ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

মুক্তির উৎসব

মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় সমৃদ্ধ দেশ গড়ার শপথ হাজার হাজার তরুণ শিক্ষার্থীর

প্রকাশিত: ০৫:৩৩, ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৬

 মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় সমৃদ্ধ দেশ গড়ার শপথ হাজার  হাজার তরুণ শিক্ষার্থীর

বিশ্ববিদ্যালয় রিপোর্টার ॥ যাদের আত্মদান ও বীরত্বপূর্ণ সংগ্রামের ফলে দেশ স্বাধীন হয়েছে তাদের স্মৃতি আমরা বহন করব প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে। মুক্তিযুদ্ধে যে অগণিত নারী নির্যাতিত হয়েছেন আমরা তাদের সম্মান জানাই। তাদের ত্যাগ ও দুঃখ ঘুচিয়ে দিতে আমরা তাদের পাশে থাকব। একই সঙ্গে সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রে আজও যে নারী ও শিশু নির্যাতন ঘটছে তা আমরা রুখে দাঁড়াব। একাত্তরে গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের জন্য দায়ী ব্যক্তিদের বিচার ন্যায় ও সত্যের জয় ঘোষণা করছে। এই অর্জন স্বার্থক করতে আমরা সবসময় প্রস্তুত থাকব। বিজ্ঞানমনস্ক, যুক্তিবাদী মানবিক সমাজ গড়ে তুলতে আমরা দৃঢ়ভাবে কাজ করে যাব। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উন্নত ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয় নিয়ে শুক্রবার সকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে হাজার হাজার তরুণ শিক্ষার্থী সামনে হাত মুঠো করে দাঁড়িয়ে এই শপথ নেন। মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের আয়োজনে মুক্তির উৎসবে তরুণ শিক্ষার্থীদের এই শপথবাক্য পাঠ করান মুক্তিযোদ্ধা মোঃ নুরুল ইসলাম। এর আগে পতাকা উত্তোলন, জাতীয় সঙ্গীত ও দেশের গানের মাধ্যমে উৎসবের শুরু হয়। এরপরই নৃত্য নিয়ে মঞ্চে আসে ধ্রুপদ কলাকেন্দ্র। উৎসবে সাংস্কৃতিক উপস্থাপনায় অংশ নেয় ওয়াইডব্লিউসিএ স্কুল এ্যান্ড কলেজ, আবদুল্লাহ মেমোরিয়াল হাইস্কুল, বিএন কলেজ এবং ইউসেপ স্কুলের শিক্ষার্থীরা। রফিকুল ইসলামের উপস্থাপনায় অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি ডাঃ সারওয়ার আলী। শিশুদের উদ্দেশে দিকনির্দেশনা ও অনুপ্রেরণামূলক বক্তব্য রাখেন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়কমন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক, জনপ্রিয় লেখক ও শিক্ষাবিদ অধ্যাপক ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল, মফিদুল হক প্রমুখ। সঙ্গীত উপস্থাপনা করেন বধ্যভূমির সন্তানদল, সঙ্গীতশিল্পী বুলবুল ইসলাম, ফেরদৌস আরা, বাপ্পা মজুমদার এবং মমতাজ। সবশেষে র‌্যাফেল ড্র ও পুরস্কার বিতরণের মধ্য দিয়ে শেষ হয় মুক্তির উৎসব ২০১৬। তরুণ শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে অধ্যাপক ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল বলেন, মুক্তিযুদ্ধের সময় সাত কোটি মানুষের মধ্যে ত্রিশ লাখ মানুষকে মেরে ফেলা হয়েছিল, অর্থাৎ প্রতি পঁচিশ জনে একজন মানুষকে মেরে ফেলা হয়েছিল। আবার এক কোটি মানুষকে শরণার্থী হিসেবে পাশের দেশে আশ্রয় নিতে হয়েছিল অর্থাৎ প্রতি সাতজনে একজন মানুষ শরণার্থী হয়েছিলেন। এখন বাংলাদেশ সারা পৃথিবীর বুকে মাথা তুলে দাঁড়াচ্ছে। এই দেশের চার কোটি শিশু স্কুলে যায়। অথচ অস্ট্রেলিয়ার মোট জনসংখ্যা মাত্র দুই কোটি। তোমরা যদি ঠিকমতো পড়ালেখা করো, তাহলে অস্ট্রেলিয়ার মতো দেশকে খুব সহজেই টপকিয়ে যেতে পারবে। তোমরা যদি মুক্তিযুদ্ধকে ভালবাস, দেশকে ভালবাস, তাহলে মন দিয়ে পড়ালেখা করতে হবে। তিনি আরও বলেন, দেশের ইতিহাস দেখলে তোমরা জানতে পারবে, এই দেশ তখনই এগিয়ে গেছে যখন মুক্তিযুদ্ধকে গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। যখন মুক্তিযুদ্ধকে গুরুত্ব দেয়া হয়নি তখন দেশ এগিয়ে যায়নি। এখন আমরা মুক্তিযুদ্ধকে বুকের মাঝে গ্রহণ করেছি। একটা সময় ছিল যখন শিক্ষার্থীরা আমার কাছে এসে রাজাকারদের মন্ত্রী হওয়া এবং এদের গাড়িতে জাতীয় পতাকা ওঠার বিষয়ে প্রশ্ন করত। আমি মাথা নিচু করে থাকতাম। আমি তাদের প্রশ্নের উত্তর দিতে পারিনি। এখন দেশে একটা একটা করে যুদ্ধাপরাধীর বিচার হচ্ছে। আমার মাথা এখন কত উঁচু। এখন আমি তাদের উত্তর দেই, যত দেরিতেই হোক। আমার দেশে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হচ্ছে, দেশকে পরিষ্কার করে দেয়া হচ্ছে তোমাদের জন্য। এই বাংলাদেশ সুন্দর হওয়ার একটাই কারণ, মুক্তিযুদ্ধ। মুক্তিযুদ্ধ বিষয়কমন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেন, মুক্তিযুদ্ধে হেরে যাওয়া শক্তি এখনও সক্রিয়। সেই হায়েনারা এখনও থেমে নেই। তারা আমাদের পবিত্র ধর্ম ইসলামকে ব্যবহার করে। তারা বলে, নারীশিশুর লেখাপড়া করার দরকার নেই। তারা দেশের অগ্রগতি চায় না। তারা বাংলাদেশকে সেই পাকিস্তান বানানোর চেষ্টা করে। যারা পাকিস্তান বানাতে চায় তাদের বিরুদ্ধে আমরা সব সময় সোচ্চার থাকব, প্রস্তুত থাকব। দরকার হলে আবারও যুদ্ধ করব। কিন্তু যুদ্ধের পরাজিত শক্তিকে বিজয়ী হতে দেয়া হবে না। মুক্তিযুদ্ধের সময় যেমন পতন হয়েছিল সে রকম পতন হবে। এজন্য তোমাদের দায়িত্ব গ্রহণ করে নেতৃত্ব দিতে হবে।
×