ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

হাসপাতালে চিকিৎসা ও স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে কঠোর নির্দেশ

প্রকাশিত: ০৫:২৭, ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৬

হাসপাতালে চিকিৎসা ও স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে কঠোর নির্দেশ

নিখিল মানখিন ॥ সরকারী হাসপাতাল ও স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানসমূহের জন্য কঠোর নির্দেশনা জারি করেছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। সরকারী হাসপাতালে সাধারণ মানুষের চিকিৎসা ও স্বাস্থ্যসেবা প্রাপ্তিতে সহায়ক ভূমিকা রাখতেই এ নির্দেশনা। এতে বলা হয়েছেÑ বিনামূল্যে সাধারণ মানুষের জন্য দেয়া সরকারী চিকিৎসা ও স্বাস্থ্যসেবা শতভাগ কার্যকর করতে হবে। কয়েক স্তরে মনিটরিং কার্যক্রম চালানো হবে। দায়িত্বপালনে অবহেলাকারীদের ছাড় দেয়া যাবে না। মেডিক্যাল উপকরণে পুরো সদ্ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। রোগীদের হয়রানি ও দুর্ভোগ কমাতে হবে। মন্ত্রণালয়ের এ সংক্রান্ত পরিপত্রে বলা হয়েছেÑ স্বাস্থ্যসংক্রান্ত তথ্য প্রাপ্তি জনগণের অধিকার। সকল স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানে সিটিজেন চার্টার দৃশ্যমান করতে হবে। প্রতিষ্ঠান কর্তৃক প্রদত্ত সেবা, সরবরাহকৃত ওষুধ এবং রোগ নির্ণায়ক পরীক্ষাসহ সেবার মূল্যসংক্রান্ত তথ্যাদি রোগী ও স্বজনদের সুবিধাজনক স্থানে প্রদর্শন করতে হবে। স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানে ডাক্তারসহ সকল কর্মকর্তা-কর্মচারীকে বাধ্যতামূলকভাবে নির্ধারিত ইউনিফর্ম পরিধান করতে হবে। তাদের পরিচয়পত্র প্রদান এবং দৃশ্যমানভাবে ব্যবহারের ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। হাসপাতালসহ স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানে বহির্বিভাগ ও জরুরী বিভাগে ওয়ার্ড বয়/বুয়াসহ তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারীদের দায়িত্ব আকস্মিক ও নিয়মিতভাবে পুনর্বণ্টন করতে হবে। একই দায়িত্বে দীর্ঘকাল কোন কর্মচারী অবস্থান করে যেন কোন অসাধু চক্রের অংশে পরিণত না হয় তা নিশ্চিত করতে হবে। দালাল চক্রের সঙ্গে কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের যোগসাজশের তথ্যাদি প্রমাণিত হলে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। পরিপত্রে আরও বলা হয়েছেÑ তত্ত্বাবধানকারী কর্মকর্তারা দৃশ্যমানভাবে তার প্রতিষ্ঠানে নিয়মিত মনিটর এবং কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মাধ্যমে দালাল প্রতিরোধে নিজস্ব কর্মপন্থা ও কৌশল প্রণয়ন করবেন। প্রয়োজনে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। রোগীদের হাসপাতালের নির্ধারিত কর্মকর্তা-কর্মচারী ছাড়া বহিরাগত/দালালের সঙ্গে যোগাযোগ কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে সব সময় পরামর্শ দিতে হবে। প্রয়োজনে মাঝে মধ্যে এ বিষয়ে মাইকিং করা যেতে পারে। রোগী ও সেবাপ্রত্যাশী নাগরিকদের সঙ্গে বহিরাগত ব্যক্তির যোগাযোগের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের লিখিত নির্দেশনা প্রতিষ্ঠানের দৃশ্যমান স্থানে স্থাপন করতে হবে। এছাড়া জনগণের মনোযোগ আকর্ষণের জন্য সরকারী স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানে বিনা রশিদে অর্থের কোন লেনদেন করা যাবে না মর্মে নির্দেশনাও বিভিন্ন জায়গায় টাঙ্গিয়ে রাখতে হবে। সেবা গ্রহণে অভিযোগের ক্ষেত্রে এসএমএস করার বিষয়ে স্পষ্ট নির্দেশনা প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন জায়গায় দৃশ্যমান রাখতে হবে। জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে হাসপাতাল ব্যবস্থাপনা কমিটির সভায় দালাল প্রতিরোধে নাগরিকদের উদ্বুদ্ধকরণসহ সচেতনতামূলক কার্যক্রম গ্রহণ অব্যাহত রাখতে হবে। আর হাসপাতাল, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের তত্ত্বাবধায়ক/ব্যবস্থাপক তথা কর্মকর্তারা তাদের আওতাধীন স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানে দালাল প্রতিরোধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য দায়িত্ব পালন করবেন বলে পরিপত্রে বলা হয়েছে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও অধিদফতরের একাধিক দায়িত্বশীল কর্মকর্তা জনকণ্ঠকে জানান, সম্প্রতি হাসপাতালগুলোতে অসাধু দালাল চক্রের অপতৎপরতা আশঙ্কাজনকহারে বৃদ্ধি পেয়েছে। রাজধানীসহ সারাদেশে সরকারীভাবে ন্যূনতম খরচে চিকিৎসার সুযোগ রয়েছে। রক্ত পরীক্ষা থেকে শুরু করে বিভিন্ন জটিল রোগব্যাধি সঠিকভাবে নির্ণয়ের জন্য এমআরআই, সিটিস্ক্যান, আল্ট্রাসনোগ্রাম, এক্স-রেসহ আধুনিক যন্ত্রপাতি রয়েছে। কিন্তু সাধারণ রোগীরা এর সুফল পাচ্ছেন না। সরকার সাধারণ মানুষের দোরগোড়ায় স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দিতে আন্তরিক চেষ্টা চালালেও দালাল চক্রের অপতৎপরতায় তা ব্যাহত হচ্ছে বলে জানান তারা। অপরদিকে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল অব বাংলাদেশ (টিআইবি) তাদের বিভিন্ন প্রতিবেদনে হাসপাতালে এসে দালাল চক্রের খপ্পরে পড়ে সাধারণ মানুষ চরম হয়রানির শিকার হচ্ছে বলে উল্লেখ করেছে। দালাল চক্রের কেউ কেউ সুযোগ বুঝে ডাক্তার, কর্মকর্তা ও কর্মচারী পরিচয় দিয়ে অপকর্ম করছেন। ইউনিফর্ম পরিধান না করায় সাধারণ মানুষ কারও পরিচয় সম্পর্কে নিশ্চিত হতে পারছেন না বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়। অভিযোগ রয়েছে, সরকারী স্বাস্থ্য ও চিকিৎসাসেবার সঙ্গে সম্পৃক্তদের দায়িত্ব পালনে অবহেলার বিষয়টি দীর্ঘদিন ধরে বেশ আলোচিত হয়ে আসছে। বর্তমান সরকারও এ সমালোচনা থেকে রেহাই পাচ্ছে না। অভিযোগ রয়েছে, সরকারী চিকিৎসক ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কর্মস্থলে অনুপস্থিতির হার ফের বেড়েছে। তাদের কেউ কেউ কর্মস্থলে গিয়ে উপস্থিতি খাতায় স্বাক্ষর দিয়েই চলে যান। অনেকে আসেন দিনের শেষ বেলায়। থানা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গিয়ে চিকিৎসকদের দেখা পায় না রোগীরা। তবে নিজেদের আবাসিক কক্ষে গড়ে তোলা অবৈধ চেম্বারে অফিস সময়ে চড়া ফি নিয়ে রোগী দেখতে ভোলেন না চিকিৎসকরা। কর্মস্থলে উপস্থিতি নিশ্চিত করার লক্ষ্যে গঠিত পরিদর্শন টিমের কার্যক্রম নেই বললেই চলে। থানা পর্যায়ে টিমের সদস্যরা যান না। শুধু তাই নয়, থানা পর্যায়ে সকল রোগীকে বিনা টাকায় চিকিৎসা ও ওষুধ দেয়া হয় না। এক্ষেত্রে চিকিৎসকদের অনুকম্প ছাড়া ফ্রি চিকিৎসা ও ওষুধ পাওয়া সম্ভব হয় না। চিকিৎসকরা যে রোগীকে নির্বাচন করেন, তাকেই ওই সুবিধা দেয়া হয়। এ কারণে থানা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন অনেক রোগীকে সাধারণ ওষুধও বাইরে থেকে কিনতে হয়। আর হাসপাতালে কি কি ওষুধ বিনা টাকায় দেয়া হয়ে থাকে, রোগী ও তাদের অভিভাবকদের তা জানার সুযোগ দেয়া হয় না। এতে নিরুপায় হয়ে রোগী বাঁচানোর তাগিদে বাইরে থেকে ওষুধ কিনে আনেন রোগীর লোকজন। বর্তমান সরকারও স্বাস্থ্য সেক্টরকে দুর্নীতি ও দলীয় লোকজনের অহেতুক হস্তক্ষেপমুক্ত রাখতে পারেনি।
×