ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

জয়ে ফিরতে মরিয়া আজ টাইগাররা

প্রকাশিত: ০৪:৩৫, ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৬

জয়ে ফিরতে মরিয়া আজ টাইগাররা

মিথুন আশরাফ ॥ কঠিন প্রতিপক্ষের পর সহজ প্রতিপক্ষের সামনে আজ বাংলাদেশ। আজ বাংলাদেশের প্রতিপক্ষ দলটি হচ্ছে, সংযুক্ত আরব আমিরাত। যারা বাছাইপর্ব পেরিয়ে চূড়ান্ত পর্বে খেলছে। এ দলটির বিপক্ষে স্বাভাবিকভাবেই জয়ের আশা বাংলাদেশের। এশিয়া কাপ টি২০’র প্রথম ম্যাচেই কঠিন প্রতিপক্ষ ভারতের কাছে হারের পর আজকের ম্যাচটিতে জিততেই হবে বাংলাদেশকে। তা না হলে যে ‘মান-সম্মান’ সবই যাবে। সেই সঙ্গে ফাইনালে ওঠার লড়াইয়ে টিকে থাকতেও আরব আমিরাতের বিপক্ষে জয়ের বিকল্প নেই। আর আরব আমিরাত কী চায়? তাদের চাওয়া একটাই, বাংলাদেশকে যে করে হোক বিপাকে ফেলা। যদি তা করা যায়, তাহলেই প্রাপ্তি মিলবে। দুই দলেরই আজ দ্বিতীয় ম্যাচ। ভারতের বিপক্ষে বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে খেলেছে আরব আমিরাত। তবে আরব আমিরাত দলটির জন্য কষ্টের বিষয় হলো, আরব আমিরাতই এবার এশিয়া কাপের একমাত্র দল; যারা টানা দুইদিন দুটি ম্যাচ খেলবে। বাকি চারদলের টানা দুইদিন কোন ম্যাচই নেই। এ কষ্ট আরব আমিরাতকে মেনে নিতেই হবে। দলটি একে তো দুর্বল প্রতিপক্ষ। দ্বিতীয়ত, বাছাইপর্ব খেলে চূড়ান্ত পর্বে স্থান করে নিতে হয়েছে। ক্রিকেটে বড় শক্তিও না। টেস্টও খেলে না। সবকিছুই আরব আমিরাতের বিপক্ষে। তাই টানা দুইদিন ম্যাচ খেলার কষ্টও ভোগ করতেই হচ্ছে দলটিকে। এ দলটির বিপক্ষেই আবার সতর্ক বাংলাদেশ অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজা। ভারতের বিপক্ষে হারের পর সেই সতর্কতা আরও বেড়ে গেছে। মাশরাফিই যেমন বলেছেন, ‘ক্রিকেট খেলা। হতে পারে যে কোন কিছুই। ভারতের বিপক্ষে আমরা যেভাবে পরিকল্পনা করেছি, ঠিক একই রকম সমান গুরুত্ব দিয়ে আমাদের (আরব আমিরাতের বিপক্ষে) মাঠে নামতে হবে। এই ম্যাচ খুবই গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচ আমাদের জন্য।’ আন্তর্জাতিক টি২০ ক্রিকেটে এখন পর্যন্ত বাংলাদেশ ও আরব আমিরাত কখনই মুখোমুখি হয়নি। এবারই প্রথম খেলছে। তবে আন্তর্জাতিক ওয়ানডেতে দুই দল পরস্পরের বিপক্ষে খেলেছে। একবার দেখা হয়েছে। ২০০৮ সালে এশিয়া কাপে সেই ম্যাচে বাংলাদেশ জিতেছে ৯৬ রানের বড় ব্যবধানেই। এবারও কী সেই রকম কিছুই হবে? বড় ব্যবধানে জয় মিলবে বাংলাদেশের? মাশরাফি বলেছেন, ‘গতকালকের (ভারতের বিপক্ষে, বুধবারের) ম্যাচটি আমাদের হাত থেকে চলে গেছে। এ জন্য আগামীকালের (আজকের) ম্যাচটি আমাদের জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ এই টুর্নামেন্টে টিকে থাকার ক্ষেত্রে। সেই সঙ্গে আমার প্রস্তুতির জন্য এটা গুরুত্বপূর্ণ। ম্যাচটিকে আমরা খুব গুরুত্বসহকারে নিচ্ছি। আশা করি আমরা ঘুরে দাঁড়াতে পারব।’ মাশরাফি আরও বলেন, ‘আমাদের প্রত্যাশা ভাল ক্রিকেট খেলার সঙ্গে সঙ্গে ম্যাচ জেতা। এটা কালকের (বুধবারের) ম্যাচেও ছিল। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত আমরা এটা করতে পারেনি। আমাদের ফোকাসটা সেভাবেই থাকবে। গতকালকের (বুধবারের) ম্যাচটা আমরা যেভাবে খেলেছি, আগামীকালকের (আজকের) ম্যাচটাও আমরা সেভাবে খেলব।’ আরব আমিরাত দলটিকে নিয়ে বলতে গিয়ে মাশরাফি জানান, ‘আসলে এভাবে চিন্তা করেনি। আরব আমিরাত তাদের লেভেলের সেরা ক্রিকেট খেলেই এখানে এসেছে। আমাদের কাজটা ক্রিকেট দল হিসেবে উচিত হবে পেশাদারিত্বের সঙ্গে পারফর্মেন্স করা। ম্যাচটা আমাদের জেতা। আগেও বললাম, ভারতের বিপক্ষে আমরা একটি মুহূর্ত পর্যন্ত ভাল ক্রিকেট খেলেছি। তারপর আর হয়নি। আশা করব আরব আমিরাতের বিপক্ষে পুরোটা সময়ই আমাদের ভাল কাটবে।’ টি২০’র ভরা মৌসুমে জিম্বাবুইয়ের বিপক্ষে দল নিয়ে অনেক পরীক্ষা নিরীক্ষা হয়েছে। এরপর খুলনা ও চট্টগ্রামে আলাদাভাবে অনুশীলন হয়েছে। কিন্তু তার ফল মাঠে মিলেনি। পরীক্ষা-নিরীক্ষা পর প্রথম ম্যাচে কোন উন্নতি ধরা পড়েছে? প্রশ্নটি উঠতেই মাশরাফি জানালেন, ‘প্রথমে বলি খুলনা এবং চট্টগ্রামে অনুশীলন করার কোন আলাদা কারণ ছিল না। তখন যুব বিশ্বকাপ চলছিল ঢাকাতে। কোন কিছু আসলে রাতারাতি পরিবর্তন করা সম্ভব নয়। বিশেষ করে টি২০ ক্রিকেটে আমাদের অনেক কিছু আছে অর্জন করার।’ প্রথম ম্যাচ থেকে ইতিবাচক দিকও খুঁজে পেয়েছেন মাশরাফি, ‘কয়েকটি ইতিবাচক দিক অবশ্যই আছে। ভারতের ব্যাটিং অর্ডারকে আমরা ১৫ ওভার পর্যন্ত আটকে রাখতে পেরেছি। ওই পর্যন্ত আমরা ম্যাচে ছিলাম। এরপর আক্রমণ না করে ডিফেন্স করে রান আটকে রাখা যেত কি না এসব কিছু বিবেচনা করার আছে। এগুলো আমরা গতকাল (বুধবার) মিসটেক করে গেছি। আবার ব্যাটিংয়ে সেই একই জিনিস। আমরা মনে করি ভারতের ব্যাটিং অর্ডারকে আটকে রাখা আমাদের জন্য অনেক ইতিবাচক কিছু। এবং আমরা যেমন অনুশীলন করেছি এবং পরিকল্পনা করেছি। সেগুলোর বাস্তবায়ন ঠিকমতোই হচ্ছিল। হয়ত শেষটা যেভাবে করার দরকার ছিল সেভাবে আমরা করতে পারিনি। ব্যাটিংয়ের কথা বললে বলব দ্রুত উইকেট পড়লে একটা চাপ তৈরি হয়; ওটাই হয়েছে।’ বাংলাদেশ দল ঠিক পথে আছে বলেও জানান মাশরাফি, ‘আমরা ঠিক পথে আছি। টি২০ এমন না যে প্রত্যেকদিন ভাল খেলা সম্ভব। আমার বিশ্বাস এভাবে করতে থাকলে আশা করি আমরা ভাল জায়গায় যেতে পারব। হয় তো রাতারাতি পরিবর্তন হয় না। আগে আমরা চিন্তা করতাম আমরা ভাল খেলতে পারি না, সেই চিন্তা ভাবনাটা এখন আমাদের পরিবর্তন হয়েছে।’ প্রথম ম্যাচ নিয়ে রোমাঞ্চিতও ছিল বাংলাদেশ। তাও জানালেন মাশরাফি, ‘সত্যি কথা বলতে কি আমরা সবাই রোমাঞ্চিত ছিলাম প্রথম ম্যাচ নিয়ে। আমরা তো এখানে চ্যাম্পিয়ন দল হিসেবে আসিনি। আমাদের ইচ্ছে ছিল সবকিছুই জেতার। সেটার সম্ভাবনাও ছিল! তবে সামনে আরও তিনটি ম্যাচ আছে। অবশ্যই একটি একটি ম্যাচ করে চিন্তা করতে হবে। আমরা যে পরিকল্পনা নিয়ে খেলেছি, আমাদের যেমন মানসিকতা ছিল, আমার বিশ্বাস পরের ম্যাচে সেটাই থাকবে। এখানে আরব আমিরাত বা পাকিস্তান বা শ্রীলঙ্কা চিন্তা করছি না।’ এখন দেখা যাক, সেই বিশ্বাস নিয়ে বাংলাদেশ কতদূর যেতে পারে। আজ আরব আমিরাতের বিপক্ষে ম্যাচে জিতলে টি২০ ফরমেটের প্রথম এশিয়া কাপে প্রথম জয়ও মিলবে বাংলাদেশের।
×