ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

দেশের ফুটবলে নতুন দিগন্তের সূচনা

প্রকাশিত: ০৪:৩৭, ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৬

দেশের ফুটবলে নতুন দিগন্তের সূচনা

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন (বাফুফে) ও সাইফ পাওয়ারটেক লিমিটেডের যৌথ আয়োজনে ফ্রাঞ্চাইজিভিত্তিক ‘বাংলাদেশ সুপার লীগ’ এর খেলা আগামী নবেম্বরে অনুষ্ঠিত হবে। ‘বাংলাদেশ সুপার লীগ’ আয়োজনের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে সারাদেশে ফুটবলের উন্মাদনা ছড়িয়ে দেয়া। আগামী ২৮ ফেব্রুয়ারি বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে বিকেল সাড়ে ৫টায় এই ফুটবল আসরের লোগো উন্মোচন অনুষ্ঠিত হবে। এ উপলক্ষে বৃহস্পতিবার দুপুরে বাফুফে ভবনের কনফারেন্স রুমে এক সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের (বাফুফে) সহ-সভাপতি বাদল রায়, সাইফ পাওয়ারটেক’-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক তরফদার রুহুল আমিন এবং নির্বাহী পরিচালক সারোয়ার আনাম। বাদল রায় বলেন, ‘বিএসএল আয়োজনের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ ফুটবলের এক নতুন দিক উন্মোচন হতে যাচ্ছে। আশা করি টুর্নামেন্টটি বাংলাদেশের ফুটবলকে একটি নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাবে।’ বিএসএল’র লোগো উন্মোচন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ, বিশেষ অতিথি হিসেবে থাকবেন যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী বীরেন শিকদার এবং যুব ও ক্রীড়া উপমন্ত্রী আরিফ খান জয়। আয়োজিত জমকালো এই অনুষ্ঠানে আয়োজকরা খরচ করতে যাচ্ছে এক কোটি টাকারও বেশি। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বিএসএলের আয়োজক সাইফ পাওয়ারটেক লিমিটেডের ম্যানেজিং ডিরেক্টর তরফদার মোঃ রুহুল আমিন। ফুটবলে এ ধরনের ব্যয়বহুল অনুষ্ঠান এবারই প্রথম। তবে সাধারণ দর্শকদের জন্য সুখবর হচ্ছে বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে তারা অনুষ্ঠানটি উপভোগ করতে পারবেন বিনামূল্যেই। শুধু ভিআইপি গ্যালারিগুলো সংরক্ষিত থাকবে। ১০০০ সংরক্ষিত আসন বাদ দিয়ে ৫ গ্যালারি সাধারণ দর্শকদের জন্য খুলে দেয়া হবে। ভিন্ন ধরনের একটি থিম সং এবং প্রমো উপস্থাপন করা হবে। থিম সংটি চিত্রায়ন করা হবে ঈগল ডান্সগ্রুপকে দিয়ে। এছাড়াও থাকছে বর্ণাঢ্য আতশবাজি এবং লেজার শোসহ আরও আকর্ষণীয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। ফ্রাঞ্চাইজি লীগটি দেশের ৮ ভেন্যুতে হোম এবং এ্যাওয়ে ভিত্তিতে আয়োজিত হবে। এ উপলক্ষে ইতোমধ্যে তিন ভেন্যু পরিদর্শন করেছে আয়োজকরা। রুহুল আমিন জানান, পরিদর্শন শেষে লীগ আয়োজনের জন্য তাদের কাছে সব থেকে উপযোগী মনে হয়েছে রাজশাহী স্টেডিয়ামকেই। এই স্টেডিয়ামে শুধু একটি ফ্লাডলাইটের ব্যবস্থা করতে পারলেই চলবে। এছাড়া ময়মনসিংহ স্টেডিয়ামের মাঠ ভাল হলেও ফ্লাডলাইটের কোন ব্যবস্থা নেই এই স্টেডিয়ামে। গ্যালারি, প্রেসবক্স এবং ভিআইপি বক্সেরও সংস্কার প্রয়োজন। রংপুর স্টেডিয়ামের অবস্থা বেশ খারাপ, যদিও এটি নিয়ে কাজ চলছে। যেহেতু বিএসএল এর ম্যাচগুলো বাংলাদেশসহ ১৫০ দেশে সম্প্রচার করা হবে এবং ম্যাচগুলোতে ফ্লাডলাইট অত্যাবশ্যকীয়, তাই মন্ত্রলায়ের সঙ্গে এ বিষয়ে আলোচনা করছে আয়োজকরা। নবেম্বরের মধ্যে মাঠগুলো লীগ আয়োজনের উপযোগী হয়ে যাবে বলেও তারা আশা করছেন। মার্চের শেষ সপ্তাহে লীগ উপলক্ষে একটি কর্পোরেট নাইটের আয়োজন করবে আয়োজকরা। যেখানে ফ্রাঞ্চাইজিদের কি কি লাভ হচ্ছে এসব বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হবে। এরপর এপ্রিলে ওপেন বিডিং করা হবে। যেখানে আট ডিভিশনের জন্য ৮ ফ্রাঞ্চাইজিকে বেছে নেয়া হবে যারা দীর্ঘদিন ফুটবলের সঙ্গে থাকবে। মূলত দেশের ফুটবলকে বাণিজ্যিকরণ করার জন্যই এই লীগ আয়োজন করা হচ্ছে। তবে দেশের ফুটবলের উন্নয়নের বিষয়টিও মাথায় রেখেই এগোচ্ছে সাইফ পাওয়ারটেক। আর সেজন্য ফুটবলারের সঙ্কট যাতে না হয় তাই প্রতি ফ্রাঞ্চাইজিকে বাধ্যতামূলকভাবে একটি করে একাডেমি চালাতে হবে। উল্লেখ্য, বাফুফের উদ্যোগে অনুষ্ঠেয় ফ্র্যাঞ্চাইজিভিত্তিক বাংলাদেশ সুপার লীগের পৃষ্ঠপোষকতার লক্ষ্যে বাফুফে-সাইফ পাওয়ার টেকের মধ্যে গত জানুয়ারিতে একটি সমঝোতা চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। চুক্তির মেয়াদ ১৫ বছরের। এই সময় প্রায় ৩৫ কোটি টাকা বাফুফে দেবে সাইফ পাওয়ার টেক। এই ফ্রাঞ্চাইজি লীগটা স্থান পাচ্ছে বাফুফের বাৎসরিক ক্যালেন্ডারে। এবং সেটি এ বছর থেকেই। একাডেমির মালিকানা থাকবে সরকারের, সাইফ পাওয়ারটেক সেটা পরিচালনা করবে। স্পেন, ইতালির তিন জনের কোচিং স্টাফ গ্রুপ থাকবে; তারাই বাছাই করবে ফুটবলার। প্রতি দলে সর্বোচ্চ ৫ জন করে বিদেশী খেলোয়াড় থাকবে। এই লীগ আয়োজনে বাফুফের লাভ? প্রথমত অর্থনৈতিকভাবে, টুর্নামেন্টটা সফল হলে আরেকটা লাভের অংশ প্রাপ্তি, বাংলাদেশের সব জায়গায় ভেন্যু বিস্তার। সাইফ পাওয়ার গোটা জিনিসটা অর্গানাইজ করবে। বাফুফে থাকবে এর কো-পার্টনার হিসেবে। গাইডলাইন দেবে বাফুফে। মার্কেটিং থেকে আরম্ভ করে সবকিছু সাইফ পাওয়ারটেক করবে। সেজন্য তারা বাফুফেকে একটা লাইসেন্স ফি দেবে। এর আগে বাংলাদেশে ফ্রাঞ্চাইজি লীগ করা যেতে পারে এই চিন্তাধারা নিয়ে বাফুফের সঙ্গে সবার আগে আলোচনা করেছিল ভারতের সেলিব্রেটি ম্যানেজম্যান্ট নামে একটি সংস্থা। সঙ্গে নাম শোনা গিয়েছিল সকার ইউকে নামের একটি প্রতিষ্ঠানেরও। গত বছর নবেম্বরে তাদের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে আলাপ আলোচনাও এগিয়েছিল বাফুফে।
×