ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

মাশরাফিদের জয় ৫১ রানে

বাংলাদেশ সহজেই হারাল আমিরাতকে

প্রকাশিত: ০৫:২৫, ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৬

বাংলাদেশ সহজেই হারাল  আমিরাতকে

মিথুন আশরাফ ॥ সংযুক্ত আরব আমিরাত বোলাররা দুর্দান্ত বোলিং করলেন। বাংলাদেশ ব্যাটসম্যানদের ভোগালেন। কিন্তু বাংলাদেশ বোলাররা সেই দুর্দান্ত রূপটাকে এতটাই উপরে নিয়ে গেলেন যে আরব আমিরাতের ইনিংস তাসের ঘরের মতো ভেঙ্গে গেল। ব্যাটসম্যানরা মুহূর্তেই ছন্নছাড়া হয়ে পড়লেন। তাতে বাংলাদেশের করা ১৩৩ রান অতিক্রম করতে গিয়ে ৮২ রানেই অলআউট হয়ে গেল আমিরাত। ৫১ রানে জিতে এবার এশিয়া কাপ টি২০তে প্রথম জয়ও তুলে নিল বাংলাদেশ। বাংলাদেশের সামনে পাত্তাই পেল না আরব আমিরাত। মিঠুনের ৪৭, মাহমুদুল্লাহ রিয়াদের অপরাজিত ৩৬, সৌম্য সরকারের ২১ রানে ৮ উইকেট হারিয়ে ১৩৩ রান করে বাংলাদেশ। নাভিদ ও আমজাদ দুটি করে উইকেট নেন। জবাবে ১৭.৪ ওভারে ৮২ রান করতেই অলআউট হয়ে যায় আরব আমিরাত। ব্যাট হাতে মুহাম্মদ উসমান সর্বোচ্চ ৩০ রান করতে পারেন। বাংলাদেশ খুব বেশি রান স্কোরবোর্ডে জমা করতে পারেনি। মনে হচ্ছিল, শ্রীলঙ্কা যেমন ১২৯ রান করে ভুগেছে, জয়ের কাছাকাছি চলে গিয়েছিল আরব আমিরাত, সেই রকম কিছু হবে। কিন্তু এত যে খারাপ অবস্থা হবে আরব আমিরাতের তা ভাবাই যায়নি! টপাটপ শুধু উইকেটই পড়তে থাকে। দ্বিতীয় উইকেটে রোহান ও শাহজাদ মিলে যে ২৩ রানের জুটি গড়েন, সেটিই বড় জুটি হয়ে থাকে। জিততে হলে ভাল পারফরমারের সঙ্গে জুটিরও দরকার লাগে। কিন্তু আরব আমিরাত কোনটিই দেখাতে পারল না। মুহাম্মদ উসমান ৩০ রান না করলে ব্যবধান আরও বড় হতো। বাকিদের মধ্যে রোহান (১৮) ও মোহাম্মদ শাহজাদই (১২) শুধু দুই অঙ্কের ঘরে পৌঁছতে পারলেন। শ্রীলঙ্কার ব্যাটসম্যানরা যেমন আগেরদিন আরব আমিরাতের বোলারদের সামনে ছন্নছাড়া হয়ে পড়েছিলেন, বাংলাদেশের মিঠুন, সৌম্য, সাব্বির, মুশফিক, সাকিবরাও একই পথের পথিক হয়েছেন। আরব আমিরাতের নাভিদ, আমজাদ, শাহজাদ, রোহানদের বোলিংয়ের সামনে জবুথবু হয়ে গেছেন বাংলাদেশ ব্যাটসম্যানরাও। ১৩৩ রানের বেশি করতেই পারল না বাংলাদেশ! আরব আমিরাতের বিপক্ষেই যদি এ অবস্থা হয়, তাহলে শক্তিশালী দলের বিপক্ষে কী হবে। সেই ভাবনা হয়ত ঢুকিয়ে দিয়েছে আরব আমিরাত। বোলিং দাপট দেখিয়ে ম্যাচ জিতেছে ঠিকই বাংলাদেশ, কিন্তু শক্তিশালী দলের বিপক্ষে এভাবে খেললে কি জেতা সম্ভব? সেই প্রশ্নও জাগিয়ে দিয়েছে। টস জিতে আরব আমিরাত অধিনায়ক আমজাদ জাভেদ ফিল্ডিং নিলেন। আগেরদিন যে শ্রীলঙ্কাকে ভোগাতে পেরেছে। শিশির থাকবে। আগে বোলাররা সুবিধা করতে পারবে। যদি বাংলাদেশকে কম রানে বেঁধে রাখা যায়, তাহলে ম্যাচ জয়ও সম্ভব। সেই আশা থেকেই ফিল্ডিং নেয়া। তাতে বাংলাদেশের ইনিংসে সফলই বলতে হয় আরব আমিরাতকে। শুরুতে সৌম্য সরকার (২১), পরে মোহাম্মদ মিঠুন (৪৭) ও শেষে মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ (৩৬) যদি ব্যাট হাতে কিছু করে দেখাতে না পারতেন, তাহলে আরও কম রান বাংলাদেশের স্কোরবোর্ডে যোগ হতো। মিঠুন যেন এদিন রোহিত শর্মা হয়ে গেলেন। সাকিবের হাত থেকে ‘নতুন জীবন’ পেয়ে রোহিত যেমন ম্যাচই নিয়ন্ত্রণে নিয়ে নেন তেমনি ১০ রানে ‘নতুন জীবন’ পেয়ে ৪৭ রান করলেন মিঠুন। আউট হওয়ার হাত থেকে বাঁচার পর থেকেই চার ছক্কা হাঁকাতে থাকেন মিঠুন। রোহানের ছোড়া বলটি আগ বেড়ে খেলতে গিয়ে চটজলদি রান নেয়ার ভাবনায় অহেতুক স্টাম্পিং হলেন মিঠুন। ততক্ষণে অবশ্য ১২ ওভার চলাকালেই ৮১ রানে পৌঁছে যায় বাংলাদেশ। মিঠুনের আগে সৌম্য সরকারও দুর্দান্ত ব্যাটিং করছিলেন। কিন্তু মিঠুনের সঙ্গে উদ্বোধনী জুটিতে ৪৬ রানের জুটি গড়ে ২১ রান করে আউট হয়ে যান সৌম্য। ওয়ানডাউনে এখন সবচেয়ে বড় ভরসা হয়ে উঠেছেন সাব্বির রহমান রুম্মন। কিন্তু আরব আমিরাতের বিপক্ষে ৬ রানের বেশি করতে পারেননি। সৌম্য আউট হওয়ার ২৬ রান পরে সাব্বিরও সাজঘরে ফেরেন। এরপর যখন মিঠুন আউট হন তখনও মনে করা হয় স্কোরবোর্ডে ভাল রানই যোগ হবে। বিপত্তির দেখা মিলে একটু পরই। ২ রান যোগ হতেই ৮৩ রানে গিয়ে ক্যাচ আউট হয়ে যান মুশফিকুর রহীম (৪)। তখন মনে হয় বাংলাদেশ বিপাকে পড়ে গেল নাকি! আবার এও মনে হয়, শ্রীলঙ্কার বিপক্ষেও বোলিংয়ে এমনই নৈপুণ্য দেখিয়েছে আরব আমিরাত। ৯৮ রানে শ্রীলঙ্কার চার উইকেট তুলে নিয়েছিল আইসিসির সহযোগী দলটি। এর পর লঙ্কানরা ১২৯ রান করে। ম্যাচও জিতে। তবে ভুগতে হয় লঙ্কানদের। আরব আমিরাত যে ব্যাটিংয়ে খুব শক্তিশালী নয় লঙ্কানদের বিপক্ষে ম্যাচেই তা বোঝা যায়। তাই বলে বাংলাদেশেরও কি ভুগতে হবে! মাহমুদুল্লাহ আর সাকিব মিলে সেই ভীতি খানিক দূর করেন। কিন্তু সাকিবের যে কি হলো। আমজাদ জাভেদের ছোড়া বলে ব্যাটই লাগাতে পারলেন না সাকিব! ১১২ রানের সময় ১৩ রান করে বোল্ড হয়ে গেলেন। ১৮ ওভারের দ্বিতীয় বলে সাকিব আউটের পর ইমরুল কায়েসের পরিবর্তে এদিন নামা নুরুল হাসান সোহানও তৃতীয় বলেই সাজঘরে ফিরলেন। হ্যাটট্রিক করার সুযোগ ধরা দিল আমজাদের সামনে। কিন্তু তা করতে পারলেন না। আবারও রানের চাকা সচল হওয়া বাংলাদেশের ইনিংসে লাগাম টেনে ঠিকই ধরলেন আমজাদ। এর পর মাশরাফি (০) ও তাসকিনের (১) উইকেটটি হারায় বাংলাদেশ। তবে মাহমুদুল্লাহ যে অপরাজিত ৩৬ রানের দুর্দান্ত একটি ইনিংস খেলে দেন, সেটিতেই বাংলাদেশ ১৩০ রানের উপরে চলে যায়। এ রানই জেতার জন্য যথেষ্ট হয়ে দাঁড়ায়। ২ উইকেট করে নেয়া মাহমুদুল্লাহ, হ্যাটট্রিকের সুযোগ তৈরি করা মুস্তাফিজ, সাকিব ও মাশরাফি যে আরব আমিরাতের ইনিংসে মুহূর্তেই ধস নামিয়ে দেন। তাতে সহজ জয়ও তুলে নেয় বাংলাদেশ।
×