ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

বিডিআর বিদ্রোহে নিহতদের শ্রদ্ধাভরে স্মরণ

প্রকাশিত: ০৫:৩৩, ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৬

বিডিআর বিদ্রোহে নিহতদের শ্রদ্ধাভরে স্মরণ

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বিডিআর বিদ্রোহে শাহাদাতবরণকারীদের শ্রদ্ধা জানালেন রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর প্রতিনিধিসহ তিন বাহিনী এবং বিজিবি প্রধানসহ উর্ধতনরা। শ্রদ্ধা জানাতে গিয়ে আবেগে সবার চোখই ছিল কষ্টের জলে টইটুম্বুর। আবারও ভারি হলো বনানীর সেনাবাহিনী কবরস্থানের পরিবেশ। আবেগ যেন বাঁধ মানছিল না। তাই অনেকেই অশ্রুসজল নয়নে তাদের সুখ-দুঃখের কথা জানালেন কবরের পাশে বসে। অনেক স্বজনই সাজাপ্রাপ্তদের দ- দ্রুত কার্যকর করার দাবি জানিয়েছেন। আর বিএনপির তরফ থেকে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে বিডিআর বিদ্রোহের প্রকৃত কারণ জানতে বিচার বিভাগীয় তদন্ত দাবি করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার ছিল বিডিআর বিদ্রোহের সাত বছর। দিবসটিতে শাহাদাতবরণকারী সেনা সদস্যদের শ্রদ্ধা জানান রাষ্ট্রপতির পক্ষে তাঁর সামরিক সচিব মেজর জেনারেল আবুল হোসেন, প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে তাঁর সামরিক সচিব মেজর জেনারেল মিয়া মোহাম্মদ জয়নুল আবেদীন বীরবিক্রম, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর পক্ষে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ড. মোঃ মোজাম্মেল হক খান, সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল আবু বেলাল মোহাম্মদ শফিউল হক, নৌবাহিনী প্রধান ভাইস এডমিরাল নিজামউদ্দিন আহমেদ, বিমানবাহিনী প্রধান এয়ার চীফ মার্শাল আবু এসরার ও বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ মেজর জেনারেল আজিজ আহমেদ। এ ছাড়া সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ তার দল জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান জিএম কাদের এবং মহাসচিব রুহুল আমিন হাওলাদারকে সঙ্গে নিয়ে শহীদদের প্রতি ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। পুষ্পস্তবক অর্পণ শেষে শহীদদের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করতে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। এ সময় সকল বাহিনীর পোশাক পরিহিত সদস্যরা স্যালুট প্রদান করেন। পরে শহীদদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করা হয়। এ ছাড়া দিবসটি উপলক্ষে সকল সেনানিবাসের কেন্দ্রীয় মসজিদে পবিত্র কোরান খতমের ব্যবস্থা এবং শহীদদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করে মিলাদ মাহফিল ও বিশেষ মোনাজাত অনুষ্ঠিত হয়। এসব অনুষ্ঠানে সেনাবাহিনীর সব সদস্য উপস্থিত ছিলেন। তাদের চোখে ছিল জল, আর মনে ছিল কষ্ট। শ্রদ্ধা নিবেদন করতে গিয়ে সবাই আবেগে কেঁদে ফেলেন। এরপর স্বজনরা প্রিয়জনের কবরে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। অনেকেই গোলাপফুলের পাপড়ি অতি যত্মসহকারে ছিটিয়ে দেন। এ সময় স্বজনদের আর্তনাদে সেনাবাহিনীর কবরস্থানের পরিবেশ ভারি হয়ে আসে। অনেককেই কবরের পাশে বসে হাউমাউ করে কাঁদতে দেখা গেল। দীর্ঘদিনের সুখ-দুঃখের স্মৃতি আর না বলা কথা মনে করে অনেকেই স্মৃতি হাতড়ে বেড়ালেন। গগনবিদারী আর্তনাদে আকাশ বাতাস ভারি হয়ে আসে। উপস্থিত অনেকেই আর চোখের জল ধরে রাখতে পারছিলেন না। সবার গ- বেয়ে জল গড়িয়ে পড়তে থাকে। অনেককেই কবরের পাশে বসে বিড় বিড় করে কি যেন বলতে শোনা গেল। মনে হলো অনেক দিনের জমিয়ে রাখা কথা হয়ত বলে গেলেন প্রিয়জনের কাছে। কর্নেল কুদরত এলাহী রাহমানীর শফিকের পিতা হাবিবুর রহমান বলছিলেন, সেই আমার পিতা ছিল। আমি ঠিকমতো খাওয়া-দাওয়া, ঘুম, ওষুধপত্র খাই কিনা, সবই সময় সময় মোবাইলে জিজ্ঞাসা করত। আমার কেমন লাগে তা বলে বোঝাতে পারব না। আমার বুক চিড়ে দেখলে হয়ত আপনারা বুঝতে পারতেন। কেমন আছি ছেলেকে হারিয়ে! তিনি ঘটনাটির বিচার বিভাগীয় তদন্ত দাবি করে বলেন, কি কারণে এমন ঘটনা ঘটল, তা আমি জানতে চাই। পাশাপাশি বিডিআর হত্যাযজ্ঞ মামলায় সাজাপ্রাপ্তদের রায় দ্রুত কার্যকর করারও দাবি জানান। শহীদের একমাত্র ছেলে এ্যাডভোকেট শাকিব রহমান বলছিলেন, আব্বা না থাকায় তাদের অনেক কষ্ট করতে হচ্ছে। আমি এবং আমার মাকে অনেক কষ্ট করে দিন কাটাতে হয়। প্রতিটি মুহূর্তেই আব্বাকে মনে পড়ে। শহীদ মেজর এসএম মামুনুর রহমানের ছোট ভাই মনিরুজ্জামান বলছিলেন, সাজাপ্রাপ্তদের রায় কার্যকর করতে দেরি হচ্ছে। আমি দ্রুত রায় কার্যকর দেখতে চাই। বিজিবির প্রধান শহীদ মেজর জেনারেল শাকিল আহমেদের ফুপু রুবিনা নিশা নিনি বলছিলেন, আমরা দ্রুত রায় কার্যকর দেখতে চাই। বিজিবি মহাপরিচালক মেজর জেনারেল আজিজ আহমেদ বলেছেন, বিডিআর বিদ্রোহের তদন্তে সাজাপ্রাপ্তরাই নেপথ্য কারিগর। এ ছাড়া এখন পর্যন্ত তদন্তে অন্য কারও বিষয় আসেনি। বিচারে ধীরগতি রয়েছে সত্য, তবে আমি সাজার বিষয়ে সন্তুষ্ট। কারণ এত পরিমাণ অপরাধীকে পৃথিবীর কোন আদালত মৃত্যুদ- দেয়নি। এরপর লে. জেনারেল মাহবুবুর রহমানের নেতৃত্বে বিএনপির একটি প্রতিনিধি দল শহীদদের শ্রদ্ধা জানান। শ্রদ্ধা জানানোর পর তারা বিডিআর বিদ্রোহের প্রকৃত কারণ জানতে বিচার বিভাগীয় তদন্তের দাবি করেন। প্রসঙ্গত, ২০০৯ সালের ২৫-২৬ ফেব্রুয়ারি তথাকথিত দাবি-দাওয়া আদায়ের নামে বিডিআর বিদ্রোহীরা ৫৭ সেনা কর্র্মকর্তাসহ ৭৪ জনকে নির্মমভাবে হত্যা করে। হত্যার পর অনেকের লাশ কবর দেয়া হয়। আবার কারও লাশ নর্দমায় ম্যানহোলে ও ডোবায় ফেলা হয়। অনেক লাশ পুড়িয়ে দেয়ার চেষ্টা করে বিদ্রোহীরা। এমন বিদ্রোহের জের ধরে বিডিআরের নাম পরিবর্তন করে বিজিবি রাখা হয়। আর বিদ্রোহের সর্বোচ্চ শাস্তি ৭ বছরের পরিবর্তে মৃত্যুদ- দেয়া হয়।
×