ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

ঢাকা-চট্টগ্রাম ও ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক এখন মাদক পাচারের নিরাপদ রুট

প্রকাশিত: ০৩:৫১, ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৬

ঢাকা-চট্টগ্রাম ও ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক এখন মাদক পাচারের নিরাপদ রুট

মোঃ খলিলুর রহমান, নারায়ণগঞ্জ থেকে ॥ ঢাকা-চট্টগ্রাম ও ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক এখন মাদকদ্রব্য পাচার ও বহন করার নিরাপদ রুটে পরিণত হয়েছে। প্রতিনিয়ত এ দু’টি রুট দিয়ে যাত্রীবাহী বাসসহ বিভিন্ন যানবাহনে করে মাদক ব্যবসায়ীরা বিভিন্ন ধরনের মাদক দ্রব্য রাজধানী ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জসহ দেশের সর্বত্র ছড়িয়ে দিচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে। মাদক সিন্ডিকেটের সদস্যরা যানবাহনের বিশেষ জায়গায় লুকিয়ে এ মাদকগুলো নির্ধারিত গন্তেব্যে পাঠাচ্ছে। গত তিন মাসের ব্যবধানে র‌্যাব-১১ এর সদস্যদের হাতে তিনটি ইয়াবা ট্যাবলেটের বড় চালান আটক হয়েছে। উদ্ধার হয়েছে ১ লাখ ৭১ হাজার ৩২৫ পিস ইয়াবা। আটক হয় ৬ জন। ফলে অভিজ্ঞ মহল এ নিয়ে চিন্তিত হয়ে পড়েছে। জানা যায়, সিলেট বিভাগের সিলেট, সুনামগঞ্জ, হবিগঞ্জ ও মৌলভীবাজার এবং বন্দরনগরী চট্টগ্রাম বিভাগের চট্টগ্রাম, কুমিল্লা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, ফেনী, খাগড়াছড়ি ও রাঙ্গামাটি ভারত সীমান্তবর্তী জেলা এবং বান্দরবান ও কক্সবাজার মায়ানমার (বার্মা) সীমান্তবর্তী জেলা। অভিযোগ রয়েছে, এ সব জেলাগুলো অতিক্রম করে বাংলাদেশে ঢুকে পড়ছে বিভিন্ন মাদক দ্রব্য। অভিযোগ রয়েছে, ঢাকা-চট্টগ্রাম ও ঢাকা-সিলেট রুটের চলাচলরত অত্যাধুনিক যাত্রীবাহী বাসসহ বিভিন্ন যানবাহন করে ভারত ও বার্মা সীমান্তবর্তী জেলাগুলো হতে বিভিন্ন ধরনের মাদক দ্রব্য আনা হচ্ছে। মাদক ব্যবসায়ীরা যাত্রীবেশে বাসে চড়ে মাদক দ্রব্য নিয়ে গন্তেব্যে পৌঁছে যাচ্ছে। জানা যায়, ঢাকা-চট্টগ্রাম ও ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের বিভিন্ন স্থানে রয়েছে পুলিশের বহু চেকপোস্ট। পুলিশ চেকপোস্ট বসিয়েও মাদক উদ্ধারে তেমন সাফল্য অর্জন করতে পারছে না বলেও অভিযোগ উঠেছে। ইদানীং সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ছে ইয়াবা ট্যাবলেট। গত তিন মাসের ব্যবধানে র‌্যাব-১১-এর সদস্যদের হাতে তিনটি ইয়াবা ট্যাবলেটের বড় চালান আটক হয়েছে। উদ্ধার হয়েছে ১ লাখ ৭১ হাজার ৩২৫ পিস ইয়াবা। আটক হয় ৬ জন। জব্দ করা হয়েছে ১টি কাভার্ডভ্যান ও ১টি কাঠ বোঝাই ট্রাক। জানা যায়, সড়ক পথে সবচেয়ে বেশি আসছে ইয়াবা ট্যাবলেট ও ভারতীয় ফেনসিডিল। এ ছাড়াও বিদেশী মদ, বিয়ার, গাঁজা ও হেরোইন ও নেশাজাতীয় ট্যাবলেটসহ বিভিন্ন মাদক দ্রব্য আনা হচ্ছে। সিন্ডিকেটের সদস্যরা মাদকগুলো যাত্রীবাহী বাস, প্রাইভেটকার, ট্রাক, কাভার্ডভ্যান, মাইক্রোবাসসহ বিভিন্ন যানবাহনে করে বিভিন্ন প্রকারের মাদক দেশের সর্বত্র ছড়িয়ে দিচ্ছে। এভাবে মাদক পাচার করে কোটিপতি বনে যাচ্ছে কিছু অসাধু লোক। অথচ মাদকের নীল ছোবলে ধ্বংস হচ্ছে গোটা যুবসমাজ। সর্বশেষ ২০ ফেব্রুয়ারি ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জের শিমরাইলে এলাকা থেকে র‌্যাব-১১’র সদস্যরা ১৪ হাজার ৫৫০ পিস ইয়াবা ট্যাবলেট উদ্ধার করেছে। এ সময় তারা এক বোতল হুইস্কি ও মাদক বিক্রির ১ লাখ ৪০ হাজার ৭৩২ টাকাও উদ্ধার করে। তাদের অভিযানে ইসমাইল হোসেন (৩২) ও জোনায়েদ বাগদাদী (১৯) নামে দুই মাদক বিক্রেতা গ্রেফতার হয়। এ সময় র‌্যাব-১১ সদর দফতর থেকে পাঠানো প্রেস বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে জানায়, আসামি মোঃ ইসমাইল নিয়মিত এই এলাকায় ইয়াবার খুচরা ও পাইকারি ব্যবসা করে আসছিল এবং মাসে সে প্রায়ই এরকম ৪-৫ বার বড় ধরনের ইয়াবার চালান নিয়ে এসে এখানে তার মাদক ব্যবসা অব্যাহত রেখেছিল। গত ১৭ ফেব্রুয়ারি ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ের কাঁচপুরের নয়াবাড়ি এলাকায় একটি কাভার্ডভ্যান থেকে র‌্যাব-১১’র সদস্যরা ৫৮ হাজার ৭৭৫ পিস ইয়াবা ট্যাবলেট উদ্ধার করে। এ সময় র‌্যাব সদস্যরা ওলি আহমেদ (৩৮) ও আব্দুল জলিল (৫৫) নামে দু’জনকে গ্রেফতার করে। ইয়াবাগুলো কাঁচপুরের এক ব্যক্তির নিকট তাদের পৌঁছে দেয়ার কথা ছিল। গত বছরের ২৬ নবেম্বর ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুমিল্লার দাউদকান্দির টোলপ্লাজা এলাকায় একটি কাঠ বোঝাই ট্রাক থেকে র‌্যাব-১১ সদস্যরা প্রায় দুই কোটি টাকা মূল্যের ৯৮ হাজার পিস ইয়াবা ট্যাবলেট উদ্ধার করে। এ সময় র‌্যাব সদস্যরা ঐ ট্রাকের চালক ইউসুফ (২৩) ও সহকারী চালক জাফর (২৫)কে গ্রেফতার করে। এছাড়াও র‌্যাব সদস্যরা মাদক বিক্রির ৪৯ হাজার ৪শ’ ৩৯ টাকা ও কাঠ বোঝাই একটি ট্রাক জব্দ করে। র‌্যাব সদস্যরা ওই সময়ে সাংবাদিকের জানান, ইউসুফ ও জাফর জব্দকৃত ট্রাকটির সম্মুখের দিকের দুইপাশের চাকার মাটগার্ডের ভেতরে বিশেষ পদ্ধতিতে লুকিয়ে ইয়াবার এতোবড় চালানটি এনেছিল। অভিযোগ রয়েছে, এভাবেই ইয়াবার পাচার সিন্ডিকের সদস্যরা যানবাহনগুলোতে বিশেষ জায়গা লুকিয়ে বড় বড় ইয়াবার চালানগুলো নিয়ে আসছে। ইয়াবা বহনকারীরা ধরা পড়লেও ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে যাচ্ছে মূল ইয়াবা পাচার সিন্ডিকেটের সদস্যরা। ফলে রোধ হচ্ছে না ইয়াবা পাচার।
×