে অনেক ঘটনার দায় স্বীকার করেছে। পাশাপাশি ভারতীয় উপমহাদেশে আল কায়েদার প্রতিনিধিত্বের দাবিদার কয়েকটি গোষ্ঠী ব্লগার খুনসহ দেশের লেখক, প্রকাশক ও গণমাধ্যমকর্মীদের ওপর হামলা ও হুমকির দায় স্বীকার করেছে। ভ্রমণ সতর্কবার্তায় বাংলাদেশ সরকারের উদ্যোগের বিষয়গুলো তুলে ধরা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, চরমপন্থীদের ধরতে ও নিরাপত্তা বাড়াতে পদক্ষেপ নিয়েছে সরকার। প্রতি বছর হাজার হাজার মার্কিন নাগরিক কোন দুর্ঘটনা ছাড়াই বাংলাদেশ সফর করছেন। এর পরও যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকদের উচিত পূর্বসতর্কতা গ্রহণ করা, সতর্ক থাকা ও স্থানীয় নিরাপত্তা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে রাখা। যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তা, তাদের পরিবার এবং যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকদের সর্বাবস্থায় সতর্কতা গ্রহণের পরামর্শ দেয়া হয়েছে। এ ভ্রমণ সতর্কবার্তা আগামী পহেলা মে পর্যন্ত বহাল থাকবে বলে জানানো হয়। শুক্রবার বিভিন্ন দেশের ভ্রমণ সতর্কবার্তা পর্যালোচনা করে দেখা যায়, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দফতরের ভ্রমণ সতর্কবার্তায় সে দেশের নাগরিকদের ৪৭টি দেশে ভ্রমণে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। এতে দুই ধরনের সতর্কবার্তা দেয়া রয়েছে। একটি হচ্ছে সাবধানতা, আরেকটি হলো সতর্কতা অবলম্বন। নয়টি দেশ ভ্রমণে সতর্কতা আর ৩৮টি দেশ ভ্রমণে সাবধানতা অবলম্বন করতে বলা হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকদের। নয়টি দেশের তালিকায় রয়েছে বাংলাদেশ। এদিকে অস্ট্রেলিয়া বিশ্বের ১১টি দেশে তাদের নাগরিকদের ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা জারি করলেও ওই তালিকায় বাংলাদেশের নাম নেই। আর অস্ট্রেলিয়া বাংলাদেশের জন্য যে ধরনের ভ্রমণ সতর্কবার্তা দিয়ে রেখেছে, একই ধরনের সতর্কবার্তা রয়েছে আরও ৬০টি দেশের ওপর। অস্ট্রেলিয়া সরকারের পররাষ্ট্র বিভাগ থেকে প্রতিদিনই তাদের নাগরিকদের জন্য ভ্রমণ উপদেশ তথ্য হালনাগাদ করা হয়। বিশ্বের ১৯৩ দেশে ভ্রমণের বিষয়ে তাদের নাগরিকদের সতর্ক করে থাকে অস্ট্রেলিয়া। অস্ট্রেলিয়ার পররাষ্ট্র বিভাগের দেয়া তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা যায়, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ভ্রমণের বিষয়ে চার ধরনের সতর্কবার্তা জারি করেছে দেশটি। চার ধরনের সতর্কবার্তার মধ্যে রয়েছেÑ ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা, ভ্রমণের আগে পুনর্বিবেচনা করা, ভ্রমণে সর্বোচ্চ সতর্কতা ও ভ্রমণে সাধারণ সতর্কতা। বাংলাদেশে ভ্রমণের ক্ষেত্রে ‘ভ্রমণে সর্বোচ্চ সতকর্তা’ গ্রহণের কথা বলা হয়েছে। এটা একটি মধ্যম ধরনের সতর্কবার্তা। বিশ্বের ১১টি দেশে অস্ট্রেলিয়া তাদের নাগরিকদের ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। এসব দেশের মধ্যে রয়েছেÑ আফগানিস্তান, সেন্ট্রাল আফ্রিকান রিপাবলিক, চাদ, ইরাক, লিবিয়া, মালি, নাইজার, সোমালিয়া, দক্ষিণ সুদান, সিরিয়া ও ইয়েমেন। অস্ট্রেলিয়ান নাগরিকদের ভ্রমণের আগে পুনর্বিবেচনা করার জন্য বলেছে এমন দেশের মধ্যে রয়েছেÑ লেবানন, মৌরতানিয়া, ইরিত্রিয়া, তিউনিসিয়া, সৌদি আরব, আলজিরিয়া, পাকিস্তান, ডেমোক্র্যাটিক রিপাবলিক অব কোরিয়া, মিসর ইত্যাদি দেশ। তবে বাংলাদেশ এই তালিকা থেকেও এগিয়ে রয়েছে। কানাডা প্রায় ২৭টি দেশে তাদের নাগরিকদের ভ্রমণের ক্ষেত্রে উচ্চতর সতর্কবার্তা জারি করেছে। বাংলাদেশে কানাডার যে ধরনের সতর্কবার্তা রয়েছে, একই ধরনের সতর্কবার্তা থাইল্যান্ড, ফিলিপিন্স, কম্বোডিয়া, সংযুক্ত আরব আমিরাত, ভিয়েতনাম, ইউক্রেন, নেপাল, ইন্দোনেশিয়া ইত্যাদি দেশের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। যুক্তরাজ্যের বৈদেশিক ও কমনওয়েলথ অফিস থেকে তাদের নাগরিকদের জন্য ভ্রমণ সতর্কবার্তা জারি করা হয়। তাদের ওয়েবসাইট পর্যালোচনা করে দেখা যায়, সর্বশেষ ২২ ফেব্রুয়ারি হালনাগাদ করা ভ্রমণ সতর্কবার্তায় বাংলাদেশ ভ্রমণে তাদের নাগরিকদের সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করতে বলা হয়েছে। বিশেষ করে পার্বত্য চট্টগ্রাম এলাকায় ভ্রমণে বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করতে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। যুক্তরাজ্যের নাগরিকদের ভারতের বিভিন্ন এলাকায় ভ্রমণেও সতর্কবার্তা রয়েছে। বিশেষ করে নেপাল সীমান্ত এলাকা, জম্মু ও কাশ্মীর, লাদাখ, মনিপুরের ইম্ফল ভ্রমণে সতর্ক থাকতে বলেছে। এছাড়া রাজনৈতিক সভা-সমাবেশ এড়িয়ে যেতে বলা হয়েছে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, দুই বিদেশী নাগরিক হত্যার পর থেকেই কয়েকটি দেশ থেকে ভ্রমণ সতর্কবার্তা জারি করে। এসব সতর্কবার্তাকে সরকার গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছে। তবে এ ধরনের সতর্কবার্তা সাধারণ ঘটনা বলেও মনে করে সরকার। কেননা বিভিন্ন সময়েই এ ধরনের সতর্কবার্তা জারির মাধ্যমে নিজ নিজ দেশের নাগরিকদের সতর্ক করা হয়। ৫ জানুয়ারি নির্বাচনপরবর্তী সময়েও বিভিন্ন দেশের পক্ষ থেকে ভ্রমণ সতর্কবার্তা জারি করা হয়েছিল। তবে দুই বিদেশী নাগরিক হত্যার প্রেক্ষিতে কয়েকটি দেশ তাদের নাগরিকদের জন্য প্রতিনিয়ত ভ্রমণ সতর্কবার্তা হালনাগাদ করে আসছে।
×