ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

আওয়ামী লীগ সময় বেঁধে দিয়েছে প্রত্যাহারের, বিএনপি এখনও চুপ

স্বতন্ত্র নামে বিদ্রোহী প্রার্থীর ছড়াছড়ি দুই বড় দলেই

প্রকাশিত: ০৫:২৪, ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৬

স্বতন্ত্র নামে বিদ্রোহী প্রার্থীর ছড়াছড়ি দুই বড় দলেই

স্টাফ রিপোর্টার ॥ প্রথম দফায় ইউপি নির্বাচনে বিদ্রোহী প্রার্থী নিয়ে বিপাকে পড়েছে বড় রাজনৈতিক দল বিশেষ করে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও বিএনপি। প্রথম দফায় নির্বাচনের জন্য ১ হাজার ৬শ’র বেশি প্রার্থী স্বতন্ত্র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে। এর বেশিরভাগই দু’দলের বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে পরিচিত। দল থেকে মনোনয়ন না পেয়ে স্বতন্ত্র হিসেবে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে। তবে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে এসব বিদ্রোহীর মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের জন্য কড়া নির্দেশনা দেয়া হলেও বিদ্রোহী প্রার্থী নিয়ে বিএনপি এখনও চুপ রয়েছে। জানা গেছে, আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী আছে প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ ইউপিতে। এসব বিদ্রোহী প্রার্থীর ২ মার্চে মানোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ দিনের মধ্যে প্রত্যাহারের জন্য আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে নির্দেশনা রয়েছে। এদিকে বিএনপি বিদ্রোহী প্রার্থীদের বিষয়ে এখনও চুপ থাকলেও তারা মূলত সোচ্চার রয়েছে নির্বাচন সুষ্ঠু হওয়া নিয়ে। এনিয়ে একাধিকবার তারা নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ করছে। রিজভী বলেন, সরকার নির্বাচন কমিশনের যোগসাযোশে পাতানো নির্বাচনের চেষ্টা করছে। একই সঙ্গে তিনি উল্লেখ করেন বিএনপি প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র জমাদানে বাধা দেয়ার বিরুদ্ধে বার বার অভিযোগ করা হলেও এখন পর্যন্ত কমিশন থেকে কোন ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। ফলে এ নির্বাচন সুষ্ঠু হওয়া নিয়ে দলের পক্ষ থেকে আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে। প্রথম দফায় নির্বাচনে সাড়ে তিন হাজারের বেশি চেয়ারম্যান প্রার্থী তাদের মনোনয়নপত্র জমা দেয়। গত ২৪ ও ২৫ ফেব্রুয়ারিতে বাছাইয়ে শতাধিক প্রার্থীর মনোনয়নপত্র বাতিল করে দেয়া হয়েছে। তবে বাতিল হওয়া প্রার্থীর মধ্যে বিএনপি ও স্বতন্ত্র প্রার্থী রয়েছে বেশি। এর বাইরে কয়েকটি ইউপিতে আওয়ামী লীগের প্রার্থীর প্রার্থিতা বাতিল করা হয়েছে। ইসি জানিয়েছে মনোনয়নপত্র জমাদানের শেষ দিনে ২৫ ইউপিতে একক প্রার্থীর মনোনয়নপত্র জমা পড়ে। ফলে তারা প্রত্যাহারের শেষ দিনেই বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হতে যাচ্ছেন। পরে বাছাইকালে আরও ২৫ ইউপিতে প্রতিদ্বন্দ্বিতাশূন্য হয়ে পড়েছে। এসব ইউপিতে চেয়ারম্যান পদে আর কোন নির্বাচনের প্রয়োজন পড়বে না। বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় যারা নির্বাচিত হতে যাচ্ছেন তাদের সবাই ক্ষমতাসীন দলের। বিএনপির পক্ষ থেকে আগেই অভিযোগ করা হয়েছে বিএনপির প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র জমাদানে বাধার দেয়া হয়েছে। দলের যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী অভিযোগ করেন ক্ষমতাসীন দলের বাধার কারণে ৮৩ ইউপিতে তাদের প্রার্থীরা মনোনয়নপত্র জমা দিতে পারেনি। পরে বাছাইয়ের বাদ পড়ার কারণে সব মিলে বিএনপির এক শ’র বেশি ইউপিতে বিএনপির কোন প্রার্থী নেই। যাদের মনোনয়নপত্র জমাদানে বাধা দেয়া হয়েছে তাদের বিষয়ে ইসিতে অভিযোগ দায়েরের পরে এ বিষয়ে ইসি কোন ব্যবস্থা না নেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। কমিশনের পক্ষ থেকে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে যে, যারা বাধার কারণে মনোনয়নপত্র জমা দিতে পারেনি তাদের বিষয়ে ইসির করণীয় কিছু নেই। কারণ তাদের মনোনয়নপত্র জমা নেয়ার সুযোগ দিলে অনেকেই সুযোগ গ্রহণ করতে চাইবে। এ কারণে ইসির বৈঠকে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হলেও মনোনয়নপত্র জমা নেয়ার প্রস্তাবটি তা নাকচ করে দেয়া হয়। ফলে অভিযোগ থাকলেও বাধার কারণে যেসব প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দিতে পারেনি তাদের মনোনয়নপত্র গ্রহণের কোন সুযোগও নেই । প্রথম দফায় ১৬ রাজনৈতিক দল নির্বাচনে অংশ নিলেও মূলত নির্বাচন হবে বিএনপি ও আওয়ামী লীগের প্রার্থীদের মধ্যে। তবে উভয় দলের বিদ্রোহী প্রার্থী নির্বাচনে অংশ নেয়ায় নিজ দলের এসব প্রার্থীদেরও মোকাবেলা করতে হবে। বিদ্রোহী প্রার্থীদের অভিযোগ যোগ্য ও এলাকার জনগণের মধ্যে জনপ্রিয় হওয়ার পরও দল থেকে তাদের মনোনয়ন দেয়া হয়নি। তৃণমূলের নেতারা অর্থের বিনিময়ে বিতর্কিত ব্যক্তিদের দলের প্রার্থী হিসেবে কেন্দ্রে নাম প্রস্তাব করছে। তাদের সুপারিশ কেন্দ্র গ্রহণ করে সে অনুযায়ী মনোনয়ন দেয়া হয়েছে। অথচ তাদের চেয়ে ভোটারদের কাছে জনপ্রিয় হওয়ার কারণে তারা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছে বলে জানান। বিদ্রোহী এসব প্রার্থী বলেন, নির্বাচন সুষ্ঠু হলে তাদের বিজয় লাভ করার সম্ভব হবে। তখন দলকে দেখিয়ে দিতে চাই তারা প্রার্থী নির্বাচনে কতটা ভুল করেছেন। প্রথম দফায় ৭৩৮ ইউপি নির্বাচন হবে আগামী ২২ মার্চ। ইতোমধ্যে প্রথম দফার নির্বাচনে রিটার্নিং কর্মকর্তা কর্তৃক মনোনয়নপত্র বাছাইয়ের কাজ সম্পন্ন করেছেন। ২ মার্চ প্রত্যাহারের দিন শেষ হলে প্রার্থীরা নির্বাচনী প্রচারের নেমে পড়বেন। দলীয় ভিত্তিতে এবারই প্রথম ইউপি ছয় দফায় ভোট গ্রহণের জন্য সময়সূচী নির্ধারণ করেছে ইসি। এদিকে প্রথম দফার পরে রাজনৈতিক দলগুলো দ্বিতীয় দফার জন্য প্রার্থী বাছাইয়ের কাজ শুরু করেছেন। দলীয় সূেেত্র জানা গেছে, ইউপি নির্বাচনে দ্বিতীয় দফায় রাজনৈতিক দলগুলোর প্রার্থী বাছাইয়ের কাজও প্রায় চূড়ান্ত করেছেন। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে দ্বিতীয় দফার জন্য সবগুলো ইউনিয়ন পরিষদের বাছাইয়ের কাজ সম্পন্ন হয়েছে। দু’একদিনের মধ্যে প্রার্থীদের প্রত্যয়নপত্র তুলে দেয়া হবে। বিএনপির পক্ষ থেকেও তৃণমূলের সুপারিশ অনুযায়ী দ্বিতীয় দফার জন্য প্রত্যয়নপত্র দেয়ার কাজ শুরু হয়েছে। জানা গেছে, তৃণমূল থেকে যাদের সুপারিশ করা হচ্ছে কেন্দ্র থেকে তাদের নামে প্রত্যয়নপত্র ইস্যু করা হচ্ছে। তৃণমূলের এ সুপারিশ কেন্দ্র থেকে খুব একটা হেরফের হচ্ছে না। শুধু মাত্র যেসব প্রার্থীর বিরুদ্ধে অভিযোগ পাওয়া গেছে সেসব প্রার্থীর ক্ষেত্রে যাচাই বাছাই করা হচ্ছে। বিএনপির প্রার্থী প্রত্যয়নের দায়িত্বে রয়েছে দলের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। ইসির তফসিল অনুযায়ী দ্বিতীয দফায় প্রার্থীদের আগামী ২ মার্চের মধ্যে মনোনয়নপত্র রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে দাখিল করতে হবে। ৫ ও ৬ মার্চ মনোনয়নপত্র যাচাই বাছাই করা হবে। ১৩ মার্চ প্রত্যাহার শেষে প্রার্থীরা প্রচারের নামবেন। ইতোমধ্যে প্রথম দফায় নির্বাচনের জন্য প্রার্থীদের যাচাই বাছাইয়ের কাজ সম্পন্ন হয়েছে। ২ মার্চ প্রত্যাহার শেষে শুরু করে প্রচারযুদ্ধ।
×