ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

অনুপ্রবেশ ঠেকাতে-

প্রকাশিত: ০৩:৪৬, ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৬

অনুপ্রবেশ ঠেকাতে-

মানুষের জানমালের নিরাপত্তায় পুলিশে নতুন প্রায় ১৪ হাজার জনবল নিয়োগের কথা ভাবছে সরকার। এই ক্ষেত্রে যাদের বিরুদ্ধে মামলা আছে, যারা বিভিন্ন সময়ে নাশকতার সঙ্গে জড়িত তাদের চাকরির ক্ষেত্রে কঠিন পুলিশী ভেরিফিকেশন করার সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। জনবল নিয়োগের ক্ষেত্রে সচেতন হওয়ার জন্য পুলিশ বাহিনীর প্রতি প্রধানমন্ত্রীর আহ্বানের একদিন পর আইজিপি এ কথা জানান। বুধবার জাতীয় সংসদে এক প্রশ্নোত্তর পর্বে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, বিগত সময়ে সন্ত্রাসী কর্মকা-ে যারা লিপ্ত ছিল, যারা অগ্নিসন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদী কার্যকলাপে লিপ্ত, তারা যেন একটা সুশৃঙ্খল বাহিনীতে আসতে না পারে, সেটা নিশ্চিত করতে হবে। প্রধানমন্ত্রী বলতে চান, জামায়াত-শিবিরের লোক যারা ২০১৩ সাল থেকে পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ওপর হামলা ও তাদের হত্যা করেছে, যারা মানুষ পিটিয়ে হত্যা করেছে, বোমা মেরে নিরীহ মানুষ পুড়িয়ে মেরেছে, ককটেল ছুড়ে ও অগ্নিসংযোগের মাধ্যমে আহত করেছে তাদের ব্যাপারে সতর্ক হতে হবে। আমরা মনে করি, পুলিশ বিভাগে ঘাপটি মেরে থাকা জামায়াত-শিবির ও জঙ্গী থাকলে তাও খুঁজে বের করা উচিত। জামায়াত-শিবির মানে এক আতঙ্ক। বিভিন্ন সময় দেখা গেছে, আইএস, আনসারুল্লাহ বাংলা টিম, জেএমবিসহ জঙ্গী সংগঠনের কার্যকলাপের প্রসঙ্গ এলেই তাদের দোসর হিসেবে জামায়াত-শিবিরের নাম উঠে আসে। এরা একাত্তরের যুদ্ধাপরাধীদের রক্ষায় জাতীয় ও আন্তর্জাতিক চক্রান্তের মাধ্যমে দেশে অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টির চেষ্টা করেছে। ২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াত ক্ষমতায় থাকতে এবং নানা সময়ে জঙ্গী আদর্শে অনুপ্রাণিত লোকজন পুলিশসহ বিভিন্ন বাহিনীতে ঢুকে পড়েছে, যারা এখন তাদের আদর্শিক কাজ প্রশাসনে থেকে করে যাচ্ছে বলে অভিযোগ উঠছে। তাই পুলিশে নিয়োগের ক্ষেত্রে একটি নীতিমালা থাকার কথাও উল্লেখ করেছেন প্রধানমন্ত্রী। প্রধানমন্ত্রীর এই আহ্বান সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত। বর্তমান সরকারের আমলে জামায়াত-শিবিরসহ জঙ্গীদের রাজনৈতিক অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে সহিংসতা শুরু হয়। ২০১৪ সালে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ও জাতীয় নির্বাচন ঠেকাতে পুরো ১৩ সালে সংহিস তা-ব, ১৩ দফার নামে ২০১৩ সালের ৫ মে হেফাজতের তা-ব, রাজনৈতিক আন্দোলনের নামে গত বছর টানা ৯২ দিনের তা-বে দেশে ব্যাপক জীবনহানি ও সম্পদহানি ঘটে। এই তা-বে পুলিশ সদস্যরা রেহাই পায়নি। ১৯ জন পুলিশকে তারা হত্যা করেছে। এই জঙ্গীরা যদি বিশেষ কোন সুযোগে সেই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীতে ঢুকে যায় তা অনাকাক্সিক্ষতই বলা যায়। প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী থেকে শুরু করে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, এমনকি ক্ষমতাসীন দলে কৌশলে ঢুকে পড়ছে জঙ্গীদের অনুসারীরা। সংশ্লিষ্টদের কড়া নজরদারি না থাকায় অনেক ক্ষেত্রে নিয়োগে দুর্নীতির সুযোগ নিয়ে প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ পদে জায়গা করে নিয়েছে, নিচ্ছে তারা। এরাই পরবর্তী সময়ে জামায়াত-শিবিরসহ জঙ্গীদের নানা ধরনের সহায়তা দিচ্ছে। এই সব নিয়োগের বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই জনপ্রতিনিধি, এমপি-মন্ত্রীরা সুপারিশ করে থাকেন। সাম্প্রতিক সন্ত্রাস-নাশকতায় বোমা মারার সময় ধরা পড়া জঙ্গীদের জামিনের ব্যাপারেও সরকার সমর্থিতদের সুপারিশের কথা পত্রপত্রিকায় এসেছে। এই বিষয়গুলো গুরুত্বে সঙ্গে খতিয়ে দেখা দরকার। এই কথা সত্য যে, প্রশাসনের রন্ধ্রে রন্ধ্রে জঙ্গীদের অনুসারীরা বসে আছে। তারা নানা সময়ে সরকারকে বেকায়দায় ফেলার চেষ্টা করছে। তাই সতর্কতা ও শুদ্ধিযান চালানো দরকার শুরু থেকেই। শুধু পুলিশ বাহিনীই নয়, সর্বত্রই যাতে জঙ্গীদের অনুসারীদের অনুপ্রবেশ না ঘটে সে ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট সবাইকে সচেতন হতে হবে।
×