ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

ভিডিও কনফারেন্সিংয়ে ৫১ উন্নয়ন প্রকল্প উদ্বোধন

এবার ট্রেন যাবে বরিশালেও ॥ প্রধানমন্ত্রী

প্রকাশিত: ০৫:২০, ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৬

এবার ট্রেন যাবে বরিশালেও ॥ প্রধানমন্ত্রী

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ঢাকা ও চট্টগ্রাম এ দু’টি মহানগরীর যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নে ঢাকা-চট্টগ্রাম এক্সপ্রেস ট্রেন সার্ভিস চালু করার পরিকল্পনা তার সরকারের রয়েছে। প্রধানমন্ত্রী বৃহস্পতিবার সকালে গণভবনে দেশের বিভিন্ন স্থানে ভিডিও কনফারেন্সিংয়ের মাধ্যমে একযোগে ৫১টি উন্নয়ন প্রকল্পের উদ্বোধন ও ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে এ কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী উন্নত বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে বাস্তবায়নাধীন প্রকল্পসমূহ দ্রুত সম্পন্ন করার জন্য সকল ভেদাভেদ ভুলে দলের সর্বস্তরের নেতা-কর্মীদের একযোগে কাজ করার এবং জনপ্রতিনিধিসহ স্থানীয় জনগণকে সুষ্ঠুভাবে প্রকল্প সম্পাদনে সহযোগিতা করার আহ্বান জানিয়েছেন। খবর বাসস’র। সারাদেশকে রেল নেটওয়ার্কের আওতায় আনার পরিকল্পনার কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বরিশাল কখনও রেল দেখেনি, সেখানেও রেল যাবে। টাঙ্গাইলবাসীকেও রেল সেবার আওতায় আনা হবে। পটুয়াখালী, পায়রা বন্দর পর্যন্ত রেল নেয়া হবে। এ বিষয়ে কার্যক্রম শুরুর জন্য তিনি রেলমন্ত্রীকে নির্দেশ দেন। রেলের গুরুত্ব তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, রেলে অল্প খরচে চলাচল ও মালামাল পরিবহন করা যায়। এ জন্য সরকার রেলের ওপর অধিক গুরুত্ব দিচ্ছে। বাংলাদেশের প্রত্যন্ত এলাকা পর্যন্ত সড়ক যোগাযোগের আওতায় আনতে উদ্যোগ নেয়া হয়েছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সড়ক যোগাযোগের ওপর গুরুত্ব দিয়েছি। আওয়ামী লীগ সরকার যত সেতু ও সড়ক নির্মাণ করেছে আর কেউ তা করেনি। এ সময় পদ্মা সেতু ছাড়াই তার সরকারের সময়ে ৫৩৭টি সড়ক সেতু নির্মাণ হয়েছে। ঢাকা থেকে কুয়াকাটা পর্যন্ত সড়ক যোগাযোগ স্থাপনে বিভিন্ন উদ্যোগের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, কুয়াকাটা এমন একটা জায়গা যেখান থেকে সূর্যোদয় ও সূর্যাস্ত দেখা যায়। যেহেতু আমি সেখানে বহু আগে গিয়েছিলাম, সে সময়েই এটিকে একটি উন্নত পর্যটন কেন্দ্র গড়ে তোলার চিন্তা করি। তিনি বলেন, ‘আমরা যেসব প্রকল্প প্রণয়ন করেছি এবং বাস্তবায়ন করছি সেগুলো দ্রুত বাস্তবায়ন করার জন্য আমি দেশবাসীর দোয়া চাই, সহযোগিতা চাই। যেসব এলাকায় কাজ হবে সেইসব এলাকাবাসীর সহযোগিতা চাই।’ প্রধানমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা গড়ার স্বপ্ন বাস্তবায়নেই তার সরকার কাজ করে যাচ্ছে। তিনি ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে মধ্যম আয়ের দেশ এবং ২০৪১ সাল নাগাদ সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে তোলার অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেন। তিনি আরও বলেন, ‘যত দ্রুত এই মাতৃভূমিকে আমরা উন্নত করতে পারব, ততই আমরা বিশ্ব দরবারে মাথা উঁচু করে চলতে পারব।’ গণভবনে মূল অনুষ্ঠানস্থলে যোগাযোগমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা এইচটি ইমাম এবং বিদ্যুত ও জ্বালানি বিষয়ক উপদেষ্টা ড. তৌফিক-ই-এলাহী চৌধুরী উপস্থিত ছিলেন। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মুখ্য সচিব আবুল কালাম আজাদ ভিডিও কনফারেন্স অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন। অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী গোপালগঞ্জ জেলার কোটালীপাড়ায় ৯০টি গ্রামে ৬ হাজার পরিবারের মধ্যে বিদ্যুত সংযোগ প্রদান কার্যক্রম উদ্বোধন করেন। এরপর চট্টগ্রামের পটিয়ার ১০৮ মেগাওয়াট ইসিপিভি চট্টগ্রাম লিমিটেড, কুমিল্লার জাঙ্গালিয়ার ৫২ দশমিক ২ মেগাওয়াট লাকধানাভি বাংলা পাওয়ার লি., গাজীপুরের কড্ডার ১৫০ মেগাওয়াট বিপিডিবি-আরপিসিএল পাওয়ারজেন লি. এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জের ২২৫ মেগাওয়াট সিসিপিপি (এসটি ইউনিট) বিদ্যুত কেন্দ্রের উদ্বোধন করেন। এ ছাড়াও, তিনি সড়ক যোগাযোগ সম্প্রসারণে পর্যটন কেন্দ্র কুয়াকাটার সঙ্গে রাজধানীর সরাসরি সড়ক যোগাযোগ স্থাপনের অংশ হিসেবে পটুয়াখালী জেলায় পটুয়াখালী-কুয়াকাটা মহাসড়কে নবনির্মিত শেখ কামাল সেতু ও শেখ জামাল সেতু উদ্বোধন এবং সিলেট সড়ক জোনে ইস্টার্ন বাংলাদেশ ব্রিজ ইমপ্রুভমেন্ট প্রজেক্টের (ইবিবিআইপি) আওতায় নবনির্মিত ১৬টি সেতু একযোগে উদ্বোধন করেন। রেল যোগাযোগ সম্প্রসারণে প্রধানমন্ত্রী সিগনালিং ব্যবস্থাসহ টঙ্গী-ভৈরববাজার ডাবল লাইন নির্মাণ শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় নবনির্মিত ২য় রেললাইনে ট্রেন চলাচলের উদ্বোধন করেন। এরপর প্রধানমন্ত্রী নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের বিভিন্ন স্থাপনার ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন ও উদ্বোধনসহ নারায়ণগঞ্জ শহরের পানি সরবরাহ ব্যবস্থার সম্প্রসারণ ও পুনর্বাসন প্রকল্পের আওতায় নির্মিত সোনাকান্দা পানি শোধনাগারেরও উদ্বোধন করেন। নারায়ণগঞ্জে পানি শোধনাগরের উদ্বোধন করে শেখ হাসিনা বলেন, পানি ব্যবহারে মিতব্যয়ী হবেন। পানি শোধন করতে অনেক খরচ হয়। এ ছাড়াও শেখ হাসিনা এদিন জয়পুরহাট জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ভবনসহ এ জেলার বিভিন্ন স্থাপনার ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন ও উদ্বোধন করেন। অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের লক্ষ্য বাংলাদেশে কোন দরিদ্র থাকবে না। একটা মানুষও গৃহহীন থাকবে না, একটা মানুষও না খেয়ে মরবে না, বিনা চিকিৎসায় মারা যাবে না ।’ প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রত্যেকটা মানুষের চিকিৎসার ব্যবস্থা করা, খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং তাদের আবাসন ব্যবস্থা থেকে শুরু করে শিক্ষা এবং কর্মসংস্থানে প্রয়োজনীয় ট্রেনিং প্রদানে আমাদের সরকার কাজ করে যাচ্ছে। গোপালগঞ্জের প্রকল্পসমূহের উদ্বোধনকালে প্রধানমন্ত্রী তাদের প্রধানমন্ত্রীর মা-বাবা-ভাইসহ স্বজন হারানো স্বজন বলে আখ্যায়িত করেন। তিনি বলেন, ‘আমার নির্বাচনী এলাকা গোপালগঞ্জ-কোটালীপাড়ার মানুষদের কাছে আমি চিরকৃতজ্ঞ। সব হারাবার পর তারাই আমাকে বুকে টেনে নেন।’ নাগরিক সুবিধা নিশ্চিত করতে সরকারের বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মকা-ের কথা তুলে ধরে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, প্রতিটি নগরকে উন্নত করতে চাই। মানুষের জীবন-মান উন্নত করতে চাই। জনগণকে এ সময় ধন্যবাদ জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, জনগণ আমাদের ওপর আস্থা রেখেছে, আমাদের কাজ করার সুযোগ দিয়েছে। এ জন্যই আমরা বিভিন্ন উন্নয়ন ও মানবকল্যাণে কাজ করতে পারছি। প্রকল্পগুলো উদ্বোধনের পর প্রধানমন্ত্রী বিভিন্ন পয়েন্টে আয়োজিত অনুষ্ঠানে উপস্থিত ব্যক্তিবর্গ এবং স্থানীয় জনগণের সঙ্গে মতবিনিময় করেন এবং ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা প্রকল্পগুলোর কাজ দ্রুত শুরুর তাগিদ দেন। নারায়ণগঞ্জ থেকে স্থানীয় সরকারমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মোশাররফ হোসেন ও নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভী, ভৈরব থেকে রেলমন্ত্রী মুজিবুল হক ও বিসিবির সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন এমপি, কুমিল্লা থেকে পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল, চট্টগ্রাম থেকে সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আজম নাসির উদ্দিন, সাবেক মেয়র এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরী, পটুয়াখালীতে জাতীয় সংসদের চীফ হুইপ আ স ম ফিরোজ এমপি, জাতীয় পার্টির মহাসচিব এ বি এম রুহুল আমিন হাওলাদার এমপি ছাড়াও সংশ্লিষ্ট জেলার আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় নেতা, সংসদ সদস্য, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সচিবসহ উর্ধতন কর্মকর্তাবৃন্দ, জেলা প্রশাসকসহ সরকারের উর্ধতন কর্মকর্তারা ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে গণভবনের সঙ্গে সংযুক্ত ছিলেন।
×