ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

অভিযান ব্যর্থ

পটুয়াখালীর ৩ উপজেলায় দিনে হাজার মণ জাটকা নিধন

প্রকাশিত: ০৩:৫২, ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৬

পটুয়াখালীর ৩ উপজেলায় দিনে হাজার মণ জাটকা নিধন

স্টাফ রিপোর্টার, গলাচিপা ॥ পটুয়াখালীর গলাচিপা, রাঙ্গাবালী ও দশমিনায় জাটকা নিধন ভয়াবহ আকার নিয়েছে। প্রতিদিন কমপক্ষে এক হাজার মণ জাটকা নিধন হচ্ছে এ তিন উপজেলায়। এলাকার প্রতিটি নদ-নদী ও সাগর দাপিয়ে বেড়াচ্ছে অন্তত ১০-১২ হাজার জেলে। জাটকা বেচাকেনার জন্য চর-দ্বীপগুলোতে গড়ে উঠেছে গ-ায়-গ-ায় সিন্ডিকেট। তারাই ঢাকার মোকামে ঝুড়ি ও প্যাকেটভর্তি করে জাটকা চালান দিচ্ছে। উপজেলা মৎস্য দফতর জাটকা নিধনের সত্যতা স্বীকার করলেও জানিয়েছে, পরিস্থিতি অতটা ভয়াবহ নয়। তবে দ্রুতগতির নৌযান ও অর্থ বরাদ্দসহ নানা কারণে জাটকা নিধন বন্ধে পুরোপুরি সফল হওয়া যাচ্ছে না। এদিকে প্রকৃত ইলিশ শিকারি জেলেরা অভিযোগ করেছে, অবাধ জাটকা নিধনের কারণে এ অঞ্চল ইলিশশূন্য হয়ে পড়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। ১ নবেম্বর থেকে ৩০ জুন পর্যন্ত জাটকা ধরা নিষিদ্ধ হলেও রাঙ্গাবালী, গলাচিপা ও দশমিনার কোথাও এ নিষেধাজ্ঞার তেমন ছায়া পড়েনি। রামনাবাদ, বুড়াগৌরাঙ্গ, ডিগ্রী, আগুনমুখা, তেঁতুলিয়া নদী থেকে শুরু করে সাগর পর্যন্ত সর্বত্র দাপিয়ে বেড়াচ্ছে জাটকা নিধনকারী জেলেরা। বিশেষ করে মৌডুবি, চরমোন্তাজ, চরআ-া, চরবিশ্বাস, চরকাজল, কোড়ালিয়া, রাঙ্গাবালী, বাহেরচর, বদনাতলী, চঙ্গারচর, হাজীরহাট, চরঘুনি, বাঁশবাড়িয়া, আউলিয়াপুর, মিটার পয়েন্ট, রণগোপালদীসহ আশপাশের কয়েকটি এলাকায় জাটকা নিধনকারী জেলের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। নদী-সাগরের কোথাও কোথাও এমন অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে যে, জেলেদের কারণে লঞ্চ-ট্রলারের যাতায়াত হুমকির মুখে পড়েছে। জেলেরা নদীর এ মাথা থেকে আরেক মাথা পর্যন্ত জাল টাঙিয়ে রাখছে। সূক্ষ্ম ফাঁসের জাল নিয়ে কম পুঁজির জেলেরাই জাটকা নিধনে বেশি এগিয়ে আছে। দুই-আড়াই ইঞ্চি সাইজের জাটকাও জালের ফাঁস গলিয়ে বেরিয়ে আসতে পারছে না। এ সমস্ত ক্ষুদ্র সাইজের জাটকা জেলেরা ‘চাপিলা’ বা ‘চাপলি’ নাম দিয়ে প্রকাশ্যে শহর-বন্দরে ভাগ দিয়ে বিক্রি করছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গলাচিপা, রাঙ্গাবালী ও দশমিনায় জাটকা বেচাকেনার জন্য গ-ায়-গ-ায় সিন্ডিকেট গড়ে উঠেছে। প্রতিটি সিন্ডিকেটের সঙ্গে প্রভাবশালী লোকজন জড়িত রয়েছে। তাদের সঙ্গে পুলিশ এবং মৎস্য বিভাগের সম্পর্ক রয়েছে। অভিযোগ উঠেছে, জাটকা নিধনকারী প্রতিটি জেলে নৌকা থেকে মাসিক চাঁদা তোলা হচ্ছে। যে কারণে গলাচিপা, রাঙ্গাবালী ও দশমিনায় জাটকা নিধন বন্ধ অভিযান এ যাবত তেমন সাফল্যের মুখ দেখেনি। অভিযানে নামার আগেই মোবাইল ফোনের সুবাদে জেলেদের কাছে তা পৌঁছে যাচ্ছে। কোন কোন সিন্ডিকেটের অধীনে এক-দেড় শ’ পর্যন্ত জেলে রয়েছে। অভাবের সুযোগ নিয়ে আগাম দাদন দিয়ে মানুষদের জাটকা নিধনে প্রলুব্ধ করা হচ্ছে। এ মুহূর্তে রাঙ্গাবালী, গলাচিপা ও দশমিনায় প্রতিদিন কমপক্ষে হাজার মণ জাটকা নিধন হচ্ছে। কয়েক জেলে ও ব্যবসায়ী জানিয়েছে, এরই মধ্যে যে জাটকা নিধন করা হয়েছে আগামী তিন থেকে ছয় মাসের মধ্যে তা কয়েক শ’ কোটি টাকার ইলিশে পরিণত হতো। জাটকা নিধন বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে গলাচিপা উপজেলার ভারপ্রাপ্ত মৎস্য কর্মকর্তা মোসলেমউদ্দিন খান জানান, তারা জাটকা নিধন বন্ধে আপ্রাণ চেষ্টা করছেন। যেখানে খবর পাচ্ছেন সেখানেই ছুটে যাচ্ছেন এবং মাঝেমধ্যেই জাটকা জব্দ করছেন। তবে মোবাইল ফোনে আগাম বার্তার মাধ্যমে জেলেরা অভিযানের খবর আগেভাগে পেয়ে যাওয়ায় অনেক অভিযান ব্যর্থ হচ্ছে বলে তিনি স্বীকার করেন। রাঙ্গাবালীর দায়িত্বপ্রাপ্ত উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা কামরুল ইসলাম জানিয়েছেন, জাটকা নিধন হচ্ছে। তবে পরিস্থিতি অতটা ভয়াবহ নয়। প্রধানত দ্রুতগতির যান্ত্রিক নৌযান, পিকআপ, প্রয়োজনীয় অর্থ ও লোকবলের অভাবে জাটকা নিধন বন্ধের অভিযান ব্যাহত হচ্ছে।
×