স্টাফ রিপোর্টার, চট্টগ্রাম অফিস ॥ ২০১১ সালের ১৩ আগস্টের কথা। ওইদিন মানিকগঞ্জ যাওয়ার পথে সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারান খ্যাতিমান চলচিত্র নির্মাতা তারেক মাসুদ। একই দুর্ঘটনায় মারা গেছেন প্রতিভাবান সাংবাদিক মিশুক মুনীর।
তবে এখন আর এভাবে সড়ক দুর্ঘটনায় অকালে প্রিয়জন হারাতে হবে না। ছোট্ট একটি যন্ত্র গাড়িতে সংযুক্ত করলেই অর্ধেকের বেশি সড়ক দুর্ঘটনা কমে আসবে।
‘ড্রাইভিং এ্যাটেইনশন’ নামে এ যন্ত্রটি আবিষ্কার করেছেন চট্টগ্রামস্থ ইউএসটিসি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। যেটি গাড়ি চলন্ত অবস্থায় ড্রাইভার একটু বেখেয়ালি অথবা ঘুমিয়ে পড়লেই গাড়ির স্টিয়ারিং বন্ধ করে দেবে।
যন্ত্রটির উদ্ভাবক ইউএসটিসি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আশফাক মোহাম্মদ শিবলী ও এসএম সাদিকুল ইসলাম বলেন, আমরা দেখেছি সড়ক দুর্ঘটনায় দেশে প্রতিনিয়ত কেউ না কেউ মারা যাচ্ছে। এর মধ্যে অধিকাংশ দুর্ঘটনা ঘটছে ড্রাইভারের বেখেয়ালে অথবা ড্রাইভার ঘুমিয়ে পড়ার কারণে। প্রিয়জন হারানোর এ বেদনা আমাদের ভাবিয়ে তোলে। আমরা দীর্ঘদিন প্রচেষ্টা চালিয়ে ‘ড্রাইভিং এ্যাটেইনশন’ যন্ত্রটি আবিষ্কার করেছি। যেটি স্টিয়ারিংয়ের সঙ্গে সংযুক্ত করলে ড্রাইভারের চোখে ঘুম আসা মাত্র গাড়িটির স্টিয়ারিং বন্ধ করে দেবে।
বৃহস্পতিবার চট্টগ্রাম এমএ আজিজ স্টেডিয়াম জিমনেশিয়াম মাঠে শুরু হয়েছে তিন দিনব্যাপী ডিজিটাল উদ্ভাবনী মেলা। মেলায় বিভিন্ন ব্যাংক, বীমা, সরকারী প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা তাদের উদ্ভাবনী যন্ত্রপাতি নিয়ে এসেছেন। এসব দেখতে আগ্রহী কিশোর-কিশোরীরা ভিড় করেছে স্টলগুলোতে। দর্শকদের নজর কাটছে সাদার্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ফয়সাল রহমান, বিজয় বণিক ও তৌহিদুল ইসলামের স্পাই রোবট। বাংলাদেশ কোরিয়া টেকনিক্যাল ট্রেইনিং সেন্টারের শিক্ষার্থীদের রেলগেট নিয়ন্ত্রক যন্ত্র, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক গেম।
স্পাই রোবট সম্পর্কে উদ্যোক্তারা জানান, ‘রানা প্লাজায় ধ্বংসস্তূপে আটকে পড়া মানুষের দুঃসহ স্মৃতি আমাদের ভাবিয়ে তোলে। তখন থেকে এমন রোবট বানানোর চেষ্টা করি। যেটি ধ্বংসস্তূপে গিয়ে উদ্ধার অভিযান এবং আটকা পড়া মানুষের কাছে খাদ্য-পানীয় পৌঁছে দিতে পারবে। অবশেষে আমরা সফল হয়েছি। মোবাইল নিয়ন্ত্রিত আমাদের স্পাই রোবটটি ধ্বংসস্তূপের ভেতরে যেখানে মানুষ যেতে পারে না সেখানে গিয়ে তথ্য সংগ্রহ করতে পারবে। ভিডিও সফটওয়ারের মাধ্যমে ধ্বংসস্তূপের ভেতরের দৃশ্য, আটকে পড়া মানুষদের চিত্র বাইরে পাঠাতে পারবে। শক্তিশালী প্রযুক্তি ব্যবহার করা গেলে এটি আটকে পড়া মানুষকে উদ্ধার করতেও সক্ষম।
প্রযুক্তি উদ্ভাবনে পিছিয়ে নেই স্কুলের শিক্ষার্থীরা। সেন্ট প্লাসিড স্কুলের কয়েকজন শিক্ষার্থী হাজির হয়েছেন ছোট্ট অথচ অনেক বড় উপকারী নিয়ন্ত্রক যন্ত্র নিয়ে। এ যন্ত্রের নাম দিয়েছে স্মার্ট ফোন কন্ট্রোল।
যন্ত্রটির অন্যতম উদ্যোক্তা সেন্ট প্ল্যাসিড স্কুলের নবম শ্রেণীর শিক্ষার্থী তারিক আমিন চৌধুরী জানায়, যন্ত্রটি দিয়ে মুঠোফোনের মাধ্যমে ঘরের দরজা বন্ধ ও খোলা, দূর থেকে বৈদ্যুতিক লাইট-ফ্যান বন্ধ করা যাবে।
প্রতিবছর জানুয়ারি মাসের শুরুতে ডিজিটাল উদ্ভাবনী মেলা শুরু হলেও এবার নির্ধারিত সময়ে মেলা আয়োজন করতে পারেনি চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন। নির্ধারিত সময়ের দুই মাস পর বৃহস্পতিবার বিকেলে মেলা শুরু হয়। তিন দিনব্যাপী এ মেলার উদ্বোধন করেন মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের ভারপ্রাপ্ত সচিব এমএন জিয়াউল আলম। মেলা শনিবার পর্যন্ত চলবে।